আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা | একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা (৫টি রচনা) Composition of International Mother Language Day

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা | আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

 

১।ভূমিকাঃ 

‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতন।

এ কেবল নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, এ হচ্ছে সর্বকালের মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা।বিশ্ব এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

মাতৃভাষার মাধুর্যে তাই মনে বেজে উঠে-

তোমার কথায় কথা বলি

পাখির গানের মত…

তোমার দেখায় বিশ্ব দেখি

বর্ণ কত শত …

২। মাতৃভাষা কীঃ 

মানুষের জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিমেয়।

সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন  ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মায়ের মুখের আঞ্চলিক বুলি মাত্র নয়, মাতৃভাষা হচ্ছে একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাষা। যা তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে। মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহংকার।

৩। মাতৃভাষার গুরুত্বঃ

প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।’মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। মাতৃভাষাই মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে তৃপ্তি ও পরিপূর্ণতা দান করে। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়-

                                              নানান দেশের নানান ভাষা

                                                       বিনা স্বদেশি ভাষা;

 পুরে কি আশা।

৪ ।মাতৃভাষার মর্যাদার লড়াইঃ

 বাঙালি পরিচয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো গৌরবজ্জ্বল মহিমা যুগে যুগে বহুবার বাঙালি অর্জন করেছে। বিদেশি শাসনের অপচ্ছায়ায় বারবার ম্লান হয়ে গেছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। খ্রিস্টীয় নবম শতকে এর উপর জেঁকে বসেছে সংস্কৃত, ত্রয়োদশ শতক থেকে ফারসি ও আরবি, আঠারো শতক থেকে ইংরেজি ও ফরাসি, অতঃপর এই অশুভ ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন ‘Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan’ তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণের তাজা রক্তে। ভাষার জন্য জীবন দেবার এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে।

৫। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ

বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবম-িত ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট-বড়ো প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

৬ ।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমিঃ

 একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেবার জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা হলেন; কানাডায় বসবাসরত একটি বহুজাতিক ভাষাপ্রেমী গ্রুপ ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর ভিন্নভিন্ন ভাষাভাষী দশ জন সদস্য। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই দশ জন সদস্যের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী যে দুইজন ব্যক্তি ছিলেন তাদের নাম দুই অমর ভাষা শহিদেরই নাম রফিক ও সালাম। এই গ্রুপটি ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে একুশে ফেব্রুয়ারিকে এই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রাদানের প্রস্তাব করে। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা সমীচীন। অতঃপর ভাষাপ্রেমিক জনাব রফিকুল ইসলাম এবং জনাব আব্দুস সালাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর ঘোষণাপত্রটি ইউনেস্কোর সদর দফতরে পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের পক্ষে ২৮টি দেশ লিখিত সমর্থন জানায়। ইউনেস্কোর টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২ এ প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় ১২ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিনিধির সমর্থন লাভ করে প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

৭। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে সিয়েরালিওনের স্বীকৃতিঃ

 সিয়েরালিওন আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের নাম। গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত এ দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে শান্তি রক্ষায় অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিনা রক্তপাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাফল্যের সাথে সেখানে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনীর মুখে মুখে বাংলা ভাষা শুনে তারাও মুগ্ধ হয়। তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অন্য কোনো একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলা ভাষা তথা বাঙালির জন্য গর্বের বিষয়।

See also  (৪টি রচনা) একটি নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

৮। স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ

 ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আর এই ঐতিহ্যকে আজও বাঙালি অন্তরে ধারণ করে রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সংগ্রহশালায় আজও সংরক্ষিত আছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সেই আমগাছের অবশিষ্ট অংশ, যেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ভাষা শহিদদের উপরে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে অতি যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের অনেক মূল্যবান তথ্য ও চিত্র।

৯। মাতৃভাষা ও সাহিত্য  :

একুশকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক গল্প কবিতা উপন্যাস। এক কথায় সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের পিছনে হাতিয়ার ছিল ভাষা আন্দোলন। তৎকালীন সময়ে সাহিত্য কিছুটা হলেও ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। একুশ নিয়ে প্রথম রচিত কবিতা ‘‌কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’‌ রচিয়তা ছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরি। কবিতাটি রচিত হয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৭টায়। ১৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এ কবিতাটি ছাপা হয় কোহিনুর প্রেস, আন্দরকিলা থেকে। কবিতাটি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে পাঠ করেন চৌধুরি হারুন উর রশিদ। সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা তৎকালীন সময়ে উৎসাহ দিয়েছিলো ভাষা আন্দোলনের।

১০। স্বরণে ও বরণে একুশঃ 

ঐতিহ্য ও আচার অনুষ্ঠান পালনে বাঙালির তুলনা মেলা ভার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারিকে বাঙালি অনেক আগ্রহ অনুরাগ আর ভালোবাসার সাথে পালন করে।

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” 

আপামর বাঙালি জনতা এই আত্মার গানটি গেয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেত হয়ে, পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রতি অপার শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনটি শুরু করে। প্রভাতফেরীর সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে বাঙালি। বাঙালির রঙে রঙে, পোশাক-আশাকে প্রকাশ প্রায় একুশের আমেজ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গান, বাংলা কবিতা, নৃত্য ও আলোচনার অনুষ্ঠান।

১১। ২১-এর দীক্ষাঃ 

শুধু মাত্র উৎসবের মধ্যে একুশকে সীমাবদ্ধ রাখা মোটেই আমাদের কাম্য হতে পারে না। একুশ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে তা আমাদের দীক্ষা হিসেবে নিতে হবে। একুশ হবে আমাদের কর্মচাঞ্চল্যের উদ্দীপনা। ২১-এর সত্যিকার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাভাষার বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। যে লক্ষ্যে আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্ররা জীবন দিয়ে গেছে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।

১২। মাতৃভাষার বিকৃতি ও অবজ্ঞা:

  ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর প্রাচীন ভাষাগুলোর একটি বো ভাষায় কথা–বলা বোয়া সিনিয়র নামের একমাত্র মানুষটির মৃত্যু হয়েছে। আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে বোয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেল বো ভাষা। আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে এমনি হারিয়ে যাবে শত শত ভাষা। বাংলা ভাষাকে বিভিন্ন দেশে যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যেভাবে টিভি, রেডিওতে বাংলা–ইংরেজি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে, তাতে বাংলা ভাষার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আজকাল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান যেন ছাত্রদের ইংলিশ শিখাতেই নির্মিত হয়েছে। অভিবাবকরা বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে বাচ্চাদের ইংরেজি শিখানোর প্রতি। সেই কারণেই দোকানের বাংলা নাম ইংরেজিতে লেখা হয়, গ্রাহকের ইংরেজি জ্ঞান থাকুক আর না থাকুক ব্যাঙ্ক–বিমার কাগজপত্র ইংরেজিতেই লেখা হয়। বিপণি বিতানের পরিবর্তে আমরা দেখি শপিং মল, আদর্শ শহরের পরিবর্তে পাই মডেল টাউন। ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষা সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে বাঙালির মাতৃভাষা কতটা নিরাপদ?

১৩। উপসংহারঃ

  একুশ আমাদের জাতীয় মুক্তির চেতনার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে বৈশ্বিক চেতনায় পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের করণীয় হলাে, জ্ঞানের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়ােগ বৃদ্ধিতে সাধ্যমতাে প্রয়াস চালানাে। মাতৃভাষার শক্তি বাড়িয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে নতুন শতকের জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করা। বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মাতৃভাষার সেবা করার  পাশাপাশি বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানাে। ২১ আমাদের গর্ব ২১ আমাদের অহংকার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই চেতনাকে সবার মধ্যে সঞ্জীবিত করার মধ্যেই নিহিত আছে এই মহান দিবসের সার্থকতা।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা | আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা টাইপ ২

মাতৃভাষা কীঃ সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহংকার। কবি অতুল প্রসাদ সেন এর ভাষায়-    ‘মোদের গরব মোদের আশা  /  আমরি বাংলা ভাষা।’

মাতৃভাষার গুরুত্বঃ প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।’ মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়-              “নানান দেশের নানান ভাষা/বিনা স্বদেশি ভাষা; পুরে কি আশা।”

মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি :  ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন ‘Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan’ তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণের তাজা রক্তে। ভাষার জন্য জীবন দেবার এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবময় ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট-বড়ো প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য :বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে নিজের মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতোই পরম সমাদরের বস্তু। মাতৃভাষাই আত্মপ্রকাশের যথার্থ মাধ্যম। 21-এ  ফেব্রুয়ারির মতো একটি ঐতিহাসিক দিনকে ‘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে পালন করার মধ্যে প্র্রতিটি মানুষকে তার মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার একটি শুভ প্রচেষ্টা নিহিত আছে।

উপসংহারঃ     ‘একুশ আমার চেতনা/একুশ আমার গর্ব’ কেবল বাংলা ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার নিজস্ব মহিমা অক্ষুন্ন রাখার দীপ্ত শপথ নেবার দিন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি হিসেবে আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার সর্বস্তরে বাংলা-ভাষার প্রচার ও প্রসার।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা | আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা টাইপ ৩

সূচনা:

মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা মানব অস্তিত্বের প্রধান তিনটি অবলম্বন। মানুষের পরিচয়ের সেরা কষ্টিপাথর মাতৃভাষা, দেশের ভাষা, জাতির ভাষা। মাতৃভাষার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকারসমূহের মধ্যে অন্যতম। এ অধিকার নিজের মতাে করে কথা বলার অধিকার, স্বতঃস্ফূর্ত চেতনায় উদ্ভাসিত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল বরকত, সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার এবং আরও অনেক নাম না জানা বাঙালি। তাদের সে রক্তে রঞ্জিত একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বজনীন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি:

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রয়েছে একটি গৌরবদীপ্ত ঐতিহাসিক পটভূমি । ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে পূর্ববাংলার জনগণ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল । বাঙালির সেই ঐতিহাসিক ভাষা শহিদ দিবস ২১-এ ফেব্রুয়ারি আজ সারাবিশ্বের ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ১৪ই আগস্ট, ১৯৪৭-এর পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির চেতনায় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের
তরঙ্গ প্রবাহিত হয়েছিল । তদানীন্তন পাকিস্তান রাষ্ট্রের গােড়াপত্তন ঘটে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা, কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলা ভাষাকে পাশ কাটিয়ে গােপনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও উর্দু ছিল মাত্র ৬ শতাংশ লােকের মাতৃভাষা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাকিস্তানি শাসকদের এ অপপ্রচেষ্টা বাঙালিকে বিদ্রোহী করে তােলে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্বপক্ষে একটি প্রস্তাব পাশ করা হলে পূর্ব পাকিস্তানের জাগ্রত ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল প্রচণ্ড ক্ষোভের সাথে।

আমার প্রিয় কবি রচনা রচনা | আমার প্রিয় বিষয়

তবে এ আন্দোলন জোরদার হয় ১৯৪৮ সালে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘােষণার পর থেকেই। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী যতই বাংলা ভাষার বিরােধিতা করতে থাকে ততই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। সমগ্র পূর্ববাংলা একই অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ হয়। বাঙালি ঘােষণা করেছিল, উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকে দিতে হবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ দাবি না মেনে ঘােষণা করে উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এ অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে সরকার ও ছাত্রসমাজের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়। এরই জের হিসেবে বায়ান্নর ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। অনেক প্রাণের তাজা রক্তে সেদিন রঞ্জিত হয় রাজপথ। এ নৃশংসতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তােলে, গর্জে ওঠে সারা বাংলা। আতঙ্কিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে রক্তাক্ত একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। সময়ের দাবিতে ভাষা আন্দোলন পরিণত হয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। একুশের চেতনাই বাঙালিকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য। বাঙালির সেদিনের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। একুশ এখন আর কেবল বাঙালির ‘শহিদ দিবস’ নয়। একুশ এখন সারা বিশ্বের । বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ভাষা শহিদদের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা হয় এ দিনে বাঙালির ‘শহিদ দিবস’ এখন বিশ্ববাসীর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এককথায়, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাজাত প্রয়াসের ফসল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি:

‘৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের গণমানুষের দৃঢ় অঙ্গীকারই বিশ্বসভায় বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসন দিয়েছে সত্যিকার অর্থে মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের হৃদয়ছোঁয়া আবেগই বাংলা ভাষার বিশ্বায়নে সহায়তা করেছে। ২১-এ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে কানাডায় বসবাসরত প্রবাসীদের সংগঠন “Mother Language Lovers of the world Society, এর পেছনে যে দু জন বাঙালির কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি তারা হলেন—আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। তাঁরাই ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারি ২১-এ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘােষণার জন্য জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠান। সাতটি ভাষার ১০ জন মানুষ এ আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। কফি আনান ইউনেস্কোর সাথে যােগাযােগ করার পরামর্শ জানালে ইউনেস্কোকে একটি আবেদনপত্র পাঠানাে হয়। কিন্তু ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগের প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ মিসেস আনা মারিয়া এর প্রত্যুত্তরে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে কোনাে প্রস্তাব গ্রহণের অপারগতা জানান। তিনি বলেন, সরকারের মাধ্যমে আবেদন করা হলে ইউনেস্কো তা বিবেচনা করে দেখবে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের সমর্থন নিয়ে ২১-এ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ স্বীকৃতি হচ্ছে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতি প্রদান। এরই আলােকে ২০০০ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হলাে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির ‘শহিদ দিবস’ এখন পালিত হয় ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্য দেশে এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য:

যেকোনাে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে সে দেশের মাতৃভাষাতেই। তাই ভাষাই একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক। ইউনেস্কোর সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলা হয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষা দিবস কেবল কোনাে দেশ বা জাতির গােষ্ঠী চেতনাকেই সম্মানিত করে না বরং বিশ্বের প্রতিটি জাতির ভাষার প্রতিই মর্যাদা প্রদর্শন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর তাৎপর্য হলাে সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযােগ দেওয়া, যথাযােগ্য মর্যাদা দেওয়া, বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, দুর্বল বলে কোনাে ভাষার প্রতি প্রভুত্ব আরােপের অপচেষ্টা না করা, ছােট-বড় সকল জাতির ভাষাকে সমমর্যাদা দান করা। একুশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে কেবল বাঙালির মাতৃভাষার প্রতিই নয়, বিশ্বমানবের আপন ভাষার মর্যাদার দিকটিও এতে শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবস পালনের ফলে বিশ্ব সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবােধ সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে। একুশের অনন্য চেতনা বিশ্ববাসীকে নিজ নিজ ভাষাকে ভালােবাসার প্রেরণা জোগাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় নৈকট্য বাড়ছে। বিশ্ববাসীর পদচারণায় আমাদের ভাষা হচ্ছে শক্তিশালী এবং ক্রমবিকাশমান । ভাষার প্রতি বাঙালির আত্মত্যাগ আর ভালােবাসা বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দিল আপন ভাষা, আপন সংস্কৃতিকে ভালােবাসার মন্ত্র। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর তাৎপর্য উপলব্ধি করে ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ‘আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয়-স্পন্দন বেড়েছে। সত্যিই গর্বিত আমি।’

উপসংহার:

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিশ্ব দরবারে লাভ করেছে ব্যাপকতা, পেয়েছে বিশেষ মহত্ত্ব। আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে নতুন মহিমা, নতুন গরিমা, নতুন মর্যাদা। ভাষার এ বৈশ্বিক স্বীকৃতি আমাদের দুর্লভ অর্জন । ভাষার প্রশ্নে তাই আমরা আনন্দিত, গর্বিত, তবে আমরা মাতৃভাষাকে ভালােবাসা এবং সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিশ্বের সকল মানুষের মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করব— এ চেতনায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেই এ মহান দিবসের সার্থকতা।

আজকে আপনাদের কে দিয়েছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা | একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা। আশা করি আপনাদের অনেক উপকার হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা, class 10 একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ক্লাস, ৫ একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা, ২০০ শব্দ একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ক্লাস 5, অনুচ্ছেদ রচনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা, দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ১০০০ শব্দের, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদন রচনা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রচনা

Leave a Reply