Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
জীবন বাচাতে অনন্তমূলের উপকারিতা, মেষশৃঙ্গ গাছের উপকারিতা, আশশেওড়া

জীবন বাচাতে অনন্তমূলের উপকারিতা

আজকে এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা করবো, যার নাম অনন্তমূল, এটি লতানো উদ্ভিদ। যে কোন গাছের উপর ভর করে কিংবা অন্য গাছকে অবলম্বন করে পেচিয়ে থাকে। এই অনন্তমূলের উপকারিতা অনেক বেশি অন্যন্য গাছের তুলনায়।

এই গাছের মূল অনেক লম্বা হয় এবং মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে বলে এর নাম হয়েছে অনন্তমূল। এই গাছের পাতা দেখতে সংলাল, সরু ও লম্বা, কালচে সবুজ। কিন্তু অনন্তমূল এর পাতার মাঝখানে শিরা বরাবর সাদা দাগ থাকে।

এই গাছের পাতা ও লতার যেকোন অংশ ছিড়লে একধরনের সাদা রঙের কষ বের হয়। অনন্তমূল ভারতের প্রায় সব প্রদেশেই অল্পবিস্তর পাওয়া যায়। কিন্তু প্রদেশ ভেদে পাতার আকারের ইতর বিশেষ হয়। এই গাছের মাঝখানের শিরা বরাবর সাদা দাগ আছে। অনন্তমূল ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয় গাছের মূল। বিশেষ করে এই গাছের মূলে একটা গন্ধ আছে।

অনন্তমূলের উপকারিতা

নিম্নে এই অন্তমূল উদ্ভিদের লৌকিক ব্যবহারে সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:

অর্শরোগ নিরাময়ে: এই রোগ নিরাময়ে ৩ গ্রাম অনন্তমূল পানিতে বেটে দুধের সাথে জ্বাল দিয়ে, সেই দুধ দই পেতে পরের দিন সকালে খেতে হবে। আর এভাবে খেলে খাওয়ার রুচি হবে ও ক্ষুধা বাড়বে। এর সাথে অর্শেরও উপশম হবে।

Read more: ক্যান্সার থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও বিকল্প উপায় | ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়

লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনতে: অনেকের দেখা গিয়েছে যৌবন থাকতেও যেন নেই লাবণ্য, কমে গিয়েছে সৌন্দয্য, আবার ক্ষুধা কম লাগে, সে ক্ষত্রে অনন্তমূল চূর্ণ ১/২ গ্রাম মাত্রায় গরম দুধ ও একটু মিছরির গুড়া মিশিয়ে খেতে হয়। এভাবে নিয়মিত খেলে ঔ সব অসুবিধাগুলি চলে যায়।

হাত পায়ের জ্বলা কমাতে: অনেক সময় দেখা যায় যে, যাঁদের দেহ জ্বালা করে, তাঁরা যদি ৩ গ্রাম আন্দাজ অনন্তমূল পানিতে বেঁটে চিনি দিয়ে সরবত করে খেলে, হাত পায়ের জ্বলা আর থাকবে না।

অরুচিতে কমাতে: অনেক সময় দেখা যায় যাদের বিকৃত পিত্ত শ্লেষ্মার চাপা আছে। এই সমস্যার জন্যেই হয় অরুচি ও অগ্নিমান্দ্য। আবার বমি বমি ভাব এর ক্ষেত্রে অনন্তমূল থেতো করে গরম পানিতে ভিজিয়ে সকালে ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটা খেলে, অরুচি দূর হবে।


হাঁপানী উপশমে:
 এই রোগ যাদের আছে তাদের জন্য অনন্তমূল ৩ গ্রাম পানিতে বেটে অল্প পরিমান লবণ মিশিয়ে সরবতের মতো দুই বেলা খেতে হবে। এভাবে খেলে অবশ্য ভালো হবে, তবে বয়সানুপাতে অনন্তমূল নিয়ম করে খেতে হয়।

খুসখু্সি কাশি: 
কেউ যদি অনন্তমূল চূর্ণ/পাউডার ১/২ গ্রাম পরিমানে সকালে ও সন্ধ্যায় দুবার নিয়ম করে খেলে। এই সমস্যা থেকে উপশম পাওয়া যায়।

অনিয়মিত ঋতুস্রাবে সমস্যা সমাধানে: এই সমস্যাকে আয়ুর্বেদের ভাষায় বলা হয় রক্তপ্রদর। এই রক্তে অনেক সময় দুর্গন্ধও থাকে। তবে এই রোগ নিরাময়ে ৩ গ্রাম অনন্তমূল বেঁটে সকালে ও বিকালে দুধ বা পানি সহ খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত খেলে এ সমস্যা দূর হবে।

ঘামের দুর্গন্ধ দূরে করতে: অনেক সময় গরমে শরীরের যেখানে সেখানে ঘামে দুর্গন্ধ বের হয়। আর এই সমস্যা দূর করতে অনন্তমূল বেঁটে অল্প ঘি মিশিয়ে শরীরে মাখতে হয়। মাখার কিছুক্ষন পর পরে স্নান (গোসল)করতে হয়। এভাবে শরীরের দূর্গ্নদ্ধ চলে যায়।

আমাশা নিরাময়ে:
 এই অনন্তমূলের চূর্ণ/পাউডার মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে আমাশা ভালো হয়।

ক্ষত নিরাময়ে: এই অনন্তমূলের ক্বাথ দিয়ে ঘা ধুলে ঘা দ্রুত্ব শুকিয়ে যায়।

খোস পাচড়া নিরাময়ে: এই রোগ যদি হয়ে থাকে তাহলে অনন্তমূলের চূর্ণ/পাউডার ১/২ গ্রাম পারিমানে অথবা ক্বাথ সেবনে এই রোগ ভালো হয়ে যায়। আবার অনন্তমূলের ক্বাথ দিয়ে ধুলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

জিহ্বার ক্ষত নিরাময়ে: অনেক সময়ে দেখা যায় আমাদের জিহ্বায় ক্ষত হয়েছে, তখন ভেড়ার দুধ দিয়ে অনন্তমূল ঘষে লগালে ক্ষত দূর হয়। বিশেষ করে শিশুদের জিহ্বার ক্ষত সারাতে বেশ ভালো উপকার হয়।

পাথুরী রোগ নিরাময়ে: অনেক সময়ে দেখা যায় অনেকের পাথর রোগ হয়েছে সেই ক্ষেত্রে গাভীর দুধ দিয়ে অনন্তমূল বেঁটে খাওয়ালে এই রোগটির যন্ত্রণা দ্রুত্ব লাঘব হয়।

ব্যবহার অংশ: পাতা সহ গাছের সমস্ত অংশ।

রাসায়নিক উপাদান: অনন্তমূল এমন একটি উদ্ভিদ যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে,তার মধ্যে হলোঃ মূলের প্রধান উপাদান কুমারিন ও উদ্বায়ী তেল। এতে রয়েছে টার্পিন, স্টেরল, অ্যালকোহল, লুপিয়ল, স্যাপোনিন ও ট্যানিন বিদ্যমান।

অনন্তমূল গাছ কোথায় পাওয়া যায়

এই অনন্তমূল গাছ বাংলাদেশে যে কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে এটি একটি বনজ ভেষজ উদ্ভিদ। অনেকেই বাড়ীর আঙ্গীনায়,বাগানে, ফুলের বাগানে অথবা ঔষধি গাছ হিসাবে চাষ করে থাকেন। আপনি চাইলে সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এই গাছ প্রাকৃতিক ভাবেও জন্মায়। আবার অনেক মানুষ চাষ করেও থাকে।

অনন্তমূল চাষ পদ্ধতি

রোপনের সময়: বেশির ভাগ সময় দেখা যায় এই উদ্ভিদ আশ্বিন হতে পৌষ মাসে ফল ধরে। কিন্তু বীজ থেকে চারা তৈরি করে লাগানো যায়। তবে বেশির ভাগ অঙ্গজ অংশের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা হয়। কিন্তু বর্ষা মেৌসুমের শুরু হয়ার আগে বীজ বপন করতে হয়। বর্ষার আগে করলে সচেয়ে ভালো হয়।

জমি নির্বাচন: অনন্তমুল চাষের জন্য প্রায় সব ধরনের মাটিতেই জন্মে।

জমি তৈরি: যে কোন ফসল চাষের জন্য জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে, এটির ক্ষেত্রেও একই। তবে চারা রোপণের পূর্বে বীজতলার মাটি বা গর্তের মাটির সাথে জৈব সার ৩ঃ১ অনুপাতে মিশাতে হবে। তাহলে বীজ গজানোর সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর চারা হবে।

বংশ বৃদ্ধি: অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশ বৃদ্ধি করে।

পরিচর্যা:
i)নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করতে হবে।
ii) বেশির ভাগ শুস্ক মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
iii) এই গাছে সার না দিলেও চলে। কিন্তু প্রতি বছর মিনিমাম ১০-১৫ কেজি জৈব সার দুই কিস্তিতে দিতে হবে। ১ম কিস্তি মধ্য ফাল্গুন-মধ্য বৈশাখ মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তি মধ্য আশ্বিন-মধ্য অগ্রহায়ন দিতে হবে। কিন্তু গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে জৈব সারের পরিমাণ মিনিমাম ১০% বৃদ্ধি করতে হবে।

ফুল আসার সময়: বেশির ভাগ দেখা যায় এই গাছের ফুল বৈশাখ-আষাঢ় (মধ্য এপ্রিল-মধ্য জুলাই) ফুটে।

ফল ধরার সময়: বেশির ভাগ দেখা যায় এই গাছের ফল শ্রাবন-আশ্বিন (মধ্য জুলাই-মধ্য অক্টোবর) ধরে।

অনন্তমূলের ব্যবহার-

অর্শ– তিন গ্রাম অনন্তমূল বেটে, গরুর দুধের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে দই পাততে হবে। সন্ধ্যার সময় এটা করা দরকার। পরের দিন সেই দই খেলে অর্শ  রোগ অবশ্যই উপকার হবে। সঙ্গে সঙ্গে খাবারে রুচি এবং ক্ষিদে বাড়বে।

পাথুরীর যন্ত্রণা– গরুর দুধ দিয়ে ২/৩ গ্রাম অনন্তমূল বেটে খাওয়ালে খুবই তাড়াতাড়ি রোগী অসহ্য যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পায়।

জিহবাক্ষত– ২০ মিলিলিটার ভেড়ার দুধে শুকনো অনন্তমূল ঘষে মাঝে মাঝে ক্ষতস্থানে লাগালে জিভ ও মুখে ঘা সারে।

মূত্ররোধ– ৬০/৭০ গ্রাম অনন্তমূল ছোট ছোট করে কেটে ২০ মিলিলিটার পানিতে সারারাত ভিজিয়ে সে পানি পরিস্কার পাতলা কাজড়ে ছেঁকে পান করলে ৩/৪ গুন বেশি প্রসাব হয়। এ ছাড়া মূত্র রোগে খুবই

হজমশক্তি বাড়ে- ২/৩ গ্রাম শুকনো অনন্তমূল গুঁড়ো, সকালে খালিপেটে একগ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে দিয়ে খেলে ক্ষুধা ও হজমশক্তি বাড়ে নিয়মিত ১০ /১৫ দিন খাওয়া প্রয়োজন।

পিত্ত বাড়লে– শরীরে পিত্ত বাড়লে বিশেষ করে ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে হাত-পায়ের তালু জ্বালা করে। ২-৩ গ্রাম অনন্তমূল শিলে বেটে দু’চামচ চিনি মিশিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে শরবত বানিয়ে খেলে পিত্ত কমে এবং হাত পায়ের তলুর জ্বালাপোড়া দূর হয়।

মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে– ১২৫ গ্রাম অনন্তমূল  এবং দেড় লিটার পানি একটি মাটিতে হাড়িতে রেখে সেদ্ধ করতে হবে। হাড়ির মুখে মাটির সারা দিয়ে অবশ্য চাপা দেওয়া প্রয়োজন। ৪০ মিনিটের মত সেদ্ধ হবার পর হাড়ি আগুন থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে ছেকে নিতে হবে। দিনে একবার করে চায়ের কাপের এককাপ পরিমাণ খেলে বুকের দুধ বাড়বেই।

 

 

 

জীবন বাচাতে অনন্তমূলের উপকারিতা, মেষশৃঙ্গ গাছের উপকারিতা, আশশেওড়া গাছের উপকারিতা, ধাইফুল এর উপকারিতা, রাস্না গাছের উপকারিতা, অশ্বগন্ধার উপকারিতা, শঙ্খমূল এর উপকারিতা, হোমিওপ্যাথিক অশ্বগন্ধার উপকারিতা, তুরুক চন্ডাল গাছের উপকারিতা,

রাস্না গাছের উপকারিতা, আশশেওড়া গাছের উপকারিতা, গাইনুরা গাছের উপকারিতা, অশ্বগন্ধা গাছের ফুল, বাংলাদেশি গাছের নামের তালিকা, হারবা গাছ, ধাইফুল এর উপকারিতা, বাংলার গাছ

Leave a Reply