চাওয়ালা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী | Narendra Modi Biography in Bengali

শৈশবে চা বিক্রেতা
ভদনগরের এক গুজরাটি পরিবারে  ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির জন্ম। তার পিতার নাম দামোদর দাস মুলচান্দ ও মায়ের নাম হীরাবেন।  চা-বিক্রেতা বাবার চার সন্তানের মধ্যে মোদি ছিলেন তৃতীয়। শৈশবে বাবাকে সাহায্য করতেন বেদনগর রেলস্টেশনে; যাত্রীদের কাছে হেঁটে হেঁটে চা বেচতেন মোদি।পরবর্তীকালে নিজেও চায়ের দোকান দেন তিনি। ৮ বছর বয়সে আরএসএসের সঙ্গে পরিচয় হয় মোদীর এবং পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘ পথ চলেন তিনি। ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সে যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যদিও বেশিদিন সংসার করা হয়নি৷ ছাত্র হিসেবে সাদামাটা হলেও মোদী বিতর্কে ছিলেন ওস্তাদ৷ ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে রাজনীতির দরজায় পা রাখেন মোদী৷

গুজরাটের গদিধারী ১৯৮৫ সালে আরএসএস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার ১০ বছরের মাথায় দলের ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান

২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অভিষেক হয়েছিল অনভিজ্ঞ মোদির। তারপর মাত্র ১২ বছরের মাথায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী। তাঁর সহকর্মীদের মতে, যৌবনের শুরু থেকেই লক্ষ্য অর্জনে আপসহীন ছিলেন হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ৬৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।

ভারতের ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে মোদিই প্রথম ‘প্রচারক’, যিনি মাত্র ১৩ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় দেশটির সবচেয়ে উন্নত গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। অথচ এর আগে প্রশাসন চালানোর কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না তাঁর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক নরসিমা রাও বলেন, ‘মোদি দৃঢ়প্রত্যয়ী। তিনি একেবারেই সত্। আর ভীষণ পরিশ্রমী। পরিণতির কথা ভেবে কোনো কিছুতেই ছাড় দেননি তিনি। সাময়িক জয়ের মোহে কখনোই মোদিকে বাঁধা যায়নি।’

পরিবার ও স্কুল জীবন
ক্ষীণ আলো-বাতাস প্রবেশে সক্ষম, এমন এক বাড়িতে বাস ছিল মোদি পরিবারের। সেখানে জ্বলতে থাকা একমাত্র বাতিটি নিরন্তর জোগান দিত ধোঁয়া আর কালি।

পরিচিতজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্কুলে মোদি ছিলেন আর দশটা ছাত্রের মতোই। কিন্তু ওই বয়স থেকেই তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, টানা চার দশক ধরে ‘নবরাত্রি’র (উত্তর ভারতে পালিত হিন্দুদের একটি উত্সব) সময় উপবাস করছেন তিনি।

জীবনীগ্রন্থ রচয়িতা নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, কম বয়সে বিয়ে করেন মোদি। তবে শারীরিক সংসর্গে লিপ্ত হননি তিনি। বিয়ে করার বিষয়টি প্রকাশও করেননি তিনি। এর পেছনে একটি বড় কারণ ছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত মোর্চা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ‘প্রচারক’ পদ। গোপনীয়তা বজায় না রাখলে হয়তো ওই পদে আসীন হতে পারতেন না তিনি।

স্কুলে পড়ার সময়ই মোদির অর্চনার বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। তিনি প্রায়ই পরিবার থেকে বেরিয়ে দূরে নির্জন স্থানে গিয়ে উপাসনা করতেন। কখনো তাঁকে দেখা যেত হিমালয়ে গিয়ে উপাসনা করতে।
১৯৬৭ সালে চূড়ান্তভাবে পরিবারের সঙ্গ ত্যাগ করেন তিনি।

আরএসএস ও অন্যান্য
১৯৭১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আরএসএসে যোগ দেন মোদি। কিছুদিন পরই সংগঠনটির দিল্লির কার্যালয়ে যান তিনি। সেখানে তাঁর অনেকগুলো কাজের মধ্যে ছিল ভোর চারটায় ঘুম থেকে ওঠা, নাশতার জন্য চা তৈরি এবং কোনো কোনো সময় জ্যেষ্ঠ সতীর্থদের জন্য হালকা নাশতা তৈরি। ওই সময় আরএসএসে আসা বিভিন্ন চিঠির উত্তরও দিতেন তিনি। বাসন-কোসন মাজা, ঝাড়ু দেওয়া ছাড়াও সমগ্র ভবন পরিষ্কার করতেন মোদি। এর পাশাপাশি নিজের পোশাক-আশাকও তাঁকেই ধুতে হতো।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্ন এবং অতঃপর


ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারির করার পর রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে ভরতে থাকেন। সে সময় দিল্লি থেকে গুজরাটে ফেরেন মোদি। একটি স্কুটারে চড়ে গুজরাটের এখানে-সেখানে যান তিনি। মাঝে মাঝে আবার লাপাত্তাও হয়ে যেতেন। তবে সুযোগ পেলেই ইন্দিরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করতেন বিভিন্ন পুস্তিকা।
রাজনীতিতে জড়ানোর পরও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন মোদি। পরে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার জন্য বড়দের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ান মোদি। ১৯৮৭-৮৮ সময়ে তিনি বিজেপির গুজরাট ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। মূলত, এর মধ্য দিয়েই মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি।

দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে ধীরে ধীরে বিজেপিতে নিজের অবস্থান পোক্ত করেন মোদি। ১৯৯০ সালে তিনি আদভানির নেতৃত্বে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রায় বড় ভূমিকায় ছিলেন।
১৯৯১ সালে তত্কালীন দলীয় প্রধান মুরলি মনোহর যোশির নেতৃত্বে কন্যাকুমারী-শ্রীনগর একতা যাত্রারও অন্যতম সংগঠক ছিলেন মোদি।

২০০২ সালের হিন্দুমুসলমান দাঙ্গার সময়টা ছিল মোদির উত্থানের সবচেয়ে বড় অনুঘটক। সে সময়ে হিন্দু দাঙ্গাবাজদের উসকে দিয়ে তিন হাজার মুসলমানকে হত্যা ষড়যন্ত্রে মোদিকে জড়িয়ে অভিযোগ থাকলেও তাঁকে বাঁচিয়ে দেন আদভানি। তবু বিভিন্ন মহল থেকে মোদির পদত্যাগের দাবি ওঠে। কিন্তু ২০০২ সালে গুজরাটের নির্বাচনে মোদির জয় তাঁকে আবারও আলোচনায় আনে। মোদির রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘোরে তখন থেকেই।

বর্তমানে সেই মোদিই উন্নয়ন ও সুশাসনে দলীয় সামর্থ্যের প্রতীক বনেছেন। বিপুল মধ্যবিত্ত তাঁকে সমর্থন জোগাচ্ছে। তাঁর ‘আমিও পারি’ নীতি অনেকের মধ্যেই আশার সঞ্চার করেছে। আর এরই ফল হিসেবে এক দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা বিজেপি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। হয়তো মোদির ওপর ভর করেই ভারত শাসনের স্বপ্ন দেখছে দলটি।

Narindra modi (
Narindra modi

মোদী ভারতেমর ১৪তম প্রধানমন্ত্রী, যিনি ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে চিত্তাকর্ষক জয় এনে দেন। মোদীর ব্যাপারে একটি মজার বিষয় হল তিনি প্রথমবার বিধায়ক হয়েই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন। একইভাবে প্রথমবার সাংসদ হয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির সাফল্যের জন্য মোদীকেই কৃতীত্ব দেওয়া হয় এবং ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কোনও দল।

Read More: কালিদাস পণ্ডিতের ধাঁধাঁ – ১। পর্ব -২ moral stories Kalidas Pondit In Bangla কালিদাস

দ্বিতীয়বারের মত 2019 তে তাকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয় ও নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে ২৬শে মে ২019 সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতের 15th দশ প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন

৬) সন্ন্যাস জীবন কাটানোর সময় নরেন্দ্র মোদির মাত্র দুটি পোশাক ছিল। ইস্ত্রি করা পরিপাটি পোশাক পরতে পছন্দ করেন তিনি। অন্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন ও মোদি ব্র্যান্ডটাকে রূপ দেয়ার ব্যাপারে বেশ সচেতন।

৯) নরেন্দ্র মোদিকে বেশ রক্ষণশীল বলে মনে হলেও প্রযুক্তিকে দূরে ঠেলেননি তিনি। প্রতিদিনই ইন্টারনেটে নিজের খবরগুলো দেখে নেন। তার ঘড়ির সংগ্রহটাও মন্দ নয়।

১০) রাতে ৪ ঘণ্টা ঘুমান মোদি। এ নেতা অফিসে ঢোকেন সকাল ৭টায় এবং রাত ১০টা বা আরও রাত পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন।

১১) ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে শশী ঠারুরের পর নরেন্দ্র মোদিই নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। সেটার বিশেষত তার তাকানোর ভঙ্গির কারণেই।

১২) নরেন্দ্র মোদির শখের মধ্যে ছবি তোলা ও কবিতা পড়া। লিখতেও ভালোবাসেন তিনি। সমাবেশে যে বক্তৃতা দেন, তার একটি বড় অংশ তার নিজেরই লেখা। নিজের তোলা ছবির প্রদর্শনীও করেছেন তিনি।

১৩) নিরামিষাশী মোদি নিঃসঙ্গ থাকতে ভালোবাসেন ও অন্তর্মুখী স্বভাবের। কোন ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ নেই তার।

১৪) টাইম ম্যাগাজিনের এশিয়া এডিশনের প্রচ্ছদে নরেন্দ্র মোদিকে স্থান দেয়া হয়েছিল। টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১০০ শীর্ষ প্রভাবশালীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।

১৫) মোদি স্বামী বিবেকানন্দ ও ইন্দিরা গান্ধীকে নিজের আদর্শ মনে করেন।

একজন নরেন্দ্র মোদী চা ওয়ালা ১৯৫০ সালে গুজরাটের নিম্নবিত্ত এক ঘাঞ্চি পরিবারে জন্ম নেয়া নরেন্দ্র মোদী কৈশরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন৷ ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সে যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যদিও বেশিদিন সংসার করা হয়নি৷ ছাত্র হিসেবে সাদামাটা হলেও মোদী বিতর্কে ছিলেন ওস্তাদ৷ ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে রাজনীতির দরজায় পা রাখেন মোদী৷

গুজরাটের গদিধারী ১৯৮৫ সালে আরএসএস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার ১০ বছরের মাথায় দলের ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান ১৯৯৫ সালে গুজরাটের নির্বাচনে চমক দেখানো মোদী৷ ১৯৯৮ সালে নেন দলের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব৷ ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দলের মনোনয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদী, যে দায়িত্ব তিনি এখনো পালন করে চলেছেন৷

দাঙ্গার কালিমা মোদীকে নিয়ে আলোচনায় ২০০২ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গ আসে অবধারিতভাবে৷ স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গুজরাটে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন৷ মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেন৷ তিনি এ অভিযোগ স্বীকার করেননি, আদালতও তাঁকে রেহাই দিয়েছে৷ তবে দাঙ্গার পক্ষে কার্যত সাফাই গেয়ে, হিন্দুত্ববাদের গান শুনিয়েই তিন দফা নির্বাচনে জয় পান মোদী৷

রূপান্তর দাঙ্গার পর নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদী৷ একজন বিতর্কিত নেতার বদলে উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে শুরু হয় ‘গুজরাট মডেল’-এর প্রচার৷ ২০০৭ সালের পর নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে তুলে ধরতে নতুন প্রচার শুরু করেন এই বিজেপি নেতা, প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্র্যান্ড মোদী’৷গুজরাটের উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে কলঙ্কিত ভাবমূর্তিকে তিনি পরিণত করেন ভারতের ত্রাতার চেহারায়৷

ভারতের পথে পথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নরেন্দ্র মোদী পাড়ি দিয়েছেন তিন লাখ কিলোমিটার পথ৷ সারা ভারতে পাঁচ হাজার ৮২৭টি জনসভায় তিনি অংশ নিয়েছেন, নয় মাসে মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচ কোটি মানুষের৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে শুরু করলেও এবার তিনি হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচার এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে, যদিও বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷

Narindra modi
Narindra modi

বিস্ময়কর ১৫ টি তথ্য
ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নরেন্দ্র মোদি। ভারতজুড়ে এখন বিজেপির জয়-জয়কার। নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে জানা-অজানা ১৫টি তথ্য তাই পাঠকদের জন্য, মোদির গল্পটি হতে পারে অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণার।

১) ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির জন্ম। তার পিতার নাম দামোদরদাস মুলচান্দ ও মায়ের নাম হীরাবেন। ৬ সন্তানের মধ্যে মোদি ছিলেন তৃতীয়। মুদি ব্যবসায়ীদের পরিবারেই মোদির জন্ম। শৈশব থেকেই মোদি চায়ের স্টলে তার পিতাকে সাহায্য করতেন।

২) বিয়ের ব্যাপারে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনদিন মুখ খোলেননি মোদি। এর আগে ৪ বার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেও আবেদন ফর্মে স্ত্রীর কলামটি বরাবরই ফাঁকা রেখেছিলেন। পরিবারের ঐতিহ্য মেনে ১৩ বছর বয়সে যশোদাবেনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ব্যাচেলর বা কুমার জীবন কাটানোর প্রতি তীব্র ঝোঁক থাকায় যশোদাবেনের সঙ্গে বিয়ে কখনও মেনে নেননি মোদি। একইভাবে যশোদাবেনও একাকী থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

৩) ১৫ বছর বয়স থেকেই দেশপ্রেমিক মোদি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছিলেন তিনি। সন্ন্যাস জীবনের প্রতি ঝোঁক থাকায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে সাধুদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত হিমালয়ে গিয়ে ২ বছর সন্ন্যাস জীবন কাটান।

৪) আহমেদাবাদে স্টেট ট্র্যান্সপোর্ট অফিসে নরেন্দ্র মোদি তার ভাইয়ের সঙ্গে চা বিক্রি করতেন। তখন থেকেই কঠোর সংগ্রাম এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় সত্যিকার অর্থ অনুধাবন করেছিলেন।

৫) গুজরাটের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ২ হাজার ৬৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। গুজরাটে টানা চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এখনও দায়িত্ব পালন করছেন।

৬) সন্ন্যাস জীবন কাটানোর সময় নরেন্দ্র মোদির মাত্র দুটি পোশাক ছিল। ইস্ত্রি করা পরিপাটি পোশাক পরতে পছন্দ করেন তিনি। অন্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন ও মোদি ব্র্যান্ডটাকে রূপ দেয়ার ব্যাপারে বেশ সচেতন।

৭) ২০০৫ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ভিসা না পেলেও যুক্তরাষ্ট্রে তিনি পাবলিক রিলেশন্স ও ইমেইজ ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ৩ মাসের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স সম্পন্ন করেন। বিজেপির জয়ের জন্য এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোদির স্বতঃস্ফূর্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত নির্বাচনী প্রচারণা ভীষণ প্রয়োজন ছিল।

৮) নরেন্দ্র মোদির রসিকতাও সাধারণ নয়। বিরোধী দল মোদির এ গুণটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও এক-বাক্যের রসনাগুলোর মধ্যে তীক্ষè মেধা ও বুদ্ধির ছটা লক্ষ্যণীয়।

৯) নরেন্দ্র মোদিকে বেশ রক্ষণশীল বলে মনে হলেও প্রযুক্তিকে দূরে ঠেলেননি তিনি। প্রতিদিনই ইন্টারনেটে নিজের খবরগুলো দেখে নেন। তার ঘড়ির সংগ্রহটাও মন্দ নয়।

১০) রাতে ৪ ঘণ্টা ঘুমান মোদি। এ নেতা অফিসে ঢোকেন সকাল ৭টায় এবং রাত ১০টা বা আরও রাত পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন।

১১) ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে শশী ঠারুরের পর নরেন্দ্র মোদিই নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। সেটার বিশেষত তার তাকানোর ভঙ্গির কারণেই।

১২) নরেন্দ্র মোদির শখের মধ্যে ছবি তোলা ও কবিতা পড়া। লিখতেও ভালোবাসেন তিনি। সমাবেশে যে বক্তৃতা দেন, তার একটি বড় অংশ তার নিজেরই লেখা। নিজের তোলা ছবির প্রদর্শনীও করেছেন তিনি।

১৩) নিরামিষাশী মোদি নিঃসঙ্গ থাকতে ভালোবাসেন ও অন্তর্মুখী স্বভাবের। কোন ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ নেই তার।

১৪) টাইম ম্যাগাজিনের এশিয়া এডিশনের প্রচ্ছদে নরেন্দ্র মোদিকে স্থান দেয়া হয়েছিল। টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১০০ শীর্ষ প্রভাবশালীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।

১৫) মোদি স্বামী বিবেকানন্দ ও ইন্দিরা গান্ধীকে নিজের আদর্শ মনে করেন।

Narindra modi
Narindra modi

Read More: স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী বিবেকানন্দের জীবনী | Swami Vivekananda Biography in Bengali

ভারতের গুজরাট রাজ্যের এক রেলস্টেশনে চা বিক্রি করতেন বালক নরেন্দ্র মোদি। তারপর একসময় নাম লেখালেন রাজনীতিতে। গুজরাটের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে ২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)। প্রধানমন্ত্রী হন সেই পরীক্ষিত মোদিকেই।

তবে মোদির সমালোচকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক জীবনে তাঁর উত্থানের পথে সহায়তাকারীদের ছুড়ে ফেলেছেন তিনি। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন বিজেপির অন্যতম তারকা রাজনীতিক লালকৃষ্ণ আদভানি। প্রায় অচেনা মোদিকে তিনিই আজকের অবস্থানে এনেছেন।

শৈশবে চা বিক্রেতা
গুজরাটের সিংহাসনে বসা মোদির বর্তমান জীবনের বিপরীতে অতীতটা নিতান্তই জলুসহীন। গুজরাটের মেহসানা জেলার এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্ম তাঁর। চা-বিক্রেতা বাবার চার সন্তানের মধ্যে মোদি ছিলেন তৃতীয়। শৈশবে বাবাকে সাহায্য করতেন বেদনগর রেলস্টেশনে; যাত্রীদের কাছে হেঁটে হেঁটে চা বেচতেন মোদি।

 

Narindra modi
Narindra modi

 

 

২০১৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনের প্রাঙ্গণে ইতিহাস রচিত হয়। ঐ দিন নরেন্দ্র মোদী ভারতের মানুষের কাছ থেকে এক ঐতিহাসিক জনাদেশ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে ভারতের মানুষ একজন প্রাণবন্ত, স্থিরমতি এবং উন্নয়নমুখী নেতাকে দেখেছেন। যিনি শতকোটি ভারতীয়ের আশা-আকাঙ্খা রূপায়ণে এক আলোর প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। উন্নয়নের ওপর তাঁর জোর, খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁর নজরদারি ও দরিদ্রদের মধ্যে দরিদ্রতম মানুষদের জীবনে গুণগত পরিবর্তনে তাঁর উদ্যোগ নরেন্দ্র মোদীকে একজন জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন নেতা হিসাবে দেশে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

 

নরেন্দ্র মোদীর জীবন যেন সাহস, করুণা এবং নিরবচ্ছিন্ন কঠোর পরিশ্রমের এক অভিযাত্রা। খুব কম বয়সে তিনি মানুষের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। তৃণমূল স্তরের কর্মী হিসাবে, সংগঠক হিসাবে এবং তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটের ১৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীত্বের কার্যকালের মেয়াদে প্রশাসক হিসাবে তাঁর দক্ষতা তিনি তুলে ধরেছেন। যেখানে, মানুষের জন্য এবং সুপ্রশাসনের জন্য তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি এক অসাধারণ পরিবর্তনসাধন করেছেন।

চরিত্র গঠনের বছরগুলি

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের আগে নরেন্দ্র মোদী অনুপ্রেরণাময় জীবনের শুরু হয় উত্তর গুজরাটের মেহসানা জেলার ভাদনগর নামের এক ছোট শহরের অলিগলিতে। ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম হয়। তার ঠিক তিন বছর আগেই ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এজন্য তিনি স্বাধীন ভারতে জন্মানো ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি দামোদরদাস মোদী এবং হীরাবাঈ মোদীর তৃতীয় সন্তান। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাঁদের পুরো পরিবার ৪০ ফুট X ১২ ফুট একটি একতলা বাড়িতে থাকতেন।

নরেন্দ্র মোদীর চরিত্র গঠনের প্রথমদিকের বছরগুলিতে তিনি কঠোরতার শিক্ষা পান। একইসঙ্গে, তিনি তাঁর পড়াশোনা এবং অবসর সময়ের মধ্যে সমতাবিধান করে পারিবারিক চায়ের দোকানে সময় দিতেন। কারণ, তাঁর পরিবার জীবিকা নির্বাহের জন্য এই কাজ করত। তাঁর স্কুলের বন্ধুদের স্মৃতিচারণে জানা যায়, বালক বয়সে তিনি ছিলেন পরিশ্রমী, বিতর্কের প্রতি তাঁর ঝোঁক এবং নতুন নতুন বই পড়ার আগ্রহ তাঁর ছিল। স্কুলের বন্ধুরা জানিয়েছেন, কিভাবে শ্রী মোদী স্থানীয় গ্রন্থাগারে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াশুনা করতেন। সেই বয়সে তিনি সাঁতার কাটতেও ভালোবাসতেন।

শিশু বয়সে শ্রী মোদীর চিন্তা-ভাবনা এবং স্বপ্ন তাঁর বয়সের অন্যান্যদের তুলনায় ছিল অনেকটাই আলাদা। হয়তো, তাঁর চরিত্রে বহু শত বছর আগে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা এবং দর্শনের কেন্দ্র হিসাবে ভাদনগরের প্রভাব পড়েছিল। বাল্য বয়সেই তাঁর মনে সমাজে পরিবর্তন আনার এক স্পৃহা তিনি অনুভব করতেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের কাজে বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। স্বামীজির প্রভাবেই তাঁর ভাবজগতের অভিযাত্রা শুরু হয়, যা তাঁকে ভারত’কে জগতের শ্রেষ্ঠ হিসাবে পরিণত করার স্বামীজির স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়।

সতেরো বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েন। দু’বছর ধরে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। বাড়ি ফিরে আসার পর তিনি এক পরিবর্তিত মানুষে পরিণত হন। যে মানুষটির মধ্যে জীবনে যা তিনি অর্জন করতে চান তার একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য তৈরি হয়েছে। তিনি আমেদাবাদে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আর.এস.এস.) ভারতের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কর্মরত এক সমাজ-সংস্কৃতিমূলক এক সংগঠন। ১৯৭২ সালে আমেদাবাদে গিয়ে তিনি যখন আর.এস.এস. – এর প্রচারক হিসাবে কাজ শুরু করেন তখন তাঁর জীবন ছিল কঠোর পরিশ্রমের। তাঁর দিন শুরু হত ভোর পাঁচটায় এবং গভীর রাত্রে তা শেষ হত। ১৯৭০ – এর দশকের শেষের দিকে যুবক নরেন্দ্র মোদী জরুরি অবস্থায় বিপর্যস্ত ভারতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যোগ দেন।

১৯৮০’র দশকে সঙ্ঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে একজন আদর্শ সংগঠক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৯৮৭ সালে গুজরাটে বি.জে.পি.’র সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাঁর জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। নতুন দায়িত্বে তাঁর প্রথম কাজ ছিল আমেদাবাদ নগর নিগমের নির্বাচনে বি.জে.পি.’র প্রথম জয়লাভ নিশ্চিত করা। এছাড়া, ১৯৯০ সালে গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে বি.জে.পি. যাতে কংগ্রেসের পরেই দ্বিতীয় স্থান দখল করে তাও তিনি নিশ্চিত করেন। ১৯৯৫ সালে বিধানসভা নির্বাচনে শ্রী মোদীর সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে বি.জে.পি.’র জনসমর্থন বৃদ্ধি পায়। এই বিধানসভা নির্বাচনে বি.জে.পি. ১২১টি আসন লাভ করে।

১৯৯৫ সাল থেকে শ্রী মোদী বি.জে.পি.’র জাতীয় পর্যায়ের সম্পাদক হিসাবে হরিয়ানা এবং হিমাচলপ্রদেশের সাংগঠনিক দায়িত্ব পান। বি.জে.পি.’র সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে বি.জে.পি.’র জয় নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করে যান। ২০০১ – এর সেপ্টেম্বর মাসে শ্রী মোদী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী বাজেপেয়ীর কাছ থেকে একটি ফোন পান। তার পর থেকেই তাঁর জীবনে নতুন আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই পর্যায়ে সাংগঠনিক রাজনীতির কঠিন এবং কঠোর পথ থেকে তিনি প্রশাসনে যোগ দেন।

প্রশাসকের জীবন

বি.জে.পি.’র সংগঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি থেকে দেশের অন্যতম সুপ্রশাসক হিসাবে স্বীকৃত এক নেতা হিসাবে এক দশকে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানে লুকিয়ে আছে সহজাত দৃঢ়তা এবং প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্যেও শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদানের এক অসাধারণ কাহিনী। রাজনৈতিক সংগঠন থেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনিক জীবনে কর্মপরিবর্তনে তিনি সময় বা প্রশিক্ষণের কোনও সুযোগ পাননি। প্রশাসনিক জীবনের প্রথমদিন থেকেই শ্রী মোদী’কে কাজের মধ্য দিয়েই প্রশাসনের রীতিনীতির বিষয়ে শিক্ষা নিতে হয়েছে। প্রশাসক হিসাবে কাজের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনেই নরেন্দ্র মোদী দেখিয়েছেন কিভাবে তাঁর মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই পরিবর্তন প্রভাব ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এই ১০০ দিনের কাজের সময়কালেই তিনি এও দেখিয়েছেন কিভাবে বাঁধা গতের বাইরে গিয়ে স্থিতিশীলতার পরিবর্তন করতে হয় এবং প্রশাসনিক সংস্কার করতে হয়।

উন্নয়ন এবং সুপ্রশাসনের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে জাগ্রত গুজরাট সৃষ্টি করতে নরেন্দ্র মোদীর রাস্তা মোটেই সহজ ছিল না। এই রাস্তা ছিল প্রতিকূলতা এবং চ্যালেঞ্জে ভরা। গত এক দশক ধরে নরেন্দ্র মোদীর চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যটি অপরিবর্তিত থেকেছে, তা হল – প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর নেতৃত্বদানের শক্তি। সুপ্রশাসনের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে তিনি সবসময়েই রাজনীতির উর্ধ্বে উঠতে চেয়েছেন। উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কাজে শ্রী মোদী কখনই রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে প্রতিবন্ধক হতে দেননি। যখন শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তখনও প্রশাসন এবং সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর মধ্যে মিলিয়ে দেবার চিন্তাভাবনা কাজ করেছে। ‘ন্যূনতম সরকার, সর্বাধিক সরকারি পরিচালনামূলক কাজ’ – শ্রী মোদীর এই দর্শনের সবচেয়ে সুন্দর নিদর্শন হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ সুপ্রশাসনের জন্য তাঁর ‘পঞ্চ – অম্রুত’ সংগঠন ভাবনা।

 

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছ থেকে তিনি যেসব পুরষ্কার পেয়েছেন তার মধ্যেই তাঁর কাজের স্বীকৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে সফল মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রশাসকের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা সঙ্গে এনেছেন।

Narindra modi
Narindra modi

 

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী[সম্পাদনা]

২০০১ খ্রিষ্টাব্দে কেশুভাই পটেলের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভূজ ভূমিকম্পে প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ ওঠে। [৪৫][৪৮][৪৯] এর ফলে পার্টির জাতীয় নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে হিসেবে তুলে ধরে।[২৩] পার্টির বরিষ্ঠ নেতা লাল কৃষ্ণ আডবাণী মোদীর অনভিজ্ঞতার ওপর চিন্তিত থাকলেও মোদী পটেলের সহায়ক হিসেবে গুজরাটের উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এর ফলশ্রুতিতে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরকারীকরণ ও বিশ্বায়নবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বেসরকারীকরণের নীতি গ্রহণ করেন।[৪৮]

প্রথম মেয়াদ (২০০১-২০০২)[সম্পাদনা]

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ২০০২ গুজরাট দাঙ্গা

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারী গোধরা শহরের নিকটে বহু হিন্দু তীর্থযাত্রী ও শতশত যাত্রীসহ একটি ট্রেন আগুনে পুড়ে গেলে প্রায় ৬০ জন্মের মৃত্যু ঘটে।[৫০][৫১] উগ্র মুসলিমদের দ্বারা এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, এরকম খবর ছড়ালে, গুজরাট জুড়ে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।[৫২] এই দাঙ্গায় ৯০০ থেকে ২০০০ ব্যক্তির মৃত্যু হয় এবং কয়েক হাজার ব্যক্তি আহত হন।[৫৩][৫৪]মোদী সরকার বড় সহরগুলিতে কারফু জারী করে দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ দেয় এবং দাঙ্গা প্রতিরোধে সেনাবাহিনী ডাকা হয়।[৫৫][৫৬] এতৎসত্ত্বেও মানবাধিকার সংগঠনগুলি, বিরোধী দল এবং সংবাদপত্রের কিছু অংশ গুজরাট সরকারের দাঙ্গাবিরোধী পদক্ষেপের সমালোচনা করে।[৫৫][৫৬] গোধরা অগ্নিকান্ডে মৃত করসেবকদের দেহ আমেদাবাদ নিয়ে যাওয়ার মোদীর নির্দেশকে দাঙ্গায় উস্কানিমূলক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করা হয়।[৫৭][৫৮]

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় রাজ্য সরকারকে ২০০২ গুজরাট দাঙ্গার নয়টি কেস সম্বন্ধে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দিলে সরকার নতুন করে তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে।[৫৯][৬০] গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকান্ডে মৃত এহসান জাফরির বিধবা স্ত্রী জাকিয়া জাফরি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মামলা করলে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় বিশেষ তদন্তকারী দলকে এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়।[৫৯][৬১] এই তদন্তকারী দল মোদীকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে মে মাসে তাঁদের এই মর্মে প্রতিবেদন জমা দেন যে তারা এই অভিযোগের সত্যতার কোনক্রমেই প্রমাণ পাননি।[৫৯][৬২] ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে রাজু রামচন্দ্রন ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে তার অন্তিম প্রতিবেদনে বলেন যে মোদীকে সাক্ষ্য প্রমাণের সাহায্যে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব। সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় এই মামলা ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে পাঠিয়ে দেন এবং বিশেষ তদন্তকারী দলকে রামচন্দ্রনের প্রতিবেদন পরীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেন। বিশেষ তদন্তকারী দল এই প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করে কারণ এই প্রতিবেদনে মিথ্যে তথ্যপ্রমাণের ওপর সাজানো সঞ্জীব ভট্টের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করা হয়েছিল।[৬৩] ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে তদন্তকারী দল এই অনুসন্ধান বন্ধ করার আর্জি জানালে জাকিয়া জাফরি এর প্রতিবাদে একটি মামলা দায়ের করেন যা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে এই মর্মে গৃহীত হয় না যে মোদীর বিরুদ্ধে কোন রকম সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[৬৪]

২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মায়া কোদনানি নামক মোদী মন্ত্রীসভার একজন প্রাক্তন মন্ত্রীকে ২০০২ গুজরাট দাঙ্গার সময় নারোদা পাটিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।[৬৫][৬৬]যদিও কোদনানির মৃত্যুদন্ডের জন্য আবেদন করা হবে বলে স্থির করা হলেও পরে মোদী সরকার ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তার কারাদন্ডের আর্জি জানান।[৬৭][৬৮][৬৯]

২০০২ সালের নির্বাচন[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধগুজরাট বিধানসভা নির্বাচন, ২০০২

দাঙ্গার কারণে রাজ্যের ভেতর ও বাইরে থেকে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ বাড়তে থাকে। এমনকি কেন্দ্রে তেলুগু দেশম পার্টি ও দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কঝগম নামক ভারতীয় জনতা পার্টির দুই বন্ধু দলও এই মত প্রকাশ করে। বিরোধীরা এই বিষয়ে লোকসভা অচল রাখে।[৭০][৭১] ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে গোয়াতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় কার্যনির্বাহী সভায় মোদী তার ইস্তফা দিতে চাইলে পার্টি তা গ্রহণ করেনি।[৭২] ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুলাই মোদীর মন্ত্রীসভা একটি জরুরীকালীন সভার সিদ্ধান্তে গুজরাটের রাজ্যপালের নিকট ইস্তফা পেশ করলে বিধানসভা ভেঙ্গে যায়।[৭৩][৭৪] পরের বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি ১৮২টির মধ্যে ১২৭টি আসন দখল করে।[৭৫] এই নির্বাচনের প্রচারকার্যে মোদী মুসলিম বিরোধী প্রচার করলেও পরে তা অস্বীকার করেন।[৭৬][৭৭][৭৮][৭৯]

দ্বিতীয় মেয়াদ (২০০২-২০০৭)[সম্পাদনা]

মোদীর দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালে তিনি হিন্দুত্ব থেকে সরে এসে গুজরাটের উন্নয়নের দিকে জোর দেন।[৪৮][৭৬] তার এই সিদ্ধান্তে গুজরাটে ভারতীয় কিশান সঙ্ঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির প্রভাব হ্রাস পায়।[৮০] মোদী তার মন্ত্রীসভা থেকে গোর্ধান জাদাফিয়া এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্যস্তরের প্রধান প্রবীণ তোগাড়িয়াকে সরিয়ে দেন। ভারতীয় কিশান সঙ্ঘকৃষকদের নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে মোদী তাঁদের রাজ্য সরকার দ্বারা প্রদত্ত বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি গান্ধীনগরে দুইশোটি বেআইনী মন্দির নির্মাণকে ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ জারী করেন।[৮০][৮১] এই সব ঘটনার ফলে গুজরাট শিল্পে বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়। ২০০৭ সালে ভাইব্র্যান্ট গুজরাট সমাবেশে নির্মাণ কার্যে ₹৬.৬ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের চুক্তি হয়।[৪৮]

অর্থনৈতিক দিকে মোদীর নজর থাকলেও বিভিন্ন সময়ে তাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হতে হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে মোদীকে গুজরাটের সমস্ত্য নাগরিকদের সমান চোখে দেখার অনুরোধ করেন এবং তার পদত্যাগের দাবী করেন।[৮২][৮৩] ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিরপরাজয়ের পর অটল বিহারী বাজপেয়ী এই হারের জন্য ২০০২ গুজরাট দাঙ্গাকে দায়ী করেন এবং স্বীকার করেন দাঙ্গার ঠিক পরেই মোদীকে সরিয়ে নাাাদেওয়া একটি ভুল পদক্ষেপ ছিল।[৮৪][৮৫]

২০০৭ সালের নির্বাচন[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধগুজরাট বিধানসভা নির্বাচন, ২০০৭

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারকার্যে ভারতীয় জনতা পার্টি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রচারকে তাঁদের প্রধান হাতিয়ার করে।[৮৬] ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জুলাই মোদী সন্ত্রাসবাদবিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতার জন্য প্রধামনন্ত্রী মনমোহন সিংকে তীব্র সমালোচনা করেন এবং ২০০৬ মুম্বই বিস্ফোরণের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারগুলিকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের অনুমতি প্রদানের জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানান।[৮৭] এই সময় তিনি ২০০১ ভারতীয় সংসদ আক্রমণের প্রধান অভিযুক্ত আফজল গুরুর[৮৮] মৃত্যুদন্ডের বার বার দাবী জানাতে থাকেন।[৮৯] ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বএ মুম্বই শহরে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের নিরিখে মোদী গুজরাটের ১,৬০০ কিমি (৯৯০ মা) লম্বা সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা জোরদার করেন।[৯০] ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে মোদী মুখ্যমন্ত্রী পদে টানা ২,০৬৩ দিন থেকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘতম মেয়াদের রেকর্ড গড়েন।[৯১] ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি ১৮২টির মধ্যে ১২২টি আসন দখল করে জয়ী হন এবং মোদী তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদ লাভ করেন।[৯২]

তৃতীয় মেয়াদ (২০০৭-২০১২)[সম্পাদনা]

তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদী ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের ব্যাপারে নজর দেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ১১৩,৭৩৮টি ছোট বাঁধ নির্মাণ করা হয়।[৯৩] ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৬০টি তহসিলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।[৯৪] এরফলে গুজরাটে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিটি তুলার চাষ শুরু হয়।[৯৩] তুলা চাষের বৃদ্ধি এবং শুষ্ক মৃত্তিকাকে চাষের উপযোগী করে তোলায়[৯৫]গুজরাটের কৃষির বৃদ্ধির হার ২০০৭ সালের মধ্যে ৯.৬%[৯৬] এবং ২০১০ সালের মধ্যে বার্ষিক কৃষির বৃদ্ধির হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০.৯৭% হয়ে যায়।[৯৫]

এই সময়কালে মোদী সরকার গুজরাটের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে সক্ষম হন।[৯৭] মোদি বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃষকদের অনেকটাই প্রাধান্য দেন। রাজ্যে জ্যোতি গ্রাম যোজনা নামক প্রকল্পের ব্যাপক প্রয়োগ হয়, এই প্রকল্প অনুসারে গ্রামীন বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে কৃষি বিদ্যুৎ সংযোগগুলিকে আলাদা করে দেওয়া হয়। বিদ্যুতের খরচ কমাতে চাষের চাহিদা অনুযায়ী এই বিদ্যুৎ সরবরাহের নীতি প্রচলিত হয়। প্রথম দিকে চাষীরা প্রতিবাদ করলেও নতুন নিয়মে বিদ্যুতের সরবরাহের ফলে লাভের মুখ দেখলে সেই প্রতিবাদ স্তিমিত হয়ে পড়ে।[৯৩] একতি সমীক্ষায় দেখা যায়, সমবায় খামার ও বৃহৎ চাষীরা এই প্রকল্পে লাভবান হলেও ক্ষুদ্র চাষী ও কৃষিমজুরেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৯৮]

মোদীর তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালে গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটি প্রকল্পে অগ্রগতি ঘটে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে গিফট-১ ও গিফট-২ নামক দুইটি উচ্চ অট্টালিকার নির্মাণ সম্পন্ন হয়।[৯৯][১০০]

গুজরাট উন্নয়ন বিতর্ক[সম্পাদনা]

মোদীর সরকার ভাইব্র্যান্ট গুজরাট স্লোগানের মাধ্যমে গুজরাটকে একটি চলমান উন্নয়নশীল এবং অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ রাজ্য হিসেবে তুলে ধরেন।[১০১][১০২][১০৩] যদিও সমালোচকরা গুজরাট মানবোন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনগ্রসরতার দিকে আঙুল তুলেছেন। এই রাজ্য দারিদ্র্যে দেশের মধ্যে ত্রয়োদশ, শিক্ষায় একুশতম, পাঁচ বছরের নীভে ৪৪.৭% শিশু গড় ওজনের থেকে কম ওজনবিশিষ্ট এবং ২৩% অপুষ্টির শিকার।[১০৪] এর বিপরীতে গুজরাট রাজ্য সরকার দাবী করে যে এই রাজ্যে মহিলা শিক্ষার হার জাতীয় হারের চেয়ে বেশি, স্কুলছুট ছাত্রের হার ২০০১ সালের হিসেব অনুযায়ী ২০% থেকে কমে ২০১১ সালের মধ্যে ২% হারে নেমে এসেছে, মাতৃমৃত্যুর হার ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ৩২% কমেছে।[১০৫]

রাষ্ট্রবৈজ্ঞানিক ক্রিষ্টোফ জেফারলটের মতে গুজরাটের উন্নয়ন শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, অপরদিকে গ্রামীণ ও নিম্নবর্গের মানুষেরা আরো বেশি করে পিছিয়ে পড়েছেন। তার মতে মোদীর শাসনকালে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা বেড়ে গেছে।[১০৬] ২০১৩ সালের জুলাই মাসে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মোদী প্রশাসনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন[১০৭], যদিও অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ পনগরিয়া এবং জগদীশ ভগবতী মত প্রকাশ করেন যে গুজরাটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সামাজিক সূচকগুলি দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে[১০৮]

সদ্ভাবনা মিশন[সম্পাদনা]

২০১১ সালের শেষের দিকে মোদী গুজরাটের মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকটে পৌছুতে সদ্ভাবনা মিশনের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকবার উপবাস অনশন করেন। এই অনশন গুজরাটের শান্তি, সমৃদ্ধি ও একতার জন্য বলে তিনি ঘোষণা করেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর আমেদাবাদ শহরে তিন দিনের অনশন দিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হয়, যার পর তিনি ছাব্বিশটি জেলা ও আটটি শহরে ছত্রিশ বার অনশন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন, তবুও এই কর্মসূচী মুসলিম সম্প্রদায় ভালো ভাবে নিতে পারেননি। সৈয়দ ইমাম শাহী সায়েদ নামক এক মুসলিম ধর্মীয় প্রচারক এক সভায় মোদীকে মুসলিমদের টুপি দিতে গেলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।[১১২][১১৩] গোধরা শহরে অনশনের সময় মোদী বিরোধী এক মোর্চা সংগঠিত করার অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করা হয়।[১১৪][১১৫] এই কর্মসূচী একটি জনমোহিনী কর্মসূচী হিসেবে অনেকের নিকট সমালোচিত হলেও[১১৬] মোদী নিজে তা অস্বীকার করেন।[১১৭]

চতুর্থ মেয়াদ (২০১২–২০১৪)[সম্পাদনা]

আরও তথ্যের জন্য দেখুন: গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন, ২০১২

২০১২ সালের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে মোদী মণিনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৮৬,৩৭৩ ভোটের বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেন।[১১৮] এই নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি ১৮২টি আসনের মধ্যে ১১৫টি দখল করলে মোদী চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১১৯][১২০] পরে উপনির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি আরো চারটি আসন দখল করতে সমর্থ হয়।[১২১] ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ২১শে মে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রি পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আনন্দীবেন পটেলকে বেছে নেওয়া হয়।[১২২]

Narindra modi
Narindra modi

‘মোদির স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে কষ্ট নেই’

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে আসা এক নারী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার স্বামী যে একদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।

সেই ১৭ বছর বয়সে বিয়ের পর তিন বছরের সংসার ফেলে চলে যাওয়া মোদি আর কোনো যোগাযোগ না রাখায় কোনো দুঃখ নেই বলেও জানিয়েছেন গুজরাটের অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষিকা।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এই নারীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে এক শব্দে- যশোদাবেন। অবসরে যাওয়ার পর ৬২ বছর বয়সী এই নারী পশ্চিম গুজরাটের এক গ্রামে ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করছেন।

এনডিটিভি লিখেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বিজেপির প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি (৬৩) কখনোই বিয়ের কথা স্বীকার করেননি।

মোদির জীবনী লেখক নিলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, আগামী মে মাসের নির্বাচন সামনে রেখে জনমত জরিপে শক্ত অবস্থানে থাকা মোদি হয়তো রাজনীতির সিড়ি বেয়ে ওঠার পথ খোলা রাখতেই বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখে এসেছেন।

রাষ্ট্রীয় শ্যামসেবক সংঘ আরএসএসের শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য মোদির সামনে অবশ্য আর উপায়ও ছিল না, কেননা কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ওই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত অনেক বিষয়েই কড়াকড়ি মানতে হয়।

নিলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, যশোদাবেনের সঙ্গে মোদির বিয়ে হলেও তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ছিল না।

সাক্ষাৎকারে যশোদাবেন বলেন, বিয়ের তিন বছরের মাথায় মোদি তাকে ছেড়ে যান, আর কখনো তিনি যোগাযোগ করেননি।

মোদির কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে কোনো কষ্ট নেই বলেও জানিয়েছেন এই সাবেক শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “আমি জানি, একদিন সে প্রধানমন্ত্রী হবে।”

যশোদাবেনের বিশ্বাস, ‘নিয়তি ও দুঃসময়’ মোদিকে ওই আচরণ করতে বাধ্য করেছে।

“এরকম পরিস্থিতিতে তাকে অনেক কিছু করতে হয়, অনেক মিথ্যাও বলতে হয়।”

২০০৯ সালে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা যশোদাবেনকে খুঁজে বের করে, তখন তিনি একটি স্কুলে পড়ান। সে সময় সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করে যশোদাবেন বলেছিলেন, তার ক্ষমতাধর স্বামীর বিষয়ে তিনি ‘ভীত’।

অবসর নেয়ার পর মাসে ১৪ হাজার রুপি ভাতায় চলছে সাবেক এই শিক্ষিকার জীবন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মোদি তাকে সব সময় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বলতেন। অল্প দিনের হলেও সময়টা তাদের সুখেরই ছিল।

“আমাদের মধ্যে ঝগড়া হতো না। তিনটা বছর আমরা একসাথে ছিলাম, কিন্তু মনে হয় যেন তিনটা মাত্র মাস।”

এখনও মোদিকে নিয়ে যেখানে যা কিছু পান, এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলেন যশোদাবেন। তবে মোদি কখনো ফোন করবেন- এমন আশাও তিনি আর দেখেন না।

Read More: হ্যাল এলরড 10টি বানী হ্যাল এলরড 10টি বানী

 

 

আরও পড়ুন: Stephen Hawking Biography

উপসংহার

বন্ধুরা, এই পোস্টে আমরা আপনাকে Narendra Modi Biography in Bengali সম্পর্কে বলেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পছন্দ করবেন।

আপনার এই পোস্টটি কেমন লেগেছে, মন্তব্য করে আমাদের জানান এবং এই পোস্টে কোনও ত্রুটি থাকলেও আমরা অবশ্যই এটি সংশোধন করে আপডেট করব।

 

Narendra modi Biography, Famous Quotes ও উক্তি সমূহ লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি ফলো ।

 

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

উক্ত আর্টিকেলের উক্তি ও বাণীসমূগ বিভিন্ন ব্লগ, উইকিপিডিয়া এবং Narendra modi রচিত গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

তথ্যসূত্র: Wikipedia, Online

ছবিঃ ইন্টারনেট

Documentary on Narendra modi., প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী জীবন, Narendra Modi Biography In Bengali ,চা-বিক্রেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, Narendra Modi Narendra Modi , narendra modi life, modi, modi biography, narendra modi life story, narendra modi net worth, narendra modi lifestyle, narendra modi (politician), narendra modi speech, narendra modi family, narendra modi income, narendra modi house, pm modi, narendra modi story, pm narendra modi, biography, narendra modi bio, pm modi biography, prime minister of indianarendra modi biography bangla mamata jibon kahininarendra modi carsnarendra modi life story in telugu#primeministernarendra modi life story in malayalammamata banerjee lifestylenarendra modi educational qualificationbiography of apj abdul kalamnarendra modi wifeNarendra Damodardas Bhai Modi, Indian best prime minister, Narendra Modi, Biography of Narendra Modi full, 2014 Prime minster, নরেন্দ্র মোদী, নরেন্দ্র দামোদর দাস ভাই মোদী, Narendra Modi biography full History in Bengaliin bangla,narendra modi biography in bengali,narendra modi,pm modi india,narendra modi death,narendra modi speech,narendra modi biography,pm modi biography,narendra modi story,latest news,biography in bengali,roman reigns bangla,india,indian youtuber,barnomala youtube channel,বর্ণমালা,সফল হওয়ার উপায়,জীবন-সমস্যার সমাধান,জীবন কাহিনীNarendra modi biography, Narendra modi biography in bangla, Documentary on Narendra modi, নরেন্দ্র মোদির জীবনী, নরেন্দ্র মোদি জীবনী, নরেন্দ্র মোদি, Narendra modi, bangla biography of naranda modi, narandro mody lifestyle

Leave a Reply