Narayana Health বাংলাদেশ হেল্প ডেস্ক – +৯১ ৮০৬৭৫০৬৮৫০ Dr Devi Shetty নারায়ণা হেলথ

বাংলাদেশ হেল্প ডেস্ক এমন একটি ডেস্ক যেখান থেকে বাংলাদেশ থেকে আসা সমস্ত পেশেন্ট এবং তাদের আত্মীয়দের সমস্তরকম সুবিধা যেমন – ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কতটা খরচ হতে পারে চিকিৎসার জন্যে তার সম্বন্ধে ধারণা দেওয়া, ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপারে সাহায্য করা হয়ে থাকে।

চেয়ারম্যানের মেসেজ

ʺ নারায়াণা হেল্‌থের আসল পরিচয় এবং মানুষের কাছে তার পরিচিতির মধ্যে পার্থক্য আছে। ʺ

ডাঃ দেবী প্রসাদ শেঠি,

সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন

সাধারণ মানুষের কাছে আমরা নারায়াণা হেল্‌থকে একটি কমখরচার অথচ বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। নারায়াণা হেল্‌থে আমরা এটা বিশ্বাস করি যে খুবভালো চিকিৎসা মানেই যে প্রচুর খরচা তা নয়। আমরা ইতিমধ্যেই অত্যন্ত কমখরচে খুবভালো চিকিৎসা এবং পরিষেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।

চিকিৎসা পরিষেবাটা আমাদের কাছে শুধুমাত্র লাভক্ষতির বিষয় নয়। নারায়াণা হেল্‌থ এভাবেই এতদিন এগিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এভাবে এগোবে। আমাদের এই ব্যবসার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কম বিনিয়োগ, যেটা লাভ করলাম সেটাকে আবার বিনিয়োগ করা, বিভিন্ন সরকারের সাথে কথা বলে তাদের জমিতে এবং তাদের সাহায্যে বিশ্বমানের কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষমতার মধ্যে প্রতিষ্ঠান বানানো, বিভিন্ন বাড়ী বা জমি ভাড়া নিয়ে বড় থেকে ছোট ক্লিনিক তৈরি করা। এই অভিনব পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে আমরা কম খরচে অথচ বিশ্বমানের পরিষেবা কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। দেশের জন্যে এবং দেশের মানুষের জন্যে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা তৈরি করা এটাই আমাকে এবং আমার উৎসাহকে বাড়িয়ে তোলে।

কার্ডিও সার্জন দেবী শেঠির প্রতিষ্ঠিত বাঙালোরে নারায়না হেলথ সেন্টার আমার জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায়। গত ২২শে জানুয়ারি দেবী শেঠি প্রতিষ্ঠিত নারায়না হেলথ সেন্টারে চেকআপের জন্য গিয়েছিলাম। এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে এখানেই আমার বাইপাস সার্জারি বা সিএবিজি (করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং) অপারেশন হয়েছিল। নারায়নায় নানা অভিজ্ঞতা আমাকে আন্দোলিত করেছে। বিষ্ময়ের বিষয় হচ্ছে সেখানকার ৫০ ভাগ রোগীই  বাংলাদেশের। তাই যারা রোগ সমস্যায় যেতে চান নারায়নায় তাদের সুবিধার্থে কিছু বিষয় এবারের লেখাতে উল্লেখ করতে চাই।

দুবার ছাড়াও ২০১৬ সালের অক্টোবরে এখানেই যেতে হয়েছিল আমার স্ত্রীর ম্যানিনজিওমা ব্রেইন টিউমার সার্জারি করাতে। এ নিয়ে মোট তিনবার যাওয়া হলো বাঙালোরে? আমি দেখেছি কিছু তথ্য জানা থাকলে খুবই কম খরচে চিকিৎসা করানো যায় এবং নানাবিধ ঝামেলা এড়ানো যায়? প্রথমেই এই হাসপাতাল সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানিয়ে রাখি পাঠকদের? নারায়না হেলথ সিটি একটি নন প্রফিটেবল অর্গানাইজেশন বা সংস্থা? নারায়না হেলথ সিটি ২০০০ সালে ডা. দেবী প্রাসাদ শেঠি ফাউন্ডার চেয়ারম্যান হিসেবে বাঙালোরের বামমাসন্ড্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় চেইন হাসপাতালের হেড অফিস দিয়ে যাত্রা শুরু করেন? এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পেছনে যে লক্ষ্য ছিল সেটা হলো কম খরচে উন্নত বিশ্বের মতো চিকিৎসাসেবা দেয়া? চিকিৎসা সেবা যেন তাদের কাছে কোন ধর্মীয় কাজ। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কাজ করেন।

কর্নাটক রাজ্যের মানুষগুলোকেও মনে হয় অন্যান্য প্রদেশ থেকে বেশ ধার্মিক। তারা সব ধরনের কাজকেই ধর্মীয় সেবা বলেই বিবেচনা করেন? যারা ক্লিনার তাদেরকে দেখেছি বেলচা, ঝাড়–সহ সবকিছুর পূজা করতে। তাদের দেখে মনে হয় যেন তারা পরিচ্ছন্নতা নয় কোন ধর্মীয় কাজ করছেন। ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে দেখেছি স্ক্রু ডাইভার, টেস্টার, হাতুড়ি এগুলোকে পরম শ্রদ্ধাভরে পূজা করছে।
দেবী শেঠি নারায়না হেলথ সেন্টার বাঙালোরে প্রথমে ২২৫টি অপারেশনাল বেড দিয়ে শুরু করেছিল যা বর্তমানে ৬০০০ অপারেশনাল বেডে উন্নীত হয়েছে। ভারত জুড়ে ২৪টি অত্যাধুনিক হাসপাতাল, ৭টি অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত বিশেষায়িত হৃদরোগ কেন্দ্র, ১৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে? বাঙালোরের নারায়না হেলথ সেন্টার হাসপাতালে ১৪ হাজারেরও বেশি ডাক্তার, নার্স, ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা রয়েছেন। এটি এখন সমগ্র ভারতজুড়ে আধুনিক মেশিনে সজ্জিত হাসপাতাল এবং অত্যাধুনিক হৃদরোগ কেন্দ্র পরিচালনা করের্  দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ২০১৩ সালের ৬ই জানুয়ারি বিএসই ও এনএসইতে নারায়না প্রথমবার তালিকাভুক্ত কোম্পানি হয়েছিল। প্রথমবারের মতো কোম্পানির মূল্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ছিল। ডা. দেবী শেঠি ২০০০ সালে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি কর্নাটক সরকারের সঙ্গে মাইক্রো হেলথ ইন্স্যুরেন্স স্কিমের আওতায় হেলথ ইন্স্যুরেন্স শুরু করেন। যেসব গরিব কৃৃষিজীবী পরিবার আছে তাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য মাসিক ১০ টাকা জমা করে মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স স্কিম শুরু করেন। এই স্কিমের আওতায় সব ধরনের জটিল অপারেশনসহ ওষুধ এই স্কিমের আওতায় ফ্রি দেয়া হয়। দেবী শেঠির এই ইন্স্যুরেন্স পলিসি সর্বত্রই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

আর এ সবই সম্ভব হয়েছে দেবী শেঠির পরম মমতা ও যতœ দিয়ে মানুষের সেবা করার ফলে। সত্যিকারের সেবা ওখানেই দেখেছি। তাই দেবী শেঠি ইন্ডিয়াতে গরিব মানুষদের কাছে দ্বিতীয় ভগবান হিসেবেই পরিচিত? কর্নাটক রাজ্যের খুবই গরিব মানুষ যাদের পায়ে স্যান্ডল নেই শরীরে ঠিকমতো কাপড় নেই ধুলোবালি সারা শরীরে তাদেরও পরম মমতায় গায়ে হাত দিয়ে সব কথা জিজ্ঞেস করেন তিনি। আমি যখন দেবী শেঠির রুমে বসা ঠিক তার আগেই একজন কৃষককে দেখছিলাম। সেই কৃষকেরও শরীরে কাপড় নেই, পায়ে স্যান্ডেল নেই তাকেও গায়ে হাত দিয়ে হাসিমাখা মুখে বাবা বলে সম্বোধন করছিলেন আর বলছিলেন অনিয়ম করা চলবে না আর অপারেশন ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে কোনো টেনশন না করতে। চিকিৎসাসহ আনুষঙ্গিক খরচের সবই দেবী শেঠি দেখবেন। টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না। তারপর আমার পালা। আমার রিপোর্টগুলো দেখেই বললেন, এক মাসের মধ্যে বাইপাস করতে হবে নইলে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বেন। হার্ট অ্যাটাক করবে যা থেকে রিকভারি করানো যাবে না। আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনেই বললাম আমার অপারেশন আপনাকেই করতে হবে। আপনাকে ছাড়া আমি অপারেশন করব না।

উনি বললেন, আমি এখন ছোট বাচ্চাদের ক্রিটিক্যাল অপারেশন করি। যখন বলছো আমি তোমার অপারেশনের সময় থাকব। তারপর আমি কি করি কাকে নিয়ে এসেছি বাঙালোরে সব জিজ্ঞেস করলেন। পত্রিকায় চাকরি মানে মাসিক বেতনের চাকরি দেখে নিজে থেকেই ৮০,০০০/- টাকা কমিয়ে দিলেন এবং আমার স্ত্রীকে কেবিনে আমার সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। আমার পাশের কেবিনেই ছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ম্যানেজার ইদ্রিস সাহেব। একই কেবিনের ভাড়া নিয়েছিল ভারতীয় মুদ্রায় ইদ্রিস সাহেবের কাছ থেকে ২,৬০,০০০/- আর আমার থেকে রেখেছিল ১,৮০,০০০/-। সত্যিই আমার অপারেশনের দিন দেবী শেঠি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার স্ত্রীকেও ডেকে নিয়েছিলেন অপারেশন রুমে। আমার অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার সময় দেবী শেঠির হাত ধরে শুয়েছিলাম আর আমিও নিশ্চিন্ত মনে আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাই। আমার বাইপাস অপারেশন করেছিলেন প্রভীন কুমার। বিশাল দেহের অধিকারী প্রভীন কুমার পরশ পাথরের ছোঁয়ায় উনিও হয়ে উঠেছেন আরেকজন দেবী শেঠি। দেবী শেঠির মহানুভবতা দেখে অবাক বিষ্ময়ে অনেকটা নির্বাক হয়ে পড়েছিলাম। আমার অপারেশনের পর প্রথম জ্ঞান ফিরে রাত ৩টা ৫০ মিনিটে। আমি বাম পাশে ফিরে তাকিয়েই দেখি রঞ্জন ব্যানার্জি। রঞ্জন ব্যানার্জিসহ আমাদের পরিচিত মোট ৪ জন একসঙ্গে অপারেশন হয়েছিল। নারায়না কার্ডিয়াক সেন্টারে একসঙ্গে ৬ জনের অপারেশন করা হয়। রঞ্জন ব্যানার্জি ভারতের, বাবা কলকাতার মা বাঙালোরের। উগান্ডার কাম্পালায় থাকেন, পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। সেই থেকে আজ অবধি আমাদের সম্পর্ক রয়েছে।

জ্ঞান ফেরার পর খুবই পানির পিপাসা পেয়েছিল। অনেকবার বলার পর একজন নার্স অল্প একটু পানি দিল। আল্লাহর এই পৃথিবীতে পানির তৃষ্ণা এবং পানি যে কত বড় নেয়ামত সেদিন বুঝেছিলাম। আমার জ্ঞান ফেরার পর আমার খুব পিঠ ব্যথা করেছিল। প্রথমে মনে করেছিলাম বিছানাটা ঠিক করে দিলে বোধহয় ব্যথা করবে না। আমি নার্সকে বললাম, বিছানা ঠিক করে দিতে। কিন্তু নার্স বলল আপনার বিছানা এমনভাবে তৈরি যেন আপনার পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথাই আপনার হার্টের ব্যথা ভুলিয়ে দেবে। আমাকে পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার থেকে আইসিইউতে ভোর পাঁচটায় নিয়ে গেল। তখন কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র সব খুলে ফেলেছে। আইসিইউতে পিঠের ব্যথাটা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে ছিল। এমন সময় দেবদূতের মত অরুণ নামের এক ব্রাদার এসে আমার সামনে উপস্থিত। আমি ব্রাদারকে পানির পিপাসার কথা বললাম আর পিঠের ব্যথার কথা বললাম। অরুণ অর্ধেক গ্লাস পানি দিল পান করার জন্য। আহা কি অমৃতসুধার মতো মনে হয়েছিল সেই পানির স্বাদ। তারপর এক এক করে অরুণ আমাকে মুখ ব্রাশ করে দিল, মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে দিল, সম্পূর্ণ শরীর ধুয়ে দিল। মনেপ্রাণে সতেজ হয়ে উঠেছিলাম। সবশেষে অরুণ আমার পিঠে ঝান্ডুবাম জাতীয় একটি ক্রিম মেখে দিল। আমি পরম শান্তিতে, নিশ্চিন্তে ঘুম দিয়ে উঠে দেখি সকাল ১০:৩০ বাজে। আমি এবারও বাঙালোরে গিয়ে ব্রাদার অরুণের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। আমি ছাড়া আর কেউ এই সেবা পেয়েছে দেখিনি। আমি এটাকে খোদার অপার মহিমাই মনে করি।
আমার যেদিন অপারেশন হয় তার পরদিন সকাল বেলাতেই আমাকে হাঁটতে বলে। আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না হাঁটতে গিয়ে। যদিও প্রথমে মনে করেছিলাম হয়তো হাঁটতে পারব না। আমার টেনশন হচ্ছিল যেহেতু ডায়াবেটিকসের রোগী আমি তাই কোনো অসুবিধা হয় কিনা। হাসপাতাল থেকে চারদিনের দিন আমাকে রিলিজ করে দেয়। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার পরেও অনলাইন গেস্ট হাউসে আমি আরো সাতদিন থেকেছি। যে সাতদিন হোটেলে ছিলাম প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়ে ইয়োগা করতে হতো। মোট দশদিনের মাথায় আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি।
ঢাকায় কম দামে আবাসিক হোটেল ভাড়া করার নিয়ম, ঠিকানা ও খরচ

আসলেই দেবী শেঠি শুধু বাচ্চাদের কঠিন অপারেশনগুলো করে থাকেন? আমার হোটেলে ছিল নাইজেরিয়ার ছোট শিশু এমিলি? ওর মাকে বললাম কি হয়েছে উনি বললেন, এমিলির হার্টে ৪টা ফুটো ও ২টা ভাল্ব নষ্ট ছিল। এজন্য ছোটবেলা থেকে কথা বলতে পারত না ? হার্ট অপারেশন করে হার্টের ফুটো ঠিক করার পর এখন কথা বলতে পারছে? আরেকটা ছোট বাবু যার নাম মেঘা, এসেছে আসাম থেকে? ওর হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করেছে গত বছর? চেকআপের জন্য এসেছে এ বছর? এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে? ওর বাবা-মা দেখালো সম্পূর্ণ বুকটা কাটা? ওর অপারেশনে লেগেছিল ১৪ ঘণ্টা? আমি অবাক বিস্ময়ে ভাবছিলাম দেবী শেঠিকে ভগবান মনে করার ভারতে যথেষ্ট কারণ আছে ?

এখানে একটা কথা উল্লেখ না করে পারছি না যে দেবী শেঠি আমাকে দেখবেন বলে আমি প্রথমে মনে করিনি। এর পেছনে কারণ আছে আর তা হচ্ছে উনাকে নিয়ে বিরূপ এক রিপোর্ট করেছিলাম যার কারণে উনি আমাকে দেখবে মনে করিনি। আমরা বাঙালোরে গিয়ে দেখি দেবী শেঠি এক সপ্তাহের জন্য আমেরিকা চলে গেছেন। এই এক সপ্তাহে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি হার্টের রোগী শুধুু দেবী শেঠিকে দেখানোর জন্য ভিড় করেছে। দেবী শেঠি আসার পর দেখলাম সারাদিন কর্নাটকের মানুষদের দেখছে ৯০ জন আর বাংলাদেশিদের দেখছে মাত্র ১০ জন। সারাদিন বসে থাকছে দেবী শেঠিকে দেখানোর জন্য এমনকি দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছি না কোন সময় ডাক পড়ে এই চিন্তায়। দেবী শেঠি আসার পর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে বাংলাদেশিদের দেখছে না তাই যারা সীমিত টাকা-পয়সা নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছে তাদের এই অবর্ণনীয় কষ্ট দেখে কারণ বের করার জন্য অনুসন্ধান শুরু করলাম। যা দেখলাম তা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম দেখি ৯০ জন কর্নাটকের মানুষ দেখছে আর বাংলাদেশিদের দেখছে ১০ জন। আর দীপক নামের এক সহকারি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলছে, এক ঘণ্টা পরে ডাকবে বলে সময় পার করছে। তখন আমাকে আর দেখবে না চিন্তা করেই একটা রিপোর্ট করেছিলাম। রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘দেবী শেঠির হাসপাতালে বাংলাদেশিদের অমানবিক অবর্ণনীয় কষ্ট’।

রিপোর্টের ভিতরে ছিল যে বাঙালি জাতির জন্য আজকের এই দেবী শেঠি, সেই বাঙালিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ। সত্যিকার অর্থেই পশ্চিম বাংলা ও পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতি দেবী শেঠি বলতে অজ্ঞান দেখেছি প্রথম থেকেই। এই রিপোর্টটা আমি ট্যাগ করে দিয়েছিলাম হাসপাতালের ওয়েব সাইডে, কর্মকর্তাদের জি-মেইলে এবং বিশেষ করে দেবী শেঠির সব মেইল, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার এ্যাপলিকেশনগুলোতে। এই রিপোর্টটা ছাপানোর পরদিন থেকে মনে হলো ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। পরদিন থেকে দেখি ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৫০ জন রোগী দেখছেন বাংলাদেশিদের। আমি ভাবিনি আমাকে দেখবে আমার সিরিয়াল ছিল অনেক পরে। আমাকেও পরের দিনই আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে গেলেন। বাংলাদেশিদের কাছ থেকে যে দোয়া ও ভালোবাসা পেয়েছিলাম তা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমার মনে থাকবে।

যাই হোক আজকে আমার লেখার অবতারণা এই কারণেই যে নারায়না হেলথ সেন্টারের ৫০ ভাগ রোগীই হচ্ছে বাংলাদেশি। তাই বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আজকের এই লেখা। ২০১৫ সালে এনজিওগ্রাম করে ধরা পড়লো আমার মোট ৪টি ব্লক? ২টি ব্লক ৪০% করে আর ২টি ব্লক ১০০% ? আমার বেঁচে থাকারই কথা না? আমার একটা সরু রগ আপনা আপনিই নিজে থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল যার কারণে আমি বেঁচে ছিলাম। এটা কোটি মানুষের একটা হয়ে থাকে? ওই সরু রগ দিয়ে রক্ত চলাচল করছিল বলেই বেঁচেছিলাম? এনজিওগ্রাম করার পর বাংলাদেশের কিছু ডাক্তার বললেন ওপেন হার্ট সাজারি লাগবে? নামকরা একটি হাসপাতালের হার্ট সার্জন বলল, না লাগবে না? এতে আমি ভয় পেয়ে দেবী শেঠীর হাসপাতালে যোগাযোগ শুরু করি ?

দেবী শেঠির হাসপাতালে সরাসরি যোগাযোগ করেও যাওয়া যায় আবার দেবী শেঠির হাসপাতালের বাংলাদেশ প্রতিনিধি নাহিদ আলমের অফিসের মাধ্যমেও খুব সহজেই যাওয়া যায়। অল্প টাকার কনসালটিং ফি দিলেই হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ইনভাইটেশন লেটারসহ ভিসার জন্য সমস্ত কাগজপত্র উনারাই রেডি করে দেন? এখানে বলে রাখা ভালো ভারতে ট্রিটমেন্টের জন্য গেলে অবশ্যই মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে যেতে হবে? টুরিস্ট ভিসা নিয়ে গেলে ভালো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যাবে না? এই বিষয়ে খুবই কড়াকড়ি নিয়ম? যেকোনো হাসপাতালে গেলে প্রথমেই দেখতে চাইবে কোন ধরণের ভিসা নিয়ে এসেছেন? টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ক্যান্সারের রোগীকেও দেখেছি চিকিৎসা না নিয়ে ফেরত আসতে? নাহিদা আলমের অফিস ১ সপ্তাহের মধ্যে কাগজপত্র রেডি করে ভিসার জন্য দাঁড়াতে বলল এবং সময়মতো ভিসা পেয়ে গেলাম? সবার সুবিধার্থে এখানে নাহিদা আলমের ঠিকানাটা দিয়ে দিচ্ছি, NAHIDA HEALTH CARE SERVICE, H2/1ST FLOOR, ROAD: 13/A, DHANMONDI, DHAKA-1215. MOBILE: 01711524961।

আগে যেমন ভারতীয় হাইকমিশন গুলশানে বিশাল লাইনে ভিসার জন্য অপেক্ষা করতে হতো বর্তমানে যমুনা ফিউচার পার্কে বিশাল ভিসা সেন্টার করেছে যেখানে মেডিক্যাল ভিসা ও টুরিস্ট ভিসার জন্য আলাদা আলাদা ৪০টি বুথ আছে? ভিসা হওয়ার পর টিকিট কাটতে গেলাম? ঢাকা থেকে সরাসরি বাঙালোর কোনো ফ্লাইট নেই তাই ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের কানেকটিং ফ্লাইট প্রথমে ঢাকা টু কলকাতা ও কলকাতা থেকে ৯ ঘণ্টা পর বাঙালোরে যাওয়ার টিকিট কাটি। টিকিটের মোট মূল্য পড়েছিল ২২,০০০/- টাকা? ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে সময় লাগে ৩৫ মিনিট আর কলকাতা থেকে বাঙালোর যেতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা ? পরে জেনেছি একই এয়ারলাইনসের টিকিট না কেটে যদি কলকাতা পর্যন্ত এক এয়ারলাইনস, তারপর কলকাতা পৌঁছানোর পর অন্য এয়ারলাইনসে কলকাতা থেকে ২ ঘণ্টা পর পর ফ্লাইট আছে ?তাতে যেমন সময়ও বাঁচানো যায় আবার টিকিটেও কম খরচ পড়ে। এবার যেমন রিজেন্ট এয়ারলাইনে ১১:১৫ মিনিটে কলকাতা পৌঁছি আবার কলকাতা থেকে ১:৪৫ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়াতে বাঙালোর রওনা হই? আমার টিকিটের মূল্য পড়েছিল ৯,০০০ টাকা?

যদি এই টিকিটই ১০ দিন আগে কিনতে পারতাম তাহলে এর মূল্য হতো ৭,৫০০ টাকা? কলকাতা থেকে ২ ঘণ্টা পর পর এয়ার ইন্ডিগো, স্পাইস জেট, জেট এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া বাঙালোরে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে? প্রথমবার এয়ার ইন্ডিয়াতে সকাল ৮:৩০ টায় কলকাতা পৌঁছাই তার ৯ ঘণ্টা পর বাঙালোর ফ্লাইট? প্রচ- অস্বস্তিকর এই অপেক্ষা করা? কলকাতা এয়ারপোর্ট নতুন করেছে তাই অনেক বড় ও অনেক শপিং করার ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান? ঘুরেফিরে কোনো রকমে কাটিয়ে দিলাম এই ৯ ঘণ্টা? যাই হোক ৯ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সন্ধ্যা ৬.৩০টায় কলকাতা থেকে রওনা হলাম? বাঙালোরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত ৯.৩০টা বেজে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে ১০টা বেজে গেল।

আমি যেই হোটেলে উঠব সেটা হলো অনলাইন গেস্ট হাউজ। এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। বের হয়েই ১,৫০০ টাকায় ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে হোটেলে রওনা হলাম। হোটেলে যেতে যেতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। ড্রাইভার বলল, রাতের খাবার যদি খেতে চাই রাস্তা থেকেই খাবার কিনে নিয়ে যেতে। কারন, হোটেলে হয়তো ক্যান্টিন খোলা থাকবে না। তাই রাস্তা থেকে খাবার নিয়ে নিলাম। এখানে বলে রাখি এই পর্যন্ত মোট ৩ বার যাওয়া হলো বাঙালোর কোনবারই কোনো ড্রাইভারকে চোখে পড়েনি যে চালাকি করে ভাড়া বেশি নিয়ে নিয়েছে বা যার ব্যবহার খারাপ বা সাহায্য করার মানসিকতা নেই। আসলেই আমাদের হোটেলের ক্যান্টিন বা খাবার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে তাই খেয়েই রুমে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি যে হোটেলে উঠেছিলাম তার নাম হলো অনলাইন গেস্ট হাউস। পাশে একই মালিকের আরেকটি আবাসিক হোটেল আছে যেটার নাম শান্তি নিকেতন নিবাস। অনলাইন গেস্ট হাউসে ডাবল রুমের ভাড়া ছিল ১,২০০ রুপি আবার শান্তি নিকেতনে রুমের সঙ্গে রান্নাঘরসহ ভাড়া ৪০০ রুপি। তবে অনেক অপরিষ্কার মনে হলো আমার কাছে তাই ১,২০০ রুপি দিয়ে অনলাইন গেস্ট হাউসের ডাবল একটা রুম ভাড়া নিলাম।

আমাদের গেস্ট হাউসের পাশে অনেক ফ্ল্যাট ভাড়াও পাওয়া যায় যেগুলোতে টিভি ফ্রিজ রান্নার সুবিধাসহ ৫০০ রুপির মধ্যে ভাড়া নেয়া যায়। আমাদের গেস্ট হাউসের মালিকের সঙ্গে দেবী শেঠি একসঙ্গে স্কুলে পড়েছে। তাই উনার সঙ্গে কথা বলেও দেবী শেঠি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। হোটেলের উদ্বোধনও করেছিলেন দেবী শেঠি। অনলাইন গেস্ট হাউসের যে ক্যান্টিন তার নাম ছিল মেগাবাইট। ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষেরা টক পছন্দ করে বেশি তাই ওদের টক তরকারিগুলো খুব ভালো লাগত আমার কাছে। যাই হোক সকালে উঠেই নারায়না হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। হোটেলের ক্যান্টিনে নাস্তা করেই রওনা হলাম হাসপাতালে। দেবী শেঠির হাসপাতালের আশপাশে যত থাকার হোটেল আছে সবগুলোতেই হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য ফ্রি গাড়ির সার্ভিস দেয়া হয়। ২৪ ঘণ্টাই এই সার্ভিস পাওয়া যায়।

Leave a Reply