ভুঁড়িকে তুড়ি মারুন!,Lose Belly Fat Without Exercise

করিম সাহেবের অনেকদিন পর পুরোনো একটা শার্ট দেখে সেটা পড়ার ইচ্ছা জাগলো। পড়ার সময় “এখনও কি সুন্দর ফিট করে!” ভাবতে ভাবতে যেই না পেটের কাছে বোতাম লাগাতে গেলেন, তখনই হল বিপত্তি ! বহু কষ্টে লাগানোর পর দেখলেন সেখানে ২ ইঞ্চি ফাঁক হয়ে পেট বাবাজি দাঁত বের করে হাসছে !

স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জীবনের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে ভুঁড়ি। যারা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন তারা অল্প একটু ভুঁড়ি হলেই কোমর বেঁধে নেমে যান তা দূর করতে ! আবার আরেক শ্রেণীর মানুষ, যারা সাধারণতঃ আলসে বলে পরিচিত, তারা আবার ভুঁড়ি আভিজাত্যের প্রতীক (!!) এই অজুহাতে এই অভিজাত বস্তুটিকে আরও সুন্দর করতে উঠে পড়ে লেগে যান 😛

Read More: স্টিভ জবসের জীবন ও সফলতার আত্মকাহিনী | Steve Jobs Biography in Steve Jobs’s Life Story and Success

কিন্তু এই অভিজাত বস্তুটি যে আপনার আভিজাত্যকে এক সময় ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারে তা মাথায় রাখা জরুরী। ভুঁড়ি হওয়া আপনার দেহের ইঙ্গিত যে এই দেহযন্ত্রটি আপনার ঠিকমত চলছে না এবং তা অতিসত্বর ঠিক করা দরকার। ভুঁড়ি হৃৎপিণ্ড, শ্বাসযন্ত্র, গলব্লাডার এমনকি মস্তিস্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। ভুঁড়ি হার্ট এ্যাটাক, ডিমেনশিয়া (মস্তিস্কের রোগ), ডায়াবিটিস, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের অন্যতম কারণ। তাই সুস্থ ও সবল থাকতে হলে ভুঁড়ি দূর করা যারপরনাই জরুরী।

ভুঁড়ি দূর করা কিন্তু খুব কঠিন কোন বিষয় না। খুব সহজেই এই বিড়ম্বনাকে তাড়ানো যায়। শুধু দরকার ইচ্ছা ও অধ্যবসায়। প্রথমেই খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। অতিরিক্ত শর্করা, রেড মিট প্রভৃতি ভুঁড়ি হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই ভুঁড়ি কমাতে হলে খাদ্যতালিকা থেকে এসব ছাঁটাই করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে। ডায়েট করা মানে কিন্তু এই না যে খাওয়া-দাওয়া সব বাদ দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া। বরং ডায়েট হচ্ছে শরীরকে সুস্থ সবল করে তোলার একটা পদ্ধতি। ভুঁড়ি কমাতে হলে ভাত, মিষ্টি, আলু প্রভৃতি যাবতীয় শর্করা জাতীয় খাওয়া কমিয়ে দিন। একসাথে বেশি খাবেন না। বরং কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে খান। কখনোই পেট কানায় কানায় ভর্তি করবেন না খেয়ে। ক্ষিদে মেটাতে যতটুকু খাওয়া দরকার ঠিক ততটুকুই খাবেন রাতে ভাত খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন, রুটি খাওয়া শুরু করুন।

Read More: শরীরের তিল দেখে ভবিষ্যত গণনা | শরীরের কোথায় তিল থাকলে কী হয়!

ভাত, রুটি এসব কম করে খাবেন, তরকারী, সালাদ, মাছ এসব বেশি করে খান। গরুর মাংস,খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগীর মাংস খান। খেয়েই শুয়ে যাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। খাওয়ার পর বাসাতেই ১০-১৫ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটুন। এতে হজম দ্রুত হবে এবং চর্বি জমার হার কমবে। ওহ ! আর চর্বি জাতীয় খাদ্যও কমিয়ে দিন। রান্নায় তেল কম ব্যবহার করুন। সকালের নাশতা ভালো করে করুন কিন্তু দুপুর, বিশেষ করে রাতে কম খান। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করুন। একটি প্রবাদ আছে ইংরেজিতে, যার অনুবাদ হচ্ছে –

“সকালের নাশতা খাও রাজার মত, দুপুরের খাবার কেরানীর মত ও রাতের খাবার ভিখারীর মত।”

শুধু খাদ্যাভাস পরিবর্তনেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে না, এটির সাথে নিয়মিত ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজও করতে হবে। এসব এক্সারসাইজের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কয়েকটি হচ্ছে –

# সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটু ভাঁজ না করে পায়ের পাতা ছোঁয়া – এটি প্রত্যহ ১০ বার করুন।
# মেঝেতে ম্যাট বিছিয়ে তার উপর শুয়ে পায়ের পাতা ছোঁয়া – এটি প্রত্যহ ৫ বার করুন।

Read More: হেঁচকিতে অস্বস্তি? জেনে নিন সমাধান,ঘরোয়া পদ্ধতি হেঁচকি কমানোর উপায়

# জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং – এটি ২ মিনিট করুন।
# বুকডন – দিনে ১০টা করে বুকডনও দিতে পারেন।
# লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। সময় থাকলে ৫ মিনিট সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করুন।

এছাড়া সাইক্লিং, সাঁতার প্রভৃতি করার সুযোগ থাকলে তা নিয়মিত করুন।

এসব ব্যায়াম নিয়মিত করলে ও যথাযথ খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে পারলে ভুঁড়ি দূর হতে বাধ্য! সেই সাথে আপনি আরও সুস্থ, সবল, সতেজ ও কর্মদ্যম হয়ে উঠবেন। আর শরীর সুস্থ থাকলে মন সুস্থ থাকতে বাধ্য, তখন জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠবে 🙂

 ভুঁড়ি কমানোর ৯ টি সহজ উপায়!

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহুরে যান্ত্রিক জীবনে ইদানিং আমাদের দৈহিক শ্রম কমে এসেছে, বেড়েছে মানসিক শ্রমের প্রয়োজন। আর তাই দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করা, কায়িক পরিশ্রম কম করার কারণে অনেকেরই পেটে চর্বি জমার প্রবণতা দেখা দেয়। এতে শুধু দেখতেও খারাপ লাগে না বরং পেটের এই অতিরিক্ত চর্বির কারণে বেড়ে যায় ওজন এবং এর চাপ পড়ে পায়ের ওপর। এর ফলে অসময়েই ক্ষয়ে যেতে পারে পায়ের হাড়! এছাড়াও হতে পারে আরো নানান শারিরীক সমস্যা।
পেটের এই বাড়তি চর্বি/ ভুড়ি কমাবার জন্যে রইলো কিছু কার্যকর টিপসঃ

১) হাঁটুনঃ

প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটুন। যে দূরত্বে হেঁটেই যেতে পারবেন সেখানে রিকশা করে যাবেন না। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন। প্রথম কিছুদিন ক্লান্ত লাগলেও কয়েক দিন পর এটা আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে।

২) ভাজা পোড়া কম খানঃ

ভাজা পোড়া জাতীয় খাবার কম খান। চেষ্টা করুন কম তেলে রান্না করা বা সেদ্ধ করা খাবার খেতে।

৩) ফাস্টফুডকে না বলুনঃ

কোনভাবেই ফাস্টফুড খাবেন না। মেয়োনেজ, পনির, সস, তেল, মাখন এসব আপনার পেটে চর্বি জমতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।

৪) ঘুমাবার আগে হাঁটুনঃ

ভুঁড়ি হবার অন্যতম কারণ খাবার ঠিকভাবে হজম না হওয়া। ঘুমাবার অন্তত দুই ঘন্টা আগে রাতের খাবার খান এবং খেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন। এতে খাবার ভালোভাবে হজম হবে। পেট বাড়বে না।

৫) লিফট নয় সিঁড়িঃ

অফিস বা বাসায় যতটা সম্ভব লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। এটা পেটের জমে থাকা চর্বি অপসারণের খুব ভাল উপায়। এতে পেটের উপর চাপ পড়ে ও আস্তে আস্তে চর্বি কমতে থাকে।

৬) অভ্যাসে সচেতন হোনঃ

চেষ্টা করুন সব সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে, বসতে ও হাঁটতে। কুঁজো হয়ে হাঁটবেন বা বসবেন না। দীর্ঘ সময় কুজো হয়ে এক স্থানে বসে থাকা, কম্পিউটারে কাজ করা এসবের কারণে ভুঁড়ি বেড়ে যায়। প্রতি এক ঘন্টা অন্তর একবার উঠে দাঁড়ান ও সোজা হয়ে বসুন।

Read More: রাতে ভাত না রুটি, কোনটা কতটুকু খাওয়া উচিৎ? Daily news times bd

৭) খাবার গ্রহণে নিয়ম মেনে চলুনঃ

দিনে তিন বেলা ভারী খাবার খাওয়ার চেয়ে ৫ বেলা কম করে খান। একেবারে না খেয়ে থাকা ঠিক নয়। ভাত খাবার চেয়ে ফল বা সবজি বেশি করে খান। পেট ভরবে কিন্তু ভুঁড়ি বাড়বে না।

৮) পানীয়ঃ

কোক বা সফট ড্রিঙ্কস আপনাকে কিছুক্ষণের জন্যে প্রশান্তি দিতে পারে কিন্তু এটা আপনার পেটে চর্বি জমানোর পেছনে দায়ী। একই ভাবে বাজারের ফ্রুট জুসে থাকা প্রচুর চিনি ও অন্যান্য উপাদান আপনার ভুঁড়ি তৈরীতে সহায়ক। তাই এর বদলে প্রচুর পানি, বাসায় বানানো ফলের জুস, ফ্রুট সালাদ হতে পারে খুব ভালো বিকল্প।

৯) একটি বিশেষ ব্যায়ামঃ

একটি বড় বল নিন। সেই বলের ওপর দু পা তুলে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পরুন। এবার নিজের পায়ের পাতা স্পর্শ করতে চেষ্টা করুন বা উঠে বসতে চেষ্টা করুন। এভাবে দৈনিক ২০ বার করুন। আস্তে আস্তে বাড়িয়ে ৫০ বার করে ফেলুন। ভুঁড়ি কমাতে এর চাইতে কার্যকরী ব্যায়াম কম আছে। খুব কম সময়ে পেটের মেদ ঝরিয়ে সুন্দর আকারে চলে আসবে আপনার শরীর।

ব্যস, এবারে কিছু কৌশল অনুসরণ করেই ঝরিয়ে ফেলুন দেহের বাড়তি মেদ ভুঁড়ি। সুন্দর থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন

Leave a Reply