Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
একটি জমির মূলত কি কি কাগজপত্র থাকা লাগে সে

একটি জমির মূলত কি কি কাগজপত্র থাকা লাগে সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানব একজনআপনার জমির খতিয়ান, দলিল সনদপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার আমিন

মোহাম্মদ মশিউর রহমান:

রাকিব সাহেব প্রায় একযুগ চাকরি করে যে সঞ্চয় করেছিলেন তা দিয়ে একখন্ড জমি কিনেন ঢাকার সাভারে। কিন্তু জায়গাটা দখল নিয়ে যখন বাড়ি করতে যান তখন জানতে পারেন সম্পত্তিটি ব্যাংকের নিকট বন্ধক আছে। তার মত আর একজন ক্রেতা জমি কিনে দখল নেয়ার সময় দেখেন বিক্রেতা যে পরিমাণ সম্পত্তি বিক্রি করেছেন ততটুকু পরিমাণ সম্পত্তি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে পারেন না। এমনিভাবে একই সম্পত্তি ভিন্ন ভিন্ন দলিলে কয়েকবার বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন সময়ে ভিন্ন লোককে বিক্রেতা সাজিয়ে প্রতারণামূলক দলিল রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। অথবা জমির কাগজপত্র সব ঠিক, মালিকানা স্বত্ত্ব ঠিক কিন্তু জমির দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে অন্যটা। অর্থাৎ অন্য দাগের জমিকে সেই দাগের জমি বলে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আইনের ফাঁক-ফোঁকর ও দুর্বলতার সুযোগে প্রতারকরা একদিকে যেমন ভূমির ক্রেতাকে ঠকাচ্ছে, তেমনি বিক্রেতাকেও। একদিকে জাল দলিল মারফত দায়বদ্ধ ও কন্টকাকীর্ণ জমিকে তারা নির্দায়ী নিস্কন্টক বানিয়ে ফেলছে তেমনি কতিপয় ক্ষেত্রে নিস্কন্টক ও নির্দায়ী জমিকে তার কন্টকাকীর্ণ করে তুলছে। ভূমির মালিকানা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার বটে। ভূমি ক্রেতাগন মুন্সি মোহরি ও দালালের শরণাপন্ন কিংবা খপ্পরে পড়ে নিজের সর্বনাশ করছেন এমন উদাহরণ অনেক। ভেজাল জমি কিনে একদিকে যেমন সারা জীবনের সঞ্চয় হারাতে হয় তেমনি মামলা মোকদ্দমার সাথে সংযুক্ত হতে হয়। এজন্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতারা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে পারেন-

  • যার কাছ থেকে জমি কিনবেন তার কাছ থেকে ঐ জমি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে নিন, যেমন- সি.এস খতিয়ান, আর.এস খতিয়ান, বি.এস/ঢাকা সিটি জরীপের খতিয়ানসহ সর্বশেষ পর্যন্ত যে সকল বেচাকেনা হয়েছে সেগুলোর বায়া দলিল, নামজরী খতিয়ান এবং হাল সনের খাজনার দাখিলাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র।
  • এ কাগজগুলো দিয়ে মালিকানা স্বত্ত্ব পরিক্ষা করে দেখতে হবে। যেমন- সি.এস খতিয়ান, এস.এ খতিয়ান, আর.এস/বি.এস খতিয়ান ও ঢাকা সিটি জরীপের খতিয়ান পাশাপাশি মিলিয়ে দেখতে হবে জেলা, মৌজা, থানা, দাগ নম্বর ইত্যাদি মিলে কিনা। যদি না মিলে তবে ঐ মৌজার সি.এস নকশা,আর.এস./বি.এস ও ঢাকা সিটি জরীপের নকশা জোগাড় করে তাদের তুলনা করে দেখতে হবে সি.এস দাগ ভেঙে কয়টি আর.এস. দাগ বা সিটি জরীপের দাগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেগুলো কি কি। এরপর ভূমি রেকর্ড রুম হতে ঐ খতিয়ানগুলোর সই মুহুরী নকল নিয়ে মালিকের নাম নিশ্চিত করতে হবে। যদি সি.এস খতিয়ানে মালিকের নামের সহিত এস.এ বা আর.এস খতিয়ানের মিল না পাওয়া যায় তবে দেখতে হবে সি.এস এর মালিক জমিটি কি করলেন। তিনি যদি বিক্রি, দান, হেবা, এওয়াজ বা কোনরূপ হস্তান্তর করে থাকেন তবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তল্লাশি দিতে হবে এবং হস্তান্তর দলিলের সই মুহুরী নকল বের করতে হবে। একইভাবে পরবর্তী সকল খতিয়ানের মালিকানার ক্ষেত্রে তা পরিক্ষা করতে হবে। কিভাবে হস্তান্তরিত হয়ে রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছে।
  • বিক্রেতার জমিটি তার অন্যান্য শরীকদের সঙ্গে অংশনামা হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। বিক্রেতা যদি বলেন যে আপোষমুলে বণ্টন হয়েছে, কিন্তু না রেজিস্ট্রি হয়নি, তবে ফারায়েজ অনুযায়ী বিক্রেতা যেটুকু অংশের দাবিদার শুধু সেটুকু কিনাই নিরাপদ হবে।
  • বিক্রেতা যদি তার কিনা জমি বিক্রি করতে চান তবে রেকর্ডীয় মালিক থেকে পরবর্তীতে হস্তান্তরিত সকল বায়া দলিলসমুহে বর্ণিত স্বত্ব ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। ঐ দলিলে বর্ণিত খতিয়ান ও দাগ নম্বর বের করে তাও বিশ্লেষন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিস থেকে সই মুহুরী নকল নিয়ে তা যাচাই করতে হবে।
  • যাচাই করতে হবে জমিটি খাস, পরিত্যক্ত, শত্রু স¤পত্তি কিনা বা সরকার কোন কারনে অধিগ্রহণ করেছে কিনা।
  • জমি বিক্রেতার মালিকানা স্বত্ব বা বিক্রয়ের বৈধ অধিকার আছে কিনা তা দেখতে হবে। অর্থাৎ জমির মালিক নাবালক বা অপ্রকৃতিস্থ কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে। নাবালক হলে আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিযুক্ত করে বিক্রয়ের অনুমতি নিতে হবে।
  • কিনার আগে সব অংশীদারকে নোটিশ দিতে হবে যাতে পরবর্তীতে অগ্রক্রয়/প্রিয়েমশান মোকদ্দমা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
  • এবার দেখতে হবে বিক্রেতা ঐ জমির ব্যাপারে কাউকে আমমোক্তার নিযুক্ত করেছেন কিনা, এছাড়া ব্যাংক কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রেখেছেন কিনা। আর উক্ত জমিটি নিয়ে কোন মামলা বিচারাধীন আছে কিনা কিংবা কোন প্রকার মামলা নিস্পত্তি হয়েছে আছে কিনা তা দেখাও বাঞ্ছনীয়।
  • জমির মালিকানা স্বত্ব সঠিক পাওয়ার পর আপনাকে সি.এস/আর.এস/বি.এস/ঢাকা সিটি জরীপের নকশা নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হবে নকশা অনুযায়ী ঐ জমিটি সেই দাগের কিনা।
  • এরপর বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট জমিটি বর্তমানে কে দখলে আছে, কিনতে গেলে কোন কারনে ভোগ দখলে বাধাগ্রস্থ হবে কিনা কিংবা রাস্তা বা পথাধিকারের কোন বাধা নিষেধ আছে কিনা তাও সরেজমিনে যাচাই করে নিতে হবে।

সবকিছু সঠিক পাওয়া গেলে তারপর রেজিস্ট্রি করার জন্য দলিল প্রস্তুত করতে হবে। দলিল লিখার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। ২০০৫ সালের জুলাই থেকে আর আগের মত গদ্যাকারে বর্ণনামূলক দলিল প্রস্তুত করা হয়না। নতুন আইনে ছকাকারে যেভাবে কলামগুলো পূরণ করতে হয় সেগুলোর প্রতিটি কলাম সঠিক জেনে পূরণ করা উচিত।

এক্ষেত্রে ভূমি আইন, হেবা আইন, রেজিস্ট্রেশন আইন জানা লোকদের দিয়ে দলিল প্রস্তুত করাই উত্তম। দলিল রেজিস্ট্রির সময় রেজিস্ট্রি অফিসের সত্যায়িত এক কপি সহমুহুরী নকল নিজের কাছে রেখে দিন এবং সময়মত মূল দলিল উঠিয়ে নিন।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

Leave a Reply