Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
dailynewstimesbd

(৫টি রচনা) নারীর অধিকার রচনা

নারীর অধিকার রচনা

সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ইসলাম দিকনির্দেশক। প্রাক-ইসলামি যুগে নারীর যখন কোনো সামাজিক অধিকার ও সম্মানবোধ ছিল না, যখন নবজাত কন্যাশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো এবং পুরুষেরা নারীকে শুধু ভোগের জন্য ব্যবহার করত, তখন মহানবী (সা.) সৎ কর্মে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদার কথা বললেন। তিনি মানুষকে জানিয়ে দিলেন, ‘পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎ কাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৪)
ইসলাম পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী করেছে, অত্যন্ত সম্মানজনক মর্যাদা দিয়েছে। নবী করিম (সা.) স্বয়ং নারীদের শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্বের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের উদ্দেশে শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজা)
ইসলাম নারীদের আবশ্যিক শিক্ষা, ধর্মচিন্তা, কর্মের স্বাধীনতাসহ পাত্র নির্বাচন ও সম্মতি প্রদানের অধিকার দিয়েছে।

বিবাহের সময় অবিবাহিতা, তালাকপ্রাপ্তা ও বিধবাদের মতপ্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। নারীরা যেন নিজেদের নৈতিক চরিত্র সমুন্নত রাখে এবং সৎ/যোগ্য পাত্রকে স্বামী হিসেবে নির্বাচন করতে পারে। সমাজে মাতা, গৃহকর্ত্রী ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত নারীর যথার্থ অবস্থান নিশ্চিত করে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীর অধিকার সমুন্নত করে গেছেন। পিতামাতা, নিকটাত্মীয় ও স্বামীর সম্পত্তিতে রয়েছে নারীর সম্মানজনক অধিকার। যেকোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে অর্থসম্পদ মহিলারা উপার্জন করবেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে যে ধন-সম্পদের অধিকারী হবেন, এতে ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতামাতা আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক বা বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭)
পিতা, স্বামী, ভাই, পুত্র—এ চার পরিচয়ে পুরুষ অভিভাবকেরা নারীর হক বা ন্যায্য প্রাপ্য দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আদায় করবে, এটাই আল্লাহর বিধান। স্বামীর ওপর স্ত্রীর বিশেষ অধিকার এই যে স্বীয় সামর্থ্যানুযায়ী তাকে খোরপোশ, বাসস্থান এবং মোহরানা দিতে হবে। স্ত্রীর প্রতি কোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচার করবে না।

পারিবারিক বন্ধন ছেড়ে স্বামীর গৃহে গিয়ে স্ত্রী যেন কোনো রকম নিরাপত্তাহীনতা অনুভব না করে, সে জন্য তার প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করা উচিত।
ইসলাম নারীকে সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে বেশি আর পুরুষকে দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছে বেশি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পোশাকের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক যত নিবিড়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ততটাই নিবিড় হওয়া চাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৭) নবী করিম (সা.) স্বামীকে অধিক ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হতে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা নিজ পত্নীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই আদেশমতো তাদের তোমাদের জন্য বৈধ করে নিয়েছ। মুমিন স্বামী ইমানদার স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ ভাব পোষণকারী হবে না। কারণ, স্ত্রীর কোনো ব্যবহারে মনে কষ্ট এলেও পুনরায় তার দ্বারাই এমন ব্যবহার পাবে, যাতে সন্তুষ্টি লাভ হবে।’ (মুসলিম)
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই ন্যায্য অধিকার ও সমমর্যাদা স্বীকৃত। যেমন—বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সমালোচনার অধিকার। নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী, প্রতিযোগী নয়। পরিবারে নারী-পুরুষ উভয়ই সংসারধর্ম পালন করবে এবং পারস্পরিক উন্নতির চেষ্টা করবে। স্বামী যেহেতু চাকরি বা ব্যবসায় কর্মব্যস্ত, সেহেতু গৃহস্থলে সন্তানদের লালন, সুশিক্ষা প্রদান ও চরিত্র গঠনের মতো গুরুদায়িত্ব স্ত্রীকেই পালন করতে হয়। পরিবারে শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব উপেক্ষা না করে কোনো নারী যদি মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক কোনো চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তবে তা অতি উত্তম। স্বামীর সংসারে কর্ত্রী হিসেবে নারীর দায়িত্ব নির্ধারণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে নারীরা স্ব স্ব যোগ্যতা ও মেধার গুণে নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিচ্ছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, নারীর প্রতি কুদৃষ্টি ও অসদাচরণ করা যেন কিছু মানুষের মজ্জাগত। নারী সহকর্মীকে কোথাও সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতা হারিয়ে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য অধিকার পর্যন্ত ক্ষুণ্ন করা হয়, যা কর্মক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে।
অথচ ইসলাম বিভিন্ন বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নারীর অধিকারকে সম্মানজনক মর্যাদায় উন্নীত করেছে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের ন্যায্য অধিকার, প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা না দেওয়া বা উপেক্ষা করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। নারীদের কোণঠাসা করে না রেখে তাদের উচ্চতর শিক্ষা ও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ অবারিত করে দেওয়া দরকার। এ জন্য নারী জাতির প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায়সংগত অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

Read more: (৫টি রচনা) ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

নারীর অধিকার রচনা ২

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ অর্থাৎ সব কল্যাণকর বিষয়ে যতটুকু পুরুষের অবদান, ঠিক ততটুকুই নারীর। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি অবদান নারীর। কিন্তু তারপরও সমাজে নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়া হয় না। নারী-পুরুষ সমঅধিকারের বিষয়টি এখনও অনেকাংশে কাগজে কলমে থেকে গেছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু এই নিয়মগুলো যখন বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়, তখনই শুরু হয়ে যায় ঝামেলা।

প্রায় দু’শ বছর আগে রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করেছেন। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করেছেন। বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছেন। তারও আগে রানী ভবানী রাজ্য চালিয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রীতিলতা সেন নিজের জীবন দিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, রাজপথে আন্দোলন করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সম্মুখযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার জন্য তিন লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন।

এসব তো অনেক আগের ঘটনা। তখন কমসংখ্যক মানুষ শিক্ষিত ছিল। আর এখন শিক্ষার হার বেড়েছে। মানুষের চিন্তাধারার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যখনই নারীর অধিকারের প্রশ্ন সামনে এসেছে, তখনই মানুষের চিন্তাধারা দেখে মনে হয়েছে, সমাজের অগ্রযাত্রা হয়তো আরও দু’শ বছর পেছনে চলে গেছে। আমরা মুখে নারী অধিকারের কথা বলব, অথচ ঘরের বউকে বাইরে চাকরি করতে দেব না। বিয়ের সময় মেয়ের বাবাকে যৌতুক দিতে হবে। মেয়ে যদি অল্প শিক্ষিত হয় তাহলে ভালো কথা; কিন্তু যদি উচ্চশিক্ষিত হয় তাহলে বিয়ের আগেই বলতে হবে- মেয়ে এখন যা করছে করুক, কিন্তু বিয়ের পরে চাকরি করতে পারবে না। আমরা মুখে বড় বড় কথা বলি, কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশের মানসিকতা এরকম। সব ধর্মেই মায়েদের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে, মা স্বর্গের থেকেও বড়। তারপরও বাস্তব জীবনে অধিকাংশ নারী তাদের যোগ্য সম্মান পান না।

দেশের অর্ধেক মানুষ নারী। তাদের অগ্রাহ্য করে দেশ ও জাতির উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। নারীর অধিকার কখনও আপসে কেউ দেয়নি। যে অধিকার তাদের প্রাপ্য তা কেন আইন পাস করে তাদের দিতে হবে? নারীদেরই তাদের নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন তাদেরকেই করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ সমাজে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া মানেই সারা জীবন সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। তাই প্রত্যেক মেয়েকেই শিক্ষিত হতে হবে নিজের চেষ্টায়। যে পরিবারের সমর্থন পাবে, তার চলার পথ সহজ হবে; যে পরিবারের সমর্থন পাবে না, তার চলার পথ কঠিন হবে- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাকে এ সমাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আর আমাদের পুরুষদের নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

Read more: (৫টি রচনা) বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

নারীর অধিকার রচনা ৩

ভূমিকা:

এ বিশ্বসমাজ সাধারণভাবে মানবজাতির লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজন অনুযায়ী পুরুষ ও নারী এই দুটি ভাগে বিভক্ত। নারী ও পুরুষ উভয়েই এ পৃথিবীর তথা সৃষ্টির দুটি পরম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই অঙ্গটির সব সময় একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে। একটি ছাড়া অপরটি কখনোই সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। তাই সমাজ সৃষ্টির এই দুটি অপরিহার্য অঙ্গ স্কন্ধে ভর করেই উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। সেই কারণেই নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোন একটির উন্নয়ন ঘটলে সমাজের সার্বিক উন্নতি সাধিত হতে পারে না।

See also  (৫টি রচনা) মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা

সমাজের প্রকৃত উন্নতির জন্য প্রয়োজন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের সার্বিক উন্নয়ন। উন্নয়ন বলতে মূলত এ ক্ষেত্রে শিক্ষাকে বোঝানো হয়ে থাকে। শিক্ষা হল মানব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। শিক্ষা ছাড়া কখনোই একজন মানুষ, পুরুষ হোক বা নারী, মানসিকভাবে উন্নত হতে পারে না। সেই কারণে সমাজ তথা এ বিশ্বের অবগতির জন্য পুরুষের সাথে সাথে নারী শিক্ষারও একান্ত প্রয়োজন।

বিশ্বে নারীদের গুরুত্ব:

পৃথিবীতে নারীর অপরিসীম গুরুত্ব বর্তমান। নারী ছাড়া পৃথিবীতে সৃষ্টির অস্তিত্বকেই কল্পনা করা যায় না। নারী হলো সৃষ্টির প্রতীক। এ বিশ্বে নারী শরীর থেকে নতুন প্রাণ জন্ম নেয়। পুরুষ যেমন সমাজকে বাইরে থেকে টেনে নিয়ে যায়, নারী তেমন সমাজের অন্দরমহল থেকে সমাজকে অগ্রগতির দিকে প্রসারিত করে। তাই নারী হলো ধারক আর পুরুষ বাহক। আমরা প্রত্যেক দিন ঘরে ঘরে নারীদের দেখি ঘরের সমস্ত খুঁটিনাটি সামলে নিয়ে সংসারের গতিকে সচল রাখতে।

সেই নারীই আবার যখন সমাজের উচ্চতম পদে অধিষ্ঠান করে তখন সে অলংকৃত করে সমাজের বহিরাঙ্গকে। সেই কারণে পৃথিবীর বহু জায়গায় বিভিন্ন সময়ে নারীদের নিয়ে যে অবহেলার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে অনতিবিলম্বে তা  হওয়া প্রয়োজন। ধারক উন্নত না হলে সমাজকে বহন করার ক্ষমতা পৃথিবীতে কারোর নেই। তাই বিশ্বে নারী সমাজের উন্নতি না হলে সমাজের সার্বিক উন্নতি কোনদিন সম্ভব নয়।

আধুনিক শিক্ষা ও গবেষণায় নারী:

আধুনিক সভ্যতার মেরুদন্ড হল আধুনিক শিক্ষা ও গবেষণা। নারীরা যে সেখানেও যে কোনো পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সভ্যতার উন্নতিকল্পে অবদান রাখতে পারে তা বিশ্বজুড়ে বারবার প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানকালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য গবেষণায় নিয়োজিত মানুষদের মধ্যে রয়েছেন অসংখ্য নারী। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিস্বরূপ নার্সারি ও মন্তেসরী স্কুল বিকশিত হয়েছিল নারীদের হাত ধরেই।

অতি সাম্প্রতিককালে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা মহাকাশ গবেষণাতেও নিয়োজিত হয়েছে নারীশক্তি। এই সকল নারীরা তাদের ব্যাপক মেধা ও অধ্যাবসায় দিয়ে নিজের নিজের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ প্রসঙ্গে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে পরমাণু গবেষণায় নিয়োজিত প্রাণ মাদাম কুরি, প্রথম মহাকাশে পাড়ি দেওয়া নারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা কিংবা অতি সাম্প্রতিককালে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারকারী দলের নারীদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।

রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনায় নারীর গুরুত্ব:

রাষ্ট্র এবং সমাজ পরিচালনায় নারী যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে নাদিরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে কোন রাষ্ট্র বা সমাজ হল একটি বৃহত্তর পরিবারেরই অনুরূপ। তাই যে নারী একজন গৃহকত্রী হিসেবে নিজের ঘরকে সুসংহত ভাবে পরিচালনা করতে পারেন তিনি একজন নেত্রী হিসেবে রাষ্ট্র বা সমাজকেও সুসংহত নেতৃত্ব দিতে পারেন। পৃথিবীতে অসংখ্য উদাহরণ আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সমাজে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারী নারীদের মধ্যে সিরিমাভো বন্দরনায়েক, ইন্দিরা গান্ধী, অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, হিলারি ক্লিনটন, শেখ হাসিনা, থেরেসা মে প্রমুখের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় হয়।

ভারতীয় ঐতিহ্যে নারীর স্থান:

ভারতীয় ঐতিহ্য নারীকে সমাজের একটি উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সনাতন ভারতীয় দর্শনে নারী এবং পুরুষ উভয়েই সভ্যতার সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশস্বরূপ। সমাজে তাদের পৃথক পৃথক ভূমিকা থাকলেও অধিকারের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। আদি ভারতবর্ষীয় সমাজে নারী কিংবা পুরুষ সকলের অধিকারী সর্বদাই যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। সে কারণেই ভারতবর্ষে সমাজ তথা শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে আদিযুগ থেকে নারীর ভূমিকা সংক্রান্ত উদাহরনের কোন অভাব নেই।

ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাচীনতম ঐতিহ্য সিন্ধু সভ্যতা থেকে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শন থেকে আমরা আদিম ভারতীয় সমাজে নারীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কথা জানতে পারি। অন্যদিকে সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাচীনতম লিখিত গ্রন্থ বেদে লোপামুদ্রা, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমূখ মহিষী নারীদের কথা পাওয়া যায়। এই সকল নারী আপন যোগ্যতাবলে সমাজে ব্রাহ্মণত্বের সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। এছাড়া দক্ষিণ ভারতীয় ইতিহাসে শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বারবার ফিরে ফিরে আসে নারীদের ব্যাপক ভূমিকা ও প্রভাবের কথা। তাই একথা মেনে নিতেই হয় সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতি সমাজে নারীকে শুধুমাত্র তার লিঙ্গপরিচয়ের মাপকাঠিতে বিচার না করে আপন যোগ্যতা অনুযায়ী তাকে দিয়েছে প্রাপ্য মর্যাদা।

See also  (৫টি রচনা) একটি ঝড়ের রাত রচনা / একটি ঝড়ের অভিজ্ঞতা রচনা

বিশ্বব্যাপী নারীর মর্যাদার অবনমন:

প্রাচীন ভারতবর্ষ নারীকে যতই উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করুক না কেন, সময়ের সাথে সাথে আদি মধ্যযুগের প্রাক্কাল থেকেই ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছে নারীর মর্যাদার ব্যাপক অবনমন। বিশ্বব্যাপী সামরিক আগ্রাসনের যুগে বৌদ্ধিক যোগ্যতার স্থান যখন পেশিশক্তি দখল করল, তখন সভ্যতার ধারক নারীত্বের তুলনায় পৌরুষ হয়ে উঠল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই নারীরা ধীরে ধীরে সমাজে নিপীড়িত হতে হতে সভ্যতার অগ্রভাগ থেকে পিছনের দিকে সরে গেল।

গৃহের অন্দরমহলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হলো তাদের বিচরণ। সমাজে নারীদের মতামত, সাধারণ সামাজিক অধিকার ইত্যাদিও প্রতিনিয়ত ক্ষুণ্ন হতে থাকলো। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজের একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় শক্তিকে অব্যবহারে ফেলে রাখার কারণে সামগ্রিকভাবে সভ্যতাই পিছিয়ে পড়ল। আর একসময়ের ব্যাপক মূল্যবোধসম্পন্ন শাণিত তরবারিতেও লাগলো মরিচার ছোঁয়া।

নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক আন্দোলন:

আধুনিক যুগের প্রথম লগ্ন থেকেই বিশ্বজুড়ে নারীরা আপন অধিকারের দাবিতে পথে নামতে শুরু করেছিলেন।  এই সময় থেকেই একটু একটু করে বিশ্বের সামাজিক মূল্যবোধের অন্যতম প্রধান দাবি হিসেবে উঠে আসে পুরুষ ও নারীর সমানাধিকারের ধারণা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সংক্রান্ত আন্দোলন সৃষ্টির সাধারণ নিয়মকে অস্বীকার করে বাইনারি বা দ্বিচলবিশিষ্ট মৌলবাদ দ্বারা পরিচালিত হলেও পিছিয়ে থাকা নারীদের দাবিকে সমাজের অগ্রভাগে তুলে আনার ক্ষেত্রে এই আন্দোলনগুলির গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

প্রথম সম্ভবত এই সংক্রান্ত আন্দোলন শুরু হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের অব্যবহিত পরে বিশ্বজুড়ে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার ধারণার ব্যাপক প্রচার-প্রসারের পরপরই। বিষয় সংক্রান্ত আন্দোলনে প্রথমদিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীগণ। ভারতবর্ষে নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত আন্দোলন ঔপনিবেশিকতার কারণে তুলনামূলকভাবে অনেক পরে প্রবেশ করেছে।

বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ:

সমাজে নারীদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই হোক কিংবা বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত আন্দোলনের ফল হিসেবেই হোক পৃথিবীর অসংখ্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি বর্তমানে পিছিয়ে পড়া নারীশক্তিকে সমাজের অগ্রভাগে ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানেই পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে সামাজিক উন্নয়নযজ্ঞের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য সাহায্য নেয়া হচ্ছে সংরক্ষণের।

এছাড়া নারীর অধিকার, নারীর শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সংক্রান্ত প্রচার-প্রসারেও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। ভারতবর্ষও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। অতি সাম্প্রতিককালে ভারতবর্ষে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে নারী শিক্ষার জন্য ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প, ১৮ বছর বয়সের পর নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য উৎসাহ ভাতা ইত্যাদি সাধু উদ্যোগও গৃহীত হয়েছে।

উপসংহার:

স্বামী বিবেকানন্দ এক সময় বলেছিলেন যে সমাজে মাতৃ শক্তি অবহেলিত হয়, সেই সমাজ কোন দিন নিজের মেরুদন্ড সোজা করে উঠে দাঁড়াতে পারে না। স্বামীজীর এই কথা সর্বাংশে সত্য। নারীশক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকে সভ্যতার উন্নতির এক বিপুল সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবক্ষেত্রে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের সভ্যতা সত্যই একটি দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত হতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে সার্বিক মূল্যবোধের বাতাবরণ গড়ে তুলে আধুনিক নারী আন্দোলনের বিভিন্ন উগ্রতাগুলি দূর করে সভ্যতার স্বাভাবিক নারীত্ব এবং পৌরুষ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলাও প্রয়োজন।

Read more: আমাদের বিদ্যালয় রচনা (4টি রচনা) | OUR SCHOOL

 

 

নারীর অধিকার রক্ষায় করণীয়, নারীর ক্ষমতায়ন রচনা, বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা রচনা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী ও মানবাধিকার, নারী রচনা, নারী উন্নয়ন কাকে বলে, একবিংশ শতাব্দীর নারী সমাজ রচনা, নারী অধিকার কর্মী,

নারীর ক্ষমতায়ন রচনা, নারী উন্নয়ন কাকে বলে, নারী শিক্ষা রচনা, নারীর ভূমিকা, একবিংশ শতাব্দীর নারী সমাজ রচনা, বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা রচনা, নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ রচনা

Leave a Reply