Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে

বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে

‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগের ফাঁদে ফেলে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এসে প্রশ্ন করে তা রেকর্ড করে দশম শ্রেণির ছাত্ররা। এরপর প্রধান শিক্ষকের কাছে ‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তি’ করার অভিযোগ করা হয়। বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘হৃদয় মণ্ডল ভালো শিক্ষক। তিনি পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বলে শুনেছি। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রেকর্ড করা হয়েছে, তা বোঝা গেছে। ছাত্ররা এমনভাবে প্রশ্ন করেছে যেন সেই ধরনের অভিব্যক্তি বের হয়ে আসে। চক্রান্ত করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি বলার মতো আপাতত কিছু নেই। ’ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করে তা রেকর্ড করা হয়েছে।

এরপর প্রধান শিক্ষক বরাবর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে লিখিতভাবে। কোচিং করানো এক ব্যক্তি ছাত্রদের ব্যবহার করে হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসাতে এই কাজ করিয়েছে। আর সে কারণে বিজ্ঞান ক্লাসে এক ছাত্র বারবার একই ধরনের প্রশ্ন করে যাচ্ছিল শিক্ষককে ফাঁদে ফেলতে। এমনকি ছাত্রদের বিক্ষোভও করিয়েছে একটি মহল।’ গত ২১ মার্চ এই ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার পর কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসে।

তারা বলে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করেছে। ছাত্ররা তার শাস্তি চায়। তখন আমি তাদের বলি, শিক্ষক যদি এরকম কিছু বলে থাকে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ফেরত পাঠিয়ে দেই। কিন্তু পরে তারা স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ করে। সেখানে স্থানীয়রাও ছিল। মাইকিং করে বলা হয়, যারা স্কুল ইউনিফরম পরা নেই তারা স্কুল থেকে যেন বেরিয়ে যায়।

পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে ভেবে আমরা পুলিশকে খবর দেই। হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (হৃদয় মণ্ডল) কোনও অপরাধ করেননি। ২২ বছর ধরে হৃদয় মণ্ডল ওই বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞানের ক্লাস করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে আগে কোনও অভিযোগ ওঠেনি।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। মামলার বাদী বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী মো. আসাদ।

গত সোমবার (৪ এপ্রিল) মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এ শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। রবিবার (১০ এপ্রিল) আবার তার জামিন শুনানি হতে পারে। হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মণ্ডলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। এটি একটি জামিন অযোগ্য ধারা। তবে, আদালত চাইলে জামিন দিতেও পারেন। আমরা গত শুনানিতে জামিন চেয়েছি। কিন্তু বাদীপক্ষের উকিলের দাবি ছিল—এখন জামিন দিলে শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মণ্ডলের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

সবদিক বিবেচনা করে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে যে খবর জানলাম তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন শিক্ষক যদি ক্লাসে মুক্তভাবে কথা বলতে না পারেন, ক্লাসে যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তা খুবই দুঃখজনক। ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিপদের মধ্যে ফেলা হয়েছে।

একজন শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য এভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সমাজে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। আমি মনে করি অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখা দরকার। যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাও তদন্ত করে দেখতে হবে। তাই বলে শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর জন্য শিক্ষককে কারাগারে নেওয়া দুঃখজনক।’ তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘আমারা দেখতে পাচ্ছি সাম্প্রদায়িক কূপমণ্ডূকতা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গ্রাস করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে।

শুধু শ্রেণিকক্ষেই নয়, রাস্তঘাটেও এমন ঘটনা ঘটছে। টিপ পরার বিরোধিতা আর হৃদয় মণ্ডলের এই ঘটনাগুলোর উদ্ভব রাতারাতি হয়নি। অনেকদিন ধরে কূপমণ্ডূকতা লালনপালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা আইনের মাধ্যমে একটি জায়গায় আসতে পারতাম। সেটা যে মাধ্যমের লেখাপড়াই হোক। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সব মানুষের অধিকার আছে মত প্রকাশের। শিক্ষার্থী যেমন পারেন প্রশ্ন করতে তেমন শিক্ষকও তার মতো করে উত্তর দিতে পারেন। শিক্ষক যদি সঠিক না বলেও থাকেন তাহলে কী অবমাননার অভিযোগ আনা ঠিক।

হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডলের জামিন নামঞ্জুর মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুরে বিজ্ঞানের শিক্ষক

জানি না আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, এটা একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমরা কোনও শিক্ষককে দমন করতে চাই না। শিক্ষকের মর্যাদার রক্ষা করতে হবে। তাকে সবচেয়ে মর্যাদায় রাখতে হবে। শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমি চিন্তাও করতে পারি না। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবীর বলেন, হৃদয় মণ্ডলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

ষড়যন্ত্র করে পটুয়াখালীতে দেবাশিষকে ফাঁসানো হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রসরাজকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।

অন্যদিকে দেশের ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, সারোওয়ার আলী, আবেদ খান, সেলিনা হোসেন, লায়লা হাসান, আবদুস সেলিম, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, সারা যাকের, শিমুল ইউসুফ ও হারুণ হাবীব।

Leave a Reply