আজব রীতি! বিয়ে হয় জঙ্গলে, স্বামী-স্ত্রী থাকে আলাদা ঘরে

মানব সভ্যতা বিকাশের শুরুতে মানুষ ছোট ছোট দল বা গোত্রে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও বিশ্বজুড়ে অনেক জনবসতি আছে যারা প্রাচীন গোত্রীয় জীবনধারা অক্ষুন্ন রেখেছে। বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন উপজাতি কিংবা গোত্রের জন্য বেশ পরিচিত পাপুয়া নিউগিনি। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। পাপুয়া নিউগিনিতে প্রায় ৩১২টি উপজাতি বসবাস করে।

আজব রীতি! বিয়ে হয় জঙ্গ

হুলি নৃগোষ্ঠী পাপুয়া নিউগিনির অন্যতম বৃহত্তম উপজাতি। তারা বেশ অদ্ভুত প্রকৃতির সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি পালনের জন্য পরিচিত। হুলি পুরুষ হুলি পুরুষ হুলি নৃগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে বাহারি পরচুলা ব্যবহার করে থাকে। এজন্য তারা হুলি উইগম্যান হিসেবে পরিচিত। পাপুয়া নিউগিনির হেলা প্রদেশে হুলি উইগম্যানদের বসবাস। এই অঞ্চলে তারা কয়েক হাজার বছর বসবাস করছে। তাদের মধ্যে প্রচলিত মৌখিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, হুলিরা তাদের বসবাসের স্থানের পার্শ্ববর্তী উচ্চভূমি এবং নিম্নভূমি উভয় অঞ্চলেই ভ্রমণকারী জাতি ছিল।

মূলত বাণিজ্যের কারণেই তারা সেসময় ভ্রমণ করত বলে জানা যায়। তবে ১৯৩০ এর দশকের পূর্বে বহির্বিশ্বে তাদের পরিচিতি ছিল খুবই অল্প। তারা মূলত হুলি এবং টোক পিসিন ভাষায় কথা বলে। তাদের আশেপাশের অঞ্চলে ব্যবহৃত কিছু ভাষাও হুলি উপজাতির মধ্যে প্রচলিত আছে। এরা পাপুয়া নিউগিনির বৃহত্তম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি। তাদের জনসংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি। তাদের সম্পর্কে প্রচলিত দীর্ঘ মৌখিক ইতিহাস থেকে জানা যায় হুলি নামের একজন পূর্ব পুরুষ থেকে তাদের উৎপত্তি।

আজব রীতি! বিয়ে হয় জঙ্গ

গোত্রের সকলেই হুলি নামের পূর্ব পুরুষের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। ছোট থেকেই ছেলে শিশুকে মেনে চলতে হয় বিশেষ রীতি ছোট থেকেই ছেলে শিশুকে মেনে চলতে হয় বিশেষ রীতি এই উপজাতির পুরুষরা বিশেষ রীতি অনুযায়ী যৌবনে পদার্পন করে। এজন্য ছেলেরা জন্মের সাত বা আট বছর পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে থাকে। এরপর তারা বাবার কাছে চলে যায়। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে তারা বাবাকে অনুসরণ করে। এরপর তারা যখন ১৪ কিংবা ১৫ বছরে পা দেয় তখন তারা নিজেদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। সেখানে তারা সামাজিক রীতিনীতি ও আদর্শ পুরুষ হওয়ার জ্ঞান অর্জন করে দেড় থেকে তিন বছর যাবৎ। এসময় তাদের কোনো নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। এমনকি নিজের মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা নিষিদ্ধ থাকে।

আজব রীতি! বিয়ে হয় জঙ্গ

হুলি উপজাতিদের বিশ্বাস ছেলেরা তাদের বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকার সময় জাদু, বিশেষ খাদ্যাভ্যাস এবং রীতিনীতি শিক্ষার সমন্বয়ে দ্রুত পূর্ণ বয়স্ক পুরুষে রূপান্তরিত হয়। এসময় ছেলেরা লম্বা চুল রাখে। মায়ের সঙ্গে শিশুরা মায়ের সঙ্গে শিশুরা শিক্ষা শেষ হলে তাদের লম্বা চুল কেটে ফেলে। এরপর সেই চুলগুলো ও অন্যান্য বিশেষ জিনিসের মাধ্যমে উইগ তৈরি করে। হুলিদের উইগ বা পরচুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উইগ তৈরি করতে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। তারা বিশেষ উৎসবে এবং প্রাত্যহিক জীবনে পরচুলা ব্যবহার করে।

 

আজব রীতি! বিয়ে হয় জঙ্গ

প্রত্যেক হুলি সদস্যের একাধিক পরচুলা থাকে। তবে প্রথম পরচুলা অবশ্যই বিয়ের পূর্বে তৈরি করতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো পরচুলা তৈরি করতে ১০ বছর সময়ও লাগতে পারে। অবাক করা বিষয় হলো, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ হুলিদের এই পরচুলের মূল উপাদান তাদের নিজেদের মাথারই চুল। তার সঙ্গে ডেইজি ফুল, বার্ডস অব প্যারাডাইসের পালক ব্যবহৃত হয়। শিক্ষা সমাপ্তির পর তারা মুখে হলুদ রং ব্যবহার করে এবং বিয়ের জন্য নারীর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।

এই উপজাতির পুরুষদের আজব বেশ এই উপজাতির পুরুষদের আজব বেশ মুখমণ্ডল এবং শরীরে চিত্রকর্মের জন্য হুলি উপজাতি বেশ পরিচিত। শরীরের চিত্র কর্মের জন্য রং হিসেবে ব্যবহার করে লাল গিরি মাটি এবং উজ্জ্বল হলুদ কাদা যা আম্বয়া নামে পরিচিত। হুলি পুরুষরা নাকে ক্যাসোয়ারির পালক থেকে তৈরি শলাকা বিদ্ধ করে রাখে।

এছাড়া তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে শোভা পায় বিভিন্ন প্রাণীর দেহাংশ। এই বিশেষ বেশভূষা হুলিদের বীরত্ব এবং পবিত্রতার প্রতীক। হুলি নারীদের সাজসজ্জা পুরুষের তুলনায় কম। হুলি উপজাতির পুরুষ এবং নারী আলাদা ঘরে বসবাস করে। এমনকি পুরুষের ঘরে নারীদের প্রবেশের অনুমতি থাকে না। হুলি নারী পুরুষের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জঙ্গলে। হুলি উইগম্যানদের সমাজে কোনো গোত্রস পিতা কিংবা একক নেতৃত্ব থাকে না।

 

আজব রীতি! বিয়ে হয় জঙ্গ

বিয়ের পরও নারী এবং পুরুষরা আলাদা বাস করে বিয়ের পরও নারী এবং পুরুষরা আলাদা বাস করে ধর্মীয় এবং সামাজিক আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্য গোষ্ঠির মধ্য থেকে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে সবার সম্মতিতে প্রধান পুরোহিত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তবে তিনি গোষ্ঠির অন্যান্য বিষয়গুলোতে কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এই উপজাতির বিনিময়ের মূল উপাদান শূকর। তারা শূকরের বিনিময়ে অন্যান্য দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে। বিয়েতে কনে পক্ষকে শূকর দেয়া হয়, তবে সংখ্যা নির্ভর করে উইগম্যান পরিবারের সামর্থ্যের উপর। তারা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিছু শস্য বপন করে। এছাড়া জঙ্গলে জন্ম নেয়া বিভিন্ন উদ্ভিদই তাদের খাবারের অন্যতম উৎস। ডেইলি বাংলাদেশ/জেএমএস

Leave a Reply