কণ্ঠ মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যমই শুধু নয়, এর উপরে অনেক মানুষের পেশাগত জীবন নির্ভরশীল। এছাড়া কণ্ঠ এবং বাচনভঙ্গি মানুষের ব্যক্তিত্বের অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কণ্ঠের যথাযথ ব্যবহার ব্যক্তির সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করে। সম্প্রতি আমেরিকায় একটি জরিপে দেখা যায়, যে সব শিক্ষক সারাক্ষণ কথা বলছেন কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে তাদের ১১% কণ্ঠের সমস্যায় ভুগছে। শিক্ষক ছাড়া অন্য পেশার জন্য এটা ৬.২%, তাই যারা মনে করেন শিক্ষকতা কণ্ঠ প্রয়োগের তেমন কোনো পেশা নয়, তাদের এই ধারণা ভুল। আরেকটি জরিপে দেখা যায় ২০% শিক্ষক তাদের চাকরি হারিছেন কণ্ঠের বিভিন্ন সমস্যার জন্য, যেখানে অন্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪%। কণ্ঠের সুস্থতা এবং এর বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই ১৯৯৯ সালের ১৬ এপ্রিল ব্রাজিলে প্রথম বিশ্ব কণ্ঠ দিবস পালিত হয়েছে।
পরবর্তীতে জনসাধারণের মাঝে কণ্ঠ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১৬ এপ্রিল বিশ্ব কণ্ঠ দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের বিশ্ব কণ্ঠ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আপনার উৎকর্ষের জন্য কণ্ঠের সুস্থতা সংরক্ষণ করুন’। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী তথা শিক্ষক, গায়ক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ধারাভাষ্যকার, বিক্রয় প্রতিনিধি ও অভিনেতাদের মতো পেশার মানুষ নিজের কণ্ঠের উপরে অনেক বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় তারা তাদের কণ্ঠের সুস্থতার ব্যাপারে সচেতন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সব মানুষের জীবনে কণ্ঠের সুস্থতার গুরুত্ব রয়েছে যে বিষয়ে আমরা সচেতন নই। কণ্ঠনালীর বিভিন্ন রোগ ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের অনেক বিষয় আমাদের কণ্ঠনালীকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে কণ্ঠনালি ও স্বরযন্ত্র তাদের স্বাভাবিক গঠনগত ও গুণগত বৈশিষ্ট্য হারাতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিরামহীনভাবে কণ্ঠের ব্যবহার, অতি উচ্চস্বরে কথা বলা, বারবার গলা পরিষ্কার করা, ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত গরম/ঠাণ্ডা পানীয় গ্রহণ করা ইত্যাদি কণ্ঠস্বরের জন্য ক্ষতিকর। কণ্ঠনালী, নাক, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণে ও স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে কণ্ঠের পরিবর্তন ঘটতে পারে যেমন শ্বাসনালীর সংক্রমণ, নাক ও সাইনাসের সংক্রমণ, এলার্জি, স্বরযন্ত্রের পলিপ, টিউমার ও ক্যান্সার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বরযন্ত্রের জন্মগত রোগ নিয়েও শিশুর জন্ম হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে জন্মের পর পরই শিশুর শ্বাসকষ্ট, দুধ পানে সমস্যা এবং কান্নার সময় অস্বাভাবিক আওয়াজ পরিলক্ষিত হতে পারে।
কণ্ঠের যত্নে করণীয় :