‘উদাল’ গাছের উপকারিতা | শারীরিক ক্ষমতা বাড়ায় মহাবিপন্ন ‘উদাল’

ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই প্রকৃতিতে আসে গাঢ় সবুজের ছড়াছড়ি। প্রকৃতির চারদিক পুরাতন পোশাক ফেলে নতুন পোশাকে হয়ে ওঠে অপরূপা। এ বসন্তে উদাল গাছের পাতাও ঝরে। কিন্তু নতুন পাতার পরিবর্তে আসে ফুল। গাছের ডালে ডালে ফুটে থাকে ফুল আর ফুল। এতো ফুল ফুটে যে গাছের ডাল-পাতাই দেখা যায় না। পুরো গাছটাই একেবারে হলুদ রঙে পূর্ণ হয়ে যায়। গাছজুড়ে বসে ফুলেদের এক অপূর্ব মেলা। হলুদময় বলে দূরে থেকে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ফুল। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এ ফুলগুলো আপন মনে উপভোগ করা যায়। দেখলে মনে হয় যেন ‘হলুদ পরী’।

‘উদাল’ ছাড়াও কোনো কোনো অঞ্চলে ‘চালা’ নামে পরিচিত এ গাছটি। এদের আঞ্চলিক নামও রয়েছে। উদালের ইংরেজি নাম- Hairy Sterculia এবং বৈজ্ঞানিক নাম- Sterculia villosa। এটি Malvaceae পরিবারভুক্ত। উদাল বাংলাদেশসহ ক্রান্তীয় এশিয়ার একটি প্রজাতি।

এ গাছেরও রয়েছে ঢের উপকারিতা। যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদাল গাছের ফুল ও ছাল উপকারী। মহিলাদের ঋতুস্রাব নিয়মিতকরণেও এর উপকার রয়েছে। এছাড়াও আমাশয়ে এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এ ফুল মাসখানেক বা দেড়মাস থাকে। ফুল ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডালের আগায় ফল আসতে শুরু করবে। থোকায় থোকায় ফলগুলো লেগে থাকলেও পরবর্তীতে আলাদা হয়ে যায়। ফলগুলো সবুজ রং থেকে পেকে গাঢ় লাল রঙে রূপ নেয়। পাকা ফলের ভেতরে কালো রঙের বীজ থাকে। উদাল গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার বা তার চেয়েও উঁচু হয়। আর ফুলগুলোও হয় দেড় সেন্টিমিটার চওড়া।

যখন এ গাছে ফুল হয়, তখন বাকলের মধ্যে এসে এর উপকারী কেমিক্যালগুলো জড়ো হয়। তখন এর বাকল বা ছাল ওষুধী হিসেবে কাজে দেয়। উদাল গাছের কাঠ বাদামি রঙের। কাঠটি নরম ও হালকা।

 

দূর থেকে হঠাৎই চোখে পড়ে হলদে সৌন্দর্য। সারা গাছজুড়ে শুধুই হলদে রঙের আভা। এ শীতের শেষে ফাগুনের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে সে। সবুজ প্রকৃতির বুকে হঠাৎ এমন বৃক্ষময় হলদে রঙের ছাপ দারুণ বিস্ময় সৃষ্টি করে।

 

এ মহিমান্বিত ফুলের নাম ‘উদাল’। পত্রঝরা উদাম গাছের ডালে ডালে এখন ঝুলছে থোকায় থোকায় স্বর্ণময় উদাল।

প্রকৃতিতে এখন উদাল ফুল ফোটে থাকার সময়।

২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী এ উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক মোল্লা রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, মুগ্ধ হতে হয় উদাল ফুলের গভীর সৌন্দর্যে। এ যেন স্বর্গ থেকে থোকা থোকা স্বর্ণ ঝরে পড়া। এ ছবি আমি আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তুলেছি। এর ইংরেজি নাম Hairy sterculia, Elephant rope tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sterculia villosa। পরিবার-Malvaceae। উদাল বাংলাদেশসহ ক্রান্তীয় এশিয়ার একটি প্রজাতি। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, নেপাল, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই উদাল গাছ দেখা যায়।

শারীরিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, উদাল গাছ ২০ মিটার বা ততোধিক উঁচু হয়ে থাকে। পত্রমোচী, মাথা ছড়ানো এবং ধূসর সাদা বাকলওয়ালা গাছ। শীতকালে এ গাছের পাতা ঝরতে শুরু হয়। ফুল বা ফলের মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) এ গাছে পাতা দেখা যায় না বললেই হয়। শীতের তীব্রতা কমার পরই উদাল গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়। পত্রহীন শাখার লম্বা ও ঝুলন্ত ডাটায় অসংখ্য থোকা থোকা সুগন্ধি ফুল ফোটে।

ফুলগুলো পুংলিঙ্গ ও উভয় লিঙ্গ হয়ে থাকে। ফুলের সামনের রং স্বর্ণাভ হলুদ এবং ভেতরের রং কমলা। সূর্যের আলোয় রোমশ ফুলগুলো চকচক করে। সুগন্ধি উদাল ফুল খুব সহজেই সবার নজর কাড়ে। ফুলগুলো দেড় সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে বলেও জানান রেজাউল করিম।

কাঠ সম্পর্কে তিনি বলেন, উদাল গাছের কাঠের রং বাদামি। কাঠ নরম ও হালকা হওয়াতে চা বাক্স বা অনুরূপ কাজে ব্যবহার করা যায়। গাছের বাকল থেকে এক ধরনের আঁশ পাওয়া যায়। যা দিয়ে মোটা রশি তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠাও পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

উদাল এর ভেষজ গুণাগুণ
উদালের সঙ্গে আমাদের খুব একটা চেনাজানা নেই। তাছাড়া এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা। গাছ লম্বায় ২০ মিটার বা তার চেয়েও উঁচু হতে পারে। শীতে সবপাতা ঝরিয়ে একেবারে উদোম হয়ে পড়ে। কাণ্ডের রঙ সাদাটে। পাতা একটু বড় ও খাঁজকাটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ এবং মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে উদালের কয়েকটি গাছ দেখা যায়।
উদাল মাঝারি আকৃতির পত্রমোচি গাছ। কচি ডাল, পাতার বোঁটা ও মঞ্জরি রোমশ। পাতা-ডালপালার আগায় গুচ্ছবদ্ধ থাকে, ২৪ থেকে ৪০ সেমি চওড়া, প্রত্যেকটিতে ৫-৭টি বড় লতি থাকে, নিচটা বেশ রোমশ। বোঁটা পাতার মতোই লম্বা। উপবৃতি অনেকটা বড়, চওড়া ও বর্শাকৃতির। মাঘ মাসের শেষভাগে শীতের তীব্রতা একটু কমে এলেই উদালের ফুল ফোটার প্রস্তুতি শুরু হয়।
বসন্তের শুরুতে অজস্র থোকা থোকা ফুলে গাছ ভরে ওঠে। ঝুলন্ত মঞ্জরিতে লম্বা ডাঁটায় হালকাভাবে গুচ্ছবদ্ধ কমলা-হলুদ রঙের ফুলগুলো ফোটে। নিষ্পত্র ডালের আগায় ৫ থেকে ৮টি মঞ্জরি, পুং ও উভলিঙ্গ দু’ধরনের ফুল মিশ্রিত। বৃতি নলাকার, বাইরে রোমশ। পরাগকোষ ১০টি। পত্রহীন ডালপালায় এমন পুষ্পপ্রাচুর্য খুব সহজেই নজরকাড়ে। হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুল প্রায় দেড় সেন্টিমিটার চওড়া।
ফুলের ভেতরটা বেগুনি রঙের। ফুল ঝরে পড়তে না পড়তেই ডালের আগায় ফল আসতে শুরু করে। কিছুটা রোমশ গায়ের এ ফলগুলোর পাকা রঙ গাঢ়-লাল। বংশবৃদ্ধির সহজ উপায় বীজ। উদালের কিছু উপাকরিতা রয়েছে। এখন
উপকারিতা :
শরীরে জ্বালা পোড়া হলে :
শরীরে জ্বালা পোড়া হলে উদাল গাছের বাকল থেঁতো করে এই রস শরবত বানিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অর্শ সারাতে :
উদাল গাছের বাকল সেদ্ধ করে সেই ক্বাথ দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল বিকেল সেবন করলে অর্শ রোগ ভালো।
প্রসাবের সমস্যায় :
উদাল ফুলের বৃন্ত ছেঁচে পানির সাথে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ভালো হয়।
অরুচি ভাব দূর করতে :
উদাল গাছের বাকল থেঁতো করে এই রস দিয়ে শরবত বানিয়ে খেলে অরুচি ভাব কেটে মুখে রুচি ফিরে আসে।
বাতের ব্যাথা নিরাময়ে :
নিয়মিত উদাল ফুলের বৃন্ত,ছেচে পানির সাথে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে বাতের ব্যথা ভালো হয়।
হৈমন্তী ফুল গাছ ,বাক্স বাদাম গাছ, তুত গাছ, কাঠগোলাপ গাছ, কোথায় পাওয়া যায়, কোন গাছ চলাফেরা করতে পারে ,ফুল গাছের লিস্ট, অশোক গাছ ফুলের পরিচিতি,‘উদাল’ গাছ,‘উদাল’ গাছের উপকারিতা

Leave a Reply