গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আনন্দমুখর পরিবেশে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকা বাইচ হয়ে গেলো। শনিবার বিকেলে কালিগঞ্জ নদীতে নান্দনিক এ নৌকা বাইচ হয়। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত আকর্ষণীয় এ নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর ,নড়াইল, বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের শতাধিক সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা বাছারী নৌকা অংশ নেয়। আবহমান গ্রাম বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজার প্রাণের আনন্দ উচ্ছলতায় ভরা এই নৌকা বাইচের পরিসর ছিল ২ কিলোমিটার পর্যন্ত। বাড়তি আকর্ষণ ছিল নৌকায় নৌকায় মেলা । নৌকায় ও ট্রলারে করে নৌকা বাইচ দেখতে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে সন্ধ্যায় এ নৌকা বাইচ শেষ হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ খালের দু’পাড়ে দাড়িয়ে নৌকা বাইচ দেখেন।
জেনে নিন সিলেটের ৫০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নাম ও ফোন নাম্বার
বাড়তি আকর্ষণ ছিল নৌকায় নৌকায় মেলা দুপুর থেকে নানা বর্নে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টি নন্দন এসব নৌকা তুমুল বাইচ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে একের পর এক কুচ বা ছোপ। ঠিকারী, কাশির বাদ্যে ও তালে জারি সারি গান গেয়ে এবং নেচে-হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ- ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। দুকূলে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন সমর্থক ও দর্শক। তারা উৎসাহ দেন বাইচে। খালের দু’ পাড়ে দাড়িয়ে থাকা মানুষের করতালী ও হর্যধ্বনিতে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।
এ সময় গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিয়ার রহমান, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান হাজরা, কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাসসহ উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। দৃষ্টি নন্দন এসব নৌকা তুমুল বাইচ শুরু করে হিজলবাড়ি গ্রামের সজল বাড়ৈ বলেন, আমাদের এলাকার নৌকা বাইচ কেউ প্রচলন করেননি।
প্রায় দু’শ বছর আগে বিল এলাকার মানুষ চিত্ত বিনোদনের জন্য নৌকা দিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতো, এ থেকে এটি প্রচলিত হয়। সে ঐতিহ্য এখনো চলছে। নৌকা বাইচ থেকে এলাকার মানুষ নির্মল আনন্দ উপভোগ করে। নৌকা বাইচ দেখতে আসা হিজলবাড়ি গ্রামের গৃহিনী লাবনী বর্ণিক বলেন, নৌকা বাইচ থেকে শুধু আনন্দ পেতেই নৌকার মালিকরা নৌকা নিয়ে এখানে আসেন। বাইচ উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসে।
রানির শেষকৃত্যে যে তিন দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি
ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়। মিলে মিশে সবাই আনন্দ উপভোগ করি। কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জে নৌকা বাইচ এখনো বর্ণিল। এ অঞ্চলে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকা বাইচের মধ্যে দিয়ে মৌসুমের বাইচের সূচনা হয়। এ নৌকা বাইচ কেউ আয়োজন করেন না। মনের খোরাক মেটাতে স্থানীয়রা নৌকা বাইচ দিয়ে থাকেন। এ কারণে এখনো কোটালীপাড়ায় নৌকা বাইচ টিকে আছে।