চোখের সামনে ধসে পড়ছে আফগানিস্তান

ভারতের জনপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপনের স্লোগান হলো, ক্ষুধা অনেক ভালো ভালো মানুষকেও বদলে দেয়। কথাটির আক্ষরিক বাস্তবতা টের পাচ্ছে আফগানরা। কাবুলের হাদিয়া আহমাদি ছিলেন স্কুল শিক্ষক। এখন রাস্তার পাশে বসে জুতো পলিশ করছেন। দেশটিতে এখন পলিশ করার মতো জুতো আদৌ আছে কিনা সে অন্য বিতর্ক হতে পারে, তবু একটা কিছু করে ঘরের সদস্যদের পেট ভরাতে হাদিয়া যে কতটা মরিয়া সেটাই প্রমাণ হলো রয়টার্সের তোলা ছবিতে।

২০ বছরের পশ্চিম-নির্ভর শাসনের শেষ দশ বছর ভালোই চলছিল হাদিয়ার সংসার। নিজে পড়াতেন স্কুলে। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে রান্নার কাজ করতেন স্বামী। সরকারি একটি এজেন্সির করণিকের চাকরি ছিল তার মেয়েরও। ছেলেটা পড়তো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। তালিবানের গদি দখলের পর রাতের ব্যবধানে বদলে গেলো সব।

মেয়েদের স্কুল বন্ধ হওয়ায় সবার আগে চাকরি হারালেন হাদিয়া। চাকরি গেলো মেয়ের। স্বামীর কোম্পানিও বন্ধ। টিউশন ফি দিতে না পেরে মাঝপথে পড়া ছাড়তে হলো ছেলেকে। হাদিয়ার মতো অবস্থা বলতে গেলে সব সাধারণ আফগানেরই। ঘরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করতে আফগানদের এখন দেখা যায় কাবুলের অলিতে গলিতে।

দেশটির রিজার্ভ সব আটকে দিলো পশ্চিমা দেশগুলো। বাইরের সাহায্যও বন্ধ। সেই অর্থ এলেও হাদিয়াদের ঘরে আদৌ খাবার পৌঁছাবে কিনা তা পরিষ্কার নয়, তবে জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করে বলছে, আফগানিস্তান কিন্তু সবার চোখের সামনে ধসে পড়ছে। সময়মতো অন্তত সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য না পেলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে দেশটিতে। জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য বিভাগের প্রধান সম্প্রতি এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বললেন।

‘এটা আমাদের চোখের সামনে ঘটছে।’ বললেন ইউএন হিউম্যানিটেরিয়ান চিফ মার্টিন গ্রিফিথ। দাতা দেশগুলোকে তিনি জানাতে চান, আফগানিস্তানে শুধু জরুরি মানবিক সাহায্যই নয়, তাদের জন্য মৌলিক শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ এসবও জরুরি। যেগুলো ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়।

‘অর্থনৈতিক পতনটা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। প্রতি সপ্তাহে আরও ভয়ানক হচ্ছে পরিস্থিতি।’

গ্রিফিথের মতে, আফগানিস্তানে সামনের সারিতে যারা মানবিক সহায়তার কাজ করছে, তাদের হাতে আটকে থাকা নগদ টাকাটা চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই পৌঁছাতে হবে। তিনি আরও জানালেন, ‘দেশটিতে ইতোমধ্যে ৪০ লাখ শিশু স্কুল থেকে ঝরে গেছে। খুব দ্রুত আরও ৯০ লাখ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে। কারণটা সাধারণ—৭০ ভাগ আফগান শিক্ষকই আগস্ট থেকে বেতন পাচ্ছেন না।’

মার্টিন গ্রিফিথের কথা হলো, তার এ কথার পরও যদি দাতাগোষ্ঠীর ঘুম না ভাঙে তবে অর্থনৈতিক ধসের জন্য বিশ্ব একটি বড় মানবিক বিপর্যয় দেখবে।

আফগানিস্তানের ৯০০ কোটি ডলার এখনও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আটকে আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর হাতে আছে ৪৫ কোটি ডলার। জাতিসংঘ অবশ্য সরাসরি এ টাকা তালিবান সরকারের হাতে তুলে দিতেও বলছে না। তাদের আহ্বান হলো, এ টাকা যেন তাদের মাধ্যমে সরাসরি দেশটির মানুষের খাবার ও অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যয় হয়।

চোখের সামনে ধসে পড়ছে আফগানিস্তান

তালিবানরা তাদের কথা রাখেনি। নারীদের সরকারে তো দূরে থাক, সাধারণ অফিস-আদালতেও জায়গা দিচ্ছে না। মূলত সেটারই শোধ তুলছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা। অপরদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) হিসাব কষে বলে দিয়েছে, আফগানিস্তানে সময়মতো অর্থসাহায্য না পৌঁছালে শুধু ‍ক্ষুধার কারণে শিশুসহ যে পরিমাণ মানুষ মারা যাবে, বোমা ও গুলিতেও তত লোক গত বিশ বছরে দেশটিতে মারা যায়নি।

গ্রিফিথ অবশ্য আশার কথাও শুনিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ২৮ কোটি ডলার দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সামনের ২১ ডিসেম্বর তিনি আফগান ইস্যুতে কথা যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে। জানুয়ারির শেষ নাগাদ কমপক্ষে ৭০ কোটি ডলার যোগাড় করার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন >> 

Leave a Reply