জন্মদিনে কিংবদন্ত অভিনেতা ছবি বিশ্বাসকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই ![🙏](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t80/1/16/1f64f.png)
![🌹](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t71/1/16/1f339.png)
![🌹](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t71/1/16/1f339.png)
![🙏](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t80/1/16/1f64f.png)
![🙏](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t80/1/16/1f64f.png)
![🌹](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t71/1/16/1f339.png)
![🌹](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t71/1/16/1f339.png)
![🙏](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t80/1/16/1f64f.png)
(১৩ জুলাই ১৯০০)
![♦️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t2d/1/16/2666.png)
![♦️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t2d/1/16/2666.png)
ওঁর ‘কাবুলিওয়ালা’ দেখে প্রচণ্ড রেগে গেলেন সত্যজিৎ রায়!
তত দিনে কিন্তু ছবিটা নিয়ে হই হই পড়ে গিয়েছে সারা ভারতে। পরিচালক তপন সিংহর নামে ধন্য ধন্য করছে সকলে।
তখনই একদিন হঠাৎ সত্যজিতের ফোন পরিচালককে, ‘‘নিজে একজন টেকনিশিয়ান হয়ে এত খারাপ টেকনিকাল কাজ করলেন কী করে?’’
রাগের কারণ শুনে ফোনেই প্রায় হাতজোড় তপনবাবুর।
অসহায়তার কথা কবুল করলেন।
তাতে আরওই ক্ষিপ্ত বহুকালের সুহৃদ সত্যজিৎ, ‘‘এত ভালমানুষ সাজবার দরকার নেই। কাজের সময় কোনও দিন কমপ্রোমাইজ করবেন না।’’
অপরাধ কী?
ছবি বিশ্বাসের মতো অমন মাপের এক জন শিল্পী, কিছুতেই স্পিরিট গাম দিয়ে দাড়ি লাগাতে দিতেন না। ফলে কাবুলিওয়ালার দাড়িটি হয়েছিল প্রায় কদাকার।
বার্লিন ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখে এক বিদেশি সাংবাদিক পরিচালকের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, ‘‘অভিনয়টি এতই ভাল যে, আপনাকে উনি ওঁর দাড়ির ব্যাপারটা ভুলিয়ে ছেড়েছেন।’’
কিন্তু ছবি বিশ্বাসকে বোঝায় কার সাধ্যি!
এমন এমন সব বিশ্বাস ছিল ওঁর, খুব কড়া ধাঁচের মানুষ না হলে, তা থেকে তাঁকে বের করে আনা রীতিমতো ঝকমারি।
‘কাবুলিওয়ালা’-তে আরও দু’বারের কাণ্ড যেমন।
কাকে করবেন ‘কাবুলিওয়ালা’, তখনও ভেবে পাচ্ছেন না তপন সিংহ।
ছবি বিশ্বাস শুনে বললেন, ‘‘কাবলেদের সম্বন্ধে আমাকে একজন অথরিটি ভেবে নিতে পারো। ওদের সঙ্গে অনেক মেলামেশা করেছি।’’
—তা’হলে তো ওদের পুশতু ভাষাও একটুআধটু জানেন। কিছু সংলাপ পুশতুতে দিতে চাইছি।
এ বার যেন একটু ঘাবড়ে গেলেন ছবি বিশ্বাস। বললেন, ‘‘শুধু শুধু পুশতু-মুশতু আনতে গেলে কেন? বুঝবে কে?’’
—না বুঝলেও চলবে। এতে অভিনয়ের একটা ডায়মেনশন আসতে পারে।
ভেবে বললেন, ‘‘তা ঠিক। একটা কাবলেকে ধরে শিখে নিলেই চলবে। বাদবাকিটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। কেমন পোশাক-পরিচ্ছদ, মেকআপ, চলাবলা…।’’
—প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে একটা বাড়িতে অনেক কাবুলিওয়ালা থাকে। তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। সে মাঝে মাঝে আপনার কাছে যাবে।
এর পরের কাহিনি শোনা যাক তপন সিংহর কাছেই।
এক জায়গায় লিখেছেন, ‘‘সেটটি ছিল মেটিয়াবুরুজের একটা মুসলমান হোটেলের অংশবিশেষ। …আমরা যখন সেট লাইট প্রভৃতি নিয়ে ব্যস্ত, হঠাৎ ছবি বিশ্বাস কাবুলিওয়ালার বেশে প্রবেশ করলেন। চমকে উঠলাম। এ কাকে দেখছি? অতি দরিদ্র মলিন বেশধারী হিং বিক্রেতা কোনও কাবুলিওয়ালা, না সদ্য কবর থেকে বেরিয়ে আসা স্বয়ং মহম্মদ বিন তুঘলক? মাথায় জরির পাগড়ি। গায়ে সিল্কের আচকানের ওপর জরির কাজ করা হাতকাটা জ্যাকেট। পায়ে সোনার জরির কাজ করা নাগরা। তখন আমি তিনশো টাকা মাইনের এক জুনিয়র পরিচালক। আর ছবি বিশ্বাস হলেন সে যুগের অজেয় দুর্দান্ত অভিনেতা। সুতরাং ইগনোর্যান্স ইজ্ ব্লিস কথাটি ভেবে কাজ শুরু করে দিলাম।’’
বিকেল বেলা প্রযোজক অসিত চৌধুরী হাজির। দেখে শুনে গম্ভীর মুখে কিছুক্ষণ বাদেই তাঁর প্রস্থান। তিন চার দিন বাদে অসিতবাবু মুখ খুললেন, ‘‘দেখুন মশায়, ছবিদাকে ওই ঔরঙ্গজেবের পোশাক ছেড়ে গরিব কাবুলিওয়ালা সাজতে হবে। যতটা কাজ হয়েছে ফেলে দিন।’’
ঠিক হল দু’জনে মিলে গিয়ে বলা হবে। বেশ ভয়ে ভয়েই ছবি বিশ্বাসের কাছে কথাটা পাড়লেন ওঁরা।
শুনে প্রথমে চমকে উঠলেও পরে অবশ্য যুক্তিটা মেনে নেন তিনি। তখন আবার নতুন করে পোশাক তৈরি। নতুন করে শ্যুটিং।
দ্বিতীয় কাণ্ডটি আরও মারাত্মক।
ছবি বিশ্বাসকে নিয়ে তপন সিংহ বলেছেন, ‘‘যেমন সুদক্ষ অভিনেতা তেমনি আবার ফাঁকিবাজও ছিলেন।’’
ঘটনাটি অনেকটা সেই ধাঁচেরই বটে।
সে বার শ্যুটিং কাশ্মীরে। শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁওয়ের পথে বেশ কিছু ভেতরে সুন্দর একটা উপত্যকায়। অনেকটাই কাবুলের সঙ্গে মিলে যায় তার গড়ন। নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে শ্যুটিং করে তপন সিংহর শরীর তখন বেশ কাহিল। রোজ রাতে জ্বর আসছে।
শ্যুটিঙের দিন ভোরবেলা ছবি বিশ্বাসকে তিনি বললেন, ‘‘শরীরটা আর দিচ্ছে না। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আজকেই কাজ শেষ করে নেব।’’
—দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
তপন সিংহ লিখছেন, ‘‘শ’খানেক ভেড়া ও লোকজন জড়ো করে অপেক্ষা করছি। এমন সময় ওঁরা এলেন। দূর থেকে দেখছি জিপ থেকে কাবুলিওয়ালা নামলেন, কিন্তু তার পর যিনি নামছেন, তিনি কে? স্যুট পরা লম্বা চওড়া এক ভদ্রলোক! কাছে আসতে চমকে উঠলাম, উনি তো ছবি বিশ্বাস! তা’হলে কাবুলিওয়ালা কে? এসেই বললেন, দারুণ জায়গা বেছে নিয়েছ তো! এত সুন্দর জায়গায় কি আর আমার ক্লোজ-আপ নেবে? তাই তোমার সহকারী বলাইকে কাবুলিওয়ালার মেকআপ করালাম। একটু লং-এ ট্রিট করলে কেউ ধরতে পারবে না।’’
তপন সিংহ নির্বাক! বলেন কি ভদ্রলোক! কিন্তু আর তো উপায়ান্তরও নেই।
অতএব?
শ্যুটিং হল। ওই বলাইকে দিয়েই!
বলাই বাহুল্য, ছবিতে কাবুলের দৃশ্যে আজও কাবুলিওয়ালা বেশে যাঁকে দেখা যায়, তিনি ছবি বিশ্বাস নন। বলাই সেন।
মানুষ যে কত বিচিত্র হয়! কত বৈপরীত্যে ভরা তার যে আচার-আচরণ!
এই ছবি বিশ্বাসই আবার দেখুন, সম্পূর্ণ অন্য চিত্র তখন।
সময়টা ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর। আউটডোরে যেতে তখন অল্প ক’দিন বাকি। পোস্টমাস্টারের চরিত্রটি তখনও কে করবেন, ঠিক নেই পরিচালক তপন সিংহর।
ছবি বিশ্বাসের কাছে গিয়ে কথায় কথায় বললেন, ‘‘কাকে নিই বলুন তো?’’
উত্তর এল, ‘‘একজনই আছে।’’
—কে?
—তার নাম ছবি বিশ্বাস।
নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না তখন।
তপনবাবু বললেন, ‘‘মাত্র দু-তিন দিনের কাজ। রাত বারোটায় ফ্লাইট। সেখান থেকে গাড়ি। আপনার শরীর অত ধকল নিতে পারবে?
—খুব পারবে। ঘাবড়াচ্ছ কেন?
তখন উনি স্টার থিয়েটার-এ। নিয়মিত স্টেজ করছেন। প্রাণান্তকর পরিশ্রম। তার মধ্যেই তিন দিন ‘ম্যানেজ’ করে কাজ করতে ছুটলেন ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর।
•••