জীবনানন্দ দাশ জীবনী – Jibanananda Das Biography in Bengali :আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্ৰত্তর যুগে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ । রূপময় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ (JibananandaDas) বাংলা কাব্যে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন ।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । জীবনানন্দ দাশ জীবনী – Jibanananda Das Biography in Bengali বা জীবনানন্দ দাশের আত্মজীবনী বা জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জীবনানন্দ দাশ কে ছিলেন ? Who is Jibanananda Das ?
জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ এর জীবনী – Jibanananda Das Biography in Bengali :
নাম (Name) | জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) |
জন্ম (Birthday) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ (17th February 1899) |
জন্মস্থান (Birthplace) | বরিশাল (বর্তমান বাংলাদেশ) |
অভিভাবক (Parents)/ পিতা ও মাতা | সত্যানন্দ দাশ (বাবা)কুসুমকুমারী দেবী (মা) |
পেশা (Occupation) | কবি ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, গীতিকার, সম্পাদক, অধ্যাপক |
কর্মজীবন | ১৯২৭ – ১৯৫৩ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী | সাতটি তারার তিমির, বনলতা সেন, রূপসী বাংলা |
দাম্পত্য সঙ্গী (Spouse) | লাবণ্য গুপ্ত |
পুরস্কার | রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫২) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৫) |
আন্দোলন | আধুনিক বাংলা কবিতা |
শিক্ষা | স্নাতকোত্তর ইংরেজি সাহিত্য |
মৃত্যু (Death) | ১৪ অক্টোবর ১৯৫৪ (14th October 1954) |
জীবনানন্দ দাশের জন্ম – Jibanananda Das Birthday :
জীবনানন্দের জন্মকাল ১৮৯৯ খ্রীঃ ১৭ ই ফেব্রুয়ারী , বরিশালের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে ।
জীবনানন্দ দাশের পিতামাতা – Jibanananda Das’s Parents :
তার পিতার নাম সত্যানন্দ দাশ ও মাতার নাম কুসুমকুমারী । তার মা সেই যুগে “ বিন্দু কবিতা রচনা করে কবি খ্যাতি লাভ করেছিলেন । তার মায়ের বিখ্যাত একটি কবিতা হল— “ আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
জীবনানন্দ দাশের অনুপ্রেরণা – Jibanananda Das’s Motivation :
মায়ের সাহিত্য প্রতিভাই জীবনানন্দকে সাহিত্য সৃষ্টি সাধনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলাে । তার কাব্য প্রতিভা মূলত বিকাশ লাভ করেছিলাে মায়েরই প্রযত্নে ও উৎসাহে । মায়ের কাছ থেকে লাভ করেছিলেন এক গভীর অনুভূতি যা তার গলায় ব্রাহ্মসঙ্গীতের মধ্যে ফুটে উঠত ।
জীবনানন্দ দাশের শৈশবকাল – Jibanananda Das’s Childhood :
জীবনানন্দের বাল্যকালে অনাবিল আনন্দ ও প্রীতময় পরিবেশে প্রথম শিক্ষা শুরু হয় । তারই ফলে বাল্যবয়স থেকেই রূপময় প্রকৃতির প্রতি তাঁর কবিমন আকৃষ্ট হয়েছিল । সেই ভােরের নির্মল আকাশ , শিশির ভেজা ঘাস , ধানের ক্ষেতে বয়ে যাওয়া উদ্দাম হাওয়ার মাতন , সেই নদীর চরের চিল – ডাকা বিষগ্ন দুপুর , জলে – ভাসা নৌকোর তন্ময় গলুই — সবকিছু , বলা যায় প্রকৃতির সমস্ত বর্ণ , বৈচিত্র্য জীবনানন্দের কাছে এক অজানা সুদূরের হাতছানি হয়ে ধরা দিত ।
ছেলেবেলায় অনেক সহচরদের কাছ থেকে তিনি নানা গাছগাছালির নাম শুনেছিলেন এবং এরই সাথে পরিচিত হয়েছিলেন নানা লতাপাতা ও পাখির সঙ্গে । তার পরবর্তীকালের কবিতায় এসমঞ্জ কিছুর উল্লেখ পাওয়া যায় । জীবনানন্দ কবিতা উৎস – পরিচিত বিচার করতে গিয়ে যে সমস্ত উপাদানের উল্লেখ করেছেন তাতে তার শৈশব ও কৈশােরে প্রাকৃতিক এবং কবি মানসের বিচরণক্ষেত্র স্পষ্টভাবে ধরা পরেছে ।
ছেলেবেলায় উপনিষদ পাঠ ও ব্রাহ্মসঙ্গীত শুনে শুনে জীবনানন্দের কবি মানস গড়ে উঠেছিলাে । এরই সাথে এক অকারণ বিষয়াতায় ভরে উঠতাে তার মন । রূপ থেকে অরূপের সন্ধানে বিচরণশীল মন নিয়ে তার স্কুলের খাতায় নানা কবিতা লিখে নিজেকে ভরিয়ে রাখতেন এরই সাথে লাভ করত অবাধ মুক্তি । তিনি একাকী ভাবে স্বীয় ভাবনা চেতনায় ডুবে থাকতেন ।
জীবনানন্দ দাশের শিক্ষাজীবন – Jibanananda Das’s Education Life :
জীবনানন্দের স্কুল – কলেজ শিক্ষা শুরু হয় ব্রজমােহন স্কুল ও ব্রজমােহন কলেজে । এই কলেজ থেকে আইএ পাশ করে তিনি কোলকাতায় আসেন । ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে । ইংরাজী । সাহিত্যের সাম্মানিক ছাত্র হিসাবে ১৯১৯ খ্রীঃ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন । পরে ১৯২১ খ্রীঃ এম . এ পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনারকাজ দিয়ে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন ।
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ – Jibanananda Das’s first Poetry released :
১৯২২ খ্রীঃ তিনি সিটি কলেজের অধ্যাপনা শুরু করেন এবং ঝড়া পালক কাব্যগ্রন্থটি এই সময়ে প্রথম প্রকাশিত হয় ।
এছাড়া তিনি কোলকাতায় নানা সাহিত্য পত্রিকায় কবিতা রচনা শুরু করেন।তার সমস্ত কবিতাই পাঠক সমাজে সমাদৃত হয় ।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ সমুহ – Jibanananda Das’s Poetry :
জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক । পরে একে একে প্রকাশিত হয় ধূসর পান্ডুলিপি , সাতটি তারার তিমির , রূপসী বাংলা , মহাপৃথিবী , বেলা অবেলা কাল বেলা প্রভৃতি । তার রচিত বনলতা সন আধুনিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ।
জীবনানন্দের কাব্যের ইতিহাস চেতনা , নিঃসঙ্গ বিষন্নতা এবং অবশ্যই বিপন্ন মানবতার ব্যথা তার স্বকীয় বিশিষ্টতা নিয়ে স্থান লাভ করেছিলেন ।
জীবনানন্দের প্রবন্ধ গ্রন্থ কবিতার কথা , জীবনানন্দ দাশের গল্প উপন্যাস ‘ মাল্যবান ও সতীর্থ তার সাহিত্যধারার উল্লেখযােগ্য সংযোজন ।
জীবনানন্দ দাশের পুরস্কার – Jibanananda Das’s Prizes :
জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য রচনার জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন । ববাহোত্তরকালের একবিশিষ্টকবি ছিলেন জীবনানন্দ দাশ । বাংলা কাব্য সাহিত্যে তার প্রভাব সর্বাধিক ।
বাংলা সাহিত্যে তার প্রথম আবির্ভাবের সময় বহু বিতর্কিত কবি ছিলেন । কারণ তার সব কবিতার উপমা , চিত্রকলা এতই প্রথাবিরােধী ছিলাে যে তা রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যের ঐতিহ্যের পথে ছিলাে এক বিরাট ব্যাতিক্রম ।
জীবনানন্দের কবিতায় মনন অপেক্ষা আবেগের প্রাধান্য বেশী থাকলেও তার কবিতায় ইতিহাস – ভূগােল সমন্বিত এক বুদ্ধিদীপ্ত চেতনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ।
জীবনানন্দের কাব্যের বিষয়বস্তুহল প্রকৃতি ও প্রেম । এই কাব্যকলার অসাধারণ তত্ত্বই তাঁকে বৈচিত্র্য ও গভীরতা দান করেছে । এছাড়াও তার বিভিন্ন গ্রন্থে শিল্পীশৈলী ও বর্ণাঢ্য চিত্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি ও প্রেমের নানা দিক উদ্ঘাটিত হয়েছে ।
জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকৃতি :
আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশ এক স্বতন্ত্র কবি । তাঁর কাব্যকলার ক্ষেত্রে এই স্বাতন্ত্রতার জন্যই বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অনন্য । তিনি ছিলেন এক রােমান্টিক কবি । বাল্যবয়স থেকেই রূপময় প্রকৃতির প্রতি তার কবিমন আকৃষ্ট হয়েছিল । ভােরের নির্মল । আকাশ , শিশির ভেজা ঘাস , ধানের ক্ষেতে উদ্দাম হাওয়ার মাতন , নদীর চরের চিল – ডাকা বিষন্ন দুপুর , জলে – ভাসা নৌকোর তময় গলুই —সবকিছু , প্রকৃতির সব বর্ণ- বৈচিত্র্য জীবনানন্দের কাছে এক অজানা সুদূরের হাতছানি হয়ে ধরা দিত ।
এই রূপমুগ্ধ কবির কণ্ঠে তাই আমরা শুনতে পেয়েছিলাম –
“ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি , তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর । ”
জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু – Jibanananda Das’s Death :
১৯৫৪ খ্রীঃ ১৪ ই অক্টোবর দক্ষিণ কোলকাতায় একট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন ও ২২ শে অক্টোবর তার জীবনদীপ নির্বাপিত হয় ।
জীবনানন্দ দাশের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Jibanananda Das’s Biography in Bengali (FAQ) :
- জীবনানন্দ দাশের জন্ম কবে হয় ?
উ:- ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ সালে ।
- জীবনানন্দ দাশের পিতার নাম কী ?
উ:- সত্যানন্দ দাশ ।
- জীবনানন্দ দাশের মাতার নাম কী ?
উ:- কুসুমকুমারী দাশ ।
- জীবনানন্দ দাশের স্ত্রীর নাম কী ?
উ:- লাবণ্য গুপ্ত ।
- জীবনানন্দ দাশের পুরস্কার গুলি কী কী ?
উ:- রবীন্দ্র পুরস্কার ও সাহিত্য আকাদেমি।
- কত সালে তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার পান ?
উ:- ১৯৫২ সালে ।
- জীবনানন্দ দাশের রচনাবলীর নাম কী ?
উ:- সাতটি তারার তিমির, বনলতা সেন, রূপসী বাংলা।
- জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্য গ্রন্থ কী ?
উ:- ঝড়া পালক ।
- ঝড়া পালক কত সালে প্রকাশিত হয় ?
উ:- ১৯২২ সালে ।
- জীবনানন্দ দাশ কত সালে মারা যান ?
উ:- ১৯৫৪ সালে ১৪ অক্টোবর ।