টিউমার নয় কৃষকের পেটে ছিলো | অবশেষে ‘অন্তঃসত্ত্বা‘ দশা

টিউমার ভেবে অস্ত্রোপচার শুরু করেছিলেন চিকিৎসকরা। বের করে আনতে কৃষক সঞ্জু ভগতের পেটে হাত ঢুকিয়েছিলেন অস্ত্রোপচারকারী। টিউমারের বদলে হাতে উঠে এল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ‚ চুল‚ চোয়াল এবং পুরুষ লিঙ্গের অংশ! দেখে তো তাজ্জব চিকিৎসকরা। উপলব্ধি করলেন চিকিৎসা শাস্ত্রের এক বিরল কাণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা। আর‚ কৃষক সঞ্জু ভগত ওরফে সঞ্জয় কুমার? জ্ঞান ফিরে পেয়ে জানলেন‚ তার পেট থেকে বের করা হয়েছে মৃত ‘ভাইকে‘!

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরের বাসিন্দা সঞ্জু ছোট থেকেই ছিলেন গ্রামে ঠাট্টা পরিহাসের পাত্র। তার ঢাউস পেটের জন্য সবাই তাকে বলত ‘গর্ভবতী ছেলে‘। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পেট। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসেও তার কষ্ট হত। শেষে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চিকিৎসকের কাছে যান সঞ্জু।

টিউমার ভেবে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। শেষে জানা যায়‚ ৩৬ বছরের সঞ্জু Fetus in Fetu-র শিকার।
এই বিরল ঘটনা ঘটে টুইন প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে। মায়ের গর্ভে একসঙ্গেই সৃষ্টি হয় দুটি ভ্রূণ। কিন্তু‚ অনেকসময়‚ বেশি শক্তিশালী ভ্রূণটি বাড়তে থাকে। আর ধীরে ধীরে দুর্বল ভ্রূণটি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে শক্তিশালী ভ্রূণটির উপর। সেটি হয়ে পড়ে পরজীবী। তার জায়গা হয় শক্তিশালী ভ্রূণটির ভিতরেই। একটা সময় অবধি শক্তিশালী ভ্রূণটির সঙ্গে দুর্বল ভ্রূণটিও বাড়তে থাকে। কিন্তু একসময় দুর্বলটির মৃত্যু ঘটে। আবার‚ অনেকসময় মৃত্যু হয় দুটি ভ্রূণেরই।

সঞ্জয়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে প্রথমটি। তার দেহের মধ্যে বাড়তে থাকে দুর্বল ভ্রূণ‚ বা তার ভাইয়ের জন্মের অঙ্কুর। সঞ্জয়ের দেহে কোনও প্ল্যাজেন্টা ছিল না। তাঁর দেহ থেকেই সরাসরি খাদ্য গ্রহণ করত পরজীবী ভ্রূণটি। সঞ্জয়ের জন্মের কিছুদিন পর অবধিও জীবিত থাকে দ্বিতীয় ভ্রূণটি। একসময় থেমে যায় সেখানে প্রাণের স্পন্দন। সেটি থেকে যায় সঞ্জয়ের পেটে। ৩৬ বছর ধরে তাকে বহনের পরে অবশেষে ‘অন্তঃসত্ত্বা‘ দশা থেকে মুক্তি পেলেন সঞ্জয়।

বেশ কয়েক বছর হল‚ সঞ্জয়ের অস্ত্রোপচার হয়ে গেছে। এখন সে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। কিন্তু পরিহাস পিছু ছাড়েনি। প্রতিবেশীরা এখনও তাকে প্রশ্ন করে‚ কোথায় গেল তার সন্তান?

Leave a Reply