সতর্কতা
একটা সময় হৃদরোগকে সাধারণত বয়স্ক মানুষের রোগ বলেই মনে করা হতো। কিন্তু আজকাল প্রায় সব বয়সী মানুষই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই হৃদরোগের লক্ষণসমূহ এবং তা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমাদের সবারই জেনে রাখা উচিত।
গবেষণায় দেখা যায়, পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক বৈশিষ্ট্যই হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রধান ও নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণেই মানুষ আজকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হন বেশি। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত ওজন। বর্তমানে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ধরন হৃদরোগের অন্যতম বড় ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই পরিস্থিতি প্রায়ই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে কয়েকটি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ জেনে নেওয়া ভালো। যার মাধ্যমে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে আগেভাগেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়।
হৃদরোগের লক্ষণসমূহ :
০. বুকে বা বাহুতে ব্যথা হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। তবে শুধু বুকে ব্যথা হলেই হৃদরোগ বলা যায় না। বাহু, চোয়ালের পিছন দিক এবং গলায় চিনচিনে ব্যথা হতে পারে।
০. অনেক সময় অনেকে বলে থাকেন বুকে জ্বালাপোড়া করার কথা। এমনটা হলে সাবধান হোন। কেননা এটিও হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।
০. বদহজম, বমিবমি ভাব, অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস হৃদরোগের উপসর্গ হতে পারে।
০. হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠানামা করে। অনেক সময় রোগী ঘামতে থাকে। এমনটা প্রবল শীতেও হতে পারে।
০. হৃদরোগ সবসময় হঠাৎ করে হবে এমনটা নয়। অনেক সময় হৃদরোগ ধীরে ধীরে মানুষের হৃদযন্ত্রকে ব্লক করে দেয়। এ ধরনের হৃদরোগকে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন’ বা হার্ট অ্যাটাক বলে। এ ক্ষেত্রে প্রবল অস্বস্তিকর অনুভ‚তি অন্যতম লক্ষণ।
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় :
০. যদি কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তাহলে প্রথমেই জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হবে। কারণ অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া কোনো চিকিৎসা করতে গেলে অনেক সময় রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়তে পারে।
০. হার্ট অ্যাটাকের পরপরই রোগীকে শক্ত জায়গায় হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে দিন এবং গায়ের জামা-কাপড় ঢিলেঢালা করে দিন।
০. হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাতাস চলাচলের রাস্তাগুলো সব উম্মুক্ত করে দিন। এটি রোগীকে গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহায়তা করবে।
০. হার্ট অ্যাটাকের পর যদি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর চেষ্টা করুন।
০. হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর যদি বমি আসে তাহলে তাকে একদিকে কাত করে দিন। যাতে সে সহজেই বমি করতে পারে। এতে ফুসফুসের মতো অঙ্গে বমি ঢুকে পড়া থেকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ষা পাবেন।
০. হার্ট অ্যাটাকের পর হৃৎপিণ্ডে রক্তের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বাজারে প্রচলিত ৩০০ মি.গ্রা. ডিসপ্রিন (অ্যাসপিরিন), ৩০০ মি.গ্রা. ক্লোপিডোগ্রেল (Clopidogrel), ৪০ মি.গ্রা. অ্যার্টভাস্টাটিন (Atova) এবং ৪০ মি.গ্রা. ওমিপ্রাজল খাইয়ে দ্রুত হৃদরোগ হাসপাতালে পৌঁছে দিন। সেখানে কার্ডিওলজিস্ট দ্রুত পরীক্ষা করে প্রয়োজনে জরুরি অ্যান্জিওপ্লাস্টি (urgent PTCA ) সহ অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: ব্যথা ছাড়া হিল পরার উপায়
প্রতিকার : হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা জরুরি, এবার জেনে নিন, কী করে হৃদরোগের প্রতিকার করা সম্ভব বা তা থেকে বাঁচার উপায়।
০. হৃদরোগের শত্রু হচ্ছে ধূমপান। তাই ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
০. ধূমপানের মতো মাদকও হৃদরোগের আরেকটি কারণ, তাই মাদককে না বলুন।
০. অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। ভালো থাকবেন।
০. মাঝে মাঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
০. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত হাঁটা-চলা ও ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ রাখুন।
০. প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খান।
ডায়াবেটিস বাড়াচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?
ডায়াবেটিসের রোগীদের বরাবরই হার্টের রোগের ঝুঁকি বেশি। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, যাদের ব্লাড সুগার অসম্ভব পরিমাণে ওঠানামা করে, তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। নতুন এই রিপোর্টটি সামনে এসেছে ডায়াবেটিস, ওবেসিটি অ্যান্ড মেটাবলিজম নামের জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পর।
প্রায় ২৯ হাজার রোগীর উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে, যাদের টাইপ ২ ডায়াবিটিস রয়েছে দুই বছর ধরে।গবেষণায় উঠে এসেছে যে যারা অসম্ভভ পরিমাণে ব্লাড সুগার ওঠানামায় ভুগছেন তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই মার্জিন লাইনে দাঁড়িয়ে। তাই তাদের অনেক অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজনডায়াবেটিস বাড়াচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। আর ভয়াবহ এই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা ক্রমশই বাড়ছে। এজন্য সঠিক সময়ে পরীক্ষা করোনাটা খুব জরুরী।
কারণ, অনেক সময় এই হার্ট অ্যাটাক এতটাই যন্ত্রণাহীন হয় যে প্রথম কয়েক ঘণ্টা রোগী নিজেই বুঝতে পারেন না যে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। যদি কোনও ডায়াবেটিক রোগী শ্বাসকষ্ট, বা বুকে ব্যথার মতো সমস্যায় ভোগেন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে।ডায়াবেটিসের ফলে চোখ, কিডনি, হার্ট, ব্রেন, নার্ভের যে মারাত্মক ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই লক্ষ্য। যত তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস ধরা পড়বে তত বেশি ক্ষতির ঝুঁকি কমবে।
কাশি বা শ্বাসকষ্ট সাধারণ নিউমোনিয়া ভেবে অবহেলা করবেন না। ডায়াবিটিস থাকলে এই সমস্যাই হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ। তাই ফ্লু ও নিউমোককাল ভ্যাক্সিন গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি নিয়মিত রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে নেওয়া। তাই ডায়াবেটিস মোকাবেলায় ব্যালেন্স ডায়েটের গুরুত্ব দিতে হবে।আবার যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল, শীতের সময় তাদের অতিরিক্ত যত্নবান হতে হবে। তাদের নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
ভোরের ঠান্ডা বা কুয়াশা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের রুটিনে অল্পবিস্তর পরিবর্তন আনতে হবে। হার্ট ভালো রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল ও সবজি খেতে হবে। পানি ও লবণের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ ও পানি খেলে সমস্যা হতে পারে।
তথ্যসূত্র:- কালের কন্ঠ
আরও পড়ুন: জ্বর-সর্দি নিরাময়ের প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়
হার্ট ব্লকেজের লক্ষণ, পায়ে রক্ত চলাচল, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো কি কি, হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার, হার্ট অ্যাটাক মৃত্যু, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন কাকে বলে, হার্টের সমস্যার ঔষধ
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ, হার্ট শক্তিশালী করার উপায়, কি খেলে হার্টের রোগ ভালো হয়, হার্ট দুর্বল হলে কি করনীয়, হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার, হৃদরোগ থেকে মুক্তির উপায়, হার্টের রোগীর জন্য দুধ, হার্টের রোগের ওষুধ কি
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।