তাঁদের পোশাক–পরিচ্ছদ, সঙ্গে আনা বিছানা–বালিশ–কাঁথা–কম্বল বা থালা–গ্লাস–বালতি–মগ দেখে অনুমান করা যায় যে তাঁরা সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির নন। হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, আয়া, নার্স বা চিকিৎসকদের সঙ্গে তাঁদের আচরণই বলে দেয় তাঁরা সমাজের অসহায় শ্রেণির।গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৮০ শতাংশ রোগী দরিদ্র শ্রেণির। এই হাসপাতাল দরিদ্রদের সিঙ্গাপুর।’
জরুরি বিভাগে ঢোকার মুখে সব সময় জটলা থাকে। এর প্রধান কারণ দোকান। ফটকের দুই পাশে হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে ছোট–বড় প্রায় ১০০ দোকান। এসব দোকানে মাদুর, বালিশ, কাঁথা, কম্বল, থালা, গ্লাস, বালতি, মগ; ফল, চা, পান, সিগারেট, ডিম, ব্যাগ, জুতা, হাতপাখা, ছোট বৈদ্যুতিক পাখা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে আছে ভাতের হোটেল। আর আছে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান।ছোট ছোট দোকান আছে হাসপাতালের শহীদ মিনারসংলগ্ন ফটকেও। তবে ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনে (ডিএমসিএইচ–২) ঢোকার রাস্তায় আরও কিছু দোকান আছে। এসব দোকানের কারণে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি সহজে ঢুকতে বা বের হতে পারে না।এই সমস্যাটি পুরোনো।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা তথ্য | Elon Musk Biography
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের খাবারের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আমরা দোকানগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার পরিকল্পনা করেছি। এমনভাবে দোকানগুলো থাকবে যেন গাড়ি চলাচলে সমস্যা না হয়।’জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে নতুন ভবনে যেতে হাতের বাঁয়ে দেয়ালে লেখা: এখানে খাবার বিক্রয় করা হয়। ভাত–মাছ ৪০ টাকা, ভাত–মুরগি ৪৫ টাকা। বসে খেলে ৫৫ টাকা। গত পরশু একতলা ভবনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেটি কার্যত একটি হোটেল। বসে খাওয়া যায়, খাবার নিয়ে যাওয়া যায়। তবে হাসপাতালের ভেতরে এমন চালু হোটেল সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক কিছুই জানেন না।দুই দশকের বেশি সময় চাকরি করছেন হাসপাতালের এমন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তৃতীয় শ্রেণির দু–তিনজন কর্মচারী মিলে হাসপাতালের ভেতরে এই ব্যবসা করছেন।

হাসপাতালের কর্মচারীদের সবচেয়ে বড় ব্যবসা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা। এই ব্যবসায় তাঁরা শক্তভাবে সংগঠিত। চিকিৎসক, প্রশাসন ও রোগী এ ক্ষেত্রে অসহায়। অ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালকদের দৌরাত্ম্যের কথা অনেকবার গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। পরিণতি হিসেবে রাস্তার পরিবর্তে সব বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এখন স্থায়ীভাবে হাসপাতালের ভেতরে জায়গা করে নিয়েছে।গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নতুন ভবনের সামনে ৩৪টি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। একই সময়ে জরুরি বিভাগের সামনে ছিল ৩৮টি অ্যাম্বুলেন্স। এসব অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ‘ডিএমসিএইচ পার্কিং’ লেখা স্টিকার সাঁটা। এসব অ্যাম্বুলেন্সের কারণে অন্য ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করতে পারে না।জরুরি বিভাগের সামনে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রাখার জন্য একটি ছাউনি আছে। ছাউনির সামনে লেখা: ‘কেবলমাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রাখার নির্ধারিত স্থান।’ তবে ওই ছাউনির নিচে সরকারি বা বেসরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স রাখতে দেওয়া হয় না। সেখানে মোটরসাইকেল রাখতে দেওয়া হয়। চিকিৎসক, পুলিশ ও সাংবাদিক মোটরসাইকেল রাখলে টাকা দিতে হয় না। বাকিদের টাকা দিতে হয়। গত দুই দিনের বিভিন্ন সময় চারজন যুবককে টাকা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তবে এই টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পায় না।অ্যাম্বুলেন্সমালিক ও চালকদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা তথ্য | Elon Musk Biography
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স মাত্র ১২টি। দিনে গড়ে প্রায় ৩০০ রোগী ছুটি পান। তাঁদের অনেকের অ্যাম্বুলেন্স দরকার হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জনের মৃত্যু হয়। কিছু মরদেহ পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দরকার হয়। হিসাব করলে দেখা যায়, দৈনিক ৬০ থেকে ৭০টি অ্যাম্বুলেন্স দরকার। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে অ্যাম্বুলেন্সের মালিক, কর্মকর্তা–কর্মচারী, র্যাব, পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে মিটিং করেছি প্রায় ২০ বার। এখন ১০০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স তালিকাভুক্ত করে একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টায় নতুন ভবনের নিচতলায় পাশাপাশি দুটি স্ট্রেচারে কাপড়ে ঢাকা দুটি মরদেহ রাখা ছিল। একটিতে হাত রেখে একজন যুবক দাঁড়িয়ে ছিলেন, চোখে পানি। তাঁর ছোট বোন মারা গেছেন। মরদেহ নিয়ে যাবেন রূপগঞ্জ। ‘কীভাবে নিয়ে যাবেন’, এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই যুবক বলেন, হাসপাতালের কর্মচারীরা অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দিয়েছেন।

দেয়াললিখন
কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটি ২ হাজার ৬০০ শয্যার। শয্যার চেয়ে রোগী থাকে বেশি। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি। চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, কর্মকর্তা–কর্মচারী মিলে ১০ হাজারের বেশি জনবল। এ ছাড়া আছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের নানা ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো নেই।গত দুই দিন হাসপাতালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনের দেয়াল পোস্টারে সয়লাব।
এসব পোস্টারের সঙ্গে রোগী বা রোগীর আত্মীয়দের কোনো সম্পর্ক নেই। প্লট বিক্রি, চাকরি, বদলি, কঙ্কাল বিক্রি, সমিতির নির্বাচন—এ ধরনের নানা পোস্টার দেখা যায়। কর্তৃপক্ষের একটি পোস্টারে আছে: ‘বাচ্চা চুরির সম্ভাবনা আছে, সতর্কতা অবলম্বন করুন।’বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেবে। কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চলতে পারে না।
Very nice News to the country….