তবলার বর্ণ পরিচয়,তবলার স্বরলিপি তবলা বাজানোর নিয়ম | তবলার তাল সমূহ তবলা ছবি

এখন চলছে পরে দেখুন সারিতে যোগ করুন কাহারবা তাল বিভিন্ন রকম, kaharba taal, এসো তবলা শিখি
এখন চলছে পরে দেখুন সারিতে যোগ করুন কাহারবা তাল বিভিন্ন রকম, kaharba taal, এসো তবলা শিখি

তবলা আরবি ত বলা >তবলা ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {  | আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র | ঘাত বাদ্যযন্ত্র | সঙ্গীতযন্ত্র | যন্ত্র | ডিভাইস | যন্ত্রকরণতা | মানবসৃষ্টি | সমগ্র | দৈহিক লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |} ভারতীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত একপ্রকার তাল রক্ষাকারী  আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র। দুটি খণ্ডের একটি সেট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উভয়ই আনদ্ধ। এর একটি খণ্ডের নাম তবলা বা ডাইনা। অপর অংশের নাম ডুগি বা বাঁয়া। সম্মিলিত নাম তবলা-বাঁয়া। সংক্ষেপে তবলা। সরাসরি হাতের মণিবন্ধ তালু এবং অঙ্গুলির আঘাতে বাজানো হয়। তবলা-বাঁয়ার প্রচলন শুরু হয়, ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনামলে। এই যন্ত্রটি আরবে প্রচলিত আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্রের একটি সংস্কারকৃত যন্ত্র। আদ্য তবলা তৈরি করেছিলেন আরবদেশের জুবলের পুত্র টুবল। আবিষ্কারকের নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয়েছিল তবল। এই যন্ত্রটি আরব-সঙ্গীত শিল্পীদের সূত্রে পারশ্যে প্রবেশ করেছিল।

পারশ্যে তবল নামের যে তালযন্ত্রের প্রচলন ছিল, তা ভারাতীয় তবলের মতো ছিল না। সেকালের পারশ্যের সঙ্গীতশিল্পীরা আদি গজল গানের সাথে তবল ব্যবহার করতেন। ইতুৎমিশের (১২১১-১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দ) আমলে প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক হযরত আমির খসরুর পিতা পারশ্য থেকে ভাগ্যান্বেষে দিল্লিতে আসেন।

সেই সময় পারশ্যের সঙ্গীতশিল্পীসহ বহু পেশার মানুষ পারশ্য থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। হযরত আমির খসরু ১২৫৩-৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের বর্তমান পাতিয়ালা (বর্তমান পাঞ্জাব রাজ্যের একটি জেলার নাম ও জেলা শহর) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গীতজীবনের শুরু হয়েছিল পারশ্যের গজল গানের ভিতর দিয়ে। আমির খসরুর আগে ভারতবর্ষে তবলা নামক কোনো বাদ্যযন্ত্র ছিল, তা জানা যায় না। অনেকেই মনে করেন, আমির খসরু পারস্যের গজলের সাথে ব্যবহৃত দুই খণ্ডের বাদ্যযন্ত্রকে সংস্কার করে তবলায় রূপ দেন। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে খসরু রচনা করেন ‘কিরানুস-স’দাইন’ নামক কাব্যবগ্রন্থ। ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দে জালালউদ্দীন দিল্লীর রাজদরবারের পুরানো অনেক কর্মীদের বরখাস্ত করলেও, আমির খসরু সমাদরেই থেকে যান এবং দিল্লীর দরবারকে কাব্য ও সঙ্গীতে মুখর করে রাখেন। জালালউদ্দীন খাল্‌জি তাঁর কাব্য ও সঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে “আমারত” উপাধিতে সম্মানিত করেন। তখন থেকেই তিনি ‘আমারত খসরু’ বা ‘আমির খসরু’ নামে পরিচিত লাভ করেন। ধারণা করা হয় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দীন-এর শাসনামলে তিনি পারশ্যের তবল যন্ত্রটির সংস্কার করে ‘তবলা’ নামক যন্ত্রটি দরবারে উপস্থাপন করেন। ধীরে ধীরে এই যন্ত্রটি সঙ্গীতশিল্পীদের চর্চার মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

হিন্দু সঙ্গীতশিল্পীরা প্রথমদিকে তবলাকে মুসলমানদের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে পরিহার করে চলতেন। ১৪-১৫শ শতকের দিকে জৈন সাধক সুধাকলশ তবলাকে উল্লেখ করেছিলেন ম্লেচ্ছযন্ত্র। সঙ্গীতাচার্য গোপেশ্বর বন্দ্যপাধ্যায়ের মতে সদারঙ্গের শিষ্য দ্বিতীয় আমির খসরু তবলার উদ্ভাবন করেছিলেন। উল্লেখ্য এই আমির খসরু ছিলেন মোগল সম্রাট তৃতীয় মহম্মদ শা’র আমলে (১৭৩৮ খ্রিষ্টাব্দ)। আবার অনেকে মনে করেন, দিল্লির জনৈক পাখোয়াজ শিল্পীর সাথে দিল্লির সম্রাট আকবরের সঙ্গীত দরবারের পাখোয়াজ বাদক সিধার খাঁর সাথে একটি পাখোয়াজ-বাদনের প্রতিযোগিতা হয়। ওই প্রতিযোগিতায় সিধার খাঁ পরাজিত হয়ে, তাঁর পাখোয়াজকে দুই টুকরো করে ফেলেন। এরপর এই পৃথক দুই টুকরোকে মেরামত করে আলাদা যন্ত্র হিসেব তৈরি করেন এবং তা তবলা নামে পরিচত হয়। তবলার ঘরনা বাদনশৈলীর বিচারে তবলাবাদনকে দুটি বাজ-এ ভাগ করা হয়।

এই ভাগ দুটি হলো‒ ১. দিল্লী বা পশ্চিমী বাজ : এই বাজের ভিতরে রয়েছে দিল্লি এবং অজারাড়া  অঞ্চলের বাদনশৈলী।

২. পূর্বী বাজ বা পূরব বাজ: এই বাজের ভিতরে রয়েছে লক্ষ্ণৌ, বারনসী এবং ফরুখাবাদ। তবলা বাদনের এই পাঁচটি বাজের সূত্রে পাঁচটি ঘরানার সৃষ্টি হয়েছিল।

দিল্লী ঘরনা থেকে দিল্লী ঘরানা-সহ মোট পাঁচটি ঘরানার সৃষ্টি হয়েছে।  এর বাইরে পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছে পাঞ্জাব ঘরানা। সব মিলিয়ে বর্তমানে তবলার ঘরানা ছয়টি।

নিচে ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই ঘরানাগুলোকে দেখানো হলো। দিল্লী ঘরানা অজারাড়া  ঘরানা লক্ষ্ণৌ  ঘরানা ফরুখাবাদ  ঘরানা বেনারস  ঘরানা পাঞ্জাব  ঘরানা। তবলা পরিচিতি তবলা : দুই খণ্ডের তবলা-বাঁয়ার সেটের একটি অংশ। সাধারণত এই অংশটি ডান হাতে বাজানো হয় বলে, একে ডাইনা বলা হয়। কিছু কিছু বাদক এই অংশটি বাম হাতেও বাজিয়ে থাকেন। এই অংশটির দেহকাঠামো কাঠ। একে হিন্দিতে লক্‌ড়ী বলা হয়। এই কাষ্ঠঅংশকে সাধারণভাবে কাঠ বলা হয়।

সাধারণত নিম, চন্দন, বিজয়শাল, আম, কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে তবলার দেহ কাঠামো তৈরি করা হহ। দৈর্ঘ্যের বিচারে লম্বাটে এবং সাধারণত বাঁয়ার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। দৈর্ঘ্যে ৯-১২ ইঞ্চি হয়ে থাকে। প্রস্থ বরাবর গোলাকার এবং ডুগির চেয়ে এর ব্যাস কম। এর নিচের অংশ উপরের অংশের চেয়ে বেশি স্ফীত থাকে। আদর্শ তবলার নিম্নভাগের ব্যাস হয় ৮-৯ ইঞ্চি এবং উপরের অংশের ব্যাস হয় ৫-৬ ইঞ্চি। এই কাষ্ঠখণ্ডের কম ব্যাসযুক্ত অংশের উপর থেকে খুঁড়ে ফাঁপা অংশ তৈরি করা হয়। কিন্তু এই ফাঁপা অংশ অপর প্রান্ত ভেদ করা না। ফলে এটি একটি এক মুখ বন্ধ পাত্রের রূপ লাভ করে। এর ফাঁপা অংশের মুখে চামড়া দিয়ে ছাওয়া হয়। একে বলা হয় পুড়ি বা ছাউনি। এই ছাওনি তৈরি হয় ভেড়া বা ছাগলের চামড়া দিয়ে। ছাউনি কাঠের উপরে দৃঢ় এবং সটানভাবে বাঁধা থাকে।

উপরে এই ছাউনিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। খিরন : এর অন্যান্য নাম স্যাহী, গাব তবলার ছাউনির মধ্যস্থলে যে গোলাকার কালো অংশ থাকে, তাকে খিরন বলা হয়। গাবগাছের আঠার সাথে কাঠকয়লা মিশিয়ে আঠালো লেই তৈরি করে, উক্ত লেই দিয়ে কয়েকটি পর্যায়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। খিরণ গাব-ফল দিয়ে তৈরি হয় বলে, একে অনেক সময় গাব নামেই অভিহিত করা হয়। খিরন তবলার মূল চামড়ার উপরে বসানো হয়।

কানি : এর অন্য নাম চাঁটি তবলার ছাউনির প্রান্তভাগে একটি পৃথক চামড়ার আচ্ছাদন থাকে। এই অংশকে বলা হয় কানি।

ময়দান : এর অন্যান্য নাম লব, সুর। তবলার খিরন এবং প্রান্তদেশীয় কানি অংশের ভিতরে যে বৃত্তাকার অংশ দেখা যায়, তাকে ময়দান বলে।

পাগড়ি : এর অন্যান্য নাম গজরা, বেষ্টনী, বেড়। তবলার মূল চামড়া এবং কানির চামড়াকে একত্রিত করে কাঠের উপরে বসানো হয়। পরে চামড়ার ফিতা দিয়ে তৈরিকৃত বিনুনি তবলার কানি ও মূল চামড়ার সাথে যুক্ত করে, চামড়ার দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। এই বিনুনি অংশকে পাগড়ি বলা হয়।

পাগড়িতে মোট ১৬টি ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্র পথে চামড়ার ফিতা তৈরি করে কাঠের নিম্নাংশের গুড়রি অংশের সাথে দৃঢ় করে বাঁধা হয়। ডোরি : এর অন্যান্য নাম ছোট্, বদ্ধি, দোয়ানী। পাগড়ির ১৬টি ছিদ্র পথে যে চামড়া ফিতা প্রবেশ করিয়ে, কাঠের নিম্নাংশের গুড়রি অংশের সাথে দৃঢ় করে বাঁধা হয়, তাকে ডোরি বলা হয়। গুলি : এর অন্যা নাম গট্টা। তবলার উপরের ছাউনির সটান অবস্থা এবং কাঙ্ক্ষিত সুর পাওয়ার জন্য ডোরি ভিতরে কয়েকটি কাঠের তৈরি লম্বাটে গোলাকার গুলি ব্যবহার করা হয়।  এই ডোরি উপরে নিচে নামিয়ে তবলা সুরকে নিম্ন বা চড়া সুর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ডুগি : অন্যনাম বাঁয়া। দুই খণ্ডের তবলা-বাঁয়ার সেটের একটি অংশ। সাধারণত এই অংশটি বাম হাতে বাজানো হয় বলে, একে বাঁয়া বলা হয়। কিছু কিছু বাদক এই অংশটি ডান হাতেও বাজিয়ে থাকেন। ডুগির মূল দেহকাঠামো মাটি বা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত এর ধাতু হিসেবে পিতল, তামা বা এররূপ কোনো সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয়।

এর গঠন অনেকটা হাঁড়ির মতো। এর অন্য নাম কুড়ি। তবলার তুলনায় ডুগি খাটো। সাধারণত ৮-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর মুখও তবলার চেয়ে অনেক বড় হয়। উপরিভাগের ছাউনি অংশের ব্যাস হয় প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি।

এবং নিম্ন-মধ্যাংশের ব্যাস অপেক্ষাকৃত বেশি। এর গঠনবৈশিষ্ট্য তবলার মতই। তবে এর ডোরির ভিতর দিয়ে কাঠের তৈরি গুলির পরিবর্তে ধাতব আংটি ব্যবহার করা হয়। খিরনের অবস্থানের বিচারে পার্থক্য রয়েছে। তবলার খিরন ছাউনির মধ্যভাগে থাকে। পক্ষান্তরে ডুগির খিরণ থাকে ছাউনির একটি প্রান্ত ঘেঁষে। ফলে এর একদিকে কানি ও ময়দান কাছাকাছি থাকলেও এর বিপরীত দিকের ময়দান অনেক বড় হয়।

এছাড়া তবলার চেয়ে ডুগির খিরন বড় হয়। তবলা বাদকেরা তবলায় উৎপন্ন সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিগুলোকে বোল, বর্ণ বা বাণী বলে থাকে। তবলা এবং ডুগিতে পৃথক পৃথকভাবে বোল তৈরি হয়। আবার যন্ত্রে যুগপৎ আঘাতেও মিশ্র বোল তৈরি হয়। এই বিচারে তবলার বোলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।

১. তবলার বোল: ১.১. তা/না : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা কানিতে আঘাত করলে তা বা না হয়।

১.২. তি : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা ময়দানে আঘাত করে তর্জনী না উঠালে তি হয়। ১.৩. তিন্ : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা ময়দানে আঘাত করে তর্জনী উঠালে তিন্ হয়।

১.৪. দিন্/থুন্/ দি/নে/নি : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা একত্রে খিরনের উপর আঘাত করে আঙুলগুলো উঠিয়ে নিলে দিন্/থুন/দি/নে/নি হয়। এছাড়া অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনী দ্বারা কানিতে হাল্কা আঘাত করে আঙুল উঠিয়ে নিলেও দিন্ হয়।

১.৫. তু/তুন্ : তর্জনী দ্বারা খিরনের কিনার বরাবর আঘাত করলে তু বা তুন্ হয়।

১.৬. তে/টে/তি/ : তর্জনী ও মধ্যমার দ্বারা খিরনের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করলে তে. টে বা তি উৎপন্ন হয়।

১.৭. রে/টি : তর্জনীর দ্বারা খিরনের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করলে রে বা টি হয়।

১.৮. তাং : তর্জনী দিক কিছুটা উঁচু রেখে আঙুলগুলো প্রসারিত করে কনিষ্ঠা দিয়ে গাব স্পর্শ করে থাকা অবস্থায় খিরনের উপর অন্যান্য আঙুল দিয়ে আঘাত করলে তাং উৎপন্ন হয়। তবলায় একে চাটি বলে।

১.৯. দিং : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা সংযুক্তকরে সরলভাবে প্রসারিত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের উপর আলগা আঘাত করে হাত উঠিয়ে নিলে দিং  উৎপন্ন হয়।

১.১০. তেৎ বা দেৎ : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা সংযুক্তকরে সরলভাবে প্রসারিত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা উড়ে চাপা আঘাত করেল তেৎ বা দেৎ উৎপন্ন হয়।

১.১১. ত্তা : মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা সংযুক্তকরে ঈষৎ বক্র করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের মধ্যস্থলে ফাঁপা আঘাত করলে ত্তা উৎপন্ন হয়।

২. ডুগির বোল: মোট ৩টি ধ্বনি তবলা থেকে উৎপন্ন হয়।

এগুলো হলো‒ ২.১. কে/কি/ক : করতল ডুগীর খিরনের দিকে স্থাপন করে বৃদ্ধাঙ্গুলী সোজা এবং তর্জনী ঈষৎ বক্র করে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠাকে সংযুক্ত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনে আঘাত করলে কে, কি বা ক উৎপন্ন হবে।

২.২. গে/গ/গা/গি/ঘ/ঘা/ঘি/ঘে : করতল ডুগীর খিরনের দিকে স্থাপন করে খিরন ও কানির মধ্যস্থলে মধ্যমা ও তর্জনীর বক্র করে, আঙুলের অগ্রভাগ দ্বারা আঘাত করেল গে, গ, গা, গি, ঘ, ঘা, ঘি বা ঘে উৎপন্ন হবে।

২.৩. কৎ : সমস্ত আঙুল সংযুক্ত করে লম্বা করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের উপরে সজোরে চাপা আঘত করলে কৎ ধ্বনি উৎপন্ন হবে। ৩. তবলা ও ডুগির মিশ্র বোল: মোট ৭টি ধ্বনি তবলা থেকে উৎপন্ন হয়।

এগুলো হলো‒

৩.১. ধা : গে এবং তা এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.২. ধিন/ধি : গে এবং দিন্ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.৩. ধেং : গ এবং দিং এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

৩.৪. তিন্ : কে এবং দিনধ্ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.৫. ধিং : গে এবং দিং এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.৬. ধেৎ : গি এবং তেৎ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

৩.৭. ধে : গি এবং তে এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। কতিপয় মিশ্র বোলের প্রয়োগ

১.  কড়ান্/ক্রান্ : কৎ ধ্বনি উৎপন্নের পরে তা বা না বাজিয়ে উভয় হাত তুলে নিলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২. কিনি : তি এবং ক একত্রে প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩. কেদিংকেনে: কে, দিং, কে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়।

৪. ক্রানে : ক্রান ধ্বনি উৎপন্ন করার পর অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর মৃদু আঘাত করলে ক্রানে উৎপন্ন হয়।

৫. ক্রে : কে ধ্বনির সাথে তবলার খিরনে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

৬. গদি : গ এবং দি  দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৭. গন : গ এবং ন দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

৮. গদিঘেনে: গ, দিং, ঘে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়।

৯. গেদিংকেনে: গে, দিং, কে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়।

১০. গ্রে বা ঘ্রে : গে বা ঘে বাণীর পরে তে বা তেৎ বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১১. ঘড়ান্ : ঘ ধ্বনি উৎপন্নের পরে তা বা না বাজিয়ে উভয় হাত তুলে নিলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১২. ঘেন : ঘে এবং না একত্রে বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৩. ঘ্রান্ : ঘড়ান্ বোল দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১৪. ঘ্রানে : ঘ্রান ধ্বনি উৎপন্ন করার পর অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর মৃদু আঘাত করলে ঘ্রানে উৎপন্ন হয়।

১৫. ঘ্রে : ঘে বাণীর পরে তে বা তেৎ বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১৬. তরান/ননান : তবলায় তাং বাজানোর সাথে সাথেই না বাজাতে হবে এরপর আবার তাং বাজাতে হবে। এই তিনটি কার্য দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১৭. তিক্ : তি এবং ক একত্রে প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১৮. তিট্ : উভয় হাতে ট প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

১৯.তিনি : তি এবং দ্রুত প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২০. তৃক : তবলায় দ্রত কিট এবং ডুগিতে একসাথে ত-ক বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২১. ত্রে/দ্র : তে এবং রে দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২২. ত্রেকেটে : তে,রে কে,টে ধ্বনি দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি পাওয়া যায়।

২৩. দ্ধে : ডুগির বড় ময়দানে কব্জির অল্প চাপে মধ্যমার দ্বারা খিরনের প্রান্তে আঘাত করতে হবে। একই সাথে অনামিকা, মধ্যমা ও কনিষ্ঠা দ্বারা তবলার  খিরনে চাপা আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২৪. ধিট্/ধিরং : উভয় হাতে তি এবং ধি প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২৫. ধানে : ধা বাজিয়ে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর ঈষৎ আঘাত করলে ধানে উৎপন্ন হয়। ২৬. ধিনি : তবলায় ধি এবং ডুগির কানি ও খিরনের মধ্যস্থলে একসাথে আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।

২৭. ধুমাকেটে : তবলার খিরনের উপর মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ দিয়ে আঘাতের সাথে সাথেই বাঁয়ার পাগড়ির উপর আঙুল দ্বারা খোলা আঘাত করলে ধু ধ্বনি উৎপন্ন হয়। কিন্তু কেবল তর্জনীর দ্বারা তবলার খিরনে অল্প আঘাতে মা ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই দুটি ধ্বনি উৎপন্ন করার পরপরই কেটে ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়। এবার দ্রুত এই চারটি ধ্বনি বাজালে ধুমাকেটে ধ্বনি পাওয়া যায়।

২৮. ধেরেধেরে : কনিষ্ঠার শেষপর্ব থেকে কব্জির পর্যন্ত পুরো অংশদেয় তবলায় আঘাত করলে এবং একই সাথে ডুগির কানি ও খিরনের মধ্যস্থলে মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা আঘাত করলে ধে উৎপন্ন হবে। এই ধে-এর পরপরই যদি বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের শেষাংশ দিয়ে তবলার গাবে আঘাত করলে রে উৎপন্ন হবে। এইভাবে দ্রুত ধেরে বাজিয়ে এই ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়।

২৯. নাড়া : দুই বার দ্রুত না বাজালে নাড়া উৎপন্ন হয়। এছাড়ও তবলা বাদকরা নানা ধরনের মিশ্র বোল উৎপন্ন করে থাকেন।

বাদ্যযন্ত্র পরিচিতি।
২২.০৬.২০১৬
সংগীত বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
তবলা:-
তবলা এক ধরনের দুই অংশ বিশিষ্ট আনদ্ধ (চর্মাচ্ছাদিত/membranophone) জাতীয় ঘাতবাদ্য (percussion) যন্ত্র। দুই অংশের মধ্যে ডান হাতে বাজাবার অংশটির নামProp. Tabla.jpg ডাহিনা (ডাইনা, ডাঁয়া) বা তবলা এবং বাঁ হাতে বাজাবার অংশটির নাম বাঁয়া বা ডুগি। তবলার বিশেষত্ব এর জটিল অঙ্গুলিক্ষেপনজাত উন্নত বোল।
তবলা বাদক শিল্পীকে বলা হয় তবলিয়া। তবলচি শব্দটি আগে একই অর্থে প্রচলিত ছিল, কিন্তু বাইজীগান বা খেমটানাচের সঙ্গতকারীদের জন্য বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে একে অশ্রদ্ধাজনক বলে মনে করেন, তাই তবলচির বদলে তবলিয়া শব্দটির চল হয়।
এ থেকে 200 খ্রিস্টপূর্ব ভাস্কর্য Bhaje গুহা, মহারাষ্ট্র, ভারত তবলা বাদন এবং সম্পাদন অন্য নর্তকী খেলার একটি মহিলার দেখাচ্ছে.
উৎপত্তি সম্পাদনা
তবলার জন্ম সম্বন্ধে নানা মতবাদ আছে। একটি হল আমীর খস্রু সম্বন্ধে। মৃদঙ্গ জাতীয় কোন দুইদিক চামড়ায় ছাওয়া যন্ত্র ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়, কিন্ত তার পরেও তা থেকে সুন্দর অওয়াজ বের হয়। শুনে মুগ্ধ খস্রু বলেন “তব ভি বোলা”। তবলা শব্দটি “তব ভি বোলা” থেকে এসে থাকতে পারে।
গঠন সম্পাদনাঃ-
ডাঁয়া সম্পাদনা:
এক খণ্ড কাঠ ওপর থকে কুঁদে বাটির মত করা। তার উপর গরুর চামড়া টানটান করে বসান। তাকে ঘিরে গোল ছেদযুক্ত আরেকটি চামড়া দিয়ে কিনারা বা কানি। চামড়া পেঁচিয়ে প্রস্তুত পাগড়ী এদের ধরে রেখেছে। মাঝখানে কালো গাব (গাবগাছের আঠায় কাঠকয়লা মিশিয়ে) বা স্যাহী। কিনারা ও গাবের মধ্যে উন্মুক্ত পাতলা প্রথম চামড়া হল “সুর”। উপরের পাগড়িকে টেনে রাখার জন্য নিচে দ্বিতীয় চামড়ার পাগড়ি। দুটি পাগড়ি “ছট” দিয়ে বাঁধা। ছটের টান কমবেশী করার জন্য ছটে গোঁজা কাঠের “গুলি”। নিম কাচে থেকে ভাল তবলা হয় যা সহজে ঘূণে নষ্ট হয় না।
উঁচু-সুর বাঁধার পদ্ধতি:-
বেশী সংখ্যক ছটকে টেনে গুলির উপর স্থাপন করা
হাতুড়ি মেরে বা জোরে ঠেলে “গুলি”কটি নীচের দিকে করা
উপরের পাগড়ীতে উপর হতে হাতুড়ি মেরে নীচে বসানোর চেষ্টা
ডুগি সম্পাদনা:
দেহ কাঠর নয়, মাটির বা ধাতব; বড় ক্ষেত্রফল, গাব উৎকেন্দ্রিক। গুলি নেই বা খুব পাতলা গুলি, অথবা ছোটগুলি জোড়ায় জোড়ায় একত্রিত করে আংটা লাগানো।
আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম সম্পাদনা:
ডুগি ও তবলার সঙ্গে ব্যবহৃত কয়েকটি আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম হল:
বিড়ি/বিড়ে- যার উপর একএকটি ডুগি বা তবলাকে বসানো হয়।
হাতুড়ি – সুর বাঁধার জন্য।
পাউডার: অনেকে হাতে পাউডার’ লাগান ঘাম থেকে তবলাকে রক্ষা করার জন্য (গমক বাজাতেও পাউডারের পিচ্ছিলতা সাহায্য করে)।
তবলার ঢাকা- বাতাসের আর্দ্রতা থেকে তবলাকে রক্ষা করার জন্য।
নগমা রাখার জন্য সারেঙ্গী কিম্বা হারমোনিয়াম।
ঘরাণা সম্পাদনা:-
আগে তবলা সারেঙ্গীর মত প্রধানতঃ বাইজীগানের সঙ্গতে ব্যবহার হত। তবে উত্তর ভারতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তবলা ধীরে ধীরে এক শ্রদ্ধার আসন লাভ করে। এতে পাঁচটি ঘরাণার ওস্তাদদের মূল্যবান ভূমিকা আছে:
লক্ষ্ণৌ ঘরাণা
এলাহাবাদ ঘরাণা
দিল্লী ঘরাণা
অজরাড়া ঘরাণা
ফারুখাবাদ (পাঞ্জাব) ঘরাণা
কয়েকজন বিখ্যাত তবলিয়া:
উস্তাদ সিদ্দার খান (দিল্লী ঘরাণা)
হাজী বিলায়েত খান (ফারুখাবাদ ঘরাণার প্রতিষ্ঠাতা)
উস্তাদ মুনির খান (ফারুখাবাদ ঘরাণা)
উস্তাদ আহম্মদজান থেরাকুয়া (ফারুখাবাদ ঘরাণা)
উস্তাদ কেরামতুল্লা খাঁ
উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ
পণ্ডিত শামতা প্রসাদ
পণ্ডিত আনোখেলাল মিশ্র
কিষণ মহারাজ
উস্তাদ আল্লারাখা
উস্তাদ জাকীর হুসেন
বাংলার তবলা সম্পাদনা
বাংলায় তবলা ঐতিহ্য অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। কলকাতার হিরু (হিরক) গাঙ্গুলী ও জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ বাংলায় তবলাকে জনপ্রিয় করেন। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ছিলেন ফারুখাবাদ ঘরাণার মসিত খাঁ সাহেবের শিষ্য।
বাংলার আধুনিক তবলিয়াদের মধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট বক্তিত্ব হলেন:
শঙ্কর ঘোষ (জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের প্রধান শিষ্য )
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (শঙ্কর ঘোষের শিষ্য)
বিক্রম ঘোষ (শঙ্কর ঘোষের পুত্র)
তবলা পরিভাষা সম্পাদনা
তাল (সঙ্গীত), তাল ফেরতা, তালভঙ্গ/ছন্দপত:-
ত্রিতাল, দাদরা, কাহারবা, একতাল, ঝাঁপতাল, রূপক, রূপকড়া, চৌতাল, আড়াচৌতাল, ধামার, যৎ, দীপচন্দী, পাঞ্জাবী (তাল), আদ্ধা, আদিতাল, মত্ততাল, রুদ্র, শিখর, ব্রহ্ম, কুম্ভ, পস্তো, লক্ষ্মী, ফরদোস্ত
লয়, লয়কারী, বিলম্বিত, ঠায় (লয়), দুন (লয়) (দ্বিগুন), ত্রিগুন, চৌদুন, দ্রুত, আড় ((লয়)), বিআড় (লয়), কুআড় (লয়),
বোল (তবলা), সম (সঙ্গীত), তালি (তবলা), খালি (তবলা)
ঠেকা, উপেজ (ঠেকার প্রকার), কায়দা (তবলা), পাল্টা (বিস্তার), রেলা (তবলা), লগ্গী, লড়ী, তিহাই, নবহক্কা তিহাই, চক্রদার, টুকড়া, দমদার ও বেদমদার টুকড়া, মুখড়া, উঠান, গৎ, পরন, পেশকার, লহরা, সঙ্গত, সওয়াল-জবাব,
তালিম, রেওয়াজ, নাড়া বাঁধা, সুর বাঁধা (মেলানো), নগমা,
তবলার বর্ণমালা সম্পাদনা:
ডানহাতের সম্পাদনা
তে/রে/টে,
তা/না
তুন্/থুন্, ড়া
তিন্
বামহাতের সম্পাদনা
ক/কে
গ/গে, ঘ/ঘে
গমক
দুহাতের সম্পাদনা
ধা (তা/না + গ/গে/ঘ/ঘে)
থা (তা/না + ক/কে)
ধিন (তিন্ + গ/গে/ঘ/ঘে
ধে (তে/রে/টে, + গ/গে/ঘ/ঘে )
ক্রে (কে + তে/রে/টে )
বিশেষ সম্পাদনা
ত্বকত্বক
ধেরেধেরে
ধেনেঘেনে, দিঙ্
বিভিন্ন ঘরাণার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
তালসমূহের তালিকা – সম্পাদনা:-
অর্জুন তাল • অর্ধ ঝাঁপতাল • আড় খেমটা তাল • আড়া চৌতাল • আড়া ঠেকা তাল • আদি তাল • আদ্ধা তাল • উপরাল তাল • একতাল • কুণ্ডল তাল • কন্দর্প তাল • কুম্ভ তাল • করালমঞ্চ তাল • কুলতাল • কাওয়ালী তাল • কাশ্মীরী খেমটা তাল • কাহারবা তাল • কৈদ ফোরদস্ত তাল • খয়েরা তাল • খামশা তাল • খেমটা তাল • গজঝম্প তাল • গণেশ তাল • চক্র তাল • চিত্রা তাল • চৌতাল • ছপকা তাল • ছোট লোফা • জগপাল তাল • জয়মঙ্গল তাল • ঝম্পা তাল • ঝুমরা তাল • ঝুলুম তাল • ঝাতি তাল • ঝাঁপতাল • টপ্পা তাল • ঠুংরী তাল • ত্রিতাল • ত্রিপুট তাল • তিলওয়াড়া তাল • তেওরা তাল • দাদরা তাল • দীপচন্দী তাল • দোবাহার তাল • ধুমালী তাল • ধামার তাল • নন্দন তাল • নিঃসারক তাল • পঞ্চম সওয়ারী তাল • পটতাল • পাঞ্জাবী ঠেকা তাল • পোস্ত তাল • ফোরদস্ত তাল • ব্রহ্মতাল • ব্রহ্মযোগ তাল • বসন্ত তাল • বিক্রম তাল • বিষ্ণুতাল • বীরপঞ্চ তাল • ভরতঙ্গা তাল • মত্ততাল • মণি তাল • মহেশ তাল • মোহন তাল • যৎ তাল • যতিশেখর তাল • রুদ্র তাল • রূপক তাল • রাশ তাল • লক্ষ্মী তাল • লঘুশেখর তাল • লীলা বিলাস তাল • শক্তিতাল • শঙ্কর তাল • শঙ্খ তাল • শিখর তাল • সওয়ারী তাল • সুরফাঁকতাল • সরস্বতী তাল • সাত্তি তাল • সেতারখানি তাল • হপ্তা তাল
রাবীন্দ্রিক তাল: উল্টোষষ্ঠী তাল • একাদশী তাল • ঝম্পক তাল • নবতাল • নবপঞ্চ তাল • রূপকড়া তাল • ষষ্ঠী তাল
সঙ্গীত কলাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করতে তাল একটি অপরিহার্য কলা। তালের সঠিক জ্ঞানের অভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাল একটি ভীতিপ্রদ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মত ও প্রয়োজনীয় সংগতের অভাবে সঙ্গীত শিল্পী যেমন তাল শিল্পীকে ভয় পান, তেমনি তাল শিল্পীও ভয় পান সঙ্গীত শিল্পীকে। এ ভয়কে দূরকরতে দরকার পারস্পরিক সমঝোতা,সহযোগিতা,সাহচার্য আর সহমর্মিতা। কোন শিক্ষাথী যদি সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করার সময় থেকেই তালের সাথে চর্চা না করে তবে তার মধ্যে তাল নিয়ে একটা অহেতুক ভীতি কাজ করবে,যা আর সহজে দূর করা সম্ভব হবেনা। একারণে আমার এ স্কুলটিতে যতগুলি পাঠ সংযোজন করেছি তা তালবদ্ধ ভাবেই দেয়ার চেষ্টা করেছি,এখানে তালের তত্বীয় দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করব।
 
তাল: তাল হচ্ছে একটি নির্দ্দিষ্ট সময়কে নিদ্দিষ্ট ক্ষুদ্রভাগে ছন্দবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে তাল যন্ত্রে বাদনের মধ্য দিয়ে তার পুনরাবৃত্তি ঘটানো। প্রকৃতিতে আমরা যা কিছু অবলোকন করি তার সবকিছুই ছন্দবদ্ধ ভাবে একটা নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটে চলেছে অর্থাৎ সবই তালবদ্ধ। একারণে সব কিছুই আমাদের কাছে এত সুন্দর আর মনোরম বলে মনে হয়। আমরা রেলগাড়ীতে চড়লে এর প্রচন্ড শব্দের মাঝেও ঘুমিযে পড়ি কারণ এর চলার গতি ছন্দবদ্ধ ও এর গতি প্রায় সমান থাকে অথচ হঠাৎ ব্রেক কষলেই আমরা চমকে উঠি কারণ তখন চলার ছন্দ পতন ঘটে। তাই তাল হচ্ছে সঙ্গীতের প্রাণ যার বিচ্যুতি আমাদের পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সঙ্গীত জগতে হাজারো তালের জন্ম হয়েছে আবার হারিয়েও গিয়েছে অনেক। তাল যন্ত্রও আছে হাজারো রকমের। এর সবগুলোই যে আমাদের জানতেই হবে তা নয়।
প্রাথমিক ভাবে আমরা কিছুতালের সাথে যদি পরিচিত হতে পারি তবে তা আমাদের জ্ঞানের দূয়ার ধীরে ধীরে খুলে দিবে। মাত্রা:তালের মোট সময়টিকে পরিমাপ করার জন্য যে ক্ষুদ্রতম একক ব্যবহার করে লয়কে নির্দ্দিষ্ট করা হয়, এক কথায তাই মাত্রা। পদ বা বিভাগ: তালের প্রতিটি মাত্রা একেকটি পদ।
আর তাই,এক বা একাধিক মাত্রা নিয়ে তালকে ছন্দবদ্ধভাবে সাজানোর নামই হচ্ছে পদ বা বিভাগ।
 
তালের এই পদ বিভাজন দুই প্রকার যথা: সমপদ বিভাজন ও অসম পদ বিভাজন। এই বিভাজনের উপর ভিত্তিকরে তালকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে এর বিস্তারিত ব্যখ্যা করা হল। সমপদী তাল:যে সব তালের পদবিভাগ গুলি সমান মাত্রার দ্বারা গঠিত,তাকে সমপদী তাল বলে।
 
যেমন: দাদরা তালটি ০৬ মাত্রা দ্বারা গঠিত,এর পদবিভাগটি হচ্ছে– ধা ধি না । না তি না।। আর্থাৎ তিন তিন করে সামান মাত্রা নিয়ে এর পদবিভাজন করা হযেছে। কাহারবা,ত্রিতাল,চৌতাল ইত্যাদিও সমপদী তাল। বিসমপদী তাল:যে সব তালের পদবিভাগ গুলি অসমান সেই সব তালকে বিসমপদী তাল বলা হয়। যেমন তেওড়া তালটি ০৭ মাত্রার এবং এর পদবিভাজনটি হচ্ছে– ধা ধি না । ধি না । ধি না ।।
অর্থাৎ তিন দুই দুই করে অসমান ভাবে পদ বিভাজন করা হয়েছে। ঝাপতাল, ধামার ইত্যদিও বিসমপদী তাল। লয়:তালের নির্দ্দিষ্ট সময়কালকে অবিচ্ছেদ্দ্য সমান গতিতে অতিক্রান্ত করার নাম লয়।
 
লয় প্রধানত তিন প্রকার-০১. বিলম্বিত লয় ০২. মধ্যে লয় ০৩. দ্রুত লয়। তবে বিশেষজ্ঞ গণ মনে করেন লয় আট প্রকার। এ ছাড়াও মাত্রার ভগ্নাংশ দ্বারা গঠিত বহুপ্রকার লয় হতে পারে যেমন: আড়,কুয়ড়,বিয়াড় ইত্যাদি।
 
আবর্তন: কোন তালের সম থেকে সম পর্যন্ত বাজিয়ে আসাকে আবর্তন বলে। আবর্ত বা আওয়ার্দ্দা একই কথা। তেহাই: সমান সংখ্যক মাত্রা বিশিষ্ট যে কোন বোল বা বাণী পর পর তিনবার বাজিয়ে গদের মুখে আসাকে তিহাই বলে।
 
তেহাই দুই প্রকার। যথা: দমদার তেহাই ও বেদমদার তেহাই। দমদার তেহাই: যে তেহাই এর মধ্যবর্তী সময়ে দম নেয়ার অবকাশ থাকে তাকে দমদার তেহাই বলে। বেদমদার তেহাই: যে তেহাই এর মধ্যবর্তী সময়ে দম নেয়ার অবকাশ থাকেনা তাকে বেদমদার তেহাই কলে। সম:তালেম প্রথম মাত্রাকে সম বলে। সম থেকেই তালের শুরু। স্বরলিপিতে সমকে +(যোগ) বা x(ক্রস)চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। তালি: পদের যে সব জায়গায় তালি দিয়ে দেখানো হয় তাকে তালি বলে। তালি একটি সশব্দ ক্রিয়া বলে। এই সব স্থান ১,২,৩ ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। খালি বা ফাঁক: পদের যে স্থান অনাঘাত দ্বারা প্রদর্শন করা হয় তাকে খালি বা ফাঁক বলে। ফাঁক প্রদর্শন একটি নি:শব্দ ক্রিয়া।
এসব স্থান ০(শূন্য) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রাচীনকালে সংগীত গুনীজনেরা তালের দশটি প্রাণের কথা উল্ল্যেখ করেছেন
যা নিম্নরুপ:- ০১.কাল: সংগীতে আরোপিত সময়কে কাল বলে।
০২.মার্গ: মার্গ অর্থ পথ। মার্গের দ্বারা আমরা তালের বিভিন্ন স্থান অনুধাবন করতে পারি।
০৩.ক্রিয়া: হাতের দ্বারা তালি বা খালি প্রর্দশন করাকে তালের ক্রিয়া বলে। ক্রিয়া দুই প্রকার যথা: সশব্দ ক্রিয়া ও নি:শব্দ ক্রিয়া।
০৪.অংগ:অংগ অর্থ অংশ বিশেষ। এর দ্বারা তালের অংশ সমূহ চেনা যায়।
০৫.গ্রহ:তালের যে জায়গা থেকে সংগীত শুরু হয় তাকে গ্রহ বলে।
গ্রহ চার প্রকার যেমন:- ক)সম গ্রহ:কোন সংগীত যখন সম থেকে শুরু হয় কখন তাকে সম গ্রহ বলে। খ)বিসম গ্রহ:সম ছাড়া যে কোন স্থান থেকে সংগীত শুরু হলে তাকে বিসম গ্রহ বলে।
গ)অতীত গ্রহ:প্রকৃত সম গত হওয়ার পর বিশেষ কায়দায় সম প্রদর্শন করাকে অতীত গ্রহ বলে যা আড়ি বলেও পরিচিত। ঘ)অনাগত গ্রহ:প্রকৃত সম আসার পূর্বেই সংগীতের মাধূর্য বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষ কায়দায় সম প্রদর্শন করাকে অনাগত গ্রহ বলে। ০৬.জাতি:দক্ষিন ভারতীয় সংগীত রীতিতে
০৫ প্রকার জাতি প্রচলিত যেমন:চতস্র,তিস্র,মিশ্র,খন্ড ও সংকীর্ন।
০৭.কলা:বোলবাণী একই হলেও বাদন শৈলীর ভিন্নতার জন্য বিভিন্ন ঘাড়ানার বাদকদের মধ্যে যে বিশেষ বাদনকৌশল পরিলক্ষিত হয় তাই কলা।
০৮.লয়:তালের নির্দ্দিষ্ট সময়কালকে অবিচ্ছেদ্দ্য সমান গতিতে অতিক্রান্ত করার নাম লয়।
 
০৯.যত্বি:কোন নির্দ্দিষ্ট লয় বেঁধে দেয়ার নাম হচ্ছে যত্বি। বর্তমানে এর কোন প্রচলন দেখা যায় না।
 
১০.প্রস্তার:প্রস্তার এর অর্থ হচ্ছে বিস্তার। বোলবাণীর বৈচিত্র আনয়নের মধোদিয়ে বিস্তার করা হয়। বিভিন্ন প্রকার তাল ও এর বিভাগ সমূহ: তাল সম্পর্কিত নিম্নের এই অংশ সমূহ ১৮ জানুয়ারী,১৯৮৯ ইং,সুররং একাডেমী অব ক্লাসিক্যাল মিউজিক এর ১ম ত্রৈমাসিক কর্মশিবির উপলক্ষে প্রদত্ত ওস্তাদ কামরুজ্জামান(মনি)এঁর ভাষনএর উপর ভিত্তি করে দেয়া হল।
তিনি গত ২০ জুন,২০১১ইং পরলোক গমণ করেন। একতাল:একতাল ১২ মাত্রা বিশিষ্ট একটি সমপদী তাল।
 
এই তালটি তিন প্রকার। যথা: ক)দ্বিমাত্রিক একতাল খ)ত্রিমাত্রিক একতাল গ)চতুর্মাত্রিক একতাল এছাড়াও বিলম্বিত একতাল বাজানোর সময় এর প্রতিটি মাত্রা চার মাত্রার সমান করে টেনে বাজানো হয়,ফলে তা ৪৮ মাত্রার মত মনে হলেও মূলত: তা দ্বিমাত্রিক একতাল ১২ মাত্রার একটি বিলম্বিত রুপের ভিন্ন প্রকাশ মাত্র।
এখন চলছে পরে দেখুন সারিতে যোগ করুন কাহারবা তাল বিভিন্ন রকম, kaharba taal, এসো তবলা শিখি
এখন চলছে পরে দেখুন সারিতে যোগ করুন কাহারবা তাল বিভিন্ন রকম, kaharba taal, এসো তবলা শিখি

রাগ ইমন(Rag:Yaman/Iman)
 
আলাউদ্দিন খিলজীর সভাসদ কবি ও দার্শনিক হযরত আমির খসরু এই রাগটির শ্রষ্টা। এই রাগে সাধারণত: সা স্বরটি বর্জন করে আরোহ গতিতে ন্ র গ এই ভাবে সরল গতিতে যাওয়া যায়। এছাড়াও মধ্যম সপ্তকের পঞ্চমকে বর্জন করে ক্ষ ধ ন, ক্ষ ধ র্স ন র্র র্স, ন র্র ন ধ ক্ষ গ এই সমস্ত স্বরসঙ্গতি বিশেষ বৈচিত্র আনয়ন করে। পরিচয়: মা কড়ি এবং বাকি সব স্বর শুদ্ধ ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ বিলাবলের শুদ্ধ মা এর পরিবর্তে কড়ি মা এর আগমন।এর চলন বক্রগতি সম্পন্ন।এ রাগের সাথে বিলাবল ঠাটের প্রচুর সাদৃশ্য আছে।
 
এই রাগের সমপ্রকৃতির ইমন কল্যান নামে আরো একটি রাগ আছে যেখানে শুদ্ধ মধ্যম প্রয়োগ করা হয় এবং ইমন অপেক্ষা ঋষভ এর প্রাধান্যও এতে বেশী থাকে। তবে শুদ্ধ মধ্যম এর ব্যবহার গুরুর নিকট শিখেই প্রয়োগ করা উচিৎ, অন্যান্য স্বরের ব্যবহার ইমন এর মতই। সৌন্দর্য বা বৈচিত্র আনয়ন কল্পে প স্বরটিকে এড়িয়ে ব্যবহার করা হলেও মনে রাখতে হবে পা স্বরটি ইমন রাগে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ন্যস স্বর।
 
ঠাট:            কল্যান জাতি:          সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ আরোহী:   ( ন্ )সা     রা     গা     ক্ষা   পা     ধা     না     র্সা অবরোহী:       র্সা     না     ধা     পা     ক্ষা    গা     রা     সা চলন:            ন্ র গ র ,গ ক্ষ ধ ন, র্স ন ধ প ক্ষ গ, প র গ র ন র স পকড়:           ন্ র গ র ন্ র সা, বা ন্ র গ র স , প ক্ষ গ র স বাদী স্বর:        গ সমবাদী স্বর:    ন অঙ্গ:              পূর্বাঙ্গ প্রকৃতি:           শান্ত সময়:             সন্ধিপ্রকাশ রাগ (গোধুলীলগ্ন থেকে রাত ০৯ টা)

সূত্র : বঙ্গীয় শব্দকোষ (দ্বিতীয় খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১। তবলার ইতিবৃত্ত। শম্ভুনাথ ঘোষ। আদি নাথ ব্রাদার্স। পৌষ ১৪১৭। তবলার বাদন শৈলী ও তার ঘরানা। স্বরূপ হোসেন। শিল্পকলা (শিল্পকলা ষাণ্মাসিক বাংলা পত্রিকা)। ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্প প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২। http://www.shadjamadhyam.com/pakhawaj

এখন চলছে পরে দেখুন সারিতে যোগ করুন কাহারবা তাল বিভিন্ন রকম, kaharba taal, এসো তবলা শিখ

তবলার হাতেখড়ি, তবলার বর্ণ পরিচয়,তবলার স্বরলিপি তবলা বাজানোর নিয়ম তবলার তাল সমূহ তবলা ছবি তবলার বোল বাণী তবলার তেহাই তবলার বই pdf তবলার বিভিন্ন তাল,তবলার বোল তবলার বোল বাণী তবলার স্বরলিপি তবলার তেহাই তবলার তাল সমূহ তবলার সুর ডুবি তবলা তবলা শিক্ষা ,তবলার তাল, সমূহ তবলার স্বরলিপি, তবলার বোল বাণী তবলার তেহাই তবলার সুর ডুবি ,তবলা তবলার রেলা তবলা শিক্ষা ,তবলার বোল বাণী তবলা শিক্ষা তবলার দাম তবলার বই pdf তবলার তেহাই তবলার বিভিন্ন অংশের নাম তবলার তাল সমূহ তবলার রেলা৩

Leave a Reply