তবলা আরবি ত বলা >তবলা ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র | ঘাত বাদ্যযন্ত্র | সঙ্গীতযন্ত্র | যন্ত্র | ডিভাইস | যন্ত্রকরণতা | মানবসৃষ্টি | সমগ্র | দৈহিক লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |} ভারতীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত একপ্রকার তাল রক্ষাকারী আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র। দুটি খণ্ডের একটি সেট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উভয়ই আনদ্ধ। এর একটি খণ্ডের নাম তবলা বা ডাইনা। অপর অংশের নাম ডুগি বা বাঁয়া। সম্মিলিত নাম তবলা-বাঁয়া। সংক্ষেপে তবলা। সরাসরি হাতের মণিবন্ধ তালু এবং অঙ্গুলির আঘাতে বাজানো হয়। তবলা-বাঁয়ার প্রচলন শুরু হয়, ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনামলে। এই যন্ত্রটি আরবে প্রচলিত আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্রের একটি সংস্কারকৃত যন্ত্র। আদ্য তবলা তৈরি করেছিলেন আরবদেশের জুবলের পুত্র টুবল। আবিষ্কারকের নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয়েছিল তবল। এই যন্ত্রটি আরব-সঙ্গীত শিল্পীদের সূত্রে পারশ্যে প্রবেশ করেছিল।
পারশ্যে তবল নামের যে তালযন্ত্রের প্রচলন ছিল, তা ভারাতীয় তবলের মতো ছিল না। সেকালের পারশ্যের সঙ্গীতশিল্পীরা আদি গজল গানের সাথে তবল ব্যবহার করতেন। ইতুৎমিশের (১২১১-১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দ) আমলে প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক হযরত আমির খসরুর পিতা পারশ্য থেকে ভাগ্যান্বেষে দিল্লিতে আসেন।
সেই সময় পারশ্যের সঙ্গীতশিল্পীসহ বহু পেশার মানুষ পারশ্য থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। হযরত আমির খসরু ১২৫৩-৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের বর্তমান পাতিয়ালা (বর্তমান পাঞ্জাব রাজ্যের একটি জেলার নাম ও জেলা শহর) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গীতজীবনের শুরু হয়েছিল পারশ্যের গজল গানের ভিতর দিয়ে। আমির খসরুর আগে ভারতবর্ষে তবলা নামক কোনো বাদ্যযন্ত্র ছিল, তা জানা যায় না। অনেকেই মনে করেন, আমির খসরু পারস্যের গজলের সাথে ব্যবহৃত দুই খণ্ডের বাদ্যযন্ত্রকে সংস্কার করে তবলায় রূপ দেন। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে খসরু রচনা করেন ‘কিরানুস-স’দাইন’ নামক কাব্যবগ্রন্থ। ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দে জালালউদ্দীন দিল্লীর রাজদরবারের পুরানো অনেক কর্মীদের বরখাস্ত করলেও, আমির খসরু সমাদরেই থেকে যান এবং দিল্লীর দরবারকে কাব্য ও সঙ্গীতে মুখর করে রাখেন। জালালউদ্দীন খাল্জি তাঁর কাব্য ও সঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে “আমারত” উপাধিতে সম্মানিত করেন। তখন থেকেই তিনি ‘আমারত খসরু’ বা ‘আমির খসরু’ নামে পরিচিত লাভ করেন। ধারণা করা হয় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দীন-এর শাসনামলে তিনি পারশ্যের তবল যন্ত্রটির সংস্কার করে ‘তবলা’ নামক যন্ত্রটি দরবারে উপস্থাপন করেন। ধীরে ধীরে এই যন্ত্রটি সঙ্গীতশিল্পীদের চর্চার মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
হিন্দু সঙ্গীতশিল্পীরা প্রথমদিকে তবলাকে মুসলমানদের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে পরিহার করে চলতেন। ১৪-১৫শ শতকের দিকে জৈন সাধক সুধাকলশ তবলাকে উল্লেখ করেছিলেন ম্লেচ্ছযন্ত্র। সঙ্গীতাচার্য গোপেশ্বর বন্দ্যপাধ্যায়ের মতে সদারঙ্গের শিষ্য দ্বিতীয় আমির খসরু তবলার উদ্ভাবন করেছিলেন। উল্লেখ্য এই আমির খসরু ছিলেন মোগল সম্রাট তৃতীয় মহম্মদ শা’র আমলে (১৭৩৮ খ্রিষ্টাব্দ)। আবার অনেকে মনে করেন, দিল্লির জনৈক পাখোয়াজ শিল্পীর সাথে দিল্লির সম্রাট আকবরের সঙ্গীত দরবারের পাখোয়াজ বাদক সিধার খাঁর সাথে একটি পাখোয়াজ-বাদনের প্রতিযোগিতা হয়। ওই প্রতিযোগিতায় সিধার খাঁ পরাজিত হয়ে, তাঁর পাখোয়াজকে দুই টুকরো করে ফেলেন। এরপর এই পৃথক দুই টুকরোকে মেরামত করে আলাদা যন্ত্র হিসেব তৈরি করেন এবং তা তবলা নামে পরিচত হয়। তবলার ঘরনা বাদনশৈলীর বিচারে তবলাবাদনকে দুটি বাজ-এ ভাগ করা হয়।
এই ভাগ দুটি হলো‒ ১. দিল্লী বা পশ্চিমী বাজ : এই বাজের ভিতরে রয়েছে দিল্লি এবং অজারাড়া অঞ্চলের বাদনশৈলী।
২. পূর্বী বাজ বা পূরব বাজ: এই বাজের ভিতরে রয়েছে লক্ষ্ণৌ, বারনসী এবং ফরুখাবাদ। তবলা বাদনের এই পাঁচটি বাজের সূত্রে পাঁচটি ঘরানার সৃষ্টি হয়েছিল।
দিল্লী ঘরনা থেকে দিল্লী ঘরানা-সহ মোট পাঁচটি ঘরানার সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছে পাঞ্জাব ঘরানা। সব মিলিয়ে বর্তমানে তবলার ঘরানা ছয়টি।
নিচে ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই ঘরানাগুলোকে দেখানো হলো। দিল্লী ঘরানা অজারাড়া ঘরানা লক্ষ্ণৌ ঘরানা ফরুখাবাদ ঘরানা বেনারস ঘরানা পাঞ্জাব ঘরানা। তবলা পরিচিতি তবলা : দুই খণ্ডের তবলা-বাঁয়ার সেটের একটি অংশ। সাধারণত এই অংশটি ডান হাতে বাজানো হয় বলে, একে ডাইনা বলা হয়। কিছু কিছু বাদক এই অংশটি বাম হাতেও বাজিয়ে থাকেন। এই অংশটির দেহকাঠামো কাঠ। একে হিন্দিতে লক্ড়ী বলা হয়। এই কাষ্ঠঅংশকে সাধারণভাবে কাঠ বলা হয়।
সাধারণত নিম, চন্দন, বিজয়শাল, আম, কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে তবলার দেহ কাঠামো তৈরি করা হহ। দৈর্ঘ্যের বিচারে লম্বাটে এবং সাধারণত বাঁয়ার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। দৈর্ঘ্যে ৯-১২ ইঞ্চি হয়ে থাকে। প্রস্থ বরাবর গোলাকার এবং ডুগির চেয়ে এর ব্যাস কম। এর নিচের অংশ উপরের অংশের চেয়ে বেশি স্ফীত থাকে। আদর্শ তবলার নিম্নভাগের ব্যাস হয় ৮-৯ ইঞ্চি এবং উপরের অংশের ব্যাস হয় ৫-৬ ইঞ্চি। এই কাষ্ঠখণ্ডের কম ব্যাসযুক্ত অংশের উপর থেকে খুঁড়ে ফাঁপা অংশ তৈরি করা হয়। কিন্তু এই ফাঁপা অংশ অপর প্রান্ত ভেদ করা না। ফলে এটি একটি এক মুখ বন্ধ পাত্রের রূপ লাভ করে। এর ফাঁপা অংশের মুখে চামড়া দিয়ে ছাওয়া হয়। একে বলা হয় পুড়ি বা ছাউনি। এই ছাওনি তৈরি হয় ভেড়া বা ছাগলের চামড়া দিয়ে। ছাউনি কাঠের উপরে দৃঢ় এবং সটানভাবে বাঁধা থাকে।
উপরে এই ছাউনিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। খিরন : এর অন্যান্য নাম স্যাহী, গাব তবলার ছাউনির মধ্যস্থলে যে গোলাকার কালো অংশ থাকে, তাকে খিরন বলা হয়। গাবগাছের আঠার সাথে কাঠকয়লা মিশিয়ে আঠালো লেই তৈরি করে, উক্ত লেই দিয়ে কয়েকটি পর্যায়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। খিরণ গাব-ফল দিয়ে তৈরি হয় বলে, একে অনেক সময় গাব নামেই অভিহিত করা হয়। খিরন তবলার মূল চামড়ার উপরে বসানো হয়।
কানি : এর অন্য নাম চাঁটি তবলার ছাউনির প্রান্তভাগে একটি পৃথক চামড়ার আচ্ছাদন থাকে। এই অংশকে বলা হয় কানি।
ময়দান : এর অন্যান্য নাম লব, সুর। তবলার খিরন এবং প্রান্তদেশীয় কানি অংশের ভিতরে যে বৃত্তাকার অংশ দেখা যায়, তাকে ময়দান বলে।
পাগড়ি : এর অন্যান্য নাম গজরা, বেষ্টনী, বেড়। তবলার মূল চামড়া এবং কানির চামড়াকে একত্রিত করে কাঠের উপরে বসানো হয়। পরে চামড়ার ফিতা দিয়ে তৈরিকৃত বিনুনি তবলার কানি ও মূল চামড়ার সাথে যুক্ত করে, চামড়ার দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। এই বিনুনি অংশকে পাগড়ি বলা হয়।
পাগড়িতে মোট ১৬টি ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্র পথে চামড়ার ফিতা তৈরি করে কাঠের নিম্নাংশের গুড়রি অংশের সাথে দৃঢ় করে বাঁধা হয়। ডোরি : এর অন্যান্য নাম ছোট্, বদ্ধি, দোয়ানী। পাগড়ির ১৬টি ছিদ্র পথে যে চামড়া ফিতা প্রবেশ করিয়ে, কাঠের নিম্নাংশের গুড়রি অংশের সাথে দৃঢ় করে বাঁধা হয়, তাকে ডোরি বলা হয়। গুলি : এর অন্যা নাম গট্টা। তবলার উপরের ছাউনির সটান অবস্থা এবং কাঙ্ক্ষিত সুর পাওয়ার জন্য ডোরি ভিতরে কয়েকটি কাঠের তৈরি লম্বাটে গোলাকার গুলি ব্যবহার করা হয়। এই ডোরি উপরে নিচে নামিয়ে তবলা সুরকে নিম্ন বা চড়া সুর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ডুগি : অন্যনাম বাঁয়া। দুই খণ্ডের তবলা-বাঁয়ার সেটের একটি অংশ। সাধারণত এই অংশটি বাম হাতে বাজানো হয় বলে, একে বাঁয়া বলা হয়। কিছু কিছু বাদক এই অংশটি ডান হাতেও বাজিয়ে থাকেন। ডুগির মূল দেহকাঠামো মাটি বা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। সাধারণত এর ধাতু হিসেবে পিতল, তামা বা এররূপ কোনো সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয়।
এর গঠন অনেকটা হাঁড়ির মতো। এর অন্য নাম কুড়ি। তবলার তুলনায় ডুগি খাটো। সাধারণত ৮-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর মুখও তবলার চেয়ে অনেক বড় হয়। উপরিভাগের ছাউনি অংশের ব্যাস হয় প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি।
এবং নিম্ন-মধ্যাংশের ব্যাস অপেক্ষাকৃত বেশি। এর গঠনবৈশিষ্ট্য তবলার মতই। তবে এর ডোরির ভিতর দিয়ে কাঠের তৈরি গুলির পরিবর্তে ধাতব আংটি ব্যবহার করা হয়। খিরনের অবস্থানের বিচারে পার্থক্য রয়েছে। তবলার খিরন ছাউনির মধ্যভাগে থাকে। পক্ষান্তরে ডুগির খিরণ থাকে ছাউনির একটি প্রান্ত ঘেঁষে। ফলে এর একদিকে কানি ও ময়দান কাছাকাছি থাকলেও এর বিপরীত দিকের ময়দান অনেক বড় হয়।
এছাড়া তবলার চেয়ে ডুগির খিরন বড় হয়। তবলা বাদকেরা তবলায় উৎপন্ন সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিগুলোকে বোল, বর্ণ বা বাণী বলে থাকে। তবলা এবং ডুগিতে পৃথক পৃথকভাবে বোল তৈরি হয়। আবার যন্ত্রে যুগপৎ আঘাতেও মিশ্র বোল তৈরি হয়। এই বিচারে তবলার বোলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
১. তবলার বোল: ১.১. তা/না : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা কানিতে আঘাত করলে তা বা না হয়।
১.২. তি : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা ময়দানে আঘাত করে তর্জনী না উঠালে তি হয়। ১.৩. তিন্ : অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা ময়দানে আঘাত করে তর্জনী উঠালে তিন্ হয়।
১.৪. দিন্/থুন্/ দি/নে/নি : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা একত্রে খিরনের উপর আঘাত করে আঙুলগুলো উঠিয়ে নিলে দিন্/থুন/দি/নে/নি হয়। এছাড়া অনামিকা খিরনে রেখে তর্জনী দ্বারা কানিতে হাল্কা আঘাত করে আঙুল উঠিয়ে নিলেও দিন্ হয়।
১.৫. তু/তুন্ : তর্জনী দ্বারা খিরনের কিনার বরাবর আঘাত করলে তু বা তুন্ হয়।
১.৬. তে/টে/তি/ : তর্জনী ও মধ্যমার দ্বারা খিরনের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করলে তে. টে বা তি উৎপন্ন হয়।
১.৭. রে/টি : তর্জনীর দ্বারা খিরনের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করলে রে বা টি হয়।
১.৮. তাং : তর্জনী দিক কিছুটা উঁচু রেখে আঙুলগুলো প্রসারিত করে কনিষ্ঠা দিয়ে গাব স্পর্শ করে থাকা অবস্থায় খিরনের উপর অন্যান্য আঙুল দিয়ে আঘাত করলে তাং উৎপন্ন হয়। তবলায় একে চাটি বলে।
১.৯. দিং : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা সংযুক্তকরে সরলভাবে প্রসারিত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের উপর আলগা আঘাত করে হাত উঠিয়ে নিলে দিং উৎপন্ন হয়।
১.১০. তেৎ বা দেৎ : তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা সংযুক্তকরে সরলভাবে প্রসারিত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা উড়ে চাপা আঘাত করেল তেৎ বা দেৎ উৎপন্ন হয়।
১.১১. ত্তা : মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা সংযুক্তকরে ঈষৎ বক্র করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের মধ্যস্থলে ফাঁপা আঘাত করলে ত্তা উৎপন্ন হয়।
২. ডুগির বোল: মোট ৩টি ধ্বনি তবলা থেকে উৎপন্ন হয়।
এগুলো হলো‒ ২.১. কে/কি/ক : করতল ডুগীর খিরনের দিকে স্থাপন করে বৃদ্ধাঙ্গুলী সোজা এবং তর্জনী ঈষৎ বক্র করে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠাকে সংযুক্ত করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনে আঘাত করলে কে, কি বা ক উৎপন্ন হবে।
২.২. গে/গ/গা/গি/ঘ/ঘা/ঘি/ঘে : করতল ডুগীর খিরনের দিকে স্থাপন করে খিরন ও কানির মধ্যস্থলে মধ্যমা ও তর্জনীর বক্র করে, আঙুলের অগ্রভাগ দ্বারা আঘাত করেল গে, গ, গা, গি, ঘ, ঘা, ঘি বা ঘে উৎপন্ন হবে।
২.৩. কৎ : সমস্ত আঙুল সংযুক্ত করে লম্বা করতে হবে। এই অবস্থায় খিরনের উপরে সজোরে চাপা আঘত করলে কৎ ধ্বনি উৎপন্ন হবে। ৩. তবলা ও ডুগির মিশ্র বোল: মোট ৭টি ধ্বনি তবলা থেকে উৎপন্ন হয়।
এগুলো হলো‒
৩.১. ধা : গে এবং তা এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.২. ধিন/ধি : গে এবং দিন্ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.৩. ধেং : গ এবং দিং এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
৩.৪. তিন্ : কে এবং দিনধ্ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.৫. ধিং : গে এবং দিং এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩.৬. ধেৎ : গি এবং তেৎ এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
৩.৭. ধে : গি এবং তে এর একত্র প্রয়োগে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। কতিপয় মিশ্র বোলের প্রয়োগ
১. কড়ান্/ক্রান্ : কৎ ধ্বনি উৎপন্নের পরে তা বা না বাজিয়ে উভয় হাত তুলে নিলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২. কিনি : তি এবং ক একত্রে প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৩. কেদিংকেনে: কে, দিং, কে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়।
৪. ক্রানে : ক্রান ধ্বনি উৎপন্ন করার পর অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর মৃদু আঘাত করলে ক্রানে উৎপন্ন হয়।
৫. ক্রে : কে ধ্বনির সাথে তবলার খিরনে মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
৬. গদি : গ এবং দি দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ৭. গন : গ এবং ন দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
৮. গদিঘেনে: গ, দিং, ঘে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়।
৯. গেদিংকেনে: গে, দিং, কে ধ্বনি সৃষ্টির পর তবলার খিরন স্পর্শ করে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর আঘাত করলে নে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই চারটি ধ্বনি দ্রুত বাজিয়ে কেদিংকেনে উৎপন্ন করা হয়।
১০. গ্রে বা ঘ্রে : গে বা ঘে বাণীর পরে তে বা তেৎ বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১১. ঘড়ান্ : ঘ ধ্বনি উৎপন্নের পরে তা বা না বাজিয়ে উভয় হাত তুলে নিলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১২. ঘেন : ঘে এবং না একত্রে বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ১৩. ঘ্রান্ : ঘড়ান্ বোল দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১৪. ঘ্রানে : ঘ্রান ধ্বনি উৎপন্ন করার পর অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর মৃদু আঘাত করলে ঘ্রানে উৎপন্ন হয়।
১৫. ঘ্রে : ঘে বাণীর পরে তে বা তেৎ বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১৬. তরান/ননান : তবলায় তাং বাজানোর সাথে সাথেই না বাজাতে হবে এরপর আবার তাং বাজাতে হবে। এই তিনটি কার্য দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১৭. তিক্ : তি এবং ক একত্রে প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১৮. তিট্ : উভয় হাতে ট প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
১৯.তিনি : তি এবং দ্রুত প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২০. তৃক : তবলায় দ্রত কিট এবং ডুগিতে একসাথে ত-ক বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২১. ত্রে/দ্র : তে এবং রে দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২২. ত্রেকেটে : তে,রে কে,টে ধ্বনি দ্রুত বাজালে এই ধ্বনি পাওয়া যায়।
২৩. দ্ধে : ডুগির বড় ময়দানে কব্জির অল্প চাপে মধ্যমার দ্বারা খিরনের প্রান্তে আঘাত করতে হবে। একই সাথে অনামিকা, মধ্যমা ও কনিষ্ঠা দ্বারা তবলার খিরনে চাপা আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২৪. ধিট্/ধিরং : উভয় হাতে তি এবং ধি প্রয়োগ করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২৫. ধানে : ধা বাজিয়ে অনামিকা ও মধ্যমা দিয়ে তবলার খিরনের উপর ঈষৎ আঘাত করলে ধানে উৎপন্ন হয়। ২৬. ধিনি : তবলায় ধি এবং ডুগির কানি ও খিরনের মধ্যস্থলে একসাথে আঘাত করলে এই ধ্বনি উৎপন্ন হয়।
২৭. ধুমাকেটে : তবলার খিরনের উপর মধ্যমা ও অনামিকার অগ্রভাগ দিয়ে আঘাতের সাথে সাথেই বাঁয়ার পাগড়ির উপর আঙুল দ্বারা খোলা আঘাত করলে ধু ধ্বনি উৎপন্ন হয়। কিন্তু কেবল তর্জনীর দ্বারা তবলার খিরনে অল্প আঘাতে মা ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই দুটি ধ্বনি উৎপন্ন করার পরপরই কেটে ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়। এবার দ্রুত এই চারটি ধ্বনি বাজালে ধুমাকেটে ধ্বনি পাওয়া যায়।
২৮. ধেরেধেরে : কনিষ্ঠার শেষপর্ব থেকে কব্জির পর্যন্ত পুরো অংশদেয় তবলায় আঘাত করলে এবং একই সাথে ডুগির কানি ও খিরনের মধ্যস্থলে মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা আঘাত করলে ধে উৎপন্ন হবে। এই ধে-এর পরপরই যদি বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের শেষাংশ দিয়ে তবলার গাবে আঘাত করলে রে উৎপন্ন হবে। এইভাবে দ্রুত ধেরে বাজিয়ে এই ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়।
২৯. নাড়া : দুই বার দ্রুত না বাজালে নাড়া উৎপন্ন হয়। এছাড়ও তবলা বাদকরা নানা ধরনের মিশ্র বোল উৎপন্ন করে থাকেন।
সূত্র : বঙ্গীয় শব্দকোষ (দ্বিতীয় খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১। তবলার ইতিবৃত্ত। শম্ভুনাথ ঘোষ। আদি নাথ ব্রাদার্স। পৌষ ১৪১৭। তবলার বাদন শৈলী ও তার ঘরানা। স্বরূপ হোসেন। শিল্পকলা (শিল্পকলা ষাণ্মাসিক বাংলা পত্রিকা)। ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্প প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২। http://www.shadjamadhyam.com/pakhawaj
এখন চলছে পরে দেখুন সারিতে যোগ করুন কাহারবা তাল বিভিন্ন রকম, kaharba taal, এসো তবলা শিখ
তবলার হাতেখড়ি, তবলার বর্ণ পরিচয়,তবলার স্বরলিপি তবলা বাজানোর নিয়ম তবলার তাল সমূহ তবলা ছবি তবলার বোল বাণী তবলার তেহাই তবলার বই pdf তবলার বিভিন্ন তাল,তবলার বোল তবলার বোল বাণী তবলার স্বরলিপি তবলার তেহাই তবলার তাল সমূহ তবলার সুর ডুবি তবলা তবলা শিক্ষা ,তবলার তাল, সমূহ তবলার স্বরলিপি, তবলার বোল বাণী তবলার তেহাই তবলার সুর ডুবি ,তবলা তবলার রেলা তবলা শিক্ষা ,তবলার বোল বাণী তবলা শিক্ষা তবলার দাম তবলার বই pdf তবলার তেহাই তবলার বিভিন্ন অংশের নাম তবলার তাল সমূহ তবলার রেলা৩