যদিও ফর্সা মানেই সুন্দর তা নয় তবুও আমরা চাই ত্বকটা একটু ফর্সা আর উজ্জ্বল হোক। মনে মনে সবারই এই ইচ্ছাটা থাকে। তাই সবাই অনেক প্যাক-ক্রিম ট্রাই করি ত্বক ফর্সা আর উজ্জ্বল করার জন্য। তবে যুগ যুগ ধরে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক উজ্জ্বল করার এই প্রচেষ্টা অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। আজ তেমনি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক ফর্সা করার উপায় নিয়ে লিখব।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক ফর্সা করার উপায়
(১) গুঁড়া দুধ ও লেবুর রসের হোয়াইটেনিং ফেইস প্যাক
একটি পাত্রে ১ চা চামচ গুঁড়া দুধ, ২ চা চামচ লেবুর রস আর ১/২ চা চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার পুরো মুখে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক পরিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে আগের তুলনায় অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সব ধরনের ত্বকেই এই প্যাক ব্যবহার করা যাবে। লেবুতে থাকা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান মধু আর দুধের সাথে মিশে ত্বক ফর্সা করে তুলতে সাহায্য করে। প্যাকটি তৈরি করে তেমন কোন বাড়তি ঝামেলাও নেই আর উপাদানগুলো প্রত্যেকের রান্নাঘরেই কমবেশি থাকে। আরেকটি কথা, নিয়মিত এই প্যাক লাগালে ত্বকে ব্রণের সমস্যাও দূর হবে।
(২) টক দই আর ওট মিলের স্কিন হোয়াইটেনিং মাস্ক
সারারাত ১ টেবিল চামচ ওট মিল ভিজিয়ে রেখে সকালে এটি পেস্ট করে এর সাথে ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এটি নিশ্চিতভাবে ত্বক ফর্সা করে। নিয়মিত ব্যবহারে অবশ্যই ভাল ফল পাবেন। ড্রাই টু নরমাল ত্বকের জন্য এই প্যাক বেশ উপকারী।
(৩) আলুর খোসার স্কিন হোয়াইটেনিং ফেইস প্যাক
লেবুর রসের মত আলুর খোসায় ব্লিচিং উপাদান আছে । আলু খোসার পেস্ট নিয়মিত ত্বকে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল আর ফ্রেশ হবে। সব ধরনের ত্বকেই এই প্যাক ব্যবহার করা যাবে।
(৪) হলুদ আর টমেটোর ফেইস প্যাক
উজ্জ্বল ত্বক পেতে এক চিমটি হলুদ, ১ চা চামচ টমেটো বা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে মুখের ত্বকে লাগান নিয়মিত। অবশ্যই ত্বক ফর্সা হবে। আমরা কমবেশি সবাই জানি টমেটো ত্বকের কাল দাগ দূর করতে কতোটা কার্যকরী। টমেটোর ব্লিচিং উপাদান আর হলুদের ভেষজ উপাদান ত্বক ফর্সা করতে একসাথে কাজ করে। স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত এবং শুষ্ক ত্বকে এই ফেইস প্যাকটি ব্যবহার করা যাবে।
(৫) আমন্ড ফেইস প্যাক
আপনি ৪-৫ টি আমন্ড সারারাত ভিজিয়ে রেখে এটি গুঁড়া করে পেস্ট তৈরি করে এর সাথে বাটার মিল্ক বা মালাই মিশিয়ে এই প্যাক ত্বকে লাগান। ১০-১২ মিনিট এই প্যাক ত্বকে রাখুন। এরপর কিছুক্ষণ স্ক্রাব করে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন প্যাকটি ত্বকে উজ্জ্বলতা এনে দিতে দারুণভাবে কাজ করেছে। এই প্যাক আপনার ত্বক নরম করবে, ত্বকের মৃত কোষ দূর করবে আর ত্বক হবে উজ্জ্বল। তবে আপনি যদি মালাই ব্যবহার করতে না চান তাহলে মধু বা টক দইও ব্যবহার করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ উপকারী এটি।
(৬) বেসনের ফেইস প্যাক
বেসন সব সময় আমাদের ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে ত্বককে তরুণ রাখতে সাহায্য করে। বেসনের সাথে বাটার মিল্ক মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান আর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকে এই ফেইস প্যাক ব্যবহার করা যাবে না।
(৭) পুদিনা পাতার ফেইস প্যাক
পুদিনা পাতায় বিদ্যমান অ্যাসট্রিজেন্ট ত্বকে পুষ্টি যোগানোর সাথে সাথে ত্বকে উজ্জ্বল করে তুলে। ১৫ থেকে ২০টি পুদিনা পাতা পেস্ট করে এটি মুখে লাগান এবং পুরো মুখে পেস্টটি লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে টান টান করবে আর ত্বকের ছোট ছোট পোর ঢেকে দেবে।পুদিনা পাতায় অ্যালার্জি থেকে থাকলে এই প্যাকটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
(৮) কলার ফেইস প্যাক
একটি পাত্রে পরিমান মতো কলা, ১ চা চামচ মধু আর ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে নিয়মিত ত্বকে লাগান। এই প্যাকটি সান ট্যান দূর করে ত্বক ফর্সা করে তুলবে। সব ধরনের ত্বকের সাথে মানানসই এই ফেইস প্যাক।
(৯) চন্দনের ফেইস প্যাক
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তবে চন্দনের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। আপনার ত্বকে যতটুকু পরিমানে লাগে ততটুকু নিবেন। আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই ফর্সা হবে এতে। এই প্যাক আপনার ত্বক শুধু উজ্জ্বলই করবে না আপনাকে দেখতেও অনেক ফ্রেশ লাগবে।
ত্বকের কালো দাগ এবং বিভিন্ন ধরনের দাগের জন্য আমাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান হয়ে পড়ে। কাল দাগ দূর করতে বাজারের বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করে নিজের অজান্তেই ত্বকের ক্ষতি করছি।তাই অনেকেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন রূপচর্চায় কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসেই কালো দাগ দূর করে নিজের ত্বক কে করে তুলুন সম্পূর্ণ উজ্জ্বল । ত্বক ফর্সাকারী তেমনই কিছু অত্যন্ত কার্যকরী উপায় নিয়ে আমাদের এই আলোচনাটি সাজিয়েছি। তাহলে চলুন বন্ধুরা দেখে নেয়া যাক কালো দাগ দূর করে ত্বককে অতিমাত্রায় উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী কিছু উপায়।
ত্বকের কালো দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করার উপায় সমূহঃ
দাগ মুক্ত ফর্সা উজ্জ্বল ত্বকের জন্য আমাদের প্রথমেই অত্যন্ত কার্যকরী কিছু প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন উপাদানের মিশ্রণে ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে । নিম্নে ত্বক কে দাগ মুক্ত ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে অত্যন্ত কার্যকরী দুটি ফেসপ্যাক এবং তার ব্যবহার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
আলুর ফেসপ্যাকঃ
উপকরণসমূহঃ
দুটো চামড়া ছিলানো বড় আলোর পেস্ট।
1 চা চামচ চালের গুঁড়া।
1 চা চামচ মধু।
এক চা চামচ শশার রস।
আধা চা-চামচ কাঁচা হলুদের গুড়া।
পরিমান মত কাঁচা তরল দুধ।
সবগুলি উপকরণ একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তাহলেই আলুর ফেসপ্যাক ত্বকে ব্যবহার উপযোগী হবে।
আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক, ফসফরাস, ভিটামিনস ও মিনারেলস যা আমাদের ত্বককে গভীর থেকে উজ্জ্বল ও ফর্সা করে তুলে।
ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ ব্রণের দাগ বলিরেখা ব্ল্যাকহেডস সানবার্ন দূর করে।
ত্বকের ব্লাড সেলে শক্তি যোগায় এবং ত্বক কে সতেজ ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
চন্দন পাউডার এর ফেসপ্যাকঃ
উপকরণ সমূহঃ
2 চা চামচ চন্দন পাউডার।
2 চা চামচ শশার রস।
একটি অর্ধেক পাকা টমেটো পেস্ট।
1 চা চামচ মধু।
1 চা-চামচ নিমপাতার পেস্ট।
একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
সবগুলি উপকরণ একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন।
চন্দন পাউডার এর এই মিশ্রণটি আমাদের গভীর থেকে অতিমাত্রায় উজ্জ্বল ও ফর্সা করে তুলবে।
ত্বকের পিএইচ লেভেল বাড়িয়ে তুলবে।
অতিরিক্ত শুষ্ক এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করবে।
ব্রণ ও ব্রনের দাগ, কালো ছোপ ছোপ দাগ, বলিরেখা, রোদে পোড়া দাগ দূর করবে।
ত্বকের মৃত কোষ সমূহ দূর করে বিদ্যমান কোষের শক্তি যোগাবে।
কালো দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে ফেসপ্যাক সমূহের ব্যবহারঃ
ফেস প্যাক সমূহ ত্বকে ব্যবহারের জন্য দুটি ধারাবাহিক ধাপ অতিক্রম করতে হবে
প্রথম ধাপঃ
প্রথম থাকতে হচ্ছে আপনার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়া বা ক্লিনজিং।
বিভিন্ন উপায়ে আপনি আপনার ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন যেমনঃ
ত্বকের জন্য উপযোগী যেকোনো ক্লিনজার ক্রিম অথবা ফেসওয়াশ ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন।
একটি লেবু স্লাইস করে কেটে নিয়ে তাতে আধা চা চামচ মধু লাগিয়ে ঘষে ঘষে মুখ দিয়ে দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন।
গোলাপজল অথবা কাঁচা তরল দুধ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপঃ
ত্বকে ফেসপ্যাক ব্যবহারের দ্বিতীয় ধাপটি হচ্ছে মুখে ফেসপ্যাক এপ্লাই করা।
পরিষ্কার তুলার অথবা মুখের ব্রাশের সাহায্যে সম্পূর্ণ ফেসপ্যাকের মিশ্রণটি স্ক্রাব করে মুখে লাগিয়ে নিন।
5 থেকে 7 মিনিট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করুন।
15 থেকে 20 মিনিট ফেসপ্যাক এর মিশ্রন শুকানোর সময় দিন।
তারপর শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম জলে তুলা ভিজিয়ে ঘষে ঘষে মিশ্রন তুলে নিন।
সবশেষে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
উপরে উল্লেখিত কোন উপকরণ ব্যবহার আপনার ত্বকের জন্য এলার্জিক হলে তা ব্যবহার করবেন না।
ফেসপ্যাক ব্যবহারের পর অবশ্যই আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে নিবেন।
ফেস প্যাক লাগিয়ে বা ব্যবহারের পর রোদে, গরম স্থানে এবং ধুলাবালি যুক্ত স্থানে যাবেন না।
ফেসপ্যাক তোকে মেসেজ করার সময় অতিরিক্ত চাপ দিবেন না।
ফেসপ্যাক দীর্ঘসময় ফ্রিজে রেখে সংরক্ষন করে ব্যবহার করবেন না।
স্থায়ীভাবে ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার ফেসপ্যাক গুলো ব্যবহার করুন।
ফেসপ্যাকে ব্যবহৃত সমস্ত উপকরণ ভেষজ উদ্ভিদের দোকান এবং প্রসাধনীর দোকানে পাওয়া যাবে।
ত্বকের কালো দাগ সহ সবধরনের কালো দাগ যেমন ব্রণ, মেছতা, কালো ছোপ ছোপ দাগ, বলিরেখা, সানবার্ন, ব্ল্যাকহেডস দূর করতে নিয়মিত ফেসপ্যাক সমূহ এপ্লাই করুন। ঘরে বসেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেদের ত্বকের যত্ন নিন।
ধন্যবাদ।