অ্যাডিশনাল এসপি পদমর্যাদা এবং কনস্টেবল পদমর্যাদার দুই পুলিশ সদস্যের ‘আত্মহত্যার’ ঘটনা বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। প্রশ্ন তৈরি হয়, কেন কাছাকাছি সময়ে দুই পুলিশ সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। আসলেই কী তাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক ছিল? নাকি ঘটনা দুটি কাকতালীয়। অ্যাডিশনাল এসপি লাবণি আক্তারের একসময়ের বডি গার্ড ছিল কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাডিশনাল এসপি লাবণি আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। এক বছরের বেশি সময় ধরে লাবণির বডিগার্ড হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তারা একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা। তাদের এই সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি লাবণির স্বামী তারেক আব্দুল্লাহ আঁচ করতে পারেন। এ নিয়ে অসুস্থ স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যও হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিসিএস ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা অ্যাডিশনাল এসপি লাবণি আক্তারের বডিগার্ড হিসেবে বছর খানেক কাজ করেন ২০১৯ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেওয়া মাহমুদুল হাসান। দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি করা হয় কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানকে। তাদের দুই জনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার পরও বদলি ঠেকাতে পারেনি লাবণি আক্তার। এ নিয়ে দুজনের মধ্যেই হতাশা কাজ করছিল। ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টাও চালিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র বলছে, মাগুরা পুলিশ লাইন্সে দায়িত্বরত ছিলেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। কিন্তু সেখানে তার ডিউটি পছন্দ হয়নি। তিনি অন্য জায়গায় ডিউটি করতে চেয়েছিল। এ কারণে ব্যবস্থা নিতে লাবণিকে তাগিদ দেয় মাহমুদুল। একদিকে ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু করতে না পারার কষ্ট, অন্যদিকে অসুস্থ স্বামী, এছাড়া ২ মেয়ের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে না পারা নিয়ে তীব্র মনোকষ্টে পড়ে যান লাবণি। ধারণা করা হচ্ছে—এই ক্ষোভ ও হতাশা থেকেই ‘আত্মহত্যার’ পথ বেছে নেন লাবণি। সেই খবর পাওয়ার পর প্রেমিক কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানও নিজের অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে ‘আত্মহত্যার’ পথ বেছে নেন।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের আত্মহত্যার ঘটনায় কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা তার তদন্ত চলছে। এর আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ফরেনসিক করানো হবে। তদন্ত ছাড়া তাদের দুজনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে না।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন লাবণি আক্তার। তিন দিন আগে ছুটি নিয়ে তিনি মাগুরায় তার নানার বাড়িতে আসেন। সেখানেই বুধবার রাতে সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। এদিকে, নাইট ডিউটি শেষে বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা পুলিশ লাইন্স ব্যারাকে নিজের অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। মাগুরা জেলা পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে।
দুই কন্যাসন্তানের জননী পুলিশ কর্মকর্তা লাবণি আক্তারের স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক তারেক আব্দুল্লাহ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লাবণি আক্তারের বাবার দাবি, স্বামীর সঙ্গে কলহের জেরে লাবণি আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলছেন তার বাবা।