দেশে কি সবাই শাড়ী কামিজ পরবে? এ জন্য আমাকে মারবে?-নরসিংদীতে আক্রান্ত তরুণীর প্রশ্ন স্টেশন মাষ্টারকে

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাছেই নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার ভোরে পোশাকের কারণে হেনস্থা ও মারধরের শিকার হয়েছেন এক তরুণী।

 

জিন্স প্যান্ট ও টপস পরিহিত ওই তরুণী এক পর্যায়ে দৌঁড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নিয়ে তাকে বাঁচানোর অনুরোধ করেন।

জানা যাচ্ছে, সেখানে এক নারী প্রথমে ওই তরুণীকে আঘাত করে ও পরে আরও কয়েকজন ব্যক্তি তার ওপর হামলার চেষ্টা করে।

 

তবে ঘটনাটি নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ, নরসিংদী রেল স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার এবং নরসিংদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

 

বাংলাদেশে মাঝে-মধ্যেই পোশাকের কারণে নারীদের বিব্রত হবার ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসে। এমনকি নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীকে উল্টো তার পোশাকের জন্য দায়ী করার প্রবণতাও দেখা যায়।

ঢাকায় আসছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শিল্পা শেঠি

সম্প্রতি কপালে টিপ পরা নিয়ে এক পুলিশ সদস্য একজন শিক্ষিকাকে হেনস্থা করার অভিযোগ নিয়েও তুমুল শোরগোল হয়েছিলো।

নরসিংদী রেল স্টেশনে যা ঘটেছে

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ ঘটনার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে জিন্স ও টপস পরিহিত এক তরুণী কেন এ ধরণের পোশাক পরেছেন সেটি তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকে জিজ্ঞাসা করছেন চশমা পরিহিত এক ব্যক্তি।

 

এসময় আরও লোকজন তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে যান এবং প্রশ্নকর্তা ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটি হয় ওই তরুণদের। সে সময় তরুণী তাদের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

 

এই বাদানুবাদের এক পর্যায়ে লাল টি শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে পেছন থেকে এগিয়ে গিয়ে ওই তরুণীকে আঘাত করতে দেখা যায় এবং আক্রান্ত তরুণী চিৎকার দিয়ে দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে যান।

 

সে সময় স্টেশন মাষ্টারের দায়িত্বে থাকা নাইয়ুম মিয়া বিবিসি বাংলাকে বলছেন যে বাইরে হৈচৈ ও আওয়াজ শুনে তিনি তার কক্ষের আসন ছেড়ে দরজার দিকে এগুচ্ছিলেন।

 

“আমি ডিউটিতেই ছিলাম। হৈ চৈ শুনে বের হতে হতে দেখি একটা মেয়ে দৌঁড়ায়া আসে আর বাঁচান বাঁচান বলে আমার রুমে ঢোকে। পরে ছেলে দুটোও ঢুকলো। আমি গেট আটকে গিয়ে সাথে সাথে পুলিশকে ইনফর্ম করলাম যেন তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে,” বলছিলেন তিনি।

 

এরপর স্টেশন মাষ্টার আক্রান্ত তরুণী ও তার সাথে থাকা দুই তরুণীকে কক্ষে বসানোর ব্যবস্থা করেন।

 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, “এসময় মেয়েটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে কি হয়েছে। মেয়েটি শুধু আমাকে বলে- আচ্ছা বলেনতো এদেশে কি সবাইকে শাড়ী ও সালোয়ার কামিজ পরতে হবে? এ জন্য আমাকে মারবে? – এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসে।”

 

জানা গেছে, পুলিশ এসে প্রথমে বাইরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ও পরে তরুণী ও তার সহযোগীদের ঢাকাগামী ট্রেনে তুলে দেয়।

রেলওয়ে পুলিশ যা বলছে

সেখানকার রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইমায়দুল জাহেদি বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা গিয়ে আক্রান্ত তরুণীকে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে পেয়েছেন কিন্তু তারা কোন অভিযোগ করেননি।

তবে তারা জানতে পেরেছেন যে প্লাটফরমে অপেক্ষার সময় আরেকজন নারী ওই তরুণীকে এ ধরণের পোশাক পরেছে কেন জিজ্ঞেস করেন।

 

মেয়েটি এবং তাদের সাথে থাকা তরুণরা এর প্রতিবাদ করেন এবং ওই নারীকে বলেন যে ‘আপনার পোশাক নিয়ে তো আমরা কোন কিছু জিজ্ঞেস করিনি।”

 

এ নিয়ে কথা কাটাকাটির মধ্যেই শার্ট ও চশমা পরিহিত এক ব্যক্তি একই প্রশ্ন করতে থাকেন ও পরে আরেকজন এসে আঘাত করে।

 

মি. জাহেদি বলেন, “মেয়েটা শর্ট টপস আর জিন্স পরিহিত ছিলো। এ নিয়ে এক নারী প্রথম চার্জ করেন। এ নিয়ে উত্তপ্ত কথা বিনিময়। ছেলে দুটো প্রতিবাদ করে। তখনি অন্য কয়েকজন এসে চার্জ করলে তরুণীটি দৌড়ে স্টেশন মাষ্টারের কক্ষে আশ্রয় নেয়।”

 

তবে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন অভিযোগ না আসায় এ নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদিও তরুণীকে হেনস্থা ও মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

 

কহিনুর আক্তার নামে একজন লিখেছেন, “কেন? নরসিংদীতে রেল স্টেশনে শর্ট ড্রেস পরায় তরুণীকে হেনস্থা। এমন বর্বর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

 

এম. এস. রাসেল লিখেছেন, “তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও সঠিক তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।”

 

সাদিয়া আহমেদ লিখেছেন, “একদল হিজাব-বোরকা পরার স্বাধীনতা চান। কিন্তু তারাই আবার জিন্স টপসের স্বাধীনতা মানতে চান না। আবার কেউ হিজাবকে গ্রহণ করতে পারেন না। পোশাক যার যার ব্যক্তিগত চয়েস – এ শিক্ষাটা কবে আসবে জানি না।”

কেউ কেউ অবশ্য আবার ওই নারীকেই এমন পোশাক পড়েছে কেন তা নিয়ে আক্রমণ করেই মন্তব্য লিখেছেন ফেসবুকে।

তথ্যসূত্র:বিবিসি

One thought on “দেশে কি সবাই শাড়ী কামিজ পরবে? এ জন্য আমাকে মারবে?-নরসিংদীতে আক্রান্ত তরুণীর প্রশ্ন স্টেশন মাষ্টারকে

  1. এমন বর্বর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

Leave a Reply