ধর্মান্তরিত করে বিয়ের পর বিষক্রিয়া,ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যজাল!

রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম আবর্তনের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী অংকন বিশ্বাসের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সুত্রাপুর থানাধীন স্বামীবাগের ৬৯ নং বাসায় পিতা তপন কুমার বিশ্বাস ও মাতা শিপ্তী বিশ্বাসের সাথে নিজ বাসায় থাকত অংকন বিশ্বাস। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত সুত্র থেকে জানা যায়, অংকন বিশ্বাস তার ব্যাচের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন।

অনার্সে ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন৷ মৃত শিক্ষার্থীর বন্ধু আব্দুল মুকিত চৌধুরী সানী বলেন,”অঙ্কন অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী, তার থেকে একাডেমিক হেল্প নেয়নি এরকম সহপাঠী, জুনিয়র এমনকি ইমপ্রুভমেন্ট এক্সাম দেওয়া সিনিয়রের সংখ্যাও খুব কম। তার একটা চমৎকার গুণ সে কারুকে সাহায্যের ক্ষেত্রে নিরাশ করতো না। চমৎকার বিতর্ক করতো, নাচ শিখতো এবং শেখাতো, গান করতো- বলতে গেলে সর্বগুণে গুণান্বিত ছিল অঙ্কন।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী থেকে বিসিএস সহ বিভিন্ন চাকরির পরিক্ষার বিগত বছরের সকল প্রশ্নোত্তর একসাথে

তিনি আরো বলেন,”আচমকা কার্ডিয়াক ফেইলিউর, ব্রেইন স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর জনিত কারণে অঙ্কনকে গত ২৪ এ এপ্রিল দুপুর সোয়া বারোটা নাগাদ আজগর আলি হাসপাতাল এবং পরে ৩০ এপ্রিল পিজি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সেখানে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় অঙ্কন বিশ্বাস গত ৮ মে ২০২২, রাত ১১:৩০ ঘটিকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।”

জানা যায়- গেল রমজান মাস এবং তারও কয়েকমাস আগে থেকে অঙ্কন বিশ্বাস বেশ মানসিক অশান্তি, বিষণ্ণতা, ভীতিতে ভুগছিল যা তার কাছের বন্ধুরা জানতো। বন্ধুরা জানায় অংকনের এই হতাশার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি শাকিল আহমেদের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানায় এবং অভিযুক্ত শাকিল জোরপূর্বক তাকে কোর্টে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করেন।

মা দিবসের শুভেচ্ছা বাণী Happy Mother’s Day 2022| মা দিবসের স্ট্যাটাস, উক্তি, কিছু কথা ও ছবি

শাকিল পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি থানার সুটিয়াকাঠী গ্রামের হারুনুর রশিদ ও সাহিদা রশিদের ছেলে। তারা আরো জানায়,অভিযুক্ত শাকিল অংকনকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতো বলে অংকন তাদেরকে জানিয়েছে। এমনকি অংকনের কোথাও যাওয়া বা কারো সাথে মেশার ক্ষেত্রে শাকিলের অনুমতি নিতে হয় বলে তাদের বান্ধবী তাদের সাথে আলোচনা করেছে৷

অংকনের বন্ধু আব্দুল মুকিত চৌধুরী সানী বলেন,”এমতাবস্থায় অংকন শাকিলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যপারে উদ্যোগী হয়। শাকিল কোর্টের কাগজপত্র নিয়ে অংকনকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। অংকন কোনমতেই রাজি হয়না, কিন্তু বারং বার নানা উপায়ে অংকনকে মানসিক ভাবে ম্যানিপুলেট করে এবং ব্ল্যাকমেইল করে কাবিনে সাইন করানো হয়। ব্যাপারটা দুইজনের সম্মতিতে হলে অঙ্কনের সাইড এর কেউ কিংবা আমরা থাকতাম, অথচ যারা ছিল তারা শাকিলের পরিচিত। শাকিল এটা ভালো করেই জানতো যে, অঙ্কনের পরিবার বিষয়টা এতো সহজে নিতে পারবেনা।” সানী বলেন,”অঙ্কন বরাবরই আমাদের বলে এসেছে তার পরিবার খুব বেশি আন্ডারস্ট্যান্ডিং না, তাকে বুঝতে পারেনাই কখনও, এবং বাবা অনেক স্ট্রিক্ট এবং কথা না শুনলে রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেন। তার মধ্যে ভিন্নধর্মের মানুষের সাথে সম্পর্ক এটা তারা কখনওই মেনে নেবে না।”

সানী বলেন,”এভাবে বারবার টর্চারের শিকার হয়ে অঙ্কন যখন যোগাযোগ বন্ধ করে দেবার চেষ্টা করে তখন শাকিল নানানভাবে বাসায় চলে আসবার, সবাইকে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানিয়ে দেবার থ্রেট দিতে থাকে। অঙ্কন আমার সাথে বিষয়টি শেয়ার করার পর আমি বুঝতে পারি যে বিষয়টা খুবই গুরুতর এবং এর একটা সুরাহা হওয়া জরুরি।” সানী জানান,শাকিলের অব্যাহত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অংকন শাকিলের বাসায় যাবে বলে মনস্থির করে এবং ঘটনার আগের দিন রাতে এ বিষয়ে সানী ও তার বান্ধবী সুইটিকে হোয়াটস এপে ভয়েজ মেসেজ ও টেক্সট মেসেজ দেন৷ ভয়েজ ও টেক্সট মেসেজে অংকন বলেন,”আমি তোর সাথে কথা বলবো শাকিলের সাথে দেখা করার পর।

সে আমার ফেইসবুক ডিলেট করায়, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এপসগুলোও ডিলেট করায়। এই monster এর সাথে দেখা করেই তোদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করবো।” সানী জানান, অঙ্কনের সাথে তাদের সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল দেখা হয়েছিলো, বন্ধুরা সবাই ইফতার করেছিল একসাথে।অঙ্কন সেদিন রাতে সানীকে জানিয়েছিল যে পরদিন অর্থ্যাৎ ২৪শে এপ্রিল সে সানীর সাথে দেখা করবে।

সানী বলেন,”পরদিন আমাকে আর কল দেয় নি। দুপুর ১:৩০ টায় হাসপাতাল থেকে শাকিলের বন্ধুর মাধ্যমে আমাকে কল করে অংকনের বিষয়টা জানানো হয়। আমি তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে দৌড়ে গিয়ে অংকন কে অচেতন অবস্থায় পাই আজগর আলী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে। সেখানে শাকিলকেও একটি বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখি। এবং শাকিল আমাকে বলছিলো যে, “অংকন বাসা থেকেই কিছু খেয়ে এসেছে। আমার বাসায় আসা মাত্রই নিস্তেজ হয়ে যায় এবং আমি তাকে লেবু শরবত খাওয়াই। এবং মাথায় পানি দেই। তারপর অংকন নিজেই বলেছে যে, আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। আমি চোখে কিছু দেখছিনা।

” শাকিল অংকনকে হাসপাতালের জন্য বাসা থেকে তার বন্ধু সহ বের করে যাত্রাবাড়ীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার ভালো কোথাও নিয়ে যেতে বলে। তারপর ওখান থেকেই এম্বুলেন্সে করে আজগর আলী তে নিয়ে আসে। সেখানের ডাক্তাররা শাকিলের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে অংকনের ভাই এবং বন্ধু দাবী করে। পরবর্তীতে নিজেকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে ভর্তী করানো হয়। তবে ডাক্তাররা অংকনের পরিবারের কাউকে চাচ্ছিলো। কিন্তু শাকিল কাউকে কল করেনি। পরে শাকিলের বন্ধু আমাকে কল দিয়ে জানায় বিষয়টি। আমার বাসা কাছেই বিধায় সাথে সাথেই সেখানে উপস্থিত হই। তখন হাসপাতালে অংকনের ১ ঘন্টার ও বেশি সময় অতিবাহিত হয় এবং আইসিইউ তে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের কারো সম্মতি ছাড়া তাকে আইসিউইতে নিতে চাচ্ছিলো না।

আমি অংকনের ছোট ভাইকে এবং পর্যায়ক্রমে তার বাবা কে জানাই। উনারা হাসপাতালে আসেন এবং আইসিইউতে চিকিৎসা শুরু হয়। তারপর শাকিলকে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলা হয় এবং পরবর্তীতে শাকিল হাসপাতালে আর থাকেনি। তবে বিভিন্নভাবে হাসপাতালের খবর নিতো। এরপর অংকনের পরিবারের সবাই হাসপাতালে থাকেন এবং সাথে ওর স্কুল কলেজের বান্ধবিরা থাকার অনুমতি পায়। আমি এবং আমার বন্ধুরা তখন ওর বান্ধবিদের মাধ্যমেই খবর নিতাম এবং ওর জন্য পরিবারের অনুমতিক্রমে ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করি।” বিষক্রিয়ার বিষয়টি গোপন রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সানী বলেন,”আমার ধারনা সবাই কম বেশি আন্দাজ করছিলো সামথিং ইজ আনইউজুয়াল। বাট ওকে বাঁচানো, ফান্ড রেইজ করা এসব ছিল তখন প্রথম প্রায়োরিটি। হয়ত এজন্য কেউ মুখ খোলেনি। আর ফ্যামিলি থেকে যখন কড়া নির্দেশ আসে চুপ থাকার,তখন বাইরে থেকে কথা বলা কঠিন।আমাদের প্রায়োরিটি অঙ্কনকে বাঁচানো ছিল।

অংকন-বিশ্বাস- অংকন-বিশ্বাস-

আর তখনও অঙ্কন মারা যায় নি। আমরাও সেসব বিষয় বিবেচনায় রেখে উনাদের অনুরধে এবং সম্মানার্থে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাই। বারবার বলছি সেসময় নিজেদের বান্ধবীকে বাঁচানো, তার বিনা চিকিৎসায় যেন কোনও অঘটন না ঘটে সেটা সবচেয়ে টপ প্রায়োরিটি ছিল আমাদের।” এদিকে অভিযুক্ত শাকিলকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন শাকিলের সাথে জবি ডিবেটিং সোসাইটিতে কাজ করা এটিএন নিউজের সংবাদ উপস্থাপক মাশায়েখ শশী৷ তিনি বলেন,”আরো ৮ বছর আগে থেকে জানি শাকিল কত বড় হারামজাদা৷ যারাই ইনিয়ে বিনিয়ে ভিক্টিম ব্লেমিং করতে আসবে এদের চাইতে বড় শু**রের বাচ্চা আর হয় না।

” শাকিলদের কারণে ডিবেটিং সোসাইটি ছেড়েছেন বলে জানান তিনি। শাকিল আহমেদ ও অংকন বিশ্বাসের কোর্ট ম্যারেজের হলফনামা বাহান্ন নিউজের কাছে এসে পৌছেছে। এ বিষয়ে হলফনামায় স্বাক্ষরিত ঢাকা জজ কোর্টের উকিল মোঃ মিরাজ আকনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,”প্রথমে মেয়েটি মুসলমান হন,তারপর তারা বিয়ে করেন। বিয়েতে ৩ জন স্বাক্ষী ছিল।” ধর্মান্তরিত হয়ে থাকলে দাফন মুসলিম রীতিতে না করে হিন্দু রীতিতে কেন দাহ করা হল এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম হিমু ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,”শাকিল ভাই এবং কোর্ট ম্যারেজের সময় উপস্থিত ৩ জন স্বাক্ষী ছাড়া এই দুনিয়ার কেউ জানতো না যে অংকন বিশ্বাস ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে।কাছের মানুষগুলোর মধ্যে একমাত্র শাকিল ভাই তো জানতো তার বৌ মুসলমান।

অংকন-বিশ্বাস-

যখন সে জানতে পারলো তার বৌকে শ্বশানে পোড়ানো হবে তখন সে মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফন দিতে বললো না ক্যান?” এই পোস্টের মন্তব্যে জবি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম মাহিম লিখেন,”উকিল ছিলেন তার বন্ধু, সাক্ষী উকিল সাহেবের বউ,আরেকজন তার বন্ধু, আর একটা তার চামচা সোসাইটির ছোট ভাই।

সব তো নিজের লোক অংকনের লোক কই?” এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল জানান,”বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ওসি মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, “এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনও অভিযোগ আসে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে অভিযুক্ত শাকিলের সাথে বারংবার যোগাযোগ করলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায় এবং বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।

Source: bahannonews

Leave a Reply