রাজারবাগ পীর ও তার অনুসারীরা মহান স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে গোলাপগঞ্জ করে তাদের পত্রিকা দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মাধ্যমে প্রচার করছে। এছাড়াও রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে নূরানীগঞ্জ, উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও জেলার নাম পরিবর্তন করে নূরগাঁও ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম পরিবর্তন করে আমানবাড়িয়া করার প্রস্তাব দিয়ে তারা নিজেদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব সারাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে তদন্ত শেষে রাজারবাগ পীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রাজারবাগ পীর ও অনুসারীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্তে নামে সিটিটিসির কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তদন্ত শেষে হাইকোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে রাজারবাগ পীর, বদলাতে চায় ৪ জেলার নাম
রাজারবাগ পীর ও তার অনুসারীরা মহান স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে গোলাপগঞ্জ করে তাদের পত্রিকা দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মাধ্যমে প্রচার করছে। এছাড়াও রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে নূরানীগঞ্জ, উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও জেলার নাম পরিবর্তন করে নূরগাঁও ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম পরিবর্তন করে আমানবাড়িয়া করার প্রস্তাব দিয়ে তারা নিজেদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব সারাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে তদন্ত শেষে রাজারবাগ পীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রাজারবাগ পীর ও অনুসারীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্তে নামে সিটিটিসির কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তদন্ত শেষে হাইকোর্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
রাজারবাগ পীর ও তার অনুসারীদের বিষয়ে তদন্ত করে মামলার ধার্য দিন রোববার (৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পরে ওই দরবারের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিল করার জন্যে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত।
গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ‘গোলাপগঞ্জ’
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজারবাগ পীর ও তার অনুসারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের নাম বদলে গোলাপগঞ্জ করে তাদের আলোচ্য পত্রিকার (দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত) মাধ্যমে প্রচার করছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলার নাম পাল্টে নূরানীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও জেলার নাম পরিবর্তন করে নূরগাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাম পরিবর্তন করে আমানবাড়িয়া— এমন আরও বেশ কয়েকটি জেলা ও স্থানের নাম পরিবর্তন করে তারা নিজেদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নিজস্ব দুটি পত্রিকায় ছড়ানো হয় ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ
‘পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ। মানুষের এই ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এই পীর ও তার দরবার শরীফ সামাজিকভাবে কুসংস্কার, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পীর দিল্লুর রহমানের দরবার থেকে প্রকাশিত আলোচিত দুটি পত্রিকা ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসান’-এর মাধ্যমে গুটিকয়েক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নানাভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। তাদের এসব কার্যক্রম সরাসরি সরকারি নীতিমালা, দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবিরোধী। দেশের বিভিন্ন থানায় রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলা ও মামলাগুলোর তদন্তের ফলাফলে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।’
সিটিটিসির প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, রাজারবাগ দরবারের নিয়ন্ত্রণাধীন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা, তাদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত বিভিন্ন বই, এর আগে তাদের কার্যক্রম ও বিভিন্ন জেলায় তাদের অনুসারীদের কার্যক্রমের কারণে রুজুকৃত মামলা ও মামলাগুলোর তদন্তের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা ইসলাম ধর্মের নামে ও অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উসকে দিচ্ছে। এ দেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করছে ও কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর, তার সহযোগী ও অনুসারীদের কার্যক্রম জঙ্গিদের কার্যক্রমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বিভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন ধর্মের মানুষকে, তাদের ভাষায় মাল’উনদের হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব উল্লেখ করে ফতোয়া ও এক্ষেত্রে কতল করার আদেশ দিয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মানুষকে হত্যা করার ফতোয়ার অনুরূপ। এটি ইসলামের নামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মতো একই প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করার ও ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার কৌশল। তাদের এ ধরনের বক্তব্য মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করবে, অসহিষ্ণু করবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে।’
‘তাদের প্রচারণা ও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে মূলত তারা এদেশের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতন্ত্র বিরোধী একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠী তৈরি করতে চাচ্ছে। তাছাড়া তারা ছোঁয়াচে রোগবিরোধী ও বাল্যবিবাহের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে ধর্মভীরু ও সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।’
তাই সার্বিক পর্যালোচনায় সুস্পষ্টভাবে সিটিটিসির কাছে প্রতীয়মান হয় যে, ‘তারা এখনও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত না হলেও তাদের বিভিন্ন প্রকাশনা, বক্তব্য, মুরিদ ও অনুসারীদের প্রতি তাদের নির্দেশনার ফলে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের এসব বক্তব্য ও প্রচার-প্রচারণা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের ‘লোন উলফ’ হামলায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে।’
ওই প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকায় রাজারবাগ দরবার শরীফ নজরদারিতে রাখতে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমকে (সিটিটিসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হাইকোর্ট তার আদেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও কাউন্টার টেরোরিজমের ইউনিটির প্রতিবেদনের জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ বেশকিছু অভিযোগ ওঠায় রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমানসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর তদন্ত চলাকালে পীর ও তার অনুসারীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবেন বলেও আদেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুদককে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
মামলার অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির বলেন, এই মামলা করতে গিয়ে আমরা নিজেরাও অনেক হুমকির শিকার হয়েছি। রাজারবাগের পীর সিন্ডিকেট চলমান মামলায় প্রভাব বিস্তার করতেও নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনি কয়েক বছর কারাভোগ করেন। পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। কাঞ্চনের দাবি, তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা ভুয়া।
একরামুল হক কাঞ্চনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে দেশের ১৩ জেলায় ৪৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২০টি মামলায় এক হাজার ৪৬৫ দিন কারাভোগ করেন তিনি। ২০টি মামলার মধ্যে পাঁচ মামলার বাদী আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এর মধ্যে চারটি মামলা চলমান।
তবে একরামুলের বিরুদ্ধে আবুল বাশারের করা মামলাটি ২০১৫ সালে বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আপিল বিভাগে শুনানিতে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন কোনো পক্ষই দাখিল করেনি। আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়।
Source of jago news 24