নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবলকাঠামোর দশটি দুর্বল দিক

সদ্য প্রকাশিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও  এমপিও নীতিমালা– ২০২১-এর অনেকগুলো ভালো দিক রয়েছে। এ নীতিমালার জন্য শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।  সদ্য প্রকাশিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও  এমপিও নীতিমালা– ২০২১-এর অনেকগুলো ভালো দিক রয়েছে। এ নীতিমালার জন্য শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২জুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এম.পি ও নীতিমালা প্রকাশিত হওয়ার পরে শিক্ষকরা এর বিভিন্ন ধারা ও উপধারার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি ও দৈনিক শিক্ষায় মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনকে সংশোধনী দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তখন শিক্ষক ও কর্মচারীদের ১০টি সংগঠন নিয়ে শিক্ষক কর্মচারী সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কর্তাকর্তাদের নিয়ে সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। এতে নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুজন প্রতিনিধি ছিলেন। এমপিওভুক্তদের বিষয়াবলী নিয়ে তাদের ধারণা খুবই কম। ননএমপিওদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে নতুন নীতিমালায়।

এমপিও নীতিমালা ২০১০, সংশোধিত ২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২১ তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ সব নীতিমালার কিছু  ধারা সব সময় একই  রয়েগেছে। তবে তার বাস্তবায়ন নেই। এখন দেখা যায় ২০২৮ নীতিমালায় যা ছিল তার সামান্য শাব্দিক পরিবর্তন করে ২০২১ এর নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে।

জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর মোট ধারা ২৬টি। ২০১৮ এর নীতিমালায় মোট ধারা ছিল ২৫টি। ২০২১ এর নীতিমালা ৪৪ পৃষ্ঠার আর ২০১৮ এর নীতিমালা ২৮ পৃষ্ঠার। ২০১৮ ও ২০২১ এর নীতিমালায় ধারা ১, ২ ও ৩ হুবহু একই।২০১৮ নীতিমালায় ৪ ধারায় কোন উপধারা ছিল না। ২০২১ এর নীতিমালায় ধারা ৪ এ ২৭টি উপধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে প্রযোজনীয় কিছু শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যা পূর্বে ছিল না। এ ধারা যুক্ত করায় সকলপক্ষই উপকৃত হয়েছে।

১১.৭ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীগণ উচ্চতর স্কেল বা পদোন্নতি পেলে তাঁর মূল বেতন বর্তমানে তাঁর আহরিত বেতনের চেয়ে কোনো ক্রমে কম হবে না। এ বিষয়টি ব্যখ্যা করতে গিয়ে ১১.৭এর ক,খ,গও ঘ উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নয় এমন বিষয় ১১.৭(ঙ) ধারা যুক্ত করে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করা সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

কী আছে এ ১১.৭(ঙ) ধারায়?  শিক্ষক – কর্মচারীদের মূল বেতন /বোনাসের নির্ধারিত অংশ/উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ /বৈশাখী ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫/সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সাথে  অথবা সরকারের নির্দেশনার সাথে মিলে করতে হবে। এটা দেখে কেউ কেউ শতভাগ বোনাস প্রাপ্তির ঘোষণা হয়েছে বলে দিল। এটা দেখে যারা এরূপ ব্যাখ্যা দেয় তাদের জ্ঞানের পরিধি নিয়ে আমরা সন্দেহ পোষণ করি।  এমন অপব্যাখায় কর্মকর্তাসহ অভিভাবকরা হাসিঠাট্টা করছেন। কতিপয় শিক্ষকের বাংলা ভাষাজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজকে ক্ষুব্ধ করে তোলারও একটা অপচেষ্টা দেখি এমনসব অপব্যাখ্যার মধ্যে।

১১.৮ ও ১১.৯ এ সহকারি শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড বিষয় সুনির্দিষ্ট করেছেন। তারপর কেন ১১.১০ যুক্ত করা হল? ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালার ১১.৫ এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালার ১১.৫ হুবহু একই। এখানে শিক্ষক বলতে সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ,প্রভাষক, অধ্যক্ষ সব বুঝছে। এখন  নতুন নীতিমালায় ১১.৪ ও ১১.৫ দ্বারা আলাদাভাবে প্রভাষকদের সুনির্দিষ্ট করা হল।  ১১.৮ ও ১১.৯ দ্বারা সহকারী শিক্ষকদের সুনির্দিষ্ট করা হল। তাহলে বাদ পড়ল সহকারী প্রধান শিক্ষক  প্রধান শিক্ষক। সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণভাবে আলাদা পদ তাহলে তারা উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি থেকে বাদ যাবে কেন? তবে এখানে ১১.১০-এ কিন্তু শিক্ষক /প্রদর্শক /কর্মচারীদের কথা উল্লেখ আছে। এখন  আমার প্রশ্ন ১১.১০ ধারার শিক্ষক বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে? ওখানে শিক্ষকদের মধ্য যদি সহকারী প্রধান  শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক  থাকে তবে সমস্যা সমাধান হয়। আর যদি তা না হয় তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড বঞ্চিত করা হল। এটা তারা মেনে নেবেন?।

আর কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। যা কেন করা হয়েছে কাদের স্বার্থে করা হয়েছে তা সর্বসাধারণের বোধগম্য নয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকবৃন্দ পদোন্নতি পেয়ে  সিনিয়র শিক্ষক হবেন। বিএড স্কেলকে উচ্চতর গ্রেড  ধরা হয়নি এগুলো সবই ভালো দিক।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালায় সুন্দর একটি মূল্যায়ন ছক করা হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এম পি ও ভুক্ত হলে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার শর্তে প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।

আমার দৃষ্টিতে এ নীতিমালার দুর্বল দিকগুলো হলঃ

১.অবসরে যাওয়ার পরে শুধু প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা।
২.সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা।
৩. মাধ্যমিক বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হলে কর্মরত প্রধান শিক্ষকের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরেও একধাপ নিচের স্কেলে বেতন প্রদানের ঘোষণা দেওয়া।
৪. নবসৃষ্ট অফিস সহায়ক পদে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওর সুযোগ না থাকা।
৫. বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডারসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
৬. শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়ার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকা।
৭. বেসরকারি স্কুল /কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলির ব্যাবস্থা নীতিমালার কলে আটকে রাখা।
৮.  কোনো কোনো বিষয় একাধিকবার উল্লেখ করা।
৯. সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক /প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা।
১০. উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজের প্রভাষকদের মধ্যে বৈষম্যের দেয়াল তুলে দেওয়া।

লেখক :  দুলাল চন্দ্র চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক, যুগ্ম আহবায়ক বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।

 

Leave a Reply