নূপুর শর্মার পক্ষে ফেসবুক পোস্টের জের, নড়াইলে কলেজ অধ্যক্ষ এবং হিন্দু শিক্ষার্থীকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মোহাম্মদের ‘পাখাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে মেরাজ গমন’ এবং ‘শিশু আয়েশার সাথে বিয়ে’ নিয়ে মন্তব্য করে আলোচিত ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেত্রী নুপুর শর্মার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্টাটাস দেওয়ার হুজুগ তুলে নড়াইলে মীর্জাপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং একই কলেজের রাহুল নামের এক হিন্দু শিক্ষার্থীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মারধর এবং গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর তাঁদেরকে হয়রানীমূলক গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ১৮ জুন শনিবার বিকেলে নড়াইলের মীর্জাপুর ডিগ্রী কলেজে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়াইলে মীর্জাপুর ডিগ্রী কলেজের কলেজের শিক্ষার্থী রাহুল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রী নুপুর শর্মার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্টাটাস দেয়ার অভিযোগ তোলে স্থানীয় একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। এরপর রাহুল নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ইসলাম ধর্ম ও নবী মোহাম্মদকে অবমাননা করেছেন বলে গুজব ছড়ানো হয়। উগ্রপন্থিদের প্ররোচনায় স্থানীয় ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কলেজে প্রবেশ করে অধ্যক্ষকে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং শিক্ষার্থী রাহুলকে কলেজের ভিতর থেকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে।

এতে কলেজ ছাত্ররা বাঁধা দেবার চেষ্টা করলে প্রথমে তাঁদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময়ে কলেজকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখে তান্ডব চালানো শুরু করে তৌহীদী জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে উগ্রপন্থীদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য, একজন কলেজ শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এ সময় কলেজ চত্বরে রাখা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস ও অরুণ কুমার রায়ের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পুলিশ ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কলেজ অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ছাত্র রাহুলকে উগ্রপন্থীরা মারধর ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করে উগ্রপন্থীরা। এছাড়া হাতজোর করে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করা হয় তাঁদেরকে।

এসময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভিক্টিম অধ্যক্ষ ও ছাত্রকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেসবুকে আপলোড হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের সদস্যরা অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুলকে গ্রেপ্তার করে ঘাড় ধাক্কা দিতে দিতে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর বলেন, ‘রাহুল ও অধ্যক্ষ থানা-হেফাজতে আছেন। এক পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’ এ বিষয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা অধ্যক্ষসহ অভিযুক্তকে নিয়ে এসেছি। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড গ্যাস ছোড়া হয়েছে।

আমরা এখন আর শিক্ষার্থীদের শিক্ষক নই, শিক্ষা সহায়ক। Dulal Chowdhury

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মানুভুতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে উগ্রপন্থী ও ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি চক্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন, লাঞ্ছিত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যালঘু অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রের ধর্মীয় উগ্রবাদ তোষণের কারণে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

Source: anweshan.news

Leave a Reply