চলতি বছরের আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। পাবলিক পরীক্ষা হবে নাকি শিক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে তা ঘোষণা করতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হলে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের কাজ বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়নের চিন্তা করা হচ্ছে।
সোমবার (১৩ জুলাই) রাতে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমের লাইভে যুক্ত হয়ে শিক্ষকরা এ বিষয়ে মত দিয়েছেন। ‘এসএসসি-এইচএসসি মূল্যায়নে অ্যাসাইনমেন্ট : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শিরোনামের ফেসবুক ও ইউটিউব লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লাইভের সঞ্চালনা করেন সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান।
লাইভে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট অত্যন্ত কার্যকর। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সম্পৃক্ত হয় তাই, এরমাধ্যমে শিখন শেখানোর কার্যক্রম অনেক ফলপ্রসু হয়। অ্যাসইনমেন্ট করতে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই না, ইন্টারনেট থেকেও তথ্য নেয়। এতে তাদের জ্ঞানের গভীরতা বাড়ে। অ্যাসাইনমেন্টর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে, আমি মনে করি পাবলিক পরীক্ষা বিকল্প হিসেবে ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও তাদের সনদ প্রদান করা ঠিক না। ঈদের পর যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শিক্ষার্থীদের সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ও স্বল্প পরিসরে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পবালিক পরীক্ষা নিয়েই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সম্ভব হলে সেক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার একটি উপায় হতে পারে। তবে, শিক্ষা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা মেনে নেবো।
লাইভে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট অত্যন্ত কার্যকর। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সম্পৃক্ত হয় তাই, এরমাধ্যমে শিখন শেখানোর কার্যক্রম অনেক ফলপ্রসু হয়। অ্যাসইনমেন্ট করতে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই না, ইন্টারনেট থেকেও তথ্য নেয়। এতে তাদের জ্ঞানের গভীরতা বাড়ে। অ্যাসাইনমেন্টর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে, আমি মনে করি পাবলিক পরীক্ষা বিকল্প হিসেবে ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও তাদের সনদ প্রদান করা ঠিক না। ঈদের পর যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শিক্ষার্থীদের সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ও স্বল্প পরিসরে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পবালিক পরীক্ষা নিয়েই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সম্ভব হলে সেক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার একটি উপায় হতে পারে। তবে, শিক্ষা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা মেনে নেবো।
Read More:গুগলে যে ৫ জিনিস সবচেয়ে বেশি সার্চ করে পুরুষরা
বাংলাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন। তবে, শিক্ষার্থীদের বয়স বিবেচনায় অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের জন্য তাদের যতটুকু সৃজনশীলতা প্রয়োজন হয় ততটুকু তাদের এখনো হয়নি। তাই অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের জন্য বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোচিং বা অন্য কারও সহায়তার ওপর নির্ভর করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম ফলপ্রসু হয়। তবে, আমি মনে করি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট ফলপ্রসু হবে না। আমারা মনে করি, স্বল্প পরিসরে ও বড় পরিসরে পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুলে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর পাবলিক পরীক্ষাগুলো মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর, স্বল্প পরিসরে, সীমিত পরিসরে নম্বর কমিয়ে নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র করে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজন হলে আমরা শিক্ষকরা এ জন্য ভাতা বাবদ কোন টাকা নেবো না।
নবাব গঞ্জের দাউদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিল চক্রবর্তী বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যতটুকু শিখন ফল অর্জনের কথা ছিল তা হচ্ছে না। এর কারণে কিছু ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজ শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টর অ্যানসারগুলো প্রকাশ করে দেয়। যেগুলো দেখে শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট করে জমা দেয়। শিক্ষার্থীদের সীমিত সময়ের জন্য শিক্ষাকার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে অ্যাসাইনমেন্ট ফলপ্রসু। তাই, আমি মনে করি পাবলিক পরীক্ষায় অ্যাসাইনমেন্টর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ঠিক হবে না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন হবে না। তিনি আরও বলেন, ঈদের পরে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। স্কুল যদি খোলা কোন ভাবেই সম্ভব না হয় তাহলে সব স্কুলে কেন্দ্র করে বা উপজেলাগুলোর কেন্দ্র সংখ্যা তিনগুণ বাড়িয়ে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষা নেয়া যায়। আর যদি ক্লাস করা সম্ভব হয়, ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো যেতে পারে। ১০ জন করে শিক্ষার্থীদের এক রুমে বসিয়ে আমরা সিলেবাস শেষ করতে পারি। পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হবে। তাই সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করবো, পরীক্ষার্থীদের বসিয়ে পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করার।
মিরপুর বিএডিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আলম বলেন, আমরা শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম বাস্তাবায়ন করেছি। কিন্তু শিক্ষকরা চাচ্ছেন না পাবলিক পরীক্ষায় অ্যাসাইনমেন্টর মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হোক। আমরা গত বছর পর্যন্তও পরীক্ষা পদ্ধতির সাথে পরিচিত ছিলাম। হঠাৎ করে পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে অন্য কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা শুরু হলে তা ফলপ্রসু হবে না। মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সম্পৃক্ত রাখতে এটা ফলপ্রসু। তবে, পাবলিক পরীক্ষায় মূল্যায়নের জন্য নয় বলে আমি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ৫ থেকে ১০ শতাংশ নম্বর থাকে অ্যাসাইনমেন্টে। সেগুলোও সারাবছর ক্লাসের ভিত্তিতে শিক্ষকরা সে ৫ বা ১০ শতাংশ নম্বর দিয়ে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে এক বছর ক্লাস হচ্ছে না। আমরা কি করে শিক্ষার্থীদের এ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে দেবো, প্রশ্ন রাখেন তিনি। আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে অ্যাসাইনমেন্ট ছিল না। তাই সেটিকে কার্যকর করতে হলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। হুট করে পাবলিক পরীক্ষা থেকে বের হয়ে এসে আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের করা ঠিক হবে না।
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমাজের সদস্য সচিব দিদার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট অ্যাসাইনমেন্টর মত দেয়া হলে তা ফলপ্রসু হতো। শিক্ষার্থীরা যদি খুঁজে খুজেঁ উত্তর বের করতো তাহলে শিখন ফল অর্জন সম্ভব হতো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ইউটিউব ফেসবুক থেকে যদি উত্তর পেয়ে যায় সেক্ষেত্রে শিখনফল অর্জন হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষকরা বলেছেন মূল বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়ার কথা, কেন্দ্র বাড়িয়ে পরীক্ষা নেয়া। আমরা এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা কমিয়ে আনতে পারি। মূল বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। ১ম ও ২য় পত্রের বদলে এক পত্রের পরীক্ষা নিতে পারি। ঈদের পরে সংক্রমণের হার কমে আসলে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে এভাবে ক্লাস পরীক্ষা নিতে পারি।
জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাবও আছে। বিষয় ও পরীক্ষার মোট নম্বর কমিয়ে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে। তবে, সিদ্ধান্ত কি হচ্ছে তা সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে।
যদিও এর আগে জাতীয় পরামর্শক কমিটি সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে আসলে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে মত দিয়েছিল। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমূখী। গতকাল রোববার এ হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭। সে হিসেবে পরীক্ষার বদলে বিকল্প মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
Source of : dainikshiksha
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।