জীবনকে সজীব রাখতে সবুজের স্পর্শে থাকতে হয়, সে যেন ভুলেই গেছি আমরা। আমাদের এই ইট-কাঠ-পাথরের নাগরিক জীবনে ফ্ল্যাটবাড়ির ছোট পরিসরেই আটকে গেছে সময়গুলো। তবু একটু সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ার জন্য আনচান করে বুকের ভেতরটা।
অনেকেই তাই একচিলতে বারান্দায় সাজান হরেক বাহারি গাছ। নিজের নান্দনিক রুচির প্রকাশ ঘটাতে ঘরের কোনে, ব্যালকনিতে, বারান্দায় এমনকি ড্রয়িং রুমে পাতাবাহার ও মানিপ্ল্যান্ট গাছ রাখেন অনেকেই।
কিন্তু উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন, এসব পাতাবাহারের মধ্যে এমন অনেক গাছ আছে যা বেশ বিষাক্ত। এই বিষাক্ত উদ্ভিদগুলোর সংস্পর্শে থাকা আপনার শিশুসহ বড়দের জন্যও ক্ষতিকর। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে এই গাছগুলো।
এই গাছগুলোর তথ্য ও ক্ষতির মাত্রা নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এনটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া বিষাক্ত গাছগুলোর তথ্য হাফিংটন পোস্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
ফিলোডেনড্রন
ফিলোডেনড্রন নামে দক্ষিণ আমেরিকার এই পাতাবাহারটির নাম অচেনা হলেও অনেকেরই এই গাছটি খুব চেনা। অনেকেরই ঘরের ব্যালকনি অথবা পড়ার টেবিলেও সাজানো থাকে এই লতানো গাছটি।
সাধারণভাবে মানিপ্ল্যান্ট বা পাতাবাহার হিসেবে পরিচিত আপাতনিরীহ এই গাছটির সংস্পর্শে আসলে নানা স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সুইডেনের ইনস্টিটিউট অব হেলথের অণুজীব রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ফিলিপ রস জানান, বিরল এক ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই গাছের সংস্পর্শে থাকলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এ ছাড়া গলা ও মাথাব্যথা, শ্বসনতন্ত্রে সমস্যাও দেখা দেয়। এ ছাড়া ঝোপালো এই গাছটি বাসায় বেশি পরিমাণে থাকলে এই প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যাসহ অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
ফিলিপ রস আরো জানিয়েছেন, এই ক্ষতিকর গাছটির প্রভাব খুব তাড়াতাড়ি বোঝার সাধ্য নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে গাছটি মানুষ ও পোষা প্রাণীকে আক্রান্ত করে। তাই শিশু, বৃদ্ধ ও পোষা প্রাণীদের এই গাছ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন এই অণুজীব রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ।
ক্যাস্টর বিন
শোভাবর্ধক হিসেবে বেশ পরিচিত ক্যাস্টর বিন হলো আফ্রিকার একটি অন্যতম আকর্ষণীয় উদ্ভিদ। তবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এটি দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি রেড়িগাছ নামে পরিচিত। এটির প্রক্রিয়াজাত বীজই হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েলের মূল উৎস। কিন্তু এই বীজগুলোতেই থাকে বিষাক্ত রাইসিন, যা অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলেও পরিণাম হবে মারাত্মক। মাত্র দুটি বীজই যথেষ্ট একটি বাচ্চাকে মেরে ফেলতে। বড়দের ক্ষেত্রে ৮টির মতো লাগে।
উজ্জ্বল সবুজ রং আর হৃদয় আকৃতির পাতার জন্য তীরমাথা গাছ (অ্যারোহেড) প্রকৃতিপ্রেমীদের খুব পছন্দ। এই গাছটির ক্ষতিকারক দিক অনেকটা ফিলোডেনড্রন লতার মতোই।
অল্প বয়সী অ্যারোহেড গাছের পাতা থাকে গাঢ় সবুজ এবং হৃদয় আকৃতির। আর বয়স্ক হতে হতে গাছের পাতা কালচে সবুজ এবং তীরের মাথার আকার ধারণ করে।
এই গাছের সংস্পর্শে থাকলে শিশু ও পোষা প্রাণীর গলা ও মাথাব্যথা এবং শ্বসনতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া শিশু ও পোষা প্রাণীর পেটেব্যথা ও বমিভাবও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া বৃদ্ধরাও এই গাছের সংস্পর্শে থাকলে সরাসরি আক্রান্ত হতে পারেন।
রোজারি পি আরেকটি নামেও বেশ পরিচিত, জেকুইরিটি বিনস। বাংলাদেশেও এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন রতি, রত্তি, গুঞ্জা, চূড়ামণি, কুঁচ, কইচ গোটা ইত্যাদি। নামের দিক দিয়ে বেশ রাজকীয় এবং নিরীহ মনে হলেও এই উদ্ভিদে রয়েছে বিষাক্ত এব্রিন, যা রাইবোজোম দমন করে থাকে। রোজারি পিকে মূলত দেখতে পাওয়া যায় গ্রীষ্মপ্রধান এলাকাগুলোতে। মাঝে মাঝে এটিকে বিভিন্ন অলংকার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ডায়ফেনবাসিয়া
যে গাছটির ছবি দেখছেন, তার পোশাকি নাম হলো ডায়ফেনবাসিয়া। অফিস আদালতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বারান্দা বা করিডরে, এমনকি ফ্ল্যাটের বারান্দায় এই গাছটি হামেশাই দেখা যায়। আমাদের পরিচিত ঘরের সৌন্দর্যবর্ধক এই গাছটির ভয়াবহতা অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না।
হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গাছটির একটি পাতা আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে। পাতা খেলে এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
শিশুদের বেলায় তো এটি ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাড়িতে ছোট শিশু থাকলে অবশ্যই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, এই গাছের পাতায় থাকে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামের এক উপাদান, যা মানুষের কিংবা পোষা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।
এক অভিভাবকের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, যে বাড়িতে শিশু আছে, সেখানে এই গাছ না রাখাই উচিত। কারণ যুক্তরাজ্যের অধিবাসী ওই অভিভাবকের তিন বছর বয়সী এক মেয়েশিশু ডায়ফেনবাসিয়া গাছের পাতা গিলে ফেলে। এতে তার জিহ্বা ফুলে যায় এবং মৃত্যু ঘটে।
এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু হতে পারে ১৫ মিনিটের মধ্যে। এমনকি এই গাছ হাত দিয়ে ধরলে এবং সেই হাত চোখে লাগালে অন্ধত্বের সম্ভাবনা থাকে।
ক্যালাডিয়াম
নান্দনিক এ পাতাবাহার গাছটি আমরা সবাই চিনি। অনেকের ঘরে অথবা বারান্দার বাগানের সাজিয়ে রাখা আছে এই গাছ। লাল, গোলাপি অথবা সাদা পাতার ক্যালাডিয়াম নামে পরিচিত এ গাছটি বাগান সাজাতে বহুল ব্যবহৃত।
কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার এই গাছটি সম্পর্কে উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন ভয়ংকর তথ্য। গাছটির পাতায় আছে দীর্ঘস্থায়ী বিষ। আর শিশুরা এ গাছের পাতা মুখে দিলে আক্রান্ত হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী পেটের পীড়ায়। শুধু তাই নয়, ঘরের পোষা প্রাণীদের জন্যও সমান ক্ষতিকর এই গাছটি।
পরীক্ষার পর জানা গেছে দীর্ঘদিন এই গাছের সংস্পর্শে থাকলে এক ধরনের স্থায়ী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। যার ফলে মুখ, জিহ্বা ও ঠোঁটে জ্বালাপোড়া, গলা ব্যথা, গিলতে সমস্যা এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
তামাক
এক নম্বরে তামাকের নাম দেখে কারোরই অবাক হবার কথা নয়। কারণ আমরা সকলেই জানি তামাকের ক্ষতিকর দিকের কথা। তামাকই হলো বিশ্বে সবচাইতে বেশি জন্মানো উদ্ভিদ, যা মূলত কোনো খাবারের শ্রেণীতে পড়ে না। উদ্ভিদটির প্রায় সবখানেই, বিশেষ করে এটির পাতায় রয়েছে বিষাক্ত অ্যালকালয়েডস নিকোটিন এবং অ্যানাবেসিন, যা সরাসরি গ্রহণ করলে পরিণাম হবে মারাত্মক। যদিও একে হৃদপিন্ডের জন্য একটি বিষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবুও তামাকের নিকোটিনকে বিশ্বব্যাপী চিত্তপ্রভাবকারী, আসক্তিকর এবং নেশাকর হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
শ্বাশুড়ির জিহ্বা অথবা একেএ সাপ গাছ
শুনতে অবাক লাগলেও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের গুল্মটির নাম এটাই। বাংলাদেশে এই গাছটিও পাতাবাহার গাছ হিসেবে বহুল প্রচলিত। বাগানের সীমানায় বেড়া হিসেবেও এই গাছটি লাগানো হয়। এ ছাড়া অফিসে, বাসায় গৃহসজ্জায় এই ঝোপালো গাছটি বহুল ব্যবহৃত।
সাধারণত এই গাছটি গাঢ় সবুজ রঙের দেখা যায়। তবে অঞ্চলভেদে সাদা এবং হলুদ রঙের হয় ‘শ্বাশুড়ির জিহ্বা’ গাছ। ইতালি ও স্পেনে আবার এই গাছটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তবে উদ্ভিদবিদরা জানাচ্ছেন, এই গাছটি স্বাস্থ্যগতভাবে শিশু এবং পোষা প্রাণীদের জন্য একেবারেই সৌভাগ্য বয়ে আনে না।
অন্য গাছগুলোর তুলনায় এই গাছটি কম বিষাক্ত হলেও তা শিশু ও পোষা প্রাণীদের ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। গাছের পাতা খাওয়া অথবা দীর্ঘদিনের সংস্পর্শে গলা ব্যথা ও নাসারন্ধ্রের সমস্যা দেখা দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গাছটি আবার দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়সহ অন্যান্য পেটের পীড়ার কারণ হয়েও দেখা দেয়।
বিষাক্ত ফলের নাম ও ছবি ,পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত গাছ, বিষ কাটালি গাছের উপকারিতা, বিষাক্ত ফুল, বিষাক্ত বিষের, নাম বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার গাছ, গাছের ছবি ও নাম, কোন ফল খেলে মানুষ মারা যায়,This tree is poisonous, poisonous trees in the world toxic, trees for humans 15 most, dangerous trees poisonous trees in florida, top 10 most dangerous trees in the world, poisonous trees in north america, most dangerous tree in india,পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত গাছ, বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ ,পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ, বিষাক্ত ফলের নাম ও ছবি, বিষ কাটালি গাছ ,বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার গাছ, ধুতুরা ফুলের বিভিন্ন অংশ, কোন ফল খেলে মানুষ মারা যায়, ধুতুরা ফুল ফোটার সময়