সাদাত খান ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর শহীদ ও একজন নেতা। তিনি ২২শে ফেব্রুয়ারি ১৮২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সাদাত খানের পূর্বপুরুষেরা মধ্যপ্রদেশের অধিবাসী ছিলেন। সকলেই হোলকার রাজাদের সামরিক বাহিনীতে কাজ করতেন। সাদাত খান নিজেও ছিলেন হোলকারের ইন্দোর আর্মির অশ্বারোহী ডিভিসনের অফিসার। ১৮৫৭ সালের ১লা জুলাই ৩৫ বছর বয়েসে চাকরি ছেড়ে নিজস্ব বাহিনী ও হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষ অনুগামী নিয়ে বিদ্রোহে যোগ দেন সাদাত। তার অনুগামীদের মধ্যে তার নিজের ভাই সর্দার খান ছাড়াও ছিলেন ভগীরথ শিলাওয়াত, বংশ গোপাল, দুর্গা প্রসাদ, দেবী সিং প্রমুখ।
সাদাত খান, কর্নেল ট্রাভার্সকে মাত্র তিন ঘণ্টার যুদ্ধে পরাজিত করে ইন্দোরের ব্রিটিশ রাজভবন দখল করেন, ব্রিটিশ রাজপুরুষেরা পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়। নিজেকে এরপর ইন্দোরের রাজা বলে ঘোষণা করেন তিনি। সমরকুশলী সেনাপতি হওয়ার কারণে একাধিক যুদ্ধে তার রণনীতিতে ব্রিটিশ বাহিনী অপদস্থ হয়েছে। গোয়ালিয়র, সহজপুর, রাজগড়, গুনা, শিভপুরার ইংরেজকুঠিগুলি সাদাত খানের আক্রমনে ধ্বংস হলে ১৮৫৭ সালের ১০ই অক্টোবর জেনারেল গ্রেথেড বিপুল বাহিনী নিয়ে সাদাতের মোকাবিলা করেন। আগ্রার কাছে এই যুদ্ধে সাদাত খান প্রথম পরাজিত হন ও পলায়নে সক্ষম হন। তার সৈন্যদের অনেকেই ধরা পড়ে, তাদের ফাঁসি হয়।
ভারতীয় ইতিহাসের কালপঞ্জি গ্রন্থে কার্ল মার্ক্স এই যুদ্ধের কথা লিখেছেন। পলাতক অবস্থায় তিনি বিভিন্ন সময় নিজস্ব বাহিনী নিয়ে ঝটিকা আক্রমন করেছেন ইংরেজের ওপর। ১৭ বছর ধরে পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। তার মাথার দাম ঘোষিত হয় তৎকালীন আমলে ৫০০০ টাকা। মহাবিদ্রোহ দমিত হলেও আলেয়ার, সালেম্বুর, উজ্জয়িনী, বংশওয়াড়ায় বিভিন্ন জায়গায় ইংরেজের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছেন এই বিদ্রোহী। বংশওয়াড়ার জংগলে তাকে ১৮৭৪ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয় ও বিচারে মৃত্যুদন্ড হয়।
ইন্দোরের যে রেসিডেন্সি দখল করে বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন তার সামনের গাছেই সাদাত খানের ফাঁসি হয় ১লা অক্টোবর ১৮৭৪। তার ভাই সর্দার খানেরও ফাঁসি হয়েছিল। তাকে যেখানে ফাঁসি দেওয়া হয় সেইস্থানে একটি স্মারকস্তম্ভ বর্তমান।
(তথ্যসূত্র সংগৃহীত)