- শিশুকে একই বিছানায় রাখতে হবে।
- কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ শিশুকে দুধ দিতে হবে। এরপর পাম্পের সাহায্যে বের করে রেখে যেতে হবে। এই দুধ সাধারণত ঘরের তাপমাত্রায় ৬ ঘণ্টা ও হিমায়িত অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে। হিমায়িত দুধ একটি পাত্রে গরম পানির ওপর রেখে তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। বুকের দুধ কোনোভাবেই জ্বাল দেওয়া বা ফোটানো যাবে না।
বুকের দুধের উপকারিতা
মায়ের দুধ শিশুকে বদহজম ও অন্ত্রের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এই দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং এতে কৌষ্ঠকাঠিন্য হয় না।
- শিশুর নাক, গলার ঝিল্লির ওপর আস্তরণ তৈরি করে, যা হাঁপানি ও কানের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে শিশুরা জন্ম থেকে মায়ের দুধ খায়, ভবিষ্যতে তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
- শৈশবে লিউকেমিয়া হওয়া থেকে মায়ের দুধ রক্ষা করে। পরিণত বয়সে ডায়াবেটিস টাইপ-১ ও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।
- মায়ের দুধে শিশুর বুদ্ধি বাড়ে। এতে এমন সব ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর মগজের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে পরবর্তী সময়ে মায়ের স্তনে ও ডিম্বাশয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
- বুকের দুধ খেলে শিশুর ডায়রিয়া হয় না বললেই চলে।
শিশুর জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো
Health Benefits of Ginger Water: কেন বলা হয় আদা-জল খেয়ে কাজে লাগতে? জানেন কি, এর কত গুণ
শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো
১. ভুল ধারণা? শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সহজ।
মায়ের বুক খুঁজে নেওয়ার প্রবৃত্তি নিয়েই শিশুরা জন্মায়। যাইহোক, অনেক মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তাদের শিশুর অবস্থান নির্ধারণের এবং তাদের শিশুটি সঠিকভাবে স্তনের সাথে যুক্ত আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর সহায়তা প্রয়োজন। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সময় লাগে এবং এর জন্য মা ও শিশু দু’জনেরই অনুশীলন দরকার হয়। শিশুর যখনই ক্ষুধা লাগে তখনই তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। সে কারণে বাড়ি ও কাজের উভয় জায়গাতেই সন্তানকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা ও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়।
২. ভুল ধারণা? বুকের দুধ খাওয়াতে গেলে আঘাত লাগবেই – স্তনের বোঁটা ক্ষত হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
অনেক মা-ই সন্তান জন্মদানের পর প্রথম কিছুদিন দুধ খাওয়ানোর সময় অস্বস্তি বোধ করেন। শিশুকে সঠিক অবস্থানে রেখে এবং ঠিকমতো স্তনের সাথে যুক্ত রেখে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে, স্তনের বোঁটার ক্ষত হওয়া বা ফুলে যাওয়া এড়ানো যায়। কোনো মা এ ধরনের সমস্যায় পড়লে স্তনদান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ পেশাজীবীর পরামর্শ নিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
৩. ভুল ধারণা? শিশুকে দুধ খাওয়ানোর আগে স্তনের বোঁটা ধুয়ে নিতে হবে।
শিশুকে বুধের দুধ খাওয়ানোর আগে স্তনের বোঁটা ধুয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। শিশুরা জন্মের পর থেকেই তার মায়ের শরীরের গন্ধ ও কন্ঠস্বরের সাথে পরিচিত হয়ে যায়। তাছাড়া স্তনের বোঁটায় কিছু পদার্থ তৈরি হয় যার ঘ্রাণ শিশুরা পায় এবং তাতে এক ধরনের ভালো ব্যাকটেরিয়াও থাকে। এগুলো শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
আপনি কি জানেন? বুকের দুধ শিশুর কানের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করে।
৪. ভুল ধারণা? মায়ের বিশ্রামের জন্য শিশু ও তার মাকে আলাদা রাখতে হয়
ডাক্তার, নার্স ও ধাত্রীরা প্রায়ই জন্মের পরপরই শিশুকে তার মায়ের সংস্পর্শে রাখতে বলেন। একে ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ও বলা হয়। এভাবে মায়ের সংস্পর্শে রাখা, গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যা তাদের মায়ের বুকের দুধ খুঁজতে ও পেতে সহায়তা করে। যদি শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে তা করা যায় এবং এরপরে বারবার তা করা যায়, তাহলে শিশুরা সহজে দুধ পাবে। যদি মা তা একা না করতে পারেন, তাহলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মা ও শিশুকে সাহায্য করতে হবে।
৫. ভুল
ধারণা? শিশুকে দুধ খাওয়ানোর দিনগুলোতেই মাকে শুধু সাধারণ খাবার খেতে হবে।
অন্য সবার মতোই নবজাতকের মাকেও সুষম খাবার খেতে হবে। সাধারণত খাদ্যাভ্যাস বদলানোর কোনো দরকার নেই। কেননা শিশুরা যখন মায়ের পেটে ছিল তখন থেকেই ওই খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব তার ওপর রয়েছে। তারপরও যদি মায়ের মনে হয় তার কোনো খাবারের খারাপ প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ছে, তাহলে কোনো একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
শিশুদের মধ্যে অটিজমের প্রথম লক্ষণগুলো কী | Autistic health care child
৬. ভুল ধারণা? ব্যায়াম দুধের স্বাদ পাল্টে ফেলবে।
ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী। স্তনদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রেও তা একইভাবে সত্যি। ব্যায়াম করলে দুধের স্বাদ পাল্টে যায় এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
৭. ভুল ধারণা? আপনি যদি জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই দুধ না খাওয়ান পরে আর পারবেন না।
শিশুর জন্মের পর এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করাটা সহজ। কারণ এই সময়ে শিশুরা বেশী আগ্রহী থাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার জন্য। কীভাবে মায়ের বুকের দুধ খেতে হবে তা শেখার জন্য সে এসময় প্রস্তুত থাকে। যদি জন্মের পরপরই শিশুকে দুধ খাওয়াতে না পারেন, তাহলে পরে আপনার অবস্থা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব খাওয়ানো শুরু করুন। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ঠিকভাবে তার অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য মাতৃদুগ্ধ বিশেষজ্ঞ বা এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে পারেন।
আপনার ত্বকের সঙ্গে শিশুর ত্বকের সংস্পর্শ এবং শিশুকে স্তনের কাছে রাখলে সে দুধ খাওয়া শিখে যাবে।আপনি কি জানেন? শিশুদের দুধ খাওয়ালে মায়ের ডায়াবেটিস, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার, হৃদরোগ ও সন্তান জন্মদান-পরবর্তী মানসিক জটিলতার ঝুঁকি কমে?
৮. ভুল ধারণা? বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলে কখনোই ফর্মুলা (বাজারে যেসব দুধ পাওয়া যায়) দেওয়া যাবে না। বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি মায়েরা শিশুদের কখনো কখনো ফর্মুলা খাওয়ানোর কথা ভাবতে পারেন। সেক্ষেত্রে শিশুর ফর্মুলা বা সম্পূরক খাবারের বিষয়ে সঠিক, পক্ষপাতহীন তথ্য থাকতে হবে। বুকের দুধ তৈরি অব্যহত রাখার জন্য যত বেশিবার সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনার জন্য মাতৃদুগ্ধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বা দক্ষ পেশাজীবীর পরামর্শ নিতে হবে। ৯. ভুল ধারণা? অনেক মায়েরই শরীরে পর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ থাকে না।