মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ পাইলস বা হেমরয়েড বা অর্শ রোগের কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ার মতো ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমদিকে পায়খানার সাথে টাটকা রক্ত পড়তে পারে যা পরবর্তীতে জমাট রক্তপিন্ড আকারে বের হয়। পাইলস ছাড়াও আরো অনেক কারণে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, যেমন- এনাল ফিসার, রেক্টাল পলিপ, রেক্টামে ক্যান্সার, রেক্টাল ফিস্টুলা, আলসার, আঘাতজনিত কারণ ইত্যাদি।
চিকিৎসা এর চিকিৎসা নির্ভর করে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ এবং রক্ত পড়ার উৎসের উপর ভিত্তি করে। রোগী অতিরিক্ত রক্ত ঝরার ফলে বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন বা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এর তত্ত্ববধানে রোগীর চিকিৎসা হয়ে থাকে।
মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করার উপায় উপযুক্ত চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করার উপায় করা সম্ভব। যেমন- গোসলের সময় নিয়মিত মলদ্বার ও এর চারপাশের ত্বক ভালমত পরিস্কার করুন। দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত চাঁপ দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
বাথরুমে খুব বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার নিয়মিত রাখুন। ব্যথা কমাতে আক্রান্ত স্থানে আইসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। একটি বোলে উষ্ণ পানি নিয়ে তাতে সামান্য লবণ মিশিয়ে এর মধ্যে নিতম্ব ডুবিয়ে অন্তত ১০ মিনিট বসে থাকলে চুলকানি, ব্যথা এবং অস্বস্তি কমে যাবে। এটাকে সিজ বাথ বলে। অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।
বাইক বন্ধের পর টোল আদায় কমেছে পদ্মা সেতুতে
এগুলো ছাড়াও ঔষধের দোকানে কিছু রেকটাল মলম এবং সাপোজিটরি পাওয়া যেগুলোর জন্য কোন প্রেসক্রিপশন এর প্রয়োজন পড়ে না, এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি লক্ষণগুলোর উন্নতি না হয় এবং রোগীর বয়স ৪০ বছর এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শেষ কথা এই ধরণের সমস্যায় পড়লে অনেকেই সেটা প্রকাশ করতে চায় না, আবার মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কেও পরিস্কার ধারণা থাকে না। যে কারণে সমস্যাটি একসময় জটিল আকার ধারণ করে। কিন্তু প্রথম থেকেই সচেতন হলে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অর্শরোগ বা পাইলস (হেমোরয়েড) খুব পরিচিত একটি শারীরিক সমস্যা। মলদ্বারে যন্ত্রণা, রক্ত পড়া, মলদ্বার ফুলে ওঠা, জ্বালা করা ইত্যাদি অর্শ্বরোগের সাধারণ উপসর্গ। ফাইবারযুক্ত খাবারের অভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকার অভ্যাস ইত্যাদি কারণে এই রোগ শরীরে বাড়তে থাকে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায়েও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। জেনে নিন সেই উপায়গুলি সম্পর্কে…
বরফ: ঘরোয়া উপায়ে অর্শ নিরাময় করার অন্যতম উপাদান বরফ। বরফ রক্ত চলাচল সচল রাখে এবং ব্যথা দূর করে দেয়। একটি কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ পেঁচিয়ে ব্যথার স্থানে ১০ মিনিট রাখুন। এভাবে দিনে বেশ কয়েকবার বরফ ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার: একটি তুলোর বলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার লাগিয়ে ব্যথার স্থানে লাগান। শুরুতে এটি জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করবে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর এই জ্বালাপোড়া কমে যাবে। এটি পদ্ধতিটিও দিনে বেশ কয়েকবার অবলম্বন করুন। অভ্যন্তরীণ (ইন্টারনাল) অর্শরোগের জন্য এক চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এক গ্লাস জলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খান। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
অ্যালোভেরা: বাহ্যিক (এক্সটারনাল) অর্শরোগের জন্য আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এটি দ্রুত ব্যথা কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে। আভ্যন্তরীণ অর্শরোগের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা পাতার কাঁটার অংশ কেটে জেল অংশটুকু একটি প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। এ বার এই ঠান্ডা অ্যালোভেরা জেলের টুকরো ক্ষত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এটি জ্বালা, ব্যথা, চুলকানি কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে।অলিভ অয়েল: প্রতিদিন এক চা চামচ অলিভ অয়েল খান। এটি দেহের প্রদাহ দ্রুত হ্রাস করতে সাহায্য করে। অর্শরোগে নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী।
আদা এবং লেবুর রস: ডিহাইড্রেশন অর্শরোগের অন্যতম আরেকটি কারণ। আদাকুচি, লেবু এবং মধু মিশ্রণ দিনে দু’বার খান। এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে অর্শরোগ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ছাড়া দিনে অন্তত ২-৩ লিটার জল খেলেও অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া বিষয়টি বলতে আসলে কী বুঝি?
উত্তর : মানুষের পায়খানার রাস্তা দিয়ে আলাদাভাবে বা পায়খানার সঙ্গে মিশে রক্ত যাওয়াকে আমরা মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া বুঝি।
প্রশ্ন : কী কী কারণে এই মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায়?
উত্তর : কারণগুলো সাধারণত বয়সভিত্তিক হয়। শিশুদের যে কারণে মলদ্বার দিয়ে রক্ত যেতে পারে তা হলো, রেকটাল পলিপ বা কোলনিক পলিপ। মধ্য বয়সীদের মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে অশ্বরোগ বা হেমোরয়েড। এ ছাড়া মলদ্বার ফেটে যাওয়া বা এনাল ফিশার রয়েছে। এর পাশাপাশি রক্ত যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে রেকটাম ও কোলনিক ক্যানসার। মধ্য বয়সে এই রোগগুলো বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বৃহদন্ত্রে যদি প্রদাহ হয়ে থাকে অথবা বৃহদন্ত্রে যদি কোনো সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলেও মধ্য বয়সে মলদ্বার দিয়ে রক্ত যেতে পারে।
চতুর্থ শ্রেণির বাওবি অধ্যায় ৪ নাগরিক অধিকার
একটু বয়স্ক লোকদের মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়ার অন্যতম কারণের মধ্যে কোলরেকটাল ক্যানসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বৃহদন্ত্রে যদি কারো রক্তস্বল্পতা বা রক্ত চলাচল কমে যায়, তখন মলদ্বার দিয়ে রক্ত যেতে পারে। এ ছাড়া ডাইভারটিকুলাইটিস বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ রয়েছে, যা বয়স্ক লোকদের হয়ে থাকে; এসব কারণেও সাধারণত মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায়।
প্রশ্ন : কী কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেটি বোঝার কোনো লক্ষণ রয়েছে?
উত্তর : মলদ্বার দিয়ে যে কারণে রক্ত যাক না কেন, এটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। রোগীদের এটা প্রথমেই বুঝতে হবে। আমরা সাধারণত মলত্যাগের পর লক্ষ করি না যে মলদ্বার দিয়ে রক্ত গেল কি না। তবে এ বিষয়টি লক্ষ করা উচিত। মলদ্বার দিয়ে রক্ত গেলে এটাকে স্বাভাবিকভাবে না নিয়ে, হাতের কাছের স্থানীয় চিকিৎসকদের না দেখিয়ে, সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা।
সে জন্য যে উপসর্গগুলোর দিকে খেয়াল করতে হবে সেগুলো হলো : পায়খানা যাওয়ার যে অভ্যাস ছিল, সেটি পরিবর্তন হয়ে গেছে কি না; জ্বর হয় কি না অথবা কারো শরীরে রক্তস্বল্পতা বা পানিস্বল্পতা হচ্ছে কি না; ওজন কমে যাচ্ছে কি না; খাওয়া-দাওয়ার অরুচি তৈরি হচ্ছে কি না; পেটে চাপ দিয়ে দেখলে কোনো জায়গায় চাকার অনুভূতি হয় কি না। এই উপসর্গগুলো যদি রোগী দেখে, তাহলে বুঝতে হবে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। এটাকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : শিশুদের মলত্যাগের অভ্যাস ঠিকমতো না হলে বা এনাল ফিশারের ক্ষেত্রে কী করা উচিত?
উত্তর : শিশুদের ক্ষেত্রে বা অল্প বয়সের ক্ষেত্রে বিশেষত, বয়ঃসন্ধি বয়সের ক্ষেত্রে পায়খানার অভ্যাস তৈরি করা দরকার। এ জন্য নিয়মিত টয়লেট অভ্যাস (রেগুলার টয়লেট হেবিট) বলে আমরা একটা টার্ম ব্যবহার করি, যেটা ধীরে ধীরে অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। এটা না হওয়ার কারণে এনাল ফিশার বা হেমোরয়েড বেশি পরিমাণে হচ্ছে। এ অভ্যাস তৈরি না হওয়ার পেছনে মা-বাবার ভূমিকা আছে এবং বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়েদেরও ভূমিকা রয়েছে। এর কারণ, পরিমাণমতো পানি না খাওয়া; পরিমাণমতো শাকসবজি না খাওয়া। তারা ফাস্টফুড বেশি খায়। এ ছাড়া আমরা যারা শহরে বাস করি, তাদের বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে থাকতে হয়। সেখানে টয়লেটের যথেষ্ট পরিমাণ সুবিধা নেই। যে টয়লেটগুলো আছে, সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে মল আটকে রাখতে হয়, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষার সমস্যা হয়। এ সময় সে যখন চাপ দিয়ে মলত্যাগ করতে চায়, তখনই মলদ্বার ফেটে যায়। এবং এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শিশু ও বয়ঃসন্ধি বয়সের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে। যখন মলদ্বার ফেটে যাবে, তখনই সেখানে প্রচণ্ড ব্যথা হবে। যখন ব্যথা হবে, তখন সে আর টয়লেটে যেতে চাইবে না। তখন একটা ভয় তৈরি হয়। এই সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা হলে কী করণীয়? শুধু কি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, নাকি সঙ্গে কোনো ওষুধ নিতে হবে?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে যে পরামর্শগুলো দিয়ে থাকি তা হলো, পরিমাণমতো পানি খাওয়া, নির্দিষ্ট পরিমাণ সবজি খাওয়া, প্রতিদিনই অন্তত একবার টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস করা। টয়লেটে যাওয়ার সময়টিও নির্দিষ্ট করা আছে। সকালে নাশতা করার আধা ঘণ্টা পরে টয়লেটে গিয়ে ১০ মিনিট সময় কাটিয়ে আসতে হবে। তাহলে তার অভ্যাস নিয়মিত তৈরি হবে। আর যার নিয়মিত অভ্যাস তৈরি হবে, তার এই রোগগুলো হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
একটি বিষয় যোগ করতে চাই, মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়াকে জনগণ স্বাভাবিকভাবে নিয়ে থাকে। এর ফলে একসময় আমাদের কাছে যখন রোগীরা পৌঁছে, তখন পরীক্ষা করে দেখি আসলে তার একটি মারাত্মক রোগ হয়েছে এবং সে চিকিৎসা নিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে।
একজন রোগীর কথা উল্লেখ করতে পারি, লেখক হুমায়ূন আহমেদ। উনার যে ক্যানসারটি হয়েছিল, সেটি কোলরেকটাল ক্যানসার। এবং সেটি অনেক পরে ধরা পড়েছে, যার কারণে উনাকে আর চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়নি। তাই মলদ্বার দিয়ে এক বা একাধিকবার রক্ত গেলে পরীক্ষা করা জরুরি এবং একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কারো কাছে গেলে আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তখন চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যায়।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, মলদ্বার দিয়ে রক্ত গেলে কারণটা আমাদের জানা থাকতে হবে। সেটা যে কারণেই হোক না কেন, রোগটা অবশ্যই নির্ণয় করতে হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
পাইলস: মধ্যবয়সে পায়ুপথে তাজা রক্তক্ষরণের অন্যতম কারণ পাইলস। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এ রোগের ঝুঁকি বেশি। এতে প্রথমদিকে মলের সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা বা ফিনকি দিয়ে তাজা রক্ত যায়। পরবর্তী সময়ে একটা মাংসপিণ্ড গোটার মতো পায়ুপথে বের হয়ে আসে। পাইলস হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। এর ওষুধও আছে। জটিল আকার ধারণ করলে শল্যচিকিৎসা লাগে।
* রেকটাল পলিপ: এ সমস্যা শিশুদের বেশি হয়। এটাও অনেকটা পাইলসের মতোই। মলের সঙ্গে তাজা লাল রক্তক্ষরণ হয়, আবার গোটার মতো পিণ্ড বেরিয়ে আসে। পলিপ সারাতে সার্জারির প্রয়োজন হয়।
* অ্যানাল ফিশার: মলত্যাগের সময় ভীষণ ব্যথাসহ হয়ে রক্তক্ষরণ হলে তা ফিশারের কারণে হয়েছে বলে ধরা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলদ্বারের আবরণ ছিঁড়ে গেলে এই সমস্যা হয়। এতে সংক্রমণও হতে পারে। নানা ধরনের ওষুধ ও ক্রিম, গামলায় গরম পানির সেঁক ও ওষুধ এ সমস্যার চিকিৎসা।
* রেকটাল ক্যানসার: ৪০ বছরের পর এ রোগ বেশি হলেও আজকাল অনেক কম বয়সে রেকটামে ক্যানসার হচ্ছে। মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, মলত্যাগ করার পরও আরও খানিকটা ইচ্ছে ইত্যাদি হতে পারে এর উপসর্গ। মলের সঙ্গে রক্ত গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত।
রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ কি?
পায়ু পথ দিয়ে যে কোন রকম রক্ত পড়াকে রেক্টাল ব্লিডিং বলা হয়। যদিও রেক্টাল ব্লিডিং হলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেওয়া হয় যে রক্ত পায়ুপথের উপরের অংশ ও ক্ষুদ্রান্তের শেষ অংশ থেকে রক্তপাত হচ্ছে। রক্তের রং ও অবস্থা দেখে রেক্টাল ব্লিডিং এর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। রক্ত আলাদা ভাবে পড়তে পারে, পায়খানার সাথে মিশ্রিত ভাবে পড়তে পারে যা টয়লেটের প্যানে, পানিতে মিশে, টয়লেট টিস্যু ব্যবহারের সময় বা অন্তর্বাসে দেখা যেতে পারে।
রেক্টাল ব্লিডিং কেন হয়?
রেক্টাল ব্লিডিং বহুমুখী কারণে হতে পারে। সে কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোগীর পক্ষে তা বোঝা অসম্ভবই বলা যায়।
কোষ্টকাঠিন্য: কেষ্টকাঠিন্যের জন্য মলদ্বারে/ অন্ত্রে কোন স্থান কেটে বা ছড়ে গেলে মলের সাথে রক্ত যেতে পারে।
এনাল ফিসার: মলদ্বারের শেষ প্রান্তেরর কোন অংশ কোষ্টকাঠিন্য বা অন্য কারণে কেটে গেলে তাকে এনাল ফিসার বলা হয়। এনাল ফিসারের কারণে মলের সাথে রক্ত যেতে পারে, সেক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে।
হেমোরয়েডস: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এনাল ফিসার ওর জন্য দায়ি হলো হেমোরয়েডস। হেমরয়েডস হলো যখন ক্ষুদ্রান্তের রক্তনালী চাপের কারণে সরু হয়ে আসে।
এই তিনটি কারণ রেক্টাল ব্লিডিং এর জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে। আরো কিছু বিরল ক্ষেত্রে পায়ুপথ দিয়ে রক্ত আসতে পারে।
- এনাল ক্যান্সার
- কোলন ক্যান্সার
- কোলন পলিপস
- পায়ুপথের দেওয়ালে ঘা
- পায়ুপথে অন্যান্য ইনফ্লামেটরি রোগ।
দেখা যাচ্ছে,রেক্টাল ব্লিডিং কিছু সাধারণ রোগের সাথে কিছু জটিল রোগেরও উপসর্গ। ঠিক এই কারণেই রেক্টাল ব্লিডিংকে খাটো ভাবে দেখা উচিৎ নয়।
রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ কতটুকু ও কখন গুরুতর?
রেক্টাল ব্লিডিং এর ধরণ সম্পর্কে আগে কিছু জানা যাক পূর্বে উল্লেখ করেছি, রেক্টাল ব্লিডিং এর রক্তের রং দেখে রক্তের উৎপত্তি স্থান বোঝা যায়। লক্ষ করুন,
- যদি টাটকা লাল রক্ত দেখতে পান তাহলে তা মলদ্বারের কিছুটা উপরের প্রান্ত বা ক্ষুদ্রান্তের শেষ প্রান্ত থেকে হচ্ছে।
- যদি কিছুটা বাদামী বা কালচে রক্ত লক্ষ করেন, তবে বুঝবেন তা বৃহদান্ত্র বা অন্ত্রের উপরের অংশ থেকে হচ্ছে।
- এবং রক্ত যদি কালো রং এর হয়ে থাকে, তা যদি মলের সাথে পুরোপুরি মিশে থাকে তাহলে বুঝবেন তার উৎপত্তি স্থল পাকস্থলি।
এখন প্রশ্ন হল, রক্তের রং হালকা হওয়া না গাঢ় হওয়া, কোনটি বেশি গুরুতর? উত্তরটি হলো,
- উজ্জ্বল লাল রং এর রক্ত দেখলেই আপনি অনেকটা সঙ্কা মুক্ত থাকতে পারেন যদিও পুরোপুরি নয়।
- গাঢ় রক্ত পাকস্থলি ও অন্ত্রে জটিলতর রোগের নির্দেশ করতে পারে।
এখন আপনার করনীয় হলো, যদি রক্তপাত একদিনের বেশি স্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। রক্তের রং ও পরিমান দেখে সন্দিহান হলে লক্ষ করার পরই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। যদি সামান্য রক্ত দুএকবার লক্ষ করেন, তবে রক্তপাতের বিষয়টি মাথায় রেখে পরবর্তি ধাপগুলো উপেক্ষা করতে পারেন। আশা করা যায় পরদিন থেকে এই উপসর্গ আর দেখা যাবে না।
কিভাবে বুঝবেন রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে?
- কমোড বা প্যানের গায়ে রক্ত লেগে থাকতে পারে।
- কমোডের পানি লাল, ক্ষয়েরি, বা কালচে হয়ে যেতে পারে।
- পায়খানার সাথে রক্তের ছাপ দেখা যেতে পারে ও পায়খানার রং কমলা, ক্ষয়েরী, বেগুনী বা কালো রং এর দেখাতে পারে।
- অন্তর্বাসে রক্ত চুইয়ে পড়তে পারে বা টিস্যুপেপার ব্যবহারের পর রক্তের দাগ দেখা যেতে পারে।
এইসব উপসর্গ দেখলে রেক্টাল ব্লিডিং হচ্ছে বলে ধরে নিতে পারেন। উল্লেখ্য রেক্টাল ব্লিডিং সাধারণ ভাবে অনেক মানুষের হয়ে থাকে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ পায়খানা লক্ষ করেন না বিধায় তা টের পান না।
রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ এর উপসর্গ
রেক্টাল ব্লিডিং হলে নিন্মোক্ত উপসর্গ গুলো দেখা যেতে পারে,
- পায়ুপথে চাপ বা ব্যাথা অনুভব করা
- পায়ুপথ দিয়ে নতুন বা পুরোনো রক্ত বের হওয়া
- লাল, মেরুন বা কালো পায়খানা হওয়া
- মানসিক বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- বিরল লক্ষন হিসেবে, নিন্মরক্তচাপ, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব করতে না পারা অন্যতম।
কখন, কোন ডাক্তার দেখাবেন?
রেক্টাল ব্লিডিং যদি এক দিনের বেশি নিয়মিত ভাবে হয়ে থাকে তবে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, প্রক্টোলজিস্ট (রেক্টাল ও কোলন সার্জন) ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হলে সঠিক চিকিৎসা পাবেন।
রেক্টাল ব্লিডিং ও এনাল ফিসার এর পার্থক্য
পায়ুপথে রক্ত গেলেই তাকে রেক্টাল ব্লিডিং বলে। অন্যদিকে এনাল ফিসার হলো পায়ুপথের শেষ প্রান্ত কেটে যাওয়া। এনাল ফিসারের কেটে যাওয়া স্থান থেকে যদি রক্ত পড়ে তবে তা রেক্টাল ব্লিডিং এর অন্তর্গত হবে। এনাল ফিসারে তীব্র ব্যাথা, জ্বলুনি ও চুলকানী অনুভব করবেন।
খাবার কি পায়খানার রং এ প্রভাব ফেলে?
পায়খানায় অস্বাভাবিক রং খেয়াল করছেন? আতঙ্কিত না হয়ে ভাবুন গতদিন কি খেয়েছেন। অনেক সময় খাবারের রং ও পায়খানার রং এ ভালো তফাৎ রাখতে পারে। রঙিন কোন খাবার অতিরিক্ত খাওয়া পায়খানার রং এ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে জাম, লালশাক, বিট অথবা যেকোনো কৃত্তিম রং মেশানো খাবার যেমন, নিন্মমানের টমেটো সস। আর খাবারের জন্য যদি এমনটা হয়, সেই খাবারটি না খেলে পরবর্তিতে আর পায়খানার রং এ কোন প্রভাব ফেলবে না।
রেক্টাল ব্লিডিং বা মলদ্বারে রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা
পূর্বে উল্লেখ করেছি রেক্টাল ব্লিডিং মূলত কোন রোগ নয় এটি অনেকগুলো রোগের একটি উপসর্গ। যে রোগ বা সমস্যার কারণে পায়ুপথে রক্ত নির্গত হচ্ছে সেই সমস্যাটির সমাধান করা গেলে রেক্টাল ব্লিডিং বন্ধ হয়ে যাবে। সে জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি নিন্মক্ত প্রশ্ন গুলো করতে পারেন, তাই আগে থেকে জেনে রাখা ভালো। মনে রাখবেন, রোগের বর্ণণা যতই গা ঘিনঘিনে হোক, তা ডাক্তার কে আপনার রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।
- রেক্ট্রাল ব্লিডিং কখন শুরু হয়েছিলো?
- শুরু হবার আগের দিন কি খেয়েছিলেন?
- কতবার পায়খানা করেন?
- কোষ্ঠকাঠিন্য আছে কিনা?
- কোন রকম ব্যাথা আছে কিনা?
- নির্গত রক্তের রং কি? ইত্যাদি
আপনার উপসর্গের উপর নির্ভর করে সঠিক রোগটি নির্ণয় করতে ডাক্তার নিন্মোক্ত এক বা একাধিক পরীক্ষা করতে বলতে পারেন,
- পায়ুপথে বাহ্যিক অবস্থার সাধারণ পরীক্ষা
- কোলনোস্কপি
- সিগমোইডিস্কপি
- রক্ত পরীক্ষা।
পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যবেক্ষন করে আপনার সঠিক রোগটির চিকিৎসা প্রাদান করলে রেক্টাল ব্লিডিং সেরে যাবে।
গ্যাস্ট্রিক থেকে কি মলদ্বারে রক্তক্ষরণ হতে পারে?
হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে যদি গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পাকস্থলিতে ক্ষত বা আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই ক্ষত থেকে রক্তপাত হলে রেক্ট্রাল ব্লিডিং হতে পারে। সেক্ষেত্রে পায়ুপথ দিয়ে কালো রক্ত নির্গত হবে। অতএব, গ্যাস্ট্রিক অবহেলা নয়। বলে রাখা ভালো, প্রেসক্রিপশন ছাড়া হরহামেশা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সেবন শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
রেক্টাল ব্লিডিং যেহেতু কোন একক রোগ নয়, এটির কোন নির্দিষ্ট প্রতিকার ও প্রতিরোধ দেওয়া দুঃসাধ্য। কিন্তু যদি আপনি জানেন ঠিক কোন কারণে রেক্টাল ব্লিডিং হচ্ছে তবে আপনি নির্দিষ্ট ভাবে ঐ রোগটির দমনে ব্যাবস্থা নিতে পারবেন। তবু যেহেতু এটি পরিপাক তন্ত্রের রোগ, কিছু সাধারণ জীবন পদ্ধতি মেনে চললে রেক্টাল ব্লিডিং এর রোগগুলো সহ সর্বপরি পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
- প্রচুর পরিমানে পানি পান করা।
- পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
- নিয়ম মাফিক খাবার গ্রহণ করা।
- ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার করা।
- কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা না করা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পরিমাণ মত ইশপ গুলের ভুসি সেবন করা।
- পায়খানার সময় তাড়াহুড়া না করা।
- অতিরিক্ত সময় পায়খানা না করা।
- পায়খানার অবস্থা রং ও ধরণ নিয়মিত পর্যবেক্ষন করা।
রেক্টাল ব্লিডিং হলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পায়খানার ধরণ ও রক্তের ধরণ লক্ষ রাখা। তাছাড়া বেশি ব্যথা অনুভব করলে, ৬ ঘন্টা পরপর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দু একদিন এর জন্য খাওয়া যেতে পারে। কুসুম গরম পানি ভরা বালতিতে বসে থাকাও ব্যাথা কমাতে সাহায্য করবে। সর্বপরি উপসর্গ প্রাথমিক ভাবে না কমলে ডাক্তার দেখানোর কোন বিকল্প নেই।
মলদ্বারে রক্ত পড়া বন্ধ করার ঔষধ, পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কিসের লক্ষণ ,পুরুষের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কিসের লক্ষণ, পায়খানার সাথে রক্ত আসার কারণ ও প্রতিকার