মলনুপিরাভির: কোভিডের মুখে খাওয়ার প্রথম ঔষধ বাংলাদেশের বাজারে | বাজারে করোনার ওষুধ Molnupiravir price দাম ৭০ টাকা

বাংলাদেশের বাজারে এসেছে কোভিড চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার প্রথম ঔষধ মলনুপিরাভির।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এই ঔষধটি ‘এমোরিভির ২০০’ নামে মঙ্গলবারই বাজারে এনেছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের বরাত দিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, বুধবার নাগাদ তাদের তৈরি মলনুপিরাভির বাজারে চলে আসবে।

আর স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা দু-তিনদিনের মধ্যেই ঔষধটি বাজারে নিয়ে আসতে পারবে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপনন বিভাগের পরিচালক আহমেদ কামরুল আলম বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা প্রতিটি পিলের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে রাখবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।

তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই মলনুপিরাভির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অনুমোদন এরই মধ্যে দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঔষধটির জরুরি ব্যবহার ও উৎপাদনের অনুমোদন দেয়ার কথা জানান।

তিনি বলেন, “কোভিডের চিকিৎসায় জরুরি ব্যবহারের জন্য অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে মুখে খাওয়ার ঔষধ মলনুপিরাভিরকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।”

মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান এই ঔষধটি প্রস্তুত ও বাজারজাত করার আবেদন করেছিল। বেক্সিমকো, স্কয়ার ও এসকেএফকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে, বাকী সাতটি প্রতিষ্ঠানও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এর আগে মলনুপিরাভিরকে রোগীদের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

 

মলনুপিরাভির একটি অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ যা কোভিডের বিরুদ্ধে কার্যকর।

মলনুপিরাভির কী?

মলনুপিরাভির একটি ট্যাবলেট বা বড়ি। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ঔষধটি দিনে দুইবার ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদেরকে দেয়া হয়। মূলত এই ঔষধটি ফ্লু এর চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অনুযায়ী, এই ঔষধটি রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয়।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটাই প্রথম ঔষধ যেটি শিরায় প্রয়োগ নয় বরং মুখে সেবন করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক, শার্প এন্ড ডোম (এমএসডি) এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস-এর তৈরি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটিই মুখে খাওয়ার প্রথম ঔষধ।

যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে ঔষধটির চার লাখ ৮০ হাজার কোর্স কিনতে সম্মত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে, নভেম্বরেই এর প্রথম চালান আসবে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় গবেষণার আওতায় প্রাথমিকভাবে এই ঔষধটি টিকা নেয়া এবং না নেয়া-দুই ধরণের রোগীদেরকেই দেয়া হবে। তাদের থেকে পাওয়া তথ্যের বিশ্লেষণের পরই এই ঔষধটি সম্পর্কে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রোগীর মধ্যে কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ঔষধটি দেয়া গেলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।

মলনুপিরাভিরকে রোগীদের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

কিভাবে কাজ করে মলনুপিরাভি?

নতুন এই চিকিৎসায় ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট এনজাইমকে লক্ষ্য করে কাজ করে। ওই এনজাইমটি ব্যবহার করে ভাইরাসটি নিজের মতো আরো ভাইরাস তৈরি করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

এই ঔষধটি ভাইরাসটির জেনেটিক কোডে একটি ত্রুটি তৈরি করবে যা ভাইরাসটিকে বিভাজিত হতে বাধা দেয়। যার কারণে দেহে ভাইরাসের পরিমাণ কমে যায় এবং এর কারণেই রোগের তীব্রতাও কমে যায়।

মার্ক বলছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়ান্টের উপরও সমানভাবে কার্যকর হওয়ার কথা।

যুক্তরাজ্যের ঔষধ এবং স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ জানায়, এই ট্যাবলেটটি সেসব রোগীদের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে যাদের মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এবং কমপক্ষে একটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে যেমন স্থূলতা, বার্ধক্য, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগ।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী জুন রাইন বলেন, “কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ঔষধটি নতুন হাতিয়ার হিসেবে যোগ হল।”

তিনি বলেন, “এটি এই রোগের জন্য বিশ্বের প্রথম অনুমোদিত অ্যান্টি-ভাইরাল যা শিরায় না দিয়ে মুখে খাওয়া যেতে পারে।”

“এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মানে কোভিড-১৯ একটি গুরুতর পর্যায়ে যাওয়ার আগেই হাসপাতালের বাইরেই এর মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।”

কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ঔষধটি দেয়া গেলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।

কতটা কার্যকর?

বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, মলনুপিরাভির ঔষধটি কোভিডের চিকিৎসায় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুহার অর্ধেক কমিয়ে আনতে পারে।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি কোভিড আক্রান্ত ৭৭৫ জন রোগীর ওপর মলনুপিরাভিরের ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়েছে। এতে যা পাওয়া গেছে তা হলো:

•যাদের ঔষধ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ৭.৩% হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল

•যা ১৪.১ % রোগীকে দেয়া সাধারণ পিলের তুলনায় অর্ধেক।

•মলনুপিরাভির যাদেরকে দেয়া হয়েছিল তাদের কারো মৃত্যু হয়নি। তবে পরীক্ষায় অন্য ঔষধ রোগীদের মধ্যে আটজন কোভিড-এ মারা গিয়েছিল।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফলাফলগুলি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এখনও পিয়ার-রিভিউ বা পর্যালোচনা করা হয়নি।

তবে তথ্য-উপাত্ত থেকে যে বিষয়টি জানা যায় সেটি হচ্ছে ঔষধটির কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার পর পরই মলনুপিরাভির সেবন করতে হবে। এর আগে এরইমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণা আশানুরূপ ফল না আসার কারণে স্থগিত করা হয়।

ঔষধটির অনুমোদনের নথিতে, এমএইচআরএ সুপারিশ করে যে, কোভিড পরীক্ষায় পজিটিভ আসার পর যত দ্রুত সম্ভব ঔষধটি সেবন শুরু করতে হবে। উপসর্গ দেখা দেয়া শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যবহার শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক পেনি ওয়ার্ড, যিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন: “যদি এই ফলাফল যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার উপরও একইভাবে কাজ করে, তবে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় এমন রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে যেতে পারে।”

“সম্ভবত মনে হচ্ছে যে এটি রোগের জটিলতার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ রাখা হবে – উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বয়স্ক ব্যক্তি যারা হৃদরোগ, ফুসফুস বা কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারসহ অন্য রোগে ভুগছেন।”

যুক্তরাজ্য ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশও মলনুপিরাভির ক্রয়ে চুক্তি করেছে।

 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

এই ঔষধটির খুব জটিল কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে স্বাভাবিক ধরণের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, মাথাব্যথা, বমি এবং মাথা ঝিমঝিম করার মতো হালকা থেকে মাঝারি ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

তবে এগুলো জটিল কিছু নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই ঔষধটি সেসব রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে যারা ১৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সুপারিশ ছাড়া কোন রোগীকে নিজে নিজে মলনুপিরাভির কিংবা অন্য কোন ঔষধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল ‘মলনুপিরাভির’ বাজারজাতকরণ শুরু করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ২০০ মিলিগ্রামের প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ক্যাপসুল খেতে পারবেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, মলনুপিরাভির ক্যাপসুলের ফুল কোর্স হবে পাঁচদিনে। প্রতিদিন আটটি ক্যাপসুল খেতে হবে, যার মধ্যে সকালে চারটি ও রাতে চারটি। অর্থাৎ পাঁচদিনে মোট ৪০টি ক্যাপসুল খেতে হবে। সেই হিসেবে একজন রোগীর জন্য ফুল কোর্সের মলনুপিরাভির দাম পড়বে দুই হাজার ৮০০ টাকা।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক (মার্কেটিং) রিজভী উল কবির জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে রাজধানী ঢাকায় এবং আজ মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) থেকে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে মলনুপিরাভির ক্যাপসুল পাওয়া যাচ্ছে।

রিজভী উল কবির বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও গাইডলাইন মেনে আমরা এক হাজার ৬০০ বক্স মলনুপিরাভির ক্যাপসুলের নমুনা জমা দিয়েছিলাম। অধিদপ্তরের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে এ ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। এরপরই আমরা মলনুপিরাভির ক্যাপসুল বাজারজাত শুরু করেছি।’

বেক্সিমকো ছাড়াও করোনার ক্যাপসুল উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে এসকে অ্যান্ড এফ, ইনসেপটা এবং জেনারেলসহ আরও বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি।

মঙ্গলবার দুপুরে এসকে অ্যান্ড এফ ফার্মাসিউটিক্যালসও ওষুধটির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে বলে জানান।

 

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও উপ-পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দেশে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় এর আগে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য রেমিডিসিভির উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ইউএস এফডিএ যেহেতু করোনার চিকিৎসায় অনুমোদন প্রদান করেছে তাই জরুরি ব্যবহারের জন্য আমাদেরও অনুমোদন দিয়েছে।’

মার্কিন ওষুধ কোম্পানি মার্ক, শার্প অ্যান্ড ডোহম (এমএসডি) এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপটিকসের ‘মলনুপিরাভির’ করোনা চিকিৎসায় প্রথম অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেটের অনুমোদন দেয়, যা ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ না করে ওষুধ হিসেবে খাওয়া যাবে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার করোনা চিকিৎসায় ই মলনুপিরাভির ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এরপরই মূলত দেশে এই ওষুধটির উৎপাদন ও ব্যবহারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মলনুপিরাভির: ,কোভিডের মুখে খাওয়ার প্রথম ঔষধ বাংলাদেশের বাজারে , বাজারে করোনার ওষুধ ‘মলনুপিরাভির’, দাম ৭০ টাকা,করোনার ক্যাপসুল বানাবে দেশের ১০ কোম্পানি

Leave a Reply