মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা (৬০০ শব্দ,৫টি) | মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সন্তানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে তার মাতাপিতা। … বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন।

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা ১

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনার সংকেত(Hints)

  • ভূমিকা
  • বিভিন্ন ধর্মে মাতাপিতার অবস্থান
  • মাতাপিতার ভূমিকা
  • মাতাপিতার প্রতি করণীয়
  • মাতাপিতার সন্তুষ্টিতে করণীয়
  • মাতাপিতার বার্ধক্যে করণীয়
  • উপসংহার

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা

ভূমিকা:

প্রত্যেক মানুষেরই জীন ও অস্তিত্ব মাতাপিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এ পৃথিবীতে কোনােভাবেই কোনাে সন্তান বাবা-মায়ের ঋণ শােধ করতে পারে না। সন্তানের কাছে মাতাপিতার আসন সবার ওপরে। জন্মের পর থেকে সন্তান লালিত পালিত হয় মাতাপিতার সাহচর্যে, নিবিড় স্নেহচ্ছায়ায়। সন্তানের আচরণ, শিক্ষা- এককথায় জীবন গড়ে ওঠে মাতাপিতার প্রভাবে । তাই সকল সন্তানের উচিত তাদের অপার স্নেহের প্রতিদান দেওয়া।

বিভিন্ন ধর্মে মাতাপিতার অবস্থান:

প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে সম্মানজনক স্থান দিয়ে তাদের সামাজিক মর্যাদার আসনটিকে গৌরবান্বিত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত’ ঘােষিত হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে মাতাপিতার সন্তুষ্টি ব্যতীত সন্তানের জান্নাতপ্রাপ্তি অনিশ্চিত। হিন্দু বর্ণিত আছে’ ‘জননী স্বর্ণ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম; পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি। পিতাকে সন্তুষ্ট করলে সকল দেবতা সন্তুষ্ট হন। খ্রিষ্টধর্মেও এরূপ কথা বলা হয়েছে। সর্বোপরি ধর্ম মাতাপিতাকে তাদের যােগ্য অবস্থানের স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনাে ধর্মই মাতাপিতার উচ্চ আসনকে খর্ব করেনি।

মাতাপিতার ভূমিকা:

পৃথিবীর আলােতে সন্তানের দিনযাপন শুরু হবার আগেই মাতৃগর্ভে সন্তানের জন্ম ও বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। বেঁচে থাকার জন্যে অনিবার্য খাদ্যটুকুও মায়ের সহযােগিতা ছাড়া গ্রহণ করতে পারে না। মাতাপিতার যুগল প্রচেষ্টা এবং সেবায় বড় হতে থাকে শিশু। সন্তানের পড়াশুনা নিশ্চিত করা, ভরণপােষণ, স্বাস্থ্যের প্রতি মনােযােগ ইত্যাদি বিষয়ে যত্নশীল। তত্ত্বাবধানের পর যতক্ষণ না সন্তান স্বাবলম্বী বা আত্মনির্ভরশীল হবে; সে পর্যন্ত মাতাপিতার কোনাে স্বস্তি নেই। মােটকথা। জীবনের সুদীর্ঘ সময় সন্তানের প্রতি মাতাপিতা থাকেন নির্ভরশীল সহায়ক শক্তি, যে শক্তির ওপর সন্তান রচনা করে তার অনাগত দিনের ভিত্তি। তাই স্তানের প্রতি মাতাপিতার এ অবদানকে বড় করে দেখাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: এলন মাস্ক এর জীবনী- Elon Musk Biography | অসাধারণ মে, বা কেন ইলন মাস্কের মা তার চেয়ে শীতল

মাতাপিতার প্রতি করণীয়:

মাতাপিতা পরম স্নেহে সন্তানকে লালন করলেও সন্তানের প্রতি এমন কোনাে দাবি প্রকাশ করে না। প্রতিদান হিসেবে সন্তানের নিকট মাতাপিতা মােটা অঙ্কের অর্থ কিংবা অন্য কোনাে বিনিময় প্রত্যাশা করেন না। তবুও মাতাপিতার প্রতি সন্তানের রয়েছে অনেক করণীয়। মাতাপিতাকে সম্পূর্ণ আন্তরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তাদের অসুস্থতায় সর্বাগ্রে সন্তানকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে । মাতাপিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা সন্তানকে বুঝতে দিতে চান না, সে ক্ষেত্রে সন্তানের উচিত নিজে উদ্যোগী হয়ে মাতাপিতার প্রতি উদার ব্যবহার করা । পিতা যদি উপার্জনে অক্ষমও হন সন্তানের উচিত নয় পিতাকে সহযােগিতা না করা এমনকি মাতাপিতার ভুল কাজেও সন্তানের কঠোর আচরণ করা সংগত নয় । মাতাপিতার সাথে পরম আত্মীয়সুলভ আন্তরিক আচার ব্যবহার করতে হবে যাতে পারিবারিক জীবন হয়ে ওঠে আনন্দমুখর।

মাতাপিতার সন্তুষ্টিতে করণীয়:

যুগে যুগে যে সকল মহামানবদেরকে জগতের শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে তাদের জীবন আলােচনা করলে দেখা যায়, তারা ছিলেন মাতাপিতার প্রতি অসীম শ্রদ্ধাশীল । তারা মনে করতেন মাকে অশ্রদ্ধা করলে মাটি অপবিত্র হয় এবং পিতাকে অন্তুষ্ট করলে সৃষ্টিকে অস্বীকার করা হয়। মাতার সন্তুষ্টির জন্যে বালক বায়েজিদ বােস্তামি নিদ্রাহীন রাত পার করেছিলেন। মা খুশি হয়ে স্রষ্টার কাছে আশীর্বাদ কামনা করলেন। পরবর্তীতে বায়েজিদ আল্লাহর প্রিয় মানুষে পরিণত হলেন। মায়ের সন্তুষ্টি বালক বায়েজিদের জীবনে যে উন্নতি বয়ে এনেছিল তা ছিল পৃথিবীবাসীর জন্যে একটি বড় উদাহরণ । পক্ষান্তরে, মাতাপিতার অসন্তুষ্টি সন্তানের জন্যে অমঙ্গলেরও কারণ। ধর্মে আছে মাতাপিতা যদি সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে স্রষ্টা নিজেও তাঁর বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাই সকলের উচিত মাতাপিতার প্রতি যত্নবান হওয়া যাতে তারা সন্তুষ্ট থাকেন।

মাতাপিতার বার্ধক্যে করণীয়:

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সকল মানুষকেই বর্ধক্যে উপনীত হতে হয় বার্ধক্যকে ব্যাধিও বলা হয়ে থাকে বার্ধক্য মানুষের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতাকে থামিয়ে দেয়। এক সময়ের বলবান মানুষটিই বার্ধক্যের সিঁড়িতে এসে বলহীন হয়ে পড়ে। শারীরিক সামর্থ্য হারিয়ে উপার্জন করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সন্তানকেই দেখা যায় মাতাপিতাকে পরিবারের জন্যে বােঝা মনে করে এবং তাদেরকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে । সন্তান উপার্জনক্ষম অথচ তার বৃদ্ধ মাতাপিতা বৃদ্ধাশ্রমে এ অবস্থা কোনাে সন্তান বা পরিবারের জন্যে আনন্দদায়ক সংবাদ নয়। বৃদ্ধ মাতাপিতাকে সন্তানের সাধ্যমতাে সেবা করা উচিত । মাতাপিতার সুচিকিৎসা এবং প্রয়ােজনীয় সেবাদান সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব।

উপসংহার:

মাতাপিতা সন্তানের জন্যে শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ। মাতাপিতার সতর্ক পৃষ্ঠপােষকতার ফলেই সন্তান উচ্চতর জীবনের সন্ধান লাভ করে। মাতাপিতা ও সন্তানের বন্ধন পৃথিবীতে পরম ভালােবাসার বন্ধন। মাতাপিতার প্রতি উপযুক্ত কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে সে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হতে পারে।

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা 2

ভূমিকা :

জন্মের জন্যে আমরা মাতাপিতার কাছে ঋপী ৷ এই ঋণ অপরিশোধ্য । এ জন্য  প্রত্যেক  ধর্মেই  পিতামাতাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । ‘মায়েৱ পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ ৷ ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী’ ৷ ‘পিতা ধর্ম, পিতা কর্ম, পিতাই পরম তপস্যাৱ ব্যক্তি ৷ পিতামাতা যেমন আমাদের স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে ছোট থেকে বড় করেছেন তেমনি পিতা-মাতার প্রতি ও আমাদের অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে।

সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান :

প্রত্যেক মা-বাবাই সীমাহীন আত্মত্যাগ করে পরম স্লেহে সন্তানকে বড় করে তোলেন | সন্তানকে লালন-পালন করা, তার লেখাপড়া, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে মা-বাবা সারাজীবনই উদ্ধীগ্ন থাকেন I মা-বাবা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান, নিজে না পরে ভালো পােশাকটি সন্তানের গায়ে তুলে দেন I সন্তানের জন্য উৎকণ্ঠায় মা-বাবা বিনিদ্র রজনী কাটান ৷ সন্তানের যে-কােনো অমঙ্গল মা-বাবার জন্য বেদনার কারণ হয় ৷ কঠোর পরিশ্রম আর সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা-বাবা যা আয় রােজগার করেন, তা নিঃস্বার্থভাবে সন্তানের জন্যই ব্যয় করেন ৷ ব্টবৃক্ষের মতো মা-ৰাবাৱ আশ্রয়ে…প্রশ্রয়ে সন্তান বড় হয়, বিকশিত হয় I সতানেৱ প্রতি মা-ৰাৰার এই যে মায়া-মমতা, তা স্বর্গীয় ৷ সন্তানের জীবনে মা-বাবা  আশীৰ্বাদস্বরুপ । তাই কোনো অবস্থাতেই মাতাপিতাকে অবহেলা করা সন্তানের জন্য গর্হিত কাজ ৷ মাতাপিতার মনে কষ্ট জাগে, এমন আচরণ ও কথা কখনো বলা উচিত নয় ।

মাতাপিতার প্রতি সতানের দায়িত্ব ও কতর্ব্য :

সন্তানের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাতাপিতাকে শ্রদ্ধা করা ৷ তাদের শ্রেষ্ঠ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করা I তাদের প্রতি সবসময় বিনম্র আচরণ করা I মনে রাখতে হবে মাতাপিতরে শাসনের আড়ালে থাকে ভালোবাসা, মঙ্গল কামনা । তাদের মতো অকৃত্রিম স্বজন পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই ।

মাতাপিতা যেমনই হোক না কেন, সন্তানের কাছে তারা সব সময় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি I তাই তাদের অবাধ্য হওয়া কোনো ফ্রমেই উচিত নয় I অবাধ্য সন্তান মাতাপিতার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷ কৃতী সন্তান পিতামাতাৱ কাছে মাথার মুকুটস্বরুপ I যে সন্তান মাতাপিতার প্ৰতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত, তারা জীবনে সাফল্য লাভ করে । হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (রা) ডাকাত কর্তৃক আক্রান্ত হয়েও মাতৃ-আজ্ঞা পালন করেছেন মিথ্যা কথা না বলে । এতে ডাকাত সর্দার অভিভূত হয়ে সৎপথ অবলম্বন করেছিল I হযরত বায়েজিদ বোষ্তামির (রা) অসুস্থ মাতার শিয়রে সারারাত পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মায়ের ডাকে দুর্যোগপূর্ণ রাতে সাঁতার দিয়ে দামোদর নদী পার হওয়ার কাহিনী কে না জানে I এঁরা সকলেই জীবনে সফল হয়েছেন এবং মহান ব্যক্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন ৷ কাজেই মাতাপিতার কথা মেনে চলা এবং তাদের প্ৰতি কর্তব্য পালন করা আমাদের জীবনে সফলতার সােপানও বটে ।

অনেক মাতাপিতা আছেন, তারা নিজে অশিক্ষিত হয়েও সন্তানকে উচ্চশিক্ষা দান করেন I সেই সন্তান পড়ালেখা করে উচ্চ পদে আসীন হয়ে অনেক সময় তাদের মাতাপিতার প্ৰতি কোনো দায়িত্ব পালন করেন না । তাদের প্রতি শ্রু’ধা-ভালোবাসা দূরে থাক, ন্যূনতম দায়িত্ব ও কর্তব্যও পালন করেন না ৷ এটা সবচেয়ে দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় । কোনো সুসস্তান কখনো মা-বাবার প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করতে পারে না । বৃদ্ধ অবস্থায় মা-বাবা সন্তানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন I এ অবস্থায় তাদের অসুখ ও স্বাস্থের প্রতি অধিক নজর দিতে হবে । তাঁদের সেবা-শূশ্রুষার প্ৰতি যত্নশীল হওয়া সস্তানের একান্ত কর্তব্য ।

উপসংহার :

পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সুসন্তান হওয়ার আবশ্যিক শর্ত I বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনে মা-রাবাৱ সেবা ও তাদের প্ৰতি যথার্থ কর্তব্য পালন করে সন্তান হিসেবে নিজের জ়ন্মঋণ শোধ করা উচিত ৷ যদিও মা-ৰাবাৱ ঋণ অপরিশোধ্য, তবু তাদের যেন অযত্ন, অবহেলা না হয়, যে দিকে খেয়লো রাখতে হবে । তাদের মনে কষ্ট হয়, এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে । বিশেষত, বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা যদি সন্তানের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না পান, এর চেয়ে দুঃখের আর পরিতাপের কিছু নেই । এ অমানবিক ও হীন কাজ কেউ যেন না করে ।

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা 3

ভূমিকাঃ

একটি শিশুর যখন জন্ম হয় তখন সে থাকে অনেক ছোট, আর অনেক বেশি অসহায় । সে হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না, নিজে নিজে খেতে পারে না । সে আসলে কিছুই পারে না । বাবা-মা এই ছোট্ট, অসহায় শিশুটিকে অনেক আদর-যত্ন করে বড় করে তোলেন । তাই মা-বাবাই আমাদের সবচেয়ে বড় আপনজন, সবচেয়ে প্রিয় মানুষ । আমরা আমাদের মা-বাবার কাছে চিরঋণী । এই ঋণ কখনোই শোধ করা যাবে না । তাই আমাদের উচিৎ মা-বাবার প্রতি আমাদের কর্তব্যগুলো সঠিক ভাবে পালন করা ।

মাতা-পিতার অবদানঃ

একটি শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে তখন মায়ের অনেক কষ্ট হয় । নয় মাস মায়ের পেটে থাকার পর শিশুটির যখন জন্ম হয় তখন মায়ের আরও বেশি কষ্ট হয় । মা-বাবা এই ছোট্ট অসহায় শিশুটিকে আদর-যত্ন করে বড় করে তোলেন । মা-বাবা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন । আমাদের জন্য খাবার, কাপড়, বই-খাতা, ঔষধ, খেলনা কিনে দেন । মা আমাদের খাবার খাইয়ে দেন, গোসল করিয়ে দেন, কাপড় কেঁচে দেন, অসুখ হলে সারা রাত জেগে সেবা করেন । মা-বাবা আমাদের স্কুলে নিয়ে যান, লেখাপড়া শেখান, ভয় পেলে সান্ত্বনা দেন, আর অনেক অনেক আদর করেন ।

মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যঃ

মা-বাবা আমাদের অনেক আদর করেন, যত্ন নেন । সে জন্য সন্তানদেরও উচিৎ মা-বাবার কথা শোনা, তাদের যত্ন নেয়া । লেখাপড়া করলে তারা খুব খুশি হন । তাই আমাদের উচিৎ ভালো ভাবে লেখা পড়া করা, বিভিন্ন কাজে যতটুকু পারি তাদেরকে সহযোগিতা করা । মা-বাবা যা করতে বলেন তা ভালো ভাবে করা উচিৎ । যা করতে নিষেধ করেন সেটা কখনোই করা উচিৎ না । এ সম্পর্কে মহানবী (স)
বলেন –

“মা-বাবার সন্তুষ্টির উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি নির্ভর করে । আর আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টিও মা-বাবার অসন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে ”

অর্থাৎ, মা-বাবা খুশি হলে আল্লাহও খুশি হন । আর মা-বাবা সন্তানের উপর মন খারাপ করলে আল্লাহ্‌ও ঐ সন্তানের উপর মন খারাপ করেন ।

বিখ্যাত হিন্দু পণ্ডিত স্বামী বিবেকান্দ বলেন –

“মনে রাখবে, মা-বাবা হচ্ছেন স্রষ্টার প্রতিরূপ । তাই যে কোন উপায়ে মা-বাবাকে খুশি রাখবে । মা-বাবা খুশি হলে স্রষ্টাও তোমার উপর খুশি হবেন ।”

খ্রিস্টান ধর্মে বলা হয়েছে –

“বাচ্চারা মা-বাবার কথা শোনো । তাদেরকে সম্মান করো । তাহলেই তোমাদের ভালো হবে । আর অনেক দিন বাঁচবে ।”

মহানবী (স) বলেছেন –
“মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত । ”

অর্থাৎ, যারা মায়ের সেবা করবে তারা বেহেস্তে যাবে ।

হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে –
“পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম”

অর্থাৎ, বাবার সেবা করলে অনেক পূর্ণ হবে, আর স্বর্গে যাওয়া যাবে ।

মা-বাবার সাথে সন্তানের আচরণঃ

মা-বাবার সাথে কখনোই খারাপ আচরণ করা উচিত না । আমরা কখনোই মা-বাবার সাথে বেয়াদবি করব না, তাদেরকে ধমক দিব না, তাদের সাথে রাগ করব না, উঁচু গলায় কথা বলব না । আমরা এমন কিছু করব না যাতে তাদের মন খারাপ হয় । পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্‌ আদেশ দিয়েছেন –

“মা-বাবার সাথে ভালো ব্যাবহার করো । তাদেরকে ধমক দিবে না। তাদের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো ।”
[সূরা বনি ইসরাইলঃ ২৩-২৪]

স্বামী বিবেকান্দ বলেন –

“সে ছোট শিশুটি অনেক ভালো শিশু যে কখনই মা-বাবার সাথে কর্কশভাবে কথা বলে না ।”

সন্তানের আচরনে মা-বাবা কষ্ট পেলে আল্লাহ্‌ প্রচন্ড রাগ করেন । এ সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন –

“মা-বাবকে কষ্ট দিলে সন্তানের গুনাহ আল্লাহ্‌ মাফ করেন না । তাকে তিনি পৃথিবীতেই নানা বিপদ দিয়ে শাস্তি দেন ।”

মা-বাবা ভুল করলে তাদের প্রতি কর্তব্যঃ

মা-বাবাও মানুষ । তারাও মাঝে মাঝে ভুল বা অন্যায় কাজ করতে পারেন । কিন্তু মা-বাবা সন্তানের জন্য এত কষ্ট করেন আর এত আদর করেন যে মা-বাবা কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করলেও তাদের সাথে কখন কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না । তখন তাদের ভদ্র ভাবে বুঝাতে হবে । অনেক সময় লজ্জা পেয়ে তারা সন্তানের কথা শুনতে চাইবেন না । তখন তারা যাদের কথা শোনেন (যেমনঃ শিক্ষক, দাদা-দাদি, নানা-নানি বা অন্য বড় কেউ) তাদেরকে দিয়ে বোঝাতে হবে ।

মা-বাবা কখনও কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করতে বললে সেটা করা যাবে না । কিন্তু সে সময়ও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না । তখনও তাদেরকে ভদ্র ভাবে বুঝাতে হবে ।

মা-বাবা সন্তানকে কখনও কষ্ট দিলেও মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া যাবে না । মহানবী (স) বলেন –
“মা-বাবা সন্তানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না । বরং তাদেরকে সেবা করতে হবে ।”

বৃদ্ধ হলে মা-বাবার প্রতি কর্তব্যঃ

মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাদের যত্ন নেয়া উচিৎ । কখনোই বিরক্ত হওয়া উচিৎ না । আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে বলেন যে–
মা-বাবার সেবা করতে গিয়ে কখনও বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দটিও করা যাবে না ।

মা-বাবা মারা গেলে কর্তব্যঃ

মা-বাবা মারা গেলে সন্তানদের কর্তব্য তাদের জন্য দোয়া করা । সব সময় তাদে জন্য আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতে হবে –

See also  (৫টি রচনা) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা

“হে আল্লাহ্‌, তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন ভাবে আমার ছোট বেলায় তারা আমাকে দয়া করেছেন ।”
[সূরা বনি ইসরাইলঃ ২৪]

উপসংহারঃ

মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করলে আর তাদের কথা মত চললে আমরা জীবনে অনেক বড় হতে পারবো । তখন সবাই আমাদেরকে খুব ভালো বলবে । তাই আমাদের উচিৎ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে পালন করা । তাহলে আমরাও একদিন বড় হব, জীবনে অনেক সুখ আর শান্তি পাব ।

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা 4

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব : সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন—

একত্ববাদের বাণী শোনানো : সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

মহানবী (সা.) বলেন,  যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব : সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন—

একত্ববাদের বাণী শোনানো : সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

মহানবী (সা.) বলেন,  যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।অর্থবহ নাম রাখা : মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে বংশের মধ্যে। ফলে মাতা-পিতার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন—আবদুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, আসিয়া নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, জামিলা, বুররা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জয়নব’। ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে আসেন। রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘হাজন’ (শক্ত)। মহানবী (সা.) এ নাম পরিবর্তন করে সাহল (সহজ) রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা পরিবর্তন করব না। মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে সদা কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪০৯)।

উত্তম হলো আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাম রাখা। যেমন—আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখা।

আকিকা করা : শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে (বায়হাকি)।

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব : সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন—

একত্ববাদের বাণী শোনানো : সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

মহানবী (সা.) বলেন,  যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।অর্থবহ নাম রাখা : মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে বংশের মধ্যে। ফলে মাতা-পিতার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন—আবদুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, আসিয়া নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, জামিলা, বুররা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জয়নব’। ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে আসেন। রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘হাজন’ (শক্ত)। মহানবী (সা.) এ নাম পরিবর্তন করে সাহল (সহজ) রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা পরিবর্তন করব না। মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে সদা কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪০৯)।

উত্তম হলো আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাম রাখা। যেমন—আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখা।

আকিকা করা : শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে (বায়হাকি)।

খতনা করানো : মাতা-পিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো পুত্রসন্তানের খতনার ব্যবস্থা করা। এটি সুন্নতে ইবরাহিমি। হজরত ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে নিজের খতনা নিজে করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, স্বভাবসম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে একটি হলো খতনা।

যথাযথ প্রতিপালন : সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মাতা-পিতার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো মাতা-পিতার কর্তব্য। তার পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন—আল্লাহ আমার মাকে জাজায়ে খায়ের দান করুন। তিনি আমার লালন-পালন ও অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানবী (সা.) ইমাম হাসান-হোসাইনকে চুমু দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জনৈক গ্রামবাসী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনারা কি শিশুদের চুমু দেন, আমরা তো চুমু দিই না। মহানবী (সা.) তার কথা শুনে বলেন, আমার কী ক্ষমতা! যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া উঠিয়ে নেন (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব : সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন—

একত্ববাদের বাণী শোনানো : সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

See also  (৫টি রচনা) সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা রচনা

মহানবী (সা.) বলেন,  যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।অর্থবহ নাম রাখা : মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে বংশের মধ্যে। ফলে মাতা-পিতার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন—আবদুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, আসিয়া নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, জামিলা, বুররা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জয়নব’। ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে আসেন। রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘হাজন’ (শক্ত)। মহানবী (সা.) এ নাম পরিবর্তন করে সাহল (সহজ) রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা পরিবর্তন করব না। মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে সদা কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪০৯)।

উত্তম হলো আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাম রাখা। যেমন—আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখা।

আকিকা করা : শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে (বায়হাকি)।

খতনা করানো : মাতা-পিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো পুত্রসন্তানের খতনার ব্যবস্থা করা। এটি সুন্নতে ইবরাহিমি। হজরত ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে নিজের খতনা নিজে করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, স্বভাবসম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে একটি হলো খতনা।

যথাযথ প্রতিপালন : সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মাতা-পিতার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো মাতা-পিতার কর্তব্য। তার পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন—আল্লাহ আমার মাকে জাজায়ে খায়ের দান করুন। তিনি আমার লালন-পালন ও অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানবী (সা.) ইমাম হাসান-হোসাইনকে চুমু দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জনৈক গ্রামবাসী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনারা কি শিশুদের চুমু দেন, আমরা তো চুমু দিই না। মহানবী (সা.) তার কথা শুনে বলেন, আমার কী ক্ষমতা! যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া উঠিয়ে নেন (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।

আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই হবে দেশ ও জাতির কর্ণধার। তারা যদি হয় নম্র, ভদ্র, নীতিবান ও চরিত্রবান তবে গোটা সমাজই হবে নীতিবান ও চরিত্রবান। তাই ছোট সময়েই তাদের এভাবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে—কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস। অর্থাৎ ছোট সময় আদব-কায়দা ঠিক করতে না পারলে বড় হলে ঠিক করা যাবে না।

দ্বিনি শিক্ষা দান : মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো স্বীয় সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষা দান করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবন মাজাহ, বায়হাকি, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩৪) আল্লামা আবু হেলাল আসকারি বলেন, শিশুর জ্ঞান-বুদ্ধি হলে প্রথমে তার কাছে আল্লাহর পরিচয় দিতে হবে। তারপর অলংকার শাস্ত্র ও কোরআন শিক্ষা দিতে হবে। কোরআনের মাধ্যমে সে রাসুলকে চিনবে এবং রাসুলের  মাধ্যমে আল্লাহকে চিনবে (কিতাবুস সানায়াতাইন)। পিতার অর্থ-সম্পদ ও মায়ের তত্ত্বাবধান উভয়ের মাধ্যমেই সন্তান হতে পারে সুশিক্ষিত ও আদর্শবান। ইমাম রাবিয়াতুর রায়ের মাতা স্বামীর রেখে যাওয়া ৮০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে স্বীয় পুত্রকে যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মাতা স্বীয় পুত্রকে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদে প্রেরণের কাহিনি সর্বজনবিদিত।

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব : সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন—

একত্ববাদের বাণী শোনানো : সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

মহানবী (সা.) বলেন,  যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।অর্থবহ নাম রাখা : মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে বংশের মধ্যে। ফলে মাতা-পিতার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন—আবদুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, আসিয়া নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, জামিলা, বুররা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জয়নব’। ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে আসেন। রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘হাজন’ (শক্ত)। মহানবী (সা.) এ নাম পরিবর্তন করে সাহল (সহজ) রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা পরিবর্তন করব না। মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে সদা কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪০৯)।

উত্তম হলো আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাম রাখা। যেমন—আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখা।

আকিকা করা : শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে (বায়হাকি)।

খতনা করানো : মাতা-পিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো পুত্রসন্তানের খতনার ব্যবস্থা করা। এটি সুন্নতে ইবরাহিমি। হজরত ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে নিজের খতনা নিজে করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, স্বভাবসম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে একটি হলো খতনা।

যথাযথ প্রতিপালন : সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মাতা-পিতার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো মাতা-পিতার কর্তব্য। তার পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন—আল্লাহ আমার মাকে জাজায়ে খায়ের দান করুন। তিনি আমার লালন-পালন ও অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানবী (সা.) ইমাম হাসান-হোসাইনকে চুমু দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জনৈক গ্রামবাসী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনারা কি শিশুদের চুমু দেন, আমরা তো চুমু দিই না। মহানবী (সা.) তার কথা শুনে বলেন, আমার কী ক্ষমতা! যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া উঠিয়ে নেন (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।

আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই হবে দেশ ও জাতির কর্ণধার। তারা যদি হয় নম্র, ভদ্র, নীতিবান ও চরিত্রবান তবে গোটা সমাজই হবে নীতিবান ও চরিত্রবান। তাই ছোট সময়েই তাদের এভাবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে—কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস। অর্থাৎ ছোট সময় আদব-কায়দা ঠিক করতে না পারলে বড় হলে ঠিক করা যাবে না।

দ্বিনি শিক্ষা দান : মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো স্বীয় সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষা দান করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবন মাজাহ, বায়হাকি, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩৪) আল্লামা আবু হেলাল আসকারি বলেন, শিশুর জ্ঞান-বুদ্ধি হলে প্রথমে তার কাছে আল্লাহর পরিচয় দিতে হবে। তারপর অলংকার শাস্ত্র ও কোরআন শিক্ষা দিতে হবে। কোরআনের মাধ্যমে সে রাসুলকে চিনবে এবং রাসুলের  মাধ্যমে আল্লাহকে চিনবে (কিতাবুস সানায়াতাইন)। পিতার অর্থ-সম্পদ ও মায়ের তত্ত্বাবধান উভয়ের মাধ্যমেই সন্তান হতে পারে সুশিক্ষিত ও আদর্শবান। ইমাম রাবিয়াতুর রায়ের মাতা স্বামীর রেখে যাওয়া ৮০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে স্বীয় পুত্রকে যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মাতা স্বীয় পুত্রকে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদে প্রেরণের কাহিনি সর্বজনবিদিত।

শিষ্টাচার শিক্ষা দান : সন্তানকে নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, পিতা স্বীয় সন্তানকে শিষ্টাচার অপেক্ষা উত্তম কিছু শিক্ষা দিতে পারে না। (তিরমিজি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪২৩)। বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে মাতা-পিতাকেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমার প্রকৃত উম্মত নয়। (তিরমিজি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪২৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করো এবং তাদের আচার ব্যবহার সুন্দর করো। (তারগিব ও তারহিব)

মাতা-পিতাকে নিজেদের আচার ব্যবহার, চাল-চলন, কথা-বার্তা ইত্যাদির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, শিশুর জন্য মাতৃক্রোড় পাঠশালাতুল্য। সে মাতা-পিতার অনেক কিছু অনুকরণ ও অনুসরণ করে। সন্তানের সঙ্গে রাগ করা, চেঁচামেচি করা, গালমন্দ করা ইত্যাদি বৈধ নয়। মহানবী (সা.) বালক আবদুল্লাহর সঙ্গে খানা খাওয়ার সময় শিক্ষা দিয়েছেন, হে বালক! বিসমিল্লাহ পড়ো, কাছের থেকে খাও এবং ডান হাতে খাও।

ইবাদতে অভ্যস্ত করা : মাতা-পিতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি ইবাদতে অভ্যস্ত করা। তাছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, অপরকে সালাম দেওয়া এবং সুন্নত তরিকা মোতাবেক চলার প্রশিক্ষণ দেওয়া। মহানবী (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের সন্তানের বয়স সাত বছর হয়, তখন নামাজ পড়ার তাগিদ দাও এবং যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হয় তখন নামাজ পড়ার জন্য শাসন করো। আর তখন তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ, মিশকাত পৃষ্ঠা-৫৮)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিজের পরিবার-পরিজনকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচলিত থাকো…।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩২)

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রূপ মাতা-পিতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিক জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।) ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)। আল্লাহ আলুসি (রহ.) বলেছেন, ধনসম্পদ প্রাণরক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশরক্ষার মাধ্যম। সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। বৃদ্ধকালে সন্তানই হয় মাতা-পিতার আল্লাহ ছাড়া একমাত্র ভরসা।সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব : সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন—

একত্ববাদের বাণী শোনানো : সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া। এর ফলে সন্তানের কানে সর্বপ্রথম একত্ববাদের বাণী পৌঁছে। হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩)

মহানবী (সা.) বলেন,  যখন তোমাদের সন্তানেরা কথা বলতে শেখে তখন তাদের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু শিক্ষা দাও (বায়হাকি)।অর্থবহ নাম রাখা : মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে নামের মাধ্যমে। দুনিয়ার এ নামেই পরকালে তাকে ডাকা হবে। এ নামের প্রভাব পড়ে বংশের মধ্যে। ফলে মাতা-পিতার কর্তব্য হলো তার সন্তানের একটি অর্থবহ নাম রাখা। মহানবী (সা.) অর্থবহ নয় এমন অনেক নাম পরিবর্তন করেছেন। যেমন—আবদুল ওজ্জা নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আবদুল্লাহ, আসিয়া নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন, জামিলা, বুররা নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জয়নব’। ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে আসেন। রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘হাজন’ (শক্ত)। মহানবী (সা.) এ নাম পরিবর্তন করে সাহল (সহজ) রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা পরিবর্তন করব না। মুসাইয়্যিব (রহ.) বলেন, এর পর থেকে আমাদের পরিবারে সদা কঠিন অবস্থা ও পেরেশানি লেগে থাকত (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪০৯)।

উত্তম হলো আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাম রাখা। যেমন—আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান ইত্যাদি। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। বালিকাদের জন্য উত্তম হলো আমাতুল্লাহ, আমাতুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখা।

আকিকা করা : শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে বন্ধক থাকে। সুতরাং তার জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে, মাথার চুল মুণ্ডন করবে ও নাম রাখবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা করবে (বায়হাকি)।

খতনা করানো : মাতা-পিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো পুত্রসন্তানের খতনার ব্যবস্থা করা। এটি সুন্নতে ইবরাহিমি। হজরত ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে নিজের খতনা নিজে করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, স্বভাবসম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে একটি হলো খতনা।

যথাযথ প্রতিপালন : সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মাতা-পিতার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো মাতা-পিতার কর্তব্য। তার পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন—আল্লাহ আমার মাকে জাজায়ে খায়ের দান করুন। তিনি আমার লালন-পালন ও অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানবী (সা.) ইমাম হাসান-হোসাইনকে চুমু দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জনৈক গ্রামবাসী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনারা কি শিশুদের চুমু দেন, আমরা তো চুমু দিই না। মহানবী (সা.) তার কথা শুনে বলেন, আমার কী ক্ষমতা! যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে দয়া-মায়া উঠিয়ে নেন (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।

আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই হবে দেশ ও জাতির কর্ণধার। তারা যদি হয় নম্র, ভদ্র, নীতিবান ও চরিত্রবান তবে গোটা সমাজই হবে নীতিবান ও চরিত্রবান। তাই ছোট সময়েই তাদের এভাবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে—কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস। অর্থাৎ ছোট সময় আদব-কায়দা ঠিক করতে না পারলে বড় হলে ঠিক করা যাবে না।

দ্বিনি শিক্ষা দান : মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো স্বীয় সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষা দান করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবন মাজাহ, বায়হাকি, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩৪) আল্লামা আবু হেলাল আসকারি বলেন, শিশুর জ্ঞান-বুদ্ধি হলে প্রথমে তার কাছে আল্লাহর পরিচয় দিতে হবে। তারপর অলংকার শাস্ত্র ও কোরআন শিক্ষা দিতে হবে। কোরআনের মাধ্যমে সে রাসুলকে চিনবে এবং রাসুলের  মাধ্যমে আল্লাহকে চিনবে (কিতাবুস সানায়াতাইন)। পিতার অর্থ-সম্পদ ও মায়ের তত্ত্বাবধান উভয়ের মাধ্যমেই সন্তান হতে পারে সুশিক্ষিত ও আদর্শবান। ইমাম রাবিয়াতুর রায়ের মাতা স্বামীর রেখে যাওয়া ৮০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে স্বীয় পুত্রকে যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মাতা স্বীয় পুত্রকে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদে প্রেরণের কাহিনি সর্বজনবিদিত।

শিষ্টাচার শিক্ষা দান : সন্তানকে নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, পিতা স্বীয় সন্তানকে শিষ্টাচার অপেক্ষা উত্তম কিছু শিক্ষা দিতে পারে না। (তিরমিজি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪২৩)। বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে মাতা-পিতাকেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমার প্রকৃত উম্মত নয়। (তিরমিজি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪২৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করো এবং তাদের আচার ব্যবহার সুন্দর করো। (তারগিব ও তারহিব)

মাতা-পিতাকে নিজেদের আচার ব্যবহার, চাল-চলন, কথা-বার্তা ইত্যাদির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, শিশুর জন্য মাতৃক্রোড় পাঠশালাতুল্য। সে মাতা-পিতার অনেক কিছু অনুকরণ ও অনুসরণ করে। সন্তানের সঙ্গে রাগ করা, চেঁচামেচি করা, গালমন্দ করা ইত্যাদি বৈধ নয়। মহানবী (সা.) বালক আবদুল্লাহর সঙ্গে খানা খাওয়ার সময় শিক্ষা দিয়েছেন, হে বালক! বিসমিল্লাহ পড়ো, কাছের থেকে খাও এবং ডান হাতে খাও।

ইবাদতে অভ্যস্ত করা : মাতা-পিতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি ইবাদতে অভ্যস্ত করা। তাছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, অপরকে সালাম দেওয়া এবং সুন্নত তরিকা মোতাবেক চলার প্রশিক্ষণ দেওয়া। মহানবী (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের সন্তানের বয়স সাত বছর হয়, তখন নামাজ পড়ার তাগিদ দাও এবং যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হয় তখন নামাজ পড়ার জন্য শাসন করো। আর তখন তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ, মিশকাত পৃষ্ঠা-৫৮)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিজের পরিবার-পরিজনকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচলিত থাকো…।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩২)

সন্তানের জন্য দোয়া : সন্তানকে আদব-কায়দা ও সুশিক্ষা দিলেই যথেষ্ট হবে না, তাদের জন্য মহান প্রভুর দরবারে দোয়াও করতে হবে। অনুরূপ সন্তান লাভের জন্য দোয়া করতে হবে। জাকারিয়া (আ.) এভাবে দোয়া করেছেন, ‘…হে আমার রব! আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে সৎ বংশধর দান করুন, অবশ্যই আপনি দোয়া শ্রবণকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)

বিয়ের ব্যবস্থা করা : সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা মাতা-পিতার অন্যতম দায়িত্ব। মহানবী (সা.) তিনটি কাজ দ্রুত করতে বলেছেন—১. ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়া, ২. ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা, ৩. জানাজা উপস্থিত হলে জানাজা পড়া। (তিরমিজি ও মিশকাত)

আজকে আপনাদের কে মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা দিয়েছি আশা করি আপনাদের অনেক উপকার হয়েছে।

 

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা 5

ভূমিকা: স্ৰষ্টার সৃষ্টিশীল জগতে স্রষ্টার পরে পিতামাতাই আমাদের সৃষ্টির উৎস। বাস্তব জীবনে পিতামাতাই আমাদের অস্তিত্ব দান করেন। তাঁরা আমাদের লালন-পালন করেন। তাঁদের আদর-স্নেহে আমরা বড় হয়ে উঠি। পিতামাতা যেমন আমাদের প্রতি অনেক দায়িত্ব পালন করেন তেমনই পিতামাতার প্রতি আমাদেরও অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে।

পিতামাতার প্রতি ব্যবহার: আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলাে পিতামাতার সঙ্গে ভালাে ব্যবহার করা। তাঁদের সঙ্গে কোনাে অবস্থাতেই দূর্ব্যবহার করা উচিত নয়। তাদের সঙ্গে সবসময় নম্র আচরণ করতে হবে। এমন কোনাে ব্যবহার পিতামাতার সাথে করা যাবে না, যাতে তাঁরা মনক্ষুণ্ন হন। তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করতে হবে- যে ব্যবহার পেলে আমাদের প্রতি তাঁদের ভালােবাসা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাবে। তাঁরা সন্তানকে শাসন করার জন্যে কোনাে কোনাে সময় কটুকথা ও কঠোর আচরণ করলেও তা সন্তানের মজ্গলের জন্যেই করে থাকেন। পিতামাতার শাসনের আড়ালে থাকে ভালােবাসা। তাঁদের মতাে এমন অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী দ্বিতীয় আর নেই। সন্তানের উচিত পিতামাতার সাথে ভালাে ব্যবহার করে তাঁদেরকে সম্মানিত করা, তাদের আবেগ-অনুভূতিকে মূল্যায়ন করা। পিতামাতা সন্তানের মুখ দেখলেই মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। চোখের আড়ালে থাকলেও সন্তানের কোনাে অমঙ্গল হলে তারা ঠিকই বুঝতে পারেন। সন্তানের প্রতি পিতামাতার এই যে মায়া-মমতা-অনুভূতি-দায়িত্ব এসবই সন্তানকে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকে। সন্তানের কাছে তারা বটবৃক্ষের মতাে। বটবৃক্ষের মতাে ছায়া দ্বারা সন্তানকে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে সহযােগিতা করেন তাঁরা। সন্তানের উচিত পিতামাতার ভালােবাসাকে, মায়া-মমতাকে মর্যাদাপূর্ণ ও অর্থবহ করতে তাঁদের প্রতি ভালাে ব্যবহার করা, নম্র আচরণ করা। নম্র আচরণের মাধ্যমে সন্তান তার পিতামাতার মনে যেমন শান্তি দিতে পারে তেমনই সে নিজেও তাদের নিবিড় সম্পর্কের বন্ধনে জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে কানায় কানায় ভরিয়ে তুলতে পারে।

ভরণপােষণের ব্যবস্থা করা: পিতামাতা যেমন আমাদের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে লালন-পালন করে বড় করে তােলেন তেমনই আমাদেরও উচিত পিতামাতার ভরণপােষণের ব্যবস্থা করা। তারা যখন অসহায় হয়ে পড়েন অর্থাৎ যখন তাঁদের কাজ করার কোনাে ক্ষমতা থাকে না, তখন তাদের ভরণপােষণের দায়িত্ব সন্তানের নেওয়া উচিত। নিজেরা যা খাবে তাদেরও তাই খেতে দিতে হবে। এমনকী তাদের জন্যে মাঝে মাঝে আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। রােগে শােকে সেবা-যত্ন করতে হবে, ওষুধ-পত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যেন কোনাে দিক দিয়ে মনে কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

বৃদ্ধকালীন পরিচর্যা: সন্তানের উচিত বৃদ্ধকালে পিতামাতার উপযুক্ত পরিচর্যার ব্যবস্থা করা। কারণ বৃদ্ধকালে তারা অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের কাজের ক্ষমতা থাকে না, এমনকী চলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রতিটি সন্তানের উচিত এ সময় তাদের পাশে থাকা এবং তাদের প্রতিটি কাজে সর্বাত্মক সহযােগিতা করা। সন্তানের মনে রাখা উচিত একদিন সে নিজেও পিতা হবে, বয়সে বৃদ্ধ হবে। সে তার পিতামাতার জন্যে যতটুকু করবে তার সন্তানও তার জন্যে ততটুকুই করবে। কারণ তার সন্তান তার কাছ থেকে দেখে এসব শিখবে। পিতামাতা বয়সে বৃদ্ধ হলেও সন্তানকে মনে রাখতে হবে যে, পিতামাতার কারণে সে তার জীবন লাভ করেছে, জীবন পরিচালনার উপায় ও পথ পেয়েছে।

অবাধ্য না হওয়া: কোনােভাবেই পিতামাতার অবাধ্য হওয়া উচিত নয়। পিতামাতা যা বলে তা শুনতে হবে। তাঁরা যেটা করতে নিষেধ করে সেটা না করাই ভালাে। কারণ পিতামাতা ভালাে জানেন সন্তানের জন্যে কোনটি মঙ্গলজনক। এমন কোনাে পিতামাতা নেই যারা সন্তানের অমজ্গল চান। বায়েজীদ বােস্তামী রেখে গেছেন মাতৃসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বােস্তামীর মাতা ঘুম থেকে জেগে পানি চেয়েছিলেন। কলসিতে পানি নেই দেখে তিনি রাত দুপুরে চলে যান ঝরণা থেকে পানি আনতে। এসে দেখলেন মা আবারও ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুম থেকে জাগালে তিনি কষ্ট পাবেন ভেবে বােস্তামী মাকে ডাকলেন না। মা জাগার পর দেখলেন বােস্তামী পানি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এ অবস্থা দেখে বোেস্তামীর মা বােস্তামীর জন্যে প্রাণ খুলে দোয়া করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বােস্তামী মাতার প্রতি কর্তব্যের এক উজ্জ্বল নজির রেখে গেছেন।

বিভিন্ন ধর্মের আলােকে: পবিত্র হাদিসে উল্লেখ আছে যে, পিতামাতার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। তাই পিতামাতাই আমাদের ইহজগৎ ও পরকালের একমাত্র মুক্তির উপায়। সবার আগে পিতামাতার দোয়া কাজে লাগে। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্মেই পিতামাতার স্থান সর্বোচ্চ দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা এমন কিছু করব না যে কাজে পিতামাতা অসন্তুষ্ট হন। পিতামাতার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি সম্ভব।

মৃত্যুর পরের কর্তব্য: পিতামাতার মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য থেকে যায়। তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা। সন্তান যদি পিতামাতার কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন। পিতামাতা ঋণগ্রস্ত থাকলে সন্তানেরই তা পরিশােধ করা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত

উপসংহার: পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য লিখে শেষ করা যাবে না। পিতামাতা ছাড়া যেমন আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না তেমনই তাদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন ছাড়া আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি ভাবা যায় না। আমাদেরকে বায়েজীদ বােস্তামীর মতাে পিতামাতাকে সেবা করার নজির সৃষ্টি করতে হবে।

গুরুজনের প্রতি কর্তব্য রচনা, মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা pdf, মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য রচনা, ক্লাস ৪ পিতা রচনা পিতা মাতার গুরুত্ব, মা বাবার প্রতি কর্তব্য, পিতা মাতাকে সম্মান করতে হবে, কেন পিতা মাতা সম্পর্কে হাদিস,The responsibility and duty of the child towards the parents

Leave a Reply