Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
মিথ্যের দেশে সত্য আজ নির্বাসনে, সত্য আজ কারাগারে, কাঠগড়ায়।

মিথ্যের দেশে সত্য আজ নির্বাসনে, সত্য আজ কারাগারে, কাঠগড়ায়। Taslima Nasrin

বেচারা ঝুমন দাস আপন। সত্যি কথা বলেছে বলে এবারও জেলে যেতে হয়েছে। একবার মানুনুল হক নামের এক ক্রিমিনাল মোল্লাকে নিয়ে কিছু সত্য কথা লিখেছিল ফেসবুকে, তখনও জেল হয়েছিল। জেল থেকে ফিরে ঝুমন অনেকটা ঘরবন্দি জীবন যাপন করছিল। কিন্তু উচিত কথা ভয়ে বা নির্ভয়ে মাঝে মধ্যেই বলছিল। অন্যদের মতো মুখে কুলুপ আঁটেনি। উচিত কথা প্রশাসনের সইবে কেন? মিথ্যের বেসাতি করা লোকেরা তাই ঝুমনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশে এত অনাচার, অন্যায়, দুর্নীতি, লুটপাট, ধর্ষণ, খুন নির্বিবাদে চলছে, আর সেদিকে নজর না দিয়ে গ্রামের এক সহজ সরল যুবক নিজের কী মত প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে পুলিশেরা।
ঝুমন বলেছে যে মন্দিরের গেটে মসজিদের দানবাক্স ঝুলছে, মসজিদের গেটে কি মন্দিরের দানবাক্স ঝুলতে পারবে? পারবে না, কারণ দেশে সংখ্যাগুরুর গুণ্ডামি চলছে। এক ফোঁটা কি ভুল বলেছে ঝুমন? ঝুমন হিন্দু বলেই বুঝি ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে, সত্য কথা উচ্চারণ করা তার বারণ? হিন্দুরা কি প্রতিদিন দেখছে না সংখ্যাগুরুর গুণ্ডামি? দেখছে না তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, তাদের মন্দির ধ্বংস করা, তাদের সহায় সম্পদ লুঠ করা ?
এ দেশ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের যতটা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঠিক ততটাই। শেখ হাসিনা উন্মত্ত হিংস্র জি-হা-দিদের নিয়ন্ত্রণ করছেন না বলে হিন্দুদের ওপর তাদের অকথ্য নির্যাতন বৈধতা পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে নিরপরাধকে বিশেষ করে দেশের প্রগতিশীল মুক্তচিন্তকদের শাস্তি দেওয়া, তাদের হেনস্থা করা, তাদের জীবন দুর্বিষহ করা শেখ হাসিনার এজেন্ডা। স্তাবক পরিবেষ্টিত হয়ে অনন্তকাল দেশের ক্ষমতা উপভোগ করা যাদের উদ্দেশ্য, তারা চিরকালই গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের পথের কাঁটা বলেই মনে করে।
আর কতকাল চিৎকার করে বলতে হবে ঝুমন দাসের মুক্তি চাই? চিৎকার করে আমরা তো বলছিই, মুক্তবুদ্ধির মুক্তি চাই, বাক স্বাধীনতার মুক্তি চাই, মত প্রকাশের মুক্তি চাই, গণতন্ত্রের মুক্তি চাই, কিন্তু কে দেবে মুক্তি? মানবতাবিরোধী ধর্মান্ধদের পাশে রাষ্ট্র, সমাজ, প্রশাসন, প্রতিষ্ঠান। মুক্তবুদ্ধির পাশে দাঁড়িয়ে সামান্য কিছু সৎ এবং সাহসী মানুষ। মুক্তবুদ্ধি আজ সংখ্যালঘু। এই সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে বহুকাল হলো গুণ্ডামি আর ইতরামি করেই যাচ্ছে বর্বর সংখ্যাগুরু ।
মিথ্যের দেশে সত্য আজ নির্বাসনে, সত্য আজ কারাগারে, কাঠগড়ায়। সত্য আজ গোরস্থানে, শ্মশানে। সত্য নেই।

 

Leave a Reply