এমন একটা সময় ছিল, যখন মেয়েদের মাসিক হওয়া অনেকটা অভিশাপের মতো ছিল। পিরিয়ড চলাকালীন এই সময়ে মেয়েদের অপবিত্র বলে মনে করা হতো। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য আলাদা ঘর, আলাদা খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু আলাদা করে দেওয়া হতো। তাদের অনেকটা একঘরে করে দেওয়া হতো।
সময় বদলেছে, এর সঙ্গে বদলেছে সমাজের নানা ট্যাবুও। তবে এখনও বেশিরবভাগ মা তার কন্যা সন্তানের ঋতুমতী হওয়ার খবরটি সবার কাছ থেকে লুকোতে চান। ছোট্ট মেয়ের নারী জীবনের নতুন অধ্যায় সূচনার ঘটনাটি কাউকে জানাতে চান না এই সোশ্যাল ট্যাবুর কারণেই।
তবে এই ট্যাবুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফেনী শহরের এক পরিবার। কন্যার মাসিক শুরুর উপলক্ষ্যকে লাল রঙের একটি কেক কেটে উদযাপন করেছে তারা।
ফেসবুকে ‘প্রজেক্ট কন্যা’ নামের একটি পেজে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেই কেকের ছবি পোস্ট করা হয়। অনেকেই প্রথম মাসিক উদযাপনের এই ভাবনাকে সাধুবাদ জানান।
গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ প্রজেক্ট কন্যার পরিচালক আতিয়া নূর চৌধুরী বলেন, পরিবারের ‘ছোট্ট মেয়েটি’ ভয় না পেয়ে পিরিয়ড বিষয়টি যেন সহজভাবে নিতে পারে, তাই এ উদযাপন। বর্তমানে মাসিক নিয়ে কথা না বলার একটা চর্চা রয়েছে। তবে এতে পরিবর্তন আনছেন অনেকেই; এমনকি মফস্বলের পরিবারগুলোও। এই পরিবারটিও তেমন একটি উদাহরণ।’
কন্যা সন্তানের প্রথম পিরিয়ড হওয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে পরিবারের এমন আয়োজনকে ‘চমৎকার’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমার বোন ফেনী শহরে থাকেন, কেক বানানোর একটা ফেসবুক পাতা আছে তার। সেখানকার ছবি ঘাঁটতে গিয়ে একটা কেকের ছবি চোখে পড়ল। কেকটা অনেকটা সিঁড়ির অবয়বে বানানো এবং এতে একটা ছোট মেয়ের প্রতি ধাপে বড় হয়ে উঠার গল্প ফোটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’
কেকটি লাল রঙের, যেটি দেখতে চার ধাপের সিঁড়ির মতো। প্রতিটি ধাপে ছোট থেকে বয়ঃসন্ধি বেলার কন্যা শিশুর একটি করে আদল বসানো। কেকটির নিচে লেখা ছিল ‘নিউ লাইফ…’।
ফেনী কলেজে পলিটিকাল সায়েন্সে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান চৌধুরী প্রিমা এই কেকটি বানিয়েছেন। ঘরেই বাণিজ্যিকভাবে কেক বানাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার অধিকাংশ ক্রেতাই রিপিট কাস্টমার, তাই তাদের সঙ্গে আমার মোটামুটি পরিচয় রয়েছে। পরিচিত একজন আপু তার মেয়ের প্রথম পিরিয়ড সেলিব্রেট করার জন্য আমাকে কেকের অর্ডার দিয়েছিলেন।’
যে পরিবার ওই কেক অর্ডার করেছিলেন, পরে তাদের অনুমতি নিয়েই প্রজেক্ট কন্যার ফেসবুক পাতায় ছবিটি প্রকাশ করা হয়।
প্রজেক্ট কন্যার ফেসবুক পাতায় দেওয়া ওই পোস্ট এরই মধ্যে চার হাজারের মতো বেশি শেয়ার হয়েছে। আর কমেন্টও পড়েছে। অনেকে যেমন এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন, কেউ কেউ আবার নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন। তবে যারা নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তাদের সমুচিত জবাবও দিয়েছেন।