“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলতে হবে করোণা মুক্ত জোন হিসাবে”। দুলাল চৌধুরী 

দুলাল চন্দ্র চৌধুরী 

কাউকেই দোষারোপ করে কার্যোদ্ধার হবেনা ভুল শুদ্ধ বুঝিনা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবেভুল থেকেই শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবেভুল কেন হল? কার জন্য হল বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে ভুলের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে দিকে খেয়াল দিতে হবেযিনি ভুল করেছেন তাকে বাদ দিয়ে নয়, কাজটি তাকে দিয়ে বা তাকে নিয়ে করতে হবেতবেই ভুলের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনাযিনি ভুল করেছেন তার  পূর্ব অভিজ্ঞতা আছেএকই ভুল সে বার বার করবে নাকরোনার শুরু থেকেই কোন কিছুই থেমে নেইকরোনার চিকিৎসা আমরা জানতাম নাতাই বলে কী চিকিৎসা থেমে ছিল?আমাদের ডাক্তার নার্স প্যাথোলজিষ্ট সবাই কিন্তু যার যার মতো কাজ করে গেছেনভুল হয়েছেআবার কাজ করতে করতে তা শুধরেও নিয়েছেএখন কিন্তু তাদের একটি মোটমুটি ধারণা এসে গেছেকেউ কী একই ভুল বার বার করেছে?মানুষ ইচ্ছে করে এই একটা জিনিসই করনা আর সেটা হল ভুল। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলতে হবে করোণা মুক্ত জোন হিসাবে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলতে হবে করোণা মুক্ত জোন হিসাবে

More Read: প্রধান শিক্ষকদের অধিকার বাস্তবায়নে আসছে নতুন সংগঠন

আজ এক বছর দুই মাসেরও বেশি সময় চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ আছে বিষয় নিয়ে আমাদের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেইআবার স্কুল খুলে দেওয়ার কথা কেউ বললে একশ্রেণির লোক তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেনমনে হয় যেন বিড়াট কোন  অন্যায় করা হয়েছেস্কুল খোলার বিরুদ্ধে কিছু বলা মানেই মহাজ্ঞানীর পরিচয় দেওয়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদানের বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হলঅনলাইন  পাঠদান করাতে নানান বিপত্তি আমাদের সামনে হাজির হলঅভিভাবকদের সামর্থের বিষয় আসলসকল শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারেনি ডিভাইসের অভাবে, ইন্টারনেটের অভাবেসে অভাব পূরণ হওয়ার আগেই শুরু হল নতুন সমস্যা শিক্ষার্থীদের গেইসে আসক্তিতারা বাবামায়ের কষ্টের টাকায় কেনা মোবাইলে দিয়ে এখন গেইস খেলেতারা গেইমস খেলার সাথে সাথে জড়িয়ে পরছে নানা কু অভ্যাসের সাথেএগুলো ঘটে যাচ্ছে শিক্ষক, অভিভাবকদের অযান্তেশিক্ষার্থী তো এখন আর শিক্ষকদের টাচে নেইশিক্ষার্থী কী করে বা না করে সব দেখাশুনার সার্বিক দায় এখন অভিভাবকের উপরপরেছেঅভিভাবক কী সার্বক্ষণিক তার সন্তানকে সময় দেওয়া সম্ভবনা সম্ভব নয় দায়িত্ব আমরা শিক্ষক অভিভাবক ভাগাভাগি করে পালন করেছি যাবৎ কালখন সব দায়িত্ব পরেছে অভিভাবকের উপরঅভিভাবকেও তার সংসার চালানোর জন্য কাজে যেতে হচ্ছেআর এসময়ে শিক্ষার্থীরা বাসায় একা থাকেতাদের গাইড দেওয়ার মতো কেউ থাকে নাস্কুল যখন খোলা ছিল তখন সময় তারা  তাদের স্কুলে থাকত সম্মানিত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানেসেখানে আর যাই হউক না কেন তারা সেখানে মোবাইলে গেইস খেলার সুযোগ পেতনাস্কুল বন্ধ থাকার বারতি সময়ে ড়িয়ে পরছে নানান অপরাধের সাথেকথায় আছে না অলস মস্তিষ্ক শয়তানে কারখানা। 

More Read: “স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি এখন সার্বজনীন  ” দুলাল চৌধুরী

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সাথে যুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য  যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তার সকল উপায় অবলম্বনের পরও আমরা লক্ষ্য করছি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে দূরে  সরে যাচ্ছেআমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে পারছিনাবরং শিক্ষার্থীবৃন্দ শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেযুক্ত হচ্ছে ভিডিও গেইমসের মতো ডিজিটাল নেশায়শুধুই যে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তাই নয়ব্যহত হচ্ছে শারীরিক মানসিক বিকাশঅভাব দেখা দিচ্ছে সামাজকরনেরযুক্ত হচ্ছে অসামাজিক কার্যকলাপেতৈরি হচ্ছে কিশোর  অপরাধী চক্রশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কুপ্রভাব সমাজকে আস্তে আস্তে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেতৈরি হচ্ছে অন্তসারশূন্য একটি প্রজন্মকরোনার শুরুতে আমাদের অনেকে মধ্যে ধারণা জন্ম নিলেও তা প্রকাশ করার সাহস হয়নিএখন যদি আমরা নির্বিকার বসে থাকি তবে জাতি হিসাবে আমাদের চরম মূল্য  দিতে হবে ক্ষতি নবায়ন যোগ্য নয়।।আমরা করোনা মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থায় কলকারখানা চালু রাখছি,গার্মেন্টস খুলে রাখছি,শপিং মল খোলা, পরিহনের কারণে রাস্তায় জানজট লেগে আছে,শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছেএখানে শুধু সরাসরি পাঠদানের বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ক্লাস, সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস , Assignment দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আওতায় আনা যাবে নাএটা এখন প্রমাণিত সত্য সরাসরি পাঠদানের বিকল্প অনলাইন ক্লাস নয়শিক্ষার্থীদের শারীরিক মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখার জন্য কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায় সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবেআমরা আর কোন গবেষণা চাই নাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন।  কী কী নিয়ম মানলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায় তার  বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করার সময় এখন  এসে গেছে। 

আমাদের হাজারো মানুষের দাবি স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্কুল খুলে দেওয়ারস্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হতে পারে করোনা মুক্ত অঞ্চল

বিভাগ জেলা শহরের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত দেশের প্রায় অধিকাংশ স্কুল কলেজ রয়েছে প্রশস্থ খেলার মাঠঅধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছেতাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেনি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভবআমি মনেকরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীবৃন্দ শিক্ষার সাথে যুক্ত হবেশিক্ষার্থীদের শারীরিক মানসিক প্রশান্তি ফিরে আসবেশিক্ষক, শিক্ষার্থী , শিক্ষা কর্মী, ম্যানেজিং কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে করোনা মুক্ত রাখা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবমাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিআমাদের প্রতিষ্ঠান ভেদে এই প্রস্তুতি ভিন্ন ভিন্ন হবেযেখানে যে রকম প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব, যে রকম প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, আমরা সাধ্য মত সকল প্রকার প্রস্তুতি নিতে প্রস্তুতশিক্ষার্থীদের মাধ্যমে আমরা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারিশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী প্রতি আমরা বিনীত অনুরোধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কী ভাবে করোনা মুক্ত রাখা যায় তার উপায় খুজে বের করার জন্য    সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পক্ষকে কাজে লাগাতে হবেমাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখর জন্য যে নির্দেশনা পত্র দিয়েছিল তা অনুসরণ করলে চলবে

More Read: “অর্থই অনর্থের মূল” দুলাল চৌধুরী

তারপরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে করোনা মুক্ত রাখা কিছু পরামর্শ নিম্নে দেওয়া হলঃ

০১.শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে শিক্ষক কর্মচারীদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে

০২অভিভাবকদের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। 

০৩স্থানীয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সংযোগ বৃদ্ধি করতে

০৪স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা এন জি কে কাজে লাগাতে হবে। 

কমিউনিটি ইনভলভমেন্ট বাড়াতে হবে। 

০৬স্বাস্থ্যবিধি মানার সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে

০৭সংকটকালীন সময়ে বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে বাড়িতে জনবল নিয়োগ দিতে হবে। 

০৮শিক্ষার্থীদের পূর্বের চেয়ে বেশি করে খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। 

০৯শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মযজ্ঞের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। 

১০শিক্ষাক্রম, সিলেবাস তৈরি, পরীক্ষা নেওয়া, জাতীয় ধর্মীয় ছূটি বাদে সকল ছুটি প্রদানের ক্ষমতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে

১১শিক্ষার্থীদের মুক্ত পরিবেশে পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা করতে। 

১২যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেনা শুধুমাত্র সেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিফট করে ক্লাস চালু করবে

১৩শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনা মহামারি মধ্যে চালু রাখতে গিয়ে যে বাড়তি ব্যয় হবে তা ভর্তুকি হিসেবে সরকারই দিতে হবে। 

আমরা যদি করোনার নির্মূলের অপেক্ষায় থাকি আমরা এস.ডি জি. লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হব২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের দেশের হিসেবে মর্যাদা অর্জনের জন্য যে দক্ষ, অভিজ্ঞ,প্রশিক্ষিত, গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি প্রয়োজন হবে সেইরূপ জন সম্পদ তৈরিতে আমরা  ব্যর্থ হব

তাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে করোনা মুক্ত অঞ্চল তৈরির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবেআমার বিশ্বাস এটা করতে আমরা সমর্থ হব। 

দুলাল চন্দ্র চৌধুরী 

প্রধান শিক্ষক

ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় সাংগঠনিক সম্পাদক 

বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ। 

Leave a Reply