সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ লেখো।

#সমাসকাকেবলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ লেখো।

@#সমাসপ্রকারকি

বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের একটি বিশিষ্ঠ প্রক্রিয়া হল সমাস। অর্থসম্মন্ধে যুক্ত দুটি বা তার বেশি শব্দকে জুড়ে নতুন একটি শব্দ গঠন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় সমাস। যেমনঃ ভালো ও মন্দ = ভালোমন্দ, চোরা যে বালি = চোরাবালি, হাত দ্বারা ছানি = হাতছানি, দশ ভুজ যার = দশভুজা, নব গ্রহের সমাহার = নবগ্রহ, ঘরে ঘরে = প্রতিঘর, দুধে ও ভাতে = দুধেভাতে ইত্যাদি।

সমাস কাকে বলে?

সমাস শব্দের অর্থ কি?

সমাস শব্দের অর্থ হল – অর্থগতভাবে পারস্পরিক সম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একপদীকরণ। সমাস হল দুই বা ততধিক শব্দের আঠগত মিলন। সমাস শব্দটির সাধারণ অর্থ হল – সংক্ষেপ।

👉#সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ বা মিলন।

👉পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদকে একপদে পরিণত করাকে সমাস বলে।

👉আরও সংক্ষেপে বললে বলতে হয়,বহুপদকে এক পদে পরিণত করাকে সমাস বলে।

👉আরও সংক্ষেপে বললে বলতে হয়,একপদিকরণকে সমাস বলে।।

👉যেমন:গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে=গায়েহলুদ।

এখানে ছয়টি পদকে একপদে পরিণত করে হলো ‘গায়েহলুদ ‘,সুতারাং এ ধরনের সংক্ষিপ্ত করণকে সমাস বলে।

সমস্যমান পদ কাকে বলে?

যেসব পদের দ্বারা সমাস গঠিত হয়, তাদের প্রত্যেকটিকে বলা হয় সমস্যমান পদ। যেমনঃ জন্ম ও মৃত্যু = জন্মমৃত্যু। এই  উদাহরনটিতে ‘জন্ম’ এবং ‘মৃত্যু’ —এই দুটি হল সমস্যমান পদ।

যে-কোন সমাসে দুটি সমস্যমান পদ থাকে — পূর্বপদ এবং পরপদ বা উত্তরপদ। যে দুটি পদের দ্বারা সমাস সঙ্ঘটিত হয়, তার প্রথমটিকে পূর্বপদ এবং পরবর্তীটিকে বলা হয় পরপদ বা উত্তরপদ।  যেমনঃ জন্ম ও মৃত্যু = জন্মমৃত্যু। এই  উদাহরনটিতে ‘জন্ম’ হল পূর্বপদ এবং ‘মৃত্যু’ পরপদ।

Read More: কারক কাকে বলে? কারক কয় প্রকার ও কী কী

সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ কাকে বলে?
সমস্যমান পদ বা পূর্বপদ এবং পরপদ দুটির মিলনে যে নতুন পদটি গঠিত হয়, তাকেই সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ। যেমন — জন্ম ও মৃত্যু = জন্মমৃত্যু। এই  উদাহরনটিতে ‘জন্ম’ এবং ‘মৃত্যু’ —এই দুটি হল সমস্যমান পদের মিলনে গঠিত “জন্মমৃত্যু” হল সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ।

ব্যাসবাক্য বা সমাসবাক্য পদ কাকে বলে?

সমস্তপদটির গঠনগত অর্থ বিশ্লেষণের জন্য যে বাক্যাংশের প্রয়োগ করা হয়, তাকেই ব্যাসবাক্য বা সমাসবাক্য বলে। যেমন — জম্মমৃত্যু – এই সমাসবদ্ধ পদটির অর্থ বোঝার জন্য পূর্ব ও পর পদের সাহায্যে একটি বাক্যংশ তৈরি করতে হয়। যেমন – জন্ম ও মৃত্যু। এক্ষেত্রে জন্ম ও মৃত্যু হল ব্যাসবাক্য বা সমাসবাক্য।

সমাস কত প্রকার কি কি

বর্তমান পাঠ্যক্রমে বাংলা সমাসকে মোট 9 টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হলঃ

দ্বন্দ্ব সমাস

কর্মধারায় সমাস

তৎপুরুষ সমাস

বহুব্রীহি সমাস

দ্বিগু সমাস

অব্যয়ীভাব সমাস

নিত্য সমাস

অলোপ সমাস

বাক্যাশ্রয়ী সমাস

সমাস সাধারণত ছয় প্রকার । যথা :-

১. দ্বন্দ্ব সমাস।যেমন: মা-বাবা,কাপড়-চোপড়,দা-কুমড়া ইত্যাদি।

২. বহুব্রীহি সমাস।যেমন: দশানন,দশভূজা,আশীবিষ ইত্যাদি।

৩. অব্যয়ীভাব সমাস।যেমন: আনত,আমরণ,আকণ্ঠ ইত্যাদি।

৪. দ্বিগু সমাস।যেমন: পঞ্চনদ,ত্রিভূজ,শতাব্দী ইত্যাদি।

৫. তৎপুরুষ সমাস।যেমন: গাছপাকা,ঘিমাখা,আপাদমস্তক ইত্যাদি।

৬. কর্মধারয় সমাস।যেমন: বিষাদসিন্ধু, কাজলকালো,রাজর্ষি ইত্যাদি।

আবার,

👉পূর্বপদ ও পরপদের অর্থের প্রাধান্যের ভিত্তিতে সমাস চার প্রকার।যথা:

১. উভয় পদের অর্থ প্রধান।যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস।

২. উভয় পদের অর্থ প্রধান নয়,বরং তৃতীয় আরেকটি পদকে বুঝায়।যেমন: বহুব্রীহি সমাস।

৩. পূর্ব পদের অর্থ প্রধান।যেমন: অব্যয়ীভাব সমাস।

৪. পর পদের অর্থ প্রধান। যেমন: দ্বিগু, তৎপুরুষ, কর্মধারয় সমাস।

Read More: পদ কি? পদ কাকে বলে?

নিম্নে বিভিন্ন প্রকার সমাসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উপস্থাপন করা হলোঃ—

বর্তমান পাঠ্যক্রমে বাংলা সমাসকে মোট 9 টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হলঃ
দ্বন্দ্ব সমাস
কর্মধারায় সমাস
তৎপুরুষ সমাস
বহুব্রীহি সমাস
দ্বিগু সমাস
অব্যয়ীভাব সমাস
নিত্য সমাস
অলোপ সমাস
বাক্যাশ্রয়ী সমাস

1. দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

যে সমাসের সমস্যমান পদদুটি কোনো সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত এবং যেখানে সমস্যমান দুটি পদেরই অর্থ সমানভাবে প্রাধান্য পায়, তাকে বলা হয় দ্বন্দ্ব সমাস। যেমনঃ ধনী ও গরিব = ধনীগরীব। এই সমাসে ‘ধনী‘ পূর্বপদ এবং ‘গরিব‘ পরপদ। এখানে সমস্যমান পদ দুটি সংযোজক অব্যয় ‘ও’ দ্বারা যুক্ত হয়ে সমাস বদ্ধহয়েছে।

দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

ভাই ও বোন ভাইবোন

কাঁচা ও পাকা কাঁচাপাকা

তুমি আর আমি তুমিআমি

বাড়ি ও ঘর বাড়িঘর

স্বর্গ ও নরক স্বর্গনরক

2. কর্মধারায় সমাস কাকে বলে?

যে সমাসের সমস্যমান পদ দুটির মধ্যে যখন একটি বিশেষ্য এবং অন্যটি বিশেষণ কিংবা উভয় পদই বিশেষ্য অথবা বিশেষণ হয় এবং পরপদটির অর্থ প্রাধান্য পায়, তখন তাকে বলা হয় কর্মধারায় সমাস। যেমন – বিশ্ব যে মানব -= বিশ্বমানব। এই উদাহরনটিতে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে।

কর্মধারায় সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

পূর্ণ যে চন্দ্র পূর্ণচন্দ্র

যিনি রাজা তিনিই ঋষি রাজর্ষি

ঘরে আশ্রিত জামাই ঘর জামাই

মন রূপ মাঝি মনমাঝি

আয়ের উপর কর আয়কর

কারক কাকে বলে? কারক ও বিভক্তি মনে রাখার কৌশল

3. তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?

যে সমাসের পূর্বপদে থাকা কারক ও অ-কারক বিভক্তি বা অনুসর্গ সমস্ত পদে বা সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায় এবং সেইসঙ্গে পরপদটির অর্থটি প্রধান হয়ে ওঠে, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমনঃ কলাকে বেচা = কলাবেচা। সমাসের এই উদাহরনটিতে পূর্বপদের ‘কে’ বিভক্তি লোপ পেয়েছে এবং পরপদ ‘বেচা’ -এর অর্থটিই প্রাধান্য পেয়েছে।

তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

বিয়ের জন্য পাগলা বিয়েপাগলা

অগ্নি থেকে ভয় অগ্নিভয়

গ্রামে বাস করে যে গ্রামবাসী

ছাত্রদের জন্য আবাস ছাত্রাবাস

ঢেঁকি দ্বারা ছাটা ঢেঁকিছাটা

4. বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?

যে সমাসে সমস্যমান পদ দুটির অর্থ প্রধানরূপে প্রকাশিত না হয়ে অন্য্ কোনো অতিরিক্ত অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় বহুব্রীহি সমাস। যেমনঃ পঞ্চ আনন যার = পঞ্চানন। এই সমাসে ‘পঞ্চ’ ও ‘আনন’ -এই সমস্যমান পদ দুটির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে অতিরিক্ত অর্থ – পঞ্চানন প্রাধান্য পেয়েছে।

বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

চক্র পানিতে যার চক্রপাণি

দশ ভুজ যার দশভুজা

বীনা পানিতে যার বীণাপানি

কোলে কোলে যে আলিঙ্গন কোলাকুলি

নেই অপরাধ যার নিরপরাধ

5. দ্বিগু সমাস কাকে বলে?

সংখ্যাবাচক বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হলে এবং তাতে সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ পেলে তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়। যেমনঃ সপ্ত ঋষির সমাহার। এই উদাহরনে পূর্বপদ ‘সপ্ত’ সংখ্যাবাচক বিশেষণ, উত্তরপদ ‘ঋষি’ হল বিশেষ্য এবং ব্যাসবাক্য ‘সমাহার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

দ্বিগু সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

ত্রি ফলের সমাহার ত্রিফলা

নব রত্নের সমাহার নবরত্ন

নব গ্রহের সমাহার নবগ্রহ

দো চালের সমাহার দোচালা

পাঁচ কড়ির সমষ্টি পাঁচকড়ি

6. অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে?

যে সমাসের পূর্বপদে থাকা অনব্যয় পদটি সমাস নিষ্পন্ন হবার পর অব্যয়ের ভাবধারন করে এবং সমাসবদ্ধ পদটিতে পূর্বপদের অর্থটিই প্রধান হয়ে উঠে, তাকেই বলে অব্যয়ীভাব সমাস। যেমনঃ জন্ম হতে = আজন্ম। এই উদাহনটিতে পূর্বপদ ‘জন্ম’ কোন অব্যয় পদ নয় কিন্তু ‘আ’ অব্যয় যুক্ত হয়ে একটি সমাসবদ্ধ হবার পর একটি অব্যয়ের ভাব সৃষ্টি হয়েছে।

অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

কৈশোর থেকে আকৈশোর

বাল হতে আবাল্য

আদি হতে অন্ত আদ্যন্ত

দানের বিপরীত প্রতিদান

নদীর সদৃশ্য উপনদী

6. অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে?

যে সমাসের পূর্বপদে থাকা অনব্যয় পদটি সমাস নিষ্পন্ন হবার পর অব্যয়ের ভাবধারন করে এবং সমাসবদ্ধ পদটিতে পূর্বপদের অর্থটিই প্রধান হয়ে উঠে, তাকেই বলে অব্যয়ীভাব সমাস। যেমনঃ জন্ম হতে = আজন্ম। এই উদাহনটিতে পূর্বপদ ‘জন্ম’ কোন অব্যয় পদ নয় কিন্তু ‘আ’ অব্যয় যুক্ত হয়ে একটি সমাসবদ্ধ হবার পর একটি অব্যয়ের ভাব সৃষ্টি হয়েছে।

অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

কৈশোর থেকে আকৈশোর

বাল হতে আবাল্য

আদি হতে অন্ত আদ্যন্ত

দানের বিপরীত প্রতিদান

নদীর সদৃশ্য উপনদী

7. নিত্য সমাস কাকে বলে?

যে সমাসে প্রকৃতপক্ষে ব্যাসবাক্য হয় না, ব্যাসবাক্য করতে চাইলে অন্য্ পদের সাহায্যে সমস্তপদের অর্থ প্রকাশ করতে হয়, তাকেই নিত্য সমাস বলে। যেমনঃ দেশ + অন্তর = দেশান্তর। সন্ধিবদ্ধ এই উদাহরনটিতে ব্যাসবাক্য ও সমাসবদ্ধ পদ একই। ব্যাসবাক্যটিতে সর্বদা সমাসবদ্ধ থাকে বলে একে নিত্য সমাস বলে। 

নিত্য সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

অন্য্ গ্রাম গ্রামান্তর

অন্য্ ভাষা ভাষান্তর

অন্য্ রূপ রূপান্তর

কেবল হাঁটা হাঁটাহাঁটি

কেবল নাম নামমাত্র

8. অলোপ সমাস কাকে বলে?

সাধারণভাবে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায়। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্স নিষ্পন্ন হবার পরেও পূর্বপদের বিভক্তি আগের মতোই থেকে যায়। এই ধরনের সমাসকে অলোপ সমাস বলে। যেমনঃ দুধে ও ভাতে = দুধেভাতে। এই উদাহরনটিতে পূর্বপদের ‘দুধে’ যুক্ত “এ” বিভক্তি সমস্তপদ “দুধেভাতে”- লোপ পায়নি।

অলোপ সমাসের উদাহরণঃ

ব্যাসবাক্য সমাসবদ্ধ পদ

বনে ও বাদাড়ে বনবাদাড়ে

জলে ও কাদায় জলকাদায়

মনের মানুষ মনেরমানুষ

তেলে ভাজা তেলেভাজা

রোদে পোড়া রোদেপোড়া

9. বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে?

বাক্য বা বাক্যাংশে যখন সমাসবদ্ধ পদরূপে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। বাক্যাশ্রয়ী সমাসে সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে এক-একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হয়।

প্রাদি সমাসঃ-

প্র, প্রতি, অনু, পরি, ইত্যাদি অব্যয় বা উপসর্গের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যর সমাস হলে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন। এখানে বচন সমস্যমান পদটি একটি বিশেষ্য, যার মূল (ধাতু)বচ ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয়। ‘প্র’ অব্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য ‘বচন’র সমাস হয়ে সমস্ত পদ ‘প্রবচন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং, এটি প্রাদি সমাস।

 সমাস ও সন্ধির মধ্যকার পার্থক্য: সমাস ও সন্ধি বাংলা ভাষায় শ্রুতিমধুরতা ও সংক্ষিপ্ততা আনয়ন করে। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো।

সমাস

বাংলা শব্দ গঠনে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বক্তব্যকে সংক্ষেপ করার মাধ্যমে ভাষায় সৌন্দর্য ও মাধুর্য বৃদ্ধি করে সমাস। বাক্যের মধ্যে অনাবশ্যক পদের ব্যবহার না করে সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারের মাধ্যমে বক্তব্য বিষয়টিকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করা হয়। ফলে ভাষা হয় সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও প্রাঞ্জল।

সমাস একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ একাধিক পদের এক পদে মিলন, সংকোচন বা সংক্ষেপণ। পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন—সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।

সন্ধি

সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। আমরা যখন কথা বলি তখন অনেক সময় পাশাপাশি শব্দের দুটি ধ্বনি মিলিত হয়ে যায় বা আংশিকভাবে মিলিত হয় । এই মিলনের নামই সন্ধি । যেমন- বিদ্যা +আলয় = বিদ্যালয় বা হিম+আলয় = হিমালয়। প্রথম শব্দটিতে বিদ্যা শব্দের আ ও আলয় শব্দের আ পরস্পর যুক্ত হয়ে একঠি আ এ পরিণত হয়েছে ও বিদ্যালয় শব্দটি গঠন হয়েছে। পরের শব্দটিতে হিম এর অ ও আলয় এর আ যুক্ত হয়ে আর ধ্বনি সৃষ্টি করেছে ও হিমালয় শব্দটি গঠন করেছে। এখন আমরা বলতে পারি পাশাপাশি দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে ।

 

           সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য

১. বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। আর শব্দের সঙ্গে শব্দের মিলনকে সমাস বলে।

২. সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে অবস্থিত। আর সমাস ব্যাকরণের রূপতত্ত্বে অবস্থিত।

৩. সন্ধি ৩ প্রকার। যেমন: স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি। আর সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস, দ্বিগুসমাস, কর্মধারয় সমাস, তৎপুরুষ সমাস, অব্যয়ীভাব সমাস ও বহুব্রীহি সমাস।

৪. সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। আর সমাসে অলুক বাদে অন্য সমাসের বিভক্তি লোপ পায়।

৫. সন্ধিতে বর্ণে বর্ণে মিলন ঘটে। সন্ধিতে শব্দের মিলন বর্ণ ও উচ্চারণভিত্তিক। দুটি বর্ণের মিলন ঘটে। আর সমাসে শব্দে শব্দে বা পদে পদে মিলন ঘটে। সমাসে শব্দের মিলন অর্থভিত্তিক। দুই বা দুয়ের অধিক শব্দের মিলন ঘটে।

৬. সন্ধি অল্প সংখ্যক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।আর সমাস অনেক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।

৭. সন্ধির ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে না। আর সমাসের ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।

৮. সন্ধি শব্দকে গতিশীল করে। আর সমাস বাক্যকে গতিশীল করে।

৯. সন্ধির নমুনা হলো বিদ্যা+আলয়—বিদ্যালয়, প্রতি+এক—প্রত্যেক, হিম+আলয়—হিমালয়। আর সমাসের নমুনা হলো: বিদ্যার জন্য আলয়—বিদ্যালয়, একের পরে এক—প্রত্যেক, হিমের আলয়—হিমালয়।

১০. সন্ধি উচ্চারণকে পরিষ্কার করে। আর সমাস বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করে।

 

 

Read More: SENTENCE কাকে বলে?কত প্রকার ও কী কী?বিস্তারিত আলোচনা কর?

#সমাসকাকে বলে ও কি কি,নিত্য সমাস কাকে বলে উদাহরণ দাও,সমস্যমান পদ কাকে বলে,দ্বিগু সমাস কাকে বলে,কর্মধারয় সমাস কত প্রকার,সমাস শব্দের অর্থ কি,বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার,সমাস কাকে বলে সমাসের প্রয়োজনীয়তা

Leave a Reply