শিক্ষাব্যবস্থার র্যাংকিংয়ে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপদেশ সিঙ্গাপুর। তাদের স্কুল পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। দেশটির এই সফলতার পেছনের কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলঃ
কঠোর পরিশ্রম:
সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক কর্মপরিকল্পনা বা সময়সূচী অত্যন্ত কঠোর বলে জানা গেছে। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠার পর সাড়ে ৭টা নাগাদ পড়ালেখা শুরু করে। রাত ৯ টায় তা শেষ হয়। এর মধ্যে তারা ৪৫ মিনিটের বিরতি পায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তারা দুই ঘন্টার বেশি বিরতি পায় না বলে জানা গেছে।
শিক্ষা পদ্ধতি:
সিঙ্গাপুরের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রশংসিত শিক্ষা পদ্ধতি। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা-ওইসিডি ৭৫টি দেশে পিআইএসএ (শিক্ষা পদ্ধতি বিষয়ক পরীক্ষা) পরিচালনা করে। সেখানে সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির এমন ভাল ফলাফলের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হল, সেখানকার সরকারি আমলাদের প্রত্যেকেই বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে এসেছেন। এ কারণেই তারা কার্যকরী শিক্ষা পদ্ধতি প্রনয়ন করতে পেরেছে। শিক্ষা নিয়ে তাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। আর তা হলঃ সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের অন্যতম ধনী, সর্বাধিক উন্নত এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত দেশগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত করা।
Ibn Sina Hospital Dhanmondi Doctor List | ইবনে সিনা স্পেশালাইজড হাসপাতাল ধানমন্ডি
ভাল পারিশ্রমিক ও বাজেট:
সিঙ্গাপুর বিশ্ব র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকার আরেকটি কারণ হল, তাদের শিক্ষকরা উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন। এমনটাই মনে করেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ক্লাইভ ডিমক। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের বেতন দেশটির শিল্প ও আর্থিক খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা স্নাতক শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আকৃষ্ট করে। শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন গড়ে ১৮শ’ ডলার থেকে তেত্রিশশ` ডলার থেকে শুরু হয়। এছাড়া অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি পারফর্মেন্সের ওপর তাদের আলাদা বোনাসের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশটিতে সরকারি বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করে।
দরিদ্রতা ও নিরক্ষর অতীত:
সিঙ্গাপুর এক সময় এশিয়ার দরিদ্রতর দেশগুলোর একটি ছিল। ১৯৬৫ সালে তারা যখন মালয়েশিয়া থেকে স্বাধীন হয়। তখন কেবলমাত্র অভিজাতদের শিক্ষার সুযোগ ছিল। এ কারণে দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল নিরক্ষর। দেশটিতে কোন প্রাকৃতিক সম্পদও নেই। তাই তারা জনসংখ্যার ওপর বিনিয়োগ করে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৫৮ লাখ। যাদের প্রত্যেকেই জনসম্পদ।
শিক্ষা শিল্প ও এর প্রভাব
সিঙ্গাপুরে শিক্ষা শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বলা ভালো, শিক্ষা দেশটির একটি লাভজনক শিল্প। স্থানীয় পত্রিকা স্ট্রেইট টাইমসের মতে যার মূল্যমান প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। তবে দেশটির সম্পূরক পাঠের কার্যকারিতা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে।
`ভুলে যাওয়া’ শিক্ষার্থীরা:
সিঙ্গাপুরে যেসব শিক্ষার্থীরা ভালো নম্বর পায়না তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারা যেন পড়া লেখা ছেড়ে না দেয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী প্রসংসিত হলেও তা সমালোচনাও রয়েছে। দেশটিতে পড়ালেখার চাপে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত তরুণদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যা আত্মহত্যার হারও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ প্রবনতা এড়াতে দেশটির সরকার `থিংকিং স্কুলস, লার্নিং নেশন` নামে একটি নীতি প্রণয়ন করেছে। যেটি মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে শেখার প্রক্রিয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে। এই নীতির মূলমন্ত্র `পড়াও কম, শেখাও বেশি`।
সূত্র: বিবিসি