সুসম্পর্ক বজায় রাখতে করণীয় কী?

মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে রয়েছে কোরআনের দিকনির্দেশনা, দোয়া ও আমল। সবার সঙ্গে উত্তম আচরণের দিকনির্দেশনা দেয় ইসলাম। কারণ ব্যক্তির আচরণ দেখেই তার ব্যক্তিত্ব, সামাজিক অবস্থান, ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা প্রকাশ পায়। এ কারণে সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বও অপরিসীম।

একে অপরের সঙ্গে পরস্পর সুসম্পর্ক কীভাবে রক্ষা করা যায় কিংবা একে অপরকে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় তা ওঠে এসেছে এক আরব সাহিত্যিকের জীবনের বাস্তব ঘটনা থেকে। কী সেই ঘটনা ও আমল?

কোরআনুল কারিমের ছোট্ট একটি উপদেশই মানুষের সব শত্রুতা ও মনের অমিল পাল্টে দিয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, সুসম্পর্ক ও সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। ইসলামের সোনালী ইতিহাসে এমন অনেক নজির রয়েছে। যুগ যুগ ধরে ইসলাম ও মুসলমানদের জীবনে এ নজির দৃশ্যমান। কোরআনের সেই ঐতিহাসিক উপদেশটি কী?

 

কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক গঠন করার উপদেশ তুলে ধরেছেন। যে উপদেশ মেনে চললে বা আমল করলে চরম শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হতে বাধ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

1.ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ

 

‘মন্দ কথার প্রতি উত্তরে তাই বলুন; যা উত্তম। আমি সেই বিষয়েও সবিশেষ অবগত; তারা যা বলে।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯

 

বিজ্ঞা

 

 

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না

 

স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আমল করতেন। সাহাবায়ে কেরামও জীবনভর এ আমল করে গেছেন। তাঁদের অনুসরণ ও অনুকরণে তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন ও আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনেও রয়েছে হাজারো প্রমাণ। আরব সাহিত্যিক শায়খ সুলাইমান জিলানিও কোরআনের এ বর্ণনা তুলে ধরেছিলে

 

২. وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِي

 

‘সব ভাল ও মন্দ পরস্পর সমান নয়। তাই আপনি মন্দের জবাবে ওই কথা বলুন; যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সেও যেন আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম : আয়াত ৩

 

তাহলে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কী করবে

 

মানুষ যত মন্দ কথা বলে; এর উদ্ভাবক হচ্ছে শয়তান। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মানুষের মন্দ কথা জবাবে উত্তম কথা বলার নসিহত পেশ করেছেন। পাশাপাশি মন্দ কথা থেকে বেঁচে থাকতে উপায় হিসেবে তিনিই আয়াত নাজিল করেছেন। তাহলো

 

رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِ

 

উচ্চারণ : ‘রাব্বি আউজুবিকা মিন হামাযাতিশ শায়াত্বিন

 

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমি শয়তানের প্ররোচনা (মন্দ কথা) থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯

 

ভালো আচরণের উপকারি

 

ভালো আচরণ মন্দ কাজকে দূরে ঠেলে দেয়। মন্দ কথা, কাজ ও আচরণের জবাবে ভালো কথা, কাজ ও আচরণ দেখানো নিঃসন্দেহে পরস্পর অন্তরঙ্গ সুসম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম উপায়। ফলে কারও মাঝে শত্রুতা, ভুল বুঝাবুঝি থাকে না। যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গেই গড়ে ওঠে সুসম্পর্ক, অন্তরঙ্গ মিল এবং ভালোবাসা

 

কিন্তু শায়খ সুলাইমান আল-জিলানির ঘটনাটি

 

ভারত থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত একটি ইসলামিক ম্যাগাজিন ‘মাসিক আরমোগান’। এতে বিখ্যাত আরব সাহিত্যিক শায়খ সুলাইমান আল-জিলানির এমনই একটি ঘটনা তুলে ধরেছে

 

‘একবার বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক শায়খ সুলাইমান আল জিলানি তার নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি একবার তার দুই সঙ্গীসহ নিজ গাড়িতে চড়ে এক সফরে বের হন। সফরের রাস্তার উপর কতগুলো উট পথ বন্ধ করে রাখে। তিনি দেখলেন, উটের পালের সঙ্গে রাস্তার অপর পাশে একটি গাড়িতে বৃদ্ধ একজন লোক বসে আছে

 

শায়খ জিলানি বলেন, আমি গাড়ি সামনে নিতে পারছিলাম না উটগুলোর কারণে। উটের রাখালরা উটগুলোকে হাঁকাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো রাস্তা থেকে সরছে

 

আমি ভাবলাম- হরণ বাজালে হয়তো উটগুলো রাস্তা ছেড়ে দিবে। তাই আমি আমার গাড়ির হরণ বাজালা

 

হরণ বাজানোর কারণে রাস্তার অপর পাশে গাড়িতে বসা বৃদ্ধ (উটের মালিক) আমাকে গালাগাল শুরু করে। আমার বাবাকেও অভিশাপ দিতে থাকে। সে বলছে

 

অভিশাপ পড়ুক এমন বাবার উপর, যে তোমার মত ছেলেকে জন্ম দিয়েছে। আমার উট সরাতে হরণ বাজানোর তুই কে! তোকে যে জন্ম দিয়েছে তার উপরও অভিশাপ। যা তা বলে ওই বৃদ্ধ আমাকে গালি দিতে থাকে। ফলে বৃদ্ধের উপর আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হ

 

সাধারণ একটি হরণের জন্য আমাকে এভাবে গালাগালের বিষয়টি আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আর আমি তো ভালোর জন্যই হরণ বাজিয়েছিলাম; হয়ত আমার হরণ শুনে উট চলতে শুরু করবে। অথচ হরণ-এর বদলায় এমন গালি শুনতে হলো

 

শায়খ আল-জিলানি বলেন, আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে সজোরে গাড়ি দরজা বন্ধ করে জামার হাতা গুটাতে গুটাতে উটের মালিকের গাড়ির দিকে যাচ্ছিলা

 

গাড়িতে থাকা আমার দুই সঙ্গীর একজন বলছিল- আপনি কী করতে (ঘটনা ঘটাতে) যাচ্ছেন! আর গাড়ির বৃদ্ধ লোকটি আমরা অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গে

 

আমি আমার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বললাম, আজ নতুন কিছু দেখবেন বলে আমি বৃদ্ধের গাড়ির কাছে গিয়ে উচ্চ শব্দে তার গাড়ির দরজা খুলেই তার কপালে চুম্বন করলাম। আর বললা

 

‘আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি আপনার উটকে হরণ দিয়ে ভুল করে ফেলেছি। উটকে কষ্ট দিয়েছি। আপনার উটকে কষ্ট দেয়া মানে আপনাকে কষ্ট দেয়ার শামিল। আসলেই আপনার প্রতি বড় অন্যায় করে ফেলেছি। সতুরাং আমাকে ক্ষমা করে দি

 

এ ঘটনায় বৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে বল

 

বেটা! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি তো অন্যায় করনি; বরং আমি তোমার বাবা-মাকে গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি। অথচ তুমি আমার কপালে চুমু খেয়েছ। বরং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দা

 

তখন আমি বললা

 

যেহেতু আপনি আমার বাবা-মা এমনকি আমাকে অভিশাপ দিয়েছেন, গালাগাল করেছন। আল্লাহর কসম! আমি কেয়ামত পর্যন্ত আপনাকে ক্ষমা করব না। তবে একটি শর্তে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি। যদি আপনি তা মানতে রাজি হন।ম-ও।ল-ন।ম-লে।ম।?লো।-ম।না।।ন-কী?।তা৭)।’ينِ-ন?৪)مٌন।যে-পন৬)

 

EN

 

Jagonews t20 worldcup 2021

সুসম্পর্ক বজায় রাখতে করণীয় কী?

ইসলাম ডেস্ক প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২১

মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে রয়েছে কোরআনের দিকনির্দেশনা, দোয়া ও আমল। সবার সঙ্গে উত্তম আচরণের দিকনির্দেশনা দেয় ইসলাম। কারণ ব্যক্তির আচরণ দেখেই তার ব্যক্তিত্ব, সামাজিক অবস্থান, ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা প্রকাশ পায়। এ কারণে সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বও অপরিসীম।

একে অপরের সঙ্গে পরস্পর সুসম্পর্ক কীভাবে রক্ষা করা যায় কিংবা একে অপরকে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় তা ওঠে এসেছে এক আরব সাহিত্যিকের জীবনের বাস্তব ঘটনা থেকে। কী সেই ঘটনা ও আমল?

বিজ্ঞাপন

কোরআনুল কারিমের ছোট্ট একটি উপদেশই মানুষের সব শত্রুতা ও মনের অমিল পাল্টে দিয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, সুসম্পর্ক ও সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। ইসলামের সোনালী ইতিহাসে এমন অনেক নজির রয়েছে। যুগ যুগ ধরে ইসলাম ও মুসলমানদের জীবনে এ নজির দৃশ্যমান। কোরআনের সেই ঐতিহাসিক উপদেশটি কী?

কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক গঠন করার উপদেশ তুলে ধরেছেন। যে উপদেশ মেনে চললে বা আমল করলে চরম শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হতে বাধ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

বিজ্ঞাপন

১. ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ

মন্দ কথার প্রতি উত্তরে তাই বলুনযা উত্তম। আমি সেই বিষয়েও সবিশেষ অবগততারা যা বলে।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯৬)

বিজ্ঞাপন

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে-

স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আমল করতেন। সাহাবায়ে কেরামও জীবনভর এ আমল করে গেছেন। তাঁদের অনুসরণ ও অনুকরণে তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন ও আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনেও রয়েছে হাজারো প্রমাণ। আরব সাহিত্যিক শায়খ সুলাইমান জিলানিও কোরআনের এ বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন।

২. وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

‘সব ভাল ও মন্দ পরস্পর সমান নয়। তাই আপনি মন্দের জবাবে ওই কথা বলুন; যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সেও যেন আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম : আয়াত ৩৪)

তাহলে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কী করবেন?

মানুষ যত মন্দ কথা বলে; এর উদ্ভাবক হচ্ছে শয়তান। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মানুষের মন্দ কথা জবাবে উত্তম কথা বলার নসিহত পেশ করেছেন। পাশাপাশি মন্দ কথা থেকে বেঁচে থাকতে উপায় হিসেবে তিনিই আয়াত নাজিল করেছেন। তাহলো-

رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি আউজুবিকা মিন হামাযাতিশ শায়াত্বিন।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমি শয়তানের প্ররোচনা (মন্দ কথা) থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯৭)

ভালো আচরণের উপকারিতা

ভালো আচরণ মন্দ কাজকে দূরে ঠেলে দেয়। মন্দ কথা, কাজ ও আচরণের জবাবে ভালো কথা, কাজ ও আচরণ দেখানো নিঃসন্দেহে পরস্পর অন্তরঙ্গ সুসম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম উপায়। ফলে কারও মাঝে শত্রুতা, ভুল বুঝাবুঝি থাকে না। যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গেই গড়ে ওঠে সুসম্পর্ক, অন্তরঙ্গ মিল এবং ভালোবাসা।

কিন্তু শায়খ সুলাইমান আল-জিলানির ঘটনাটি কী?

ভারত থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত একটি ইসলামিক ম্যাগাজিন ‘মাসিক আরমোগান’। এতে বিখ্যাত আরব সাহিত্যিক শায়খ সুলাইমান আল-জিলানির এমনই একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন-

‘একবার বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক শায়খ সুলাইমান আল জিলানি তার নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি একবার তার দুই সঙ্গীসহ নিজ গাড়িতে চড়ে এক সফরে বের হন। সফরের রাস্তার উপর কতগুলো উট পথ বন্ধ করে রাখে। তিনি দেখলেন, উটের পালের সঙ্গে রাস্তার অপর পাশে একটি গাড়িতে বৃদ্ধ একজন লোক বসে আছে।

শায়খ জিলানি বলেন, আমি গাড়ি সামনে নিতে পারছিলাম না উটগুলোর কারণে। উটের রাখালরা উটগুলোকে হাঁকাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো রাস্তা থেকে সরছে না।

আমি ভাবলাম- হরণ বাজালে হয়তো উটগুলো রাস্তা ছেড়ে দিবে। তাই আমি আমার গাড়ির হরণ বাজালাম।

হরণ বাজানোর কারণে রাস্তার অপর পাশে গাড়িতে বসা বৃদ্ধ (উটের মালিক) আমাকে গালাগাল শুরু করে। আমার বাবাকেও অভিশাপ দিতে থাকে। সে বলছে-

অভিশাপ পড়ুক এমন বাবার উপরযে তোমার মত ছেলেকে জন্ম দিয়েছে। আমার উট সরাতে হরণ বাজানোর তুই কে! তোকে যে জন্ম দিয়েছে তার উপরও অভিশাপ। যা তা বলে ওই বৃদ্ধ আমাকে গালি দিতে থাকে। ফলে বৃদ্ধের উপর আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো।

সাধারণ একটি হরণের জন্য আমাকে এভাবে গালাগালের বিষয়টি আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আর আমি তো ভালোর জন্যই হরণ বাজিয়েছিলাম; হয়ত আমার হরণ শুনে উট চলতে শুরু করবে। অথচ হরণ-এর বদলায় এমন গালি শুনতে হলো?

শায়খ আল-জিলানি বলেন, আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে সজোরে গাড়ি দরজা বন্ধ করে জামার হাতা গুটাতে গুটাতে উটের মালিকের গাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।

গাড়িতে থাকা আমার দুই সঙ্গীর একজন বলছিল- আপনি কী করতে (ঘটনা ঘটাতে) যাচ্ছেন! আর গাড়ির বৃদ্ধ লোকটি আমরা অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলে।

আমি আমার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বললামআজ নতুন কিছু দেখবেন বলে আমি বৃদ্ধের গাড়ির কাছে গিয়ে উচ্চ শব্দে তার গাড়ির দরজা খুলেই তার কপালে চুম্বন করলাম। আর বললাম-

‘আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি আপনার উটকে হরণ দিয়ে ভুল করে ফেলেছি। উটকে কষ্ট দিয়েছি। আপনার উটকে কষ্ট দেয়া মানে আপনাকে কষ্ট দেয়ার শামিল। আসলেই আপনার প্রতি বড় অন্যায় করে ফেলেছি। সতুরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।

এ ঘটনায় বৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে বলল-

বেটা! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি তো অন্যায় করনি; বরং আমি তোমার বাবা-মাকে গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি। অথচ তুমি আমার কপালে চুমু খেয়েছ। বরং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

তখন আমি বললাম-

যেহেতু আপনি আমার বাবা-মা এমনকি আমাকে অভিশাপ দিয়েছেন, গালাগাল করেছন। আল্লাহর কসম! আমি কেয়ামত পর্যন্ত আপনাকে ক্ষমা করব না। তবে একটি শর্তে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি। যদি আপনি তা মানতে রাজি হন।

বৃদ্ধ লোকটি শর্ত  মানতে রাজি হলেন এবং শর্ত জানতে চাইলেন-

আমি বললাম, আমাদের উটেরদুধ পান করাতে হবে। এ কথা শুনে বৃদ্ধ মালিক খুশি হলো এবং রাখালদের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলো। মেহমানদারির আদেশ দিলো। এরপর আমরা পেটভরে উটের দুধ পান করি।

শায়খ আল-জিলানি বলেন, আমি বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি শের (কবিতা আবৃত্তি করতে) পারেন? তিনি আমাদের শের শুনাতে শুরু করে। বৃদ্ধ ব্যক্তি আমাদের অনেক কবিতা শুনায়। এভাবে আধাঘণ্টা অতিবাহিত হলো। এরপর আমরা ওঠার অনুমতি চাইলাম। বৃদ্ধ আমাদের ছাড়বে না বলে জড়িয়ে ধরলেন।

বৃদ্ধ বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাদের এভাবে যেতে দেবো না।

আমি বৃদ্ধকে বললাম, এমনিতেই আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের দ্রুত যেতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় পরে এক সময় আপনার মেহমান হবো। এখন যাওয়ার অনুমতি দিন।

বৃদ্ধ আবদার জানালেন- হে তিন যুবক! উটের পেছনে পর্দার ভেতরে আমার তিন কন্যা রয়েছেআর তোমরা তিন জনও আলেম এবং বুদ্ধিমান। তোমরা তাদের বিয়ে করে আমাকে সম্মানিত কর।

কোরআনের উপদেশ কতই না চমৎকার!

এ ছিল কোরআনের ছোট্ট নসিহতের উপর আমল করার উপহার। মন্দ কথা ও আচরণের জবাবে শায়খ জিলানির উত্তম আচরণ এ বৃদ্ধকে একান্ত আপন ও অন্তরঙ্গ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। এ কথাই এসেছে কুরআনে-

২. وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

সব ভাল ও মন্দ পরস্পর সমান নয়। তাই আপনি মন্দের জবাবে ওই কথা বলুনযা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছেসেও যেন আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম : আয়াত ৩৪)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কারো কটু কথা, খারাপ আচরণ ও গালাগাল শুনে ক্ষেপে যাওয়া ঠিক নয়। বরং সুন্দর ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে মন্দ কথার জবাব দেওয়া জরুরি। খারাপ কথা বিপরীতে ভালো আচরণই শত্রু কিংবা মনের অমিল ব্যক্তিকেও আপন করে নেয়া। শয়তানের প্ররোচনা থেকেও মেলে মুক্তি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে শত্রু কিংবা মিত্র সবার সঙ্গে মন্দ কথা ও আচরণের জবাবে উত্তম ভাষায় কথা বলার তাওফিক দান করুন। কুরআনের উত্তম নসিহতের আমলে শত্রুকে আন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Leave a Reply