সেন রাজবংশ | সেন সাম্রাজ্য | বাংলার সেন বংশ (sena dynasty)[ ১০৭০ খ্রি–১২৩০ খ্রি ]

👑💎👑💎👑💎👑💎👑💎👑💎👑💎👑
রাজধানী : নবদ্বীপ, বিক্রমপুর, বিজয় নগর, লখনৌতি ,রূপর/রূপনগর।
প্রচলিত ভাষা : সংস্কৃত, বাংলা
ধর্ম : হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম
সরকার : রাজতন্ত্র মহারাজা
ঐতিহাসিক যুগ : ধ্রুপদি ভারত
• প্রতিষ্ঠা : ১০৭০ খ্রি
• বিলুপ্ত : ১২৩০ খ্রি
পূর্বসূরী উত্তরসূরী : পাল সাম্রাজ্য , দেব রাজবংশ
বর্তমানে যার অংশ : ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল।
সেন রাজবংশ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিকের মধ্যযুগীয় একটি হিন্দু রাজবংশ ছিল, যা বাংলা থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করেছিল। বল্লাল সেন রচিত গ্রন্থ অনুসারে সেন রাজবংশ এর গোরাপত্তন ৯০০ শতকেরও পূর্বে ।
বাংলার পাল রাজাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে করতে তারা একসময় পাল রাজাদেরকে পরাজিত করে পাল সাম্রাজ্য করায়ত্ত করেন। সেন রাজাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তারা রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।বাংলা হতে পরিচালিত আসমুদ্রহিমাচল সেন সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকুল থেকে উত্তরভারত(কনৌজ) পর্যন্ত। সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল রাঢ়ভূমের আদি কর্ণসুবর্ণে । সেনরা জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন কিন্তু রাজধর্ম ক্ষত্রিয়বাচক পেশা বলে নিজেদেরকে ব্রহ্মক্ষত্রিয়(বল্লাল সেনের অদ্ভুত সাগর গ্রন্থানুসারে ক্ষত্রচরিত্রাচার্য্য ব্রাহ্মণ,লক্ষণ সেনের তাম্রশাসন অনুসারে রাজন্যধর্মাশ্রয়ী ব্রাহ্মণ উভয়ের অর্থ একই) বলে শিলালিপিতে উল্লেখ করে গেছেন।প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একাদশ শতাব্দীর অন্তিমলগ্নে পাল রাজবংশের বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নিয়ে সেনদের উত্থান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ অধ্যায়। বাংলার পাল রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে বারেন্দ্র ‘সামন্তচক্রের’ বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেন পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেন এবং অবশেষে বাংলার পাল রাজবংশের রাজা মদনপালের রাজত্বকালে স্বাধীন সত্ত্বার বিকাশ ঘটান।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে বাংলার সেন বংশীয় রাজাদের মধ্যে বীর সেন,সামন্ত সেন,হেমন্ত সেন, বিজয় সেন,সুখ সেন, বল্লাল সেন, ও লক্ষ্মণ সেন বিশিষ্ট স্থান অধিকার করছেন।বিশ্বরূপ সেন—তিনি বঙ্গের সেন বংশীয় নরপতি বল্লাল সেনের পৌত্র । লক্ষ্মণ সেনের অন্যতম পত্নী তন্দ্রাদেবী বা তাড়াদেবীর গর্ভে বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন নামে দুই পুত্র জন্মে। লক্ষ্মণ সেনের পরলোক গমনের পরে তার পুত্র মাধব সেন প্রথমে বাঙ্গালার রাজা হয়েছিলেন।
তৎপরে তার ভ্রাতা কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেন পর পর বাঙ্গালার রাজা হয়েছিলেন এবং এসময় রাজকুমারগণ রাজ্যসমূহের দায়িত্বভার বণ্টন করেন। মাধব সেন ভ্রাতা কেশব সেনের হাতে বঙ্গ রাজ্য তুলে দিয়ে হিমালয় রাজ্যে গমন করেন এবং সেখানে রাজ্য বিস্তার করেন,উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কোটেশ্বর মন্দির গাত্রের শিলালিপিতে মাধব সেনের কীর্তি বর্ণিত আছে যে,ধর্মরক্ষার্থে দূর্গম হিমালয় রাজ্যের (অধুনা ভারতের উত্তরপ্রদেশ,হিমাচল প্রদেশ এবং নেপাল) শাসন ভার গ্রহণ করেন এবং অনেক কুলীন এবং শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যান।লক্ষণ সেনের পরেও যে গৌড়ে সেন রাজগণের আধিপত্য অক্ষুদ্র ছিল,বেঙ্গল গভর্ণমেণ্ট কর্তৃক সংগৃহীত একটি হস্ত লিখিত প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে উল্লেখ আছে,—পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ পরম সৌগত “মধুসেন” ১১৯৪ শকাব্দে (১২৭২ খ্ৰী: ) বিক্রমপুরে আধিপত্য করতেন।
‘’ কথিত আছে, ইনি তুরস্কদিগকে বারংবার পরাজিত করেছিলেন। এছাড়াও এই রাজবংশের রাজা হিসেবে সুর সেন/সূর্য সেন,নারায়ণ সেন,লক্ষণ সেনII, বল্লাল সেন II, দামোদর সেন। নাম পাওয়া গেছে। সেন সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে জানা গেলেও সেন রাজবংশের পতন সম্পর্কে জানা যায়না কারণ তারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় (বিশেষত উত্তর ভারত,হিমাচল,নেপাল ) ) রাজকার্য চালিয়ে এসেছিল। সর্বশেষ দুটি সেন রাজ্য(অধুনা হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত ছিল) ১৯৪৭ সনে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে যোগ দেয়,উক্ত রাজ্যের রাজাদের পূর্বপুরুষ বাংলার সেন বংশীয় ছিলেন বলে গেজেটে তাদের কুলপঞ্জিকা উপস্থাপন করেছিলেন।
লক্ষ্মণ সেন ছিলেন বৈষ্ণব মতবাদের কঠোর অনুসারী। তিনি ‘পরমবৈষ্ণব’ বা ‘পরমনরসিংহ’ উপাধি ধারণ করেন। তাঁর ধর্মমত পরিবর্তন সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না। তাঁর শাসনকালের শেষ দিকে অবশ্য রাজকার্য পরিচালনায় অশক্ত হয়ে পড়েন। এই সময় সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ও সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। সমসাময়িক লেখসূত্রে সেন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কতগুলি বিদ্রোহী প্রধানের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আভাস পাওয়া যায়।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে সেন রাজবংশের রাজত্বকাল দীর্ঘস্থায়ী না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেন রাজারা ছিলেন গোঁড়া হিন্দু। তাই এই সময় বাংলায় হিন্দুধর্ম রাজ-পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এবং সমাজে ব্রাহ্মণদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সেন রাজাদের সাম্রাজ্য ধ্বংস হলে বিভিন্ন ছোট রাজ্য শাসন করতে থাকে। সেন বংশীয় এসব রাজার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুন্ড্র ও বরেন্দ্র রাজ রাজা অচ্যুত সেন,কামরুপ রাজ কামতেশ্বর নীলাম্বর সেন প্রমূখ।
আদি ইতিহাস
বাংলার পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর সেন রাজবংশের শাসনকালের সূচনা হয়। অষ্টম শতকে সেন রাজারা একটি ক্ষুদ্র রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। কালক্রমে এই রাজ্যটিই বিশাল আকার ধারণ করে।
সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল গৌড়ের দক্ষিণে রাঢ়ভূমের কর্ণসুবর্ণ ক্ষেত্রে । সেন রাজারা বীর সেনকে তাঁদের বংশের আদিপুরুষ বলে দাবি করেছিলেন। বৈদিক ব্রাহ্মণ কুলপঞ্জিকা গ্রন্থ “বিপ্ৰকুলকল্পলতিকা” মতে, দাক্ষিণাত্য-বৈদিক ব্রাহ্মণ রাজা অশ্বপতি সেনের বংশে চন্দ্রকেতু সেন জন্মগ্রহণ করেন, তার বংশে বীরসেন উৎপন্ন হন ; বীরসেনের বংশজাত বিক্রমসেন বিক্রমপুর নগর স্থাপন করেন ।
দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে জানা যায়, তাঁরা ছিলেন বৈদিক ব্রাহ্মণ এবং চন্দ্রবংশীয় ‘ব্রহ্মক্ষত্রিয়’। এছাড়া কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে সেন রাজারা ছিলেন বৈদ্যব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। যাঁরা ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহণ করে একই সাথে ব্রাহ্মণ্য আচার এবং ক্ষত্রিয়ের পেশা রাজ্যশাসন ও যুদ্ধবিদ্যা অনুশীলন করে তাকে “ব্রহ্মক্ষত্রিয়” বলে।সেনদের জীবনাচরণে এর প্রভাব দৃশ্যমান।তারা যেমনি ছিলেন রাজ্যশাসন আর অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী তেমনি শাস্ত্র বিদ্যায়ও সিদ্ধহস্ত।রচণা করেছেন দানসাগর অদ্ভুতসাগরের মত গ্রন্থাবলি।
আদি বাসস্থান
দেবীপুরাণে পুন্ড্র রাজ্যে (উত্তরবঙ্গ) বীরসেন নামক রাজার নাম আছে দেখিয়া হাণ্টার সাহেব মনে করেন, বীরসেন অযোধ্য হইতে বাঙ্গালায় আগমন করেন। দক্ষিণ বাঙ্গালার রাঢ়ভূমের শুর রাজবংশলে সেন বংশের আদি বংশ হিসেবে প্রতীয়মান হয় কারণ উভয় বংশের গোত্র একই “বৃষ্ণেয় /বীরসেনয়” উভয় বংশ নামান্তে সেন পদবী ধারণ করতেন ।
রাজনৈতিক ক্ষমতালাভ
সেনরা কখন বাঙলায় এসেছিলেন এ নিয়ে সর্ব প্রাচীণ যে নিদর্শন তা হলো ভাস্করবর্মার ব্রাহ্মণদেরকে ভূমিদানের তাম্রশাসন। ৬ষ্ঠ শতকের ভাস্করবর্মার তাম্রশাসনে সেন পদবীর অনেক ব্রাহ্মণকে ভূমিদানের বিবরণ লিখিত আছে। দেবপাল থেকে মদনপাল পর্যন্ত পালরাজাদের লেখনি থেকে জানা যায়, তাঁরা অনেক সময় বিদেশি কর্মচারীদের প্রশাসনিক কাজকর্মে নিযুক্ত করতেন। অনুমিত হয়, সেই সময়েই সেনরা বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন।সামন্ত সেনের নামের সাথে কোন রাজা সূচক কোন উপাধি পাওয়া যায় নি। তাই বলা যায় যে সামন্ত সেন বাংলার কোন শাসন ক্ষমতায় ছিলেন না। তবে কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন তিনি পাল রাজাদের কোন মহা সামন্ত ছিলেন। পরে পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁরা বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
তথ্য : গুগলের নেটওয়ার্ক মাধ্যমের দ্বারা সংগৃহীত।

 

সেন বংশের পতনের কারণ, সেন বংশের শেষ রাজা কে, সেন রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল ,সেন বংশ প্রতিষ্ঠিত, সেন বংশের রাজধানী কোথায় ছিল ,সেন আমলের সাহিত্যের উন্নতির বিবরণ দাও, লক্ষণ সেন সেন বংশ বাংলাপিডিয়া

Leave a Reply