স্বাস্থ্যের মতোই ত্বকের যত্ন সবার জন্যই জরুরি। শুধু নারী নয়, পুরুষও ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। যত্ন নিলে ত্বক ভালো থাকবে।
ত্বকে শুষ্কতা ও মলিনভাব দূর করতে যথাযথ যত্নের প্রয়োজন
রূপচর্চাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে পুরুষের ত্বক পরিচর্যার সাতটি ধাপ এখানে দেওয়া হল।
পরিষ্কার, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজার আবশ্যক: নারীদের মতো পুরুষের ত্বকের যত্নেও এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করা আবশ্যক। পুরুষের ত্বক দূষণ, গাড়ির ও সিগারেটের ধোঁয়া এবং প্রতিনিয়ত অন্যান্য দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারীদের তুলনায় পুরুষের ত্বক তৈলাক্ত ও পুরু হওয়ায় সব ধরনের ত্বকের সঙ্গে মানানসই এমন ভালো পরিষ্কারক দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।
ত্বক পরিষ্কার রাখতে ও মৃতকোষ দূর করতে ‘ক্লিঞ্জিং’ আবশ্যক। ত্বক পরিষ্কার রাখতে মৃদু ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন। এটা ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে পুরুষেরা বেশ আলসেমি করে যা তাদের ত্বকের ক্ষতি করে।
ত্বক পরিষ্কার রাখলে হোয়াইট বা ব্ল্যাক হেডস এবং ব্রণ থেকে রক্ষা করে। টোনিং করতে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার ত্বক ফাটা, শুষ্ক ও মলিনতা থেকে রক্ষা করে। খসখসে ত্বক খুবই বিরক্তিকর। এই সমস্যা দূর করতে পারেন ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে। ঘন ময়েশ্চারাইজার মানেই তৈলাক্ত নয়, অনেক ময়েশ্চারাইজার আছে যা হালকা এবং ত্বক দীর্ঘক্ষণ সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
এক্সফলিয়েট করা: ত্বকের মৃতকোষ এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ দূর করতে এক্সফলিয়েট করা উচিত। ত্বক স্ক্রাবিং করা না হলে লোমকূপে ময়লার সৃষ্টি হয় এবং নানা রকমের সমস্যা দেখা যায়। তাই পুরুষের ত্বকের যত্নে নিয়মিত এক্সফলিয়েট করা উচিত। ত্বক থেকে মৃতকোষ দূর হলে তা স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল লাগে দেখতে।
আরও পড়ুন: খালিপেটে এবং ঘুমানোর আগে লবঙ্গ খেলে ম্যাজিকে
সপ্তাহে একবার মিহিদানার ফেইস-স্ক্রাব ব্যবহার করুন। এটা ত্বকের মলিনভাব দূর করতে ও মসৃণভাব আনতে সাহায্য করে। এক্সফলিয়াট করার আরেকটি সুবিধা হল এটা ত্বকের লোমের ফলিকল মসৃণ রাখে। তাই কোনো রকম জ্বলাপোড়া ছাড়াই সেইভ করা যায়। সাধারণ ও মিশ্র ত্বকের ময়লা দূর করতে ক্রিম ভিত্তিক স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।
বলিরেখা এড়াতে: চোখের চারপাশের ত্বকে ঘাম ও তেল উৎপাদন না হওয়াতে শুষ্ক হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে যা বলিরেখা ও ভাঁজের সৃষ্টি করে। এই সমস্যা এড়াতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখের নিচে উন্নত ‘আইক্রিম’ ব্যবহার করুন। বাজারে পুরুষের জন্য নানান আইক্রিম থেকে নিজের পছন্দসই ক্রিম বেছে নিন।
ঠোঁটের যত্ন: ঠোঁটের দিকেও মনযোগী হওয়া জরুরি। ঠোঁট রোদে পোড়ে এবং শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে দেখতে বাজে লাগে। এই সমস্যা কমাতে উন্নত লিপবাম ব্যবহার করুন। এটা ঠোঁট মসৃণ ও নমনীয় করতে সাহায্য করে। তাছাড়া আয়নায় ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন ঠোঁটেও বলিরেখা পড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে আসে। যেহেতু পুরুষরা মেইকআপ করে না তাই কোনো কিছু ব্যবহার করে এটা লুকানো সম্ভব না। এ কারণে পুরুষদের দিনের বেলা এসপিএফ সমৃদ্ধ লিপবাম এবং রাতে আর্দ্র ও ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ লিপবাম ব্যবহার করা উচিত।
পুরুষের ত্বকের যত্ন
১. ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে ত্বক খুব ভালো থাকে।
২. বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর ত্বকের যত্নের জন্য ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত। বাড়িতে আসার পর, মুখ ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। তা হলে মুখে জমে থাকা ময়লা দূর হবে। দিনে দুবার ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
৩. টোনার ত্বকের যত্নের জন্য খুব কার্যকর। টোনার ব্যবহারের ফলে ত্বকে ব্রণ হয় না। ত্বকের জন্য টোনার ব্যবহার করুন।
৪. দাড়ি কাটার জন্য প্রতিবারই নতুন ব্লেড বা রেজার ব্যবহার করুন। কারণ পুরনো ব্লেড ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৫. উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য মুখে ম্যাসাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরো মুখে ফেস রোলার ব্যবহার করা উচিত। উজ্জ্বল ত্বক পেতে কয়েক মিনিটের জন্য মুখে ম্যাসাজ করা উচিত।
আরও পড়ুন: পাথরকুচি গাছের ভেষজ ১৫টি গুণাবলি ও কার্যকারিতা
তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই
ঘুমানোর আগে পুরুষের ত্বকের যত্ন
নিজেকে সুন্দর দেখাক এটা সবাই চায়। কিন্তু, এর জন্য যে কিছুটা শ্রম আর সময় নিজের জন্য আলাদা করে রাখতে হয়, সেটাই মানতে নারাজ সবাই। বিশেষ করে অসচেতনতা হোক বা ব্যস্ততা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পুরুষদের ত্বকের যত্ন নেওয়া হয় না বললেই চলে। অথচ, আমাদের সমাজে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই বাইরে থাকে বেশি। তাই দিনভর ধুলাবালি, রাস্তার কালো ধোয়া, রোদের তাপ পুরুষকেই বেশি তাড়িয়ে বেড়ায়। ফলে চেহারার উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায় দ্রুত। নিজেকে সুন্দর রাখতে তাই পুরুষেরও ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি।
প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে উজ্জ্বল করতে শসা খুব উপকারী। প্রতিদিন বাসায় ফিরে মুখ ধোয়ার আগে শসার টুকরো দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বক অনেক পরিষ্কার হয়। এছাড়া শসার রস ত্বকে প্রাকিতিক মশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।
এক চামচ কাঁচা হলুদের সঙ্গে কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। কাঁচা হলুদ ত্বকের কোমলতা ধরে রাখে এবং কাঁচা দুধ ত্বকের কমপ্লেকশনকে আরো ফর্সা করতে সাহায্য করে।
এলোভেরার জেলোতে প্রচুর পরিমাণে আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ফাটা ত্বক সারিয়ে তুলতে অনেক উপকারী। সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এলোভেরা জেলো মুখে মেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে নিন। এটি ত্বকের মৃত কোষগুলো বের করে ত্বককে আরো উজ্জ্বল করে তোলে।
স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বক
এ ধরনের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য ত্বক উপযোগী ক্লিনজিং জেল বা ফোম ব্যবহার করা উচিত। ত্বক নরম ও মসৃণ থাকবে। ক্লিনজার নিয়ে হালকাভাবে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। তারপর ভেজা তুলা দিয়ে মুছে ফেলুন। ভেজা তুলা ব্যবহার করলে ত্বকের ময়েশ্চার বজায় থাকবে ভালোভাবে।
ক্লিনজিংয়ের (Cleanser) পর জরুরি টোনিং (Toning)। ভিজা তুলা দিয়ে স্কিন টোনার লাগান। টোনারের বদলে গোলাপ পানিও ব্যবহার করতে পারেন। টোনিংয়ের পর রিশিং ক্রিম বা পাইট ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করুন। ত্বক যদি বেশি শুষ্ক প্রকৃতির হয় তাহলে ক্রিম লাগানোর পর হালকা ময়েশ্চারাইজিং লোশন ( Moisturising lotion) লাগাতে পারেন, না হলে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর দরকার নেই।
সেনসেটিভ ত্বক
ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকলে মেডিকেটেড সোপ বা ক্লিনজার ব্যবহার করা ভালো। ত্বকের অতিরিক্ত তেল সরিয়ে আপনার ত্বককে ফ্রেস রাখবে। এছাড়া ব্রণ কমাতে চন্দনবাটা সারারাত লাগিয়ে রাখতে পারেন। স্যালাইসিলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ক্রিম লাগাতে পারেন। তবে এতে ত্বকে টানভাব দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরো মুখে অ্যালোভেরা জেল হালকা করে লাগাতে পারেন। ক্লে মাক্সও লাগাতে পারেন। খুব ঠাণ্ডা বা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত নয়। মুখ পরিষ্কার করার পর ভালো করে পানি দিয়ে মুখ ধোবেন। বিশেষ করে ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির হলে মুখ ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। ত্বক শুষ্ক ধরনের হলে অ্যালোভেরা, লেবুসমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করবেন না। এছাড়া ত্বকে ব্রণ থাকলে লেবু জাতীয় কিছু সরাসরি না লাগানোই ভালো।
তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বক
এ ধরনের ত্বকের জন্য ভালো ক্লিনজিং লোশন বা ক্লিনজিং মিল্ক (Cleansing Milk) মুখে ভালোভাবে লাগানোর পর ভিজা তুলা দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন। সাবানবিহীন ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। সাবানের মতো ফেসওয়াশ হাতে নিয়ে মুখে লাগাবেন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর টোনার বা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Astringent) লাগান। তৈলাক্ত ত্বকে নারিশিং ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এতে ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে যেতে পারে এবং রোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। মিশ্র প্রকৃতির ত্বকের শুষ্ক অংশে নারিশিং ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। সূত্র: হেলথ বাংলা
সাতটি ধাপে পুরুষের মুখের যত্ন,ছেলেদের রূপচর্চার জন্য কোন ক্রিমটা সবচেয়ে ভাল, বয়সের ছাপ কমানোর ক্রিম মুখের ত্বকের যত্ন গরমে, ছেলেদের মুখের ক্রিম বাজারের সেরা, স্ক্রাব প্রতিদিন মুখের যত্ন, মুখের ত্বকের প্রাকৃতিক যত্ন, ছেলেদের বয়সের ছাপ কমানোর উপায়, ঘুমানোর আগে পুরুষের ত্বকের যত্ন