স্টিফেন হকিংয়ের অনুপ্রেরণামূলক ৪০টি উক্তি | Life Changing Quotes of Stephen Hawking

স্টিফেন উইলিয়াম হকিং (ইংরেজিতে Stephen William Hawking) ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বিশিষ্ট ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তাঁকে বিশ্বের সমকালীন তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মধ্যে অন্যতম গণ্য করা হয়। পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর দুইটি অবদান সর্বত্র স্বীকৃত। প্রথম জীবনে সতীর্থ রজার পেনরোজের সঙ্গে মিলে সাধারণ আপেক্ষিকতায় সিংগুলারিটি সংক্রান্ত তত্ত্ব।

হকিং প্রথম অনিশ্চয়তার তত্ত্ব কৃষ্ণ বিবর-এর ঘটনা দিগন্তে প্রয়োগ করে দেখান যে কৃষ্ণ বিবর থেকে বিকিরিত হচ্ছে কণা প্রবাহ। এই বিকরণ এখন হকিং বিকিরণ (অথবা কখনো কখনো বেকেনস্টাইন-হকিং বিকিরণ) নামে অভিহিত। তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিক্যাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন এবং ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, খেতাবে ভূষিত হন।

২০০২ সালে বিবিসির “সেরা ১০০ ব্রিটন্‌স” জরিপে স্টিফেন হকিং ২৫তম স্থান অধিকার করেন। তাঁর নিজের তত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে রচিত বই কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (A brief history of time) দিয়ে তিনি বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করেন এবং বইটি রেকর্ড ভঙ্গ করা ২৩৭ সপ্তাহ ব্রিটিশ সানডে টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় ছিল। শারীরিকভাবে ভীষণরকম অচল এবং এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস বা লাউ গেহরিগ নামক একপ্রকার মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমাগতভাবে সম্পূর্ণ অথর্বতার দিকে ধাবিত হন, তবুও বহু বছর যাবৎ তিনি তার গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যান। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার পরও তিনি এক ধরনের শব্দ-উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্যে অপরের সাথে যোগাযোগ করতেন। তিনি ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

Read More: বার্ট্রান্ড রাসেল এর জীবনী – Bertrand Russell Biography in Bengali

আরও পড়ুন:Biography of harichand guruchad thakur

 

স্টিফেন হকিংয়ের  উক্তি, জীবনের লড়াইকে উদ্যম দেবে আপনাকে

তাঁর কৃষ্ণগহ্বর তত্ত্ব শোরগোল ফেলে দিয়েছিল দুনিয়াজুড়ে। মহাকাশ পদার্থবিদ্যায় নতুন দ্বার খুলেছে তাঁর গবেষণা। প্রয়াত স্টিফেন হকিংকে তাই নানা ভাবে স্মরণ করছে বিশ্ব। আযৌবন জটিল স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন। তবু জীবনের প্রতি তাঁর উদ্যম ছিল চরম। সঙ্গে ছিল সর্বজনবিদিত রসবোধ। পড়ুন স্টিফের হকিংয়ের কালজয়ী কয়েকটি উক্তি.

তাঁর ৭৬ বছরের জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য মহামূল্যবান বাণী। তার থেকে বাছাইকৃত অনুপ্রেরণামূলক ৪০ উক্তি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:

১. মৃত্যু নিয়ে আমি ভীত নই। কিন্তু মরার জন্য তাড়াও নেই আমার। তার আগে করার মতো অনেক কিছু আছে আমার।

২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদিম রূপ ইতিমধ্যেই আমাদের হাতে আছে, যা খুব প্রয়োজনীয় বলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে আমি মনে করি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ মানবজাতির অস্তিত্বের জন্যই হুমকির কারণ হবে।

৩. আমি মনে করি, একটি বিপর্যয় হবে। সম্ভবত বহিরাগতরা হবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর। এই গ্রহেই একই প্রজাতির হলেও অগ্রসর গোষ্ঠীর সঙ্গে পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর সাক্ষাতের ইতিহাসটা খুব একটা সুখকর হয়নি। আমি মনে করি, সতর্ক হওয়া উচিত আমাদের।

৪. অসম্পূর্ণতা ছাড়া তোমার, আমার কারও অস্তিত্বই থাকত না।

৫. আমার খ্যাতির বিপত্তিটি হচ্ছে, পরিচয় গোপন রেখে বিশ্বের কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। পরচুলা কিংবা কালো চশমা পরাটা আমার জন্য যথেষ্ট নয়। হুইলচেয়ারই সব ফাঁস করে দেয়।

৬. মহাবিশ্বকে সচল রাখার জন্য কোনো নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নিতে ঈশ্বরকে ডাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।

৭. আমার লক্ষ্য অতি সাধারণ। মহাবিশ্বের একটি পরিপূর্ণ বোঝাপড়াই আমার লক্ষ্য। এর বিদ্যমান প্রকরণ ও এর কারণ এবং এর অস্তিত্বই এখানে মুখ্য প্রশ্ন।

৮. ২১ বছর বয়সেই আমার প্রত্যাশা কমে শূন্যে পৌঁছায়। এরপর থেকে সবকিছু বোনাসে রূপ নিয়েছে।

৯. উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, এই অস্তিত্ব মানব অস্তিত্বেরই চূড়ান্ত বিজয়। তখনই একমাত্র ঈশ্বরের মনকে জানব আমরা।

১০. অভিকর্ষ থাকবার কারণেই এই বিশ্ব শূন্য থেকে তৈরি হয়ে যেতে পারে।

১১. কয়েকদিনের পূর্বাভাস না দেখে কেউ হঠাৎ করে একদিনের আবহাওয়া পূর্ভাবাস বলে দিতে পারবে না।

১২. আমার মত অন্যান্য চলৎশক্তিহীন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে আমার উপদেশ হবে এই যে, আপনারা কখনো নিজেদের নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না বা আপনার অবস্থা কেন এমন হল তা নিয়ে কারণ খুঁজতে যাবেন না। এর কোন কারণ নেই। এর চাইতে নিজের মাঝে যতটুকু শক্তি রয়েছে, তা দিয়ে অন্যের উপকার করুন।

১৩. একটি বৃহৎ মস্তিষ্কের নিউরণগুলো যেভাবে একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকে, আমরাও বর্তমানে ইন্টারনেটের সাথে এভাবেই যুক্ত আছি।

১৪. জীবনটা খুবই ছন্দহীন হয়ে যেত যদি জীবনে কোন হাসি ঠাট্টা না থাকত।

১৫. যদি আপনি সবসময় রাগান্বিত থাকেন এবং অভিযোগ করতে থাকেন, কেউ আপনার জন্য নিজের মূল্যবান সময়টুকু দিতে চাইবে না।

১৬. বিজ্ঞান শুধুমাত্র অনুসন্ধানের বা কার্যকারণের শিষ্যই নয়; বরং তা এক ধরণের ভালোবাসা ও অনুরাগও বটে।

১৭. জীবন যেমনই কঠিন হোক না কেন, অবশ্যই এমন কিছু আছে যা তুমি করতে পারবে এবং সে কাজে তুমি সফল হবে।

১৮. আকাশের নক্ষত্ররাজির দিকে তাকাও, কখনো তোমার পায়ের দিকে নয়। তুমি যা দেখছ তা উপলব্ধি করার চেষ্টা কর এবং বিস্ময়াভূত হও যে সমগ্র বিশ্ব কেমন করে টিকে আছে। কৌতুহলী হতে শেখো।

১৯. বুদ্ধিমত্তা তাকেই বলে যখন আপনি পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।

২০. জীবনে কৌতূহলী হতে শেখো।আর তা হওয়ার জন্য রাতের আকাশের অসংখ্য নক্ষত্রমন্ডলীর দিকে তাকাও, আর এই মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি দেখে বিস্ময় করো, উপলব্ধি করার চেষ্টা করো। নিজের পায়ের দিকে তাকালে তুমি কিছু নতুন উপলব্ধি করতে পারবে না।

২১. কোনওকিছুই পূর্বনির্ধারিত নয়। মনের বিশ্বাস থাকলে আপনি অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারেন।

২২. ‘আপনি ভুল করেছেন’, এমন কথা আপনাকে যদি কেউ বলে তাঁকে বলবেন ভুল করা জরুরি। ভুল না করলে আমি আপনি কেউই বেঁচে থাকবো না।

২৩. আমাদের বর্তমানের ইন্টারনেটের ব্যবস্থা অনেকটা আমাদের মস্তিষ্কের ভিতর একটা নিউরোন অন্য সকল নিউরোনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার মতো ।

২৪. প্রতিবন্ধকতা থাকার জন্য নিজেকে ছোটো বা হেয় করবে না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আপনার মনকে প্রতিবন্ধী করতে পারবে না কোনোদিন।

২৫. আমার কাছে আজও রহস্য  নারীর সারাদিনের ভাবনাচিন্তা।

২৬. জীবনে যার কাছে থেকে তুমি ভালোবাসা পাবে তাকে তুমি ছুড়ে ফেল না।

২৭. সভ্যতার ধ্বংসের জন্য আগ্রাসন হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ কাজ।

২৮. জীবনে মানুষ সবচেয়ে বেশি সাফল্য পায় কথা বলেই। আবার ব্যর্থতার কারণও কথা বলা। তবে আলাপচারিতা সব সময়ে চালিয়ে যাওয়া উচিত।

২৯. জীবনে মানুষ সবচেয়ে বেশি সাফল্য পায় কথা বলেই। আবার ব্যর্থতার কারণও কথা বলা। তবে আলাপচারিতা সব সময়ে চালিয়ে যাওয়া উচিত।

৩০. যারা নিজের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নাক উঁচু করে থাকে, জীবন যুদ্ধে তারা আসলে পরাজিত।

৩১. আশ্চর্যের বিষয় হল, যে মানুষেরা অদৃষ্টে বিশ্বাস করেন। রাস্তা পারাপার করার সময় তারাই দু’দিক দেখে নেন।

৩২. আমি জীবনে ক্লাসে কোনোদিন প্রথম না হয়েও আমি সবার কাছে “আইনস্টাইন” নামেই পরিচিত ছিলাম।

৩৩. যদিও যন্ত্র ছাড়া আমি একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি না, আমার কথা কম্পিউটারে ভেসে ওঠে তবুও মনের দিক দিয়ে আমি স্বাধীন।

৩৪. এখনও আমি অত বড় হয়ে উঠতে পারিনি। আমি এখনও প্রশ্ন করে বেড়াই।

৩৫. যদি আপনি কোনো বিষয়ে আশা না ত্যাগ করেন তাহলে এখনো আপনি সেই বিষয় নিয়ে ভাবেন।

৩৬. কর্মের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। কর্ম ছাড়া জীবন শুন্য। কর্ম জীবনকে অর্থপূর্ণ ও উদ্দেশ্যময় করে তোলে।

৩৭. মহাবিশ্বে কোনও কিছুই নিখুঁত নয়। আর এটাই মহাবিশ্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৩৮. মানুষের ক্রোধই তার সবচেয়ে বড় শত্রু। একমাত্র এই ক্রোধই মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

৩৯. যারা নিজের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অহংকার করে, তারাই সবচেয়ে বোকা হয়।

৪০. জীবনে ভুল করা দরকারি। ভুল না করলে আমি বা আপনি কেউই বেঁচে থাকব না।

ব্যক্তিগত মতাদর্শ:

মানবজাতির ভবিষ্যৎ: ২০০৬ সালে হকিং ইন্টারনেটে প্রশ্ন রাখেন: “রাজনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে বিশৃঙ্খল এই পৃথিবীতে, মানবজাতি কীভাবে আরও ১০০ বছর ঠিকে থাকবে?” পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন, “আমি এর উত্তর জানি না। এজন্যই আমি এই প্রশ্নটি করেছি, যাতে মানুষ এই বিষয় নিয়ে ভাবে এবং এখন আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি তা সম্পর্কে সতর্ক থাকে।” হকিং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন হঠাৎ পারমাণবিক যুদ্ধ, ভাইরাস, বিশ্ব উষ্ণায়ন, বা মানুষ ভাবেনি এমন বিপদ থেকে পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতির জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি মানবজাতি অন্য কোন গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারে, তাহলে গ্রহ-ব্যাপী দুর্যোগের ফলে মানুষ বিলুপ্ত হবে না। হকিং বিশ্বাস করেন মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য মহাশূন্যে ভ্রমণ ও মহাশূন্যে উপনিবেশ স্থাপন করার প্রয়োজন।

বিজ্ঞান বনাম দর্শন: ২০১১ সালে গুগলের জেইটজিস্ট সম্মেলনে হকিং বলেন “দর্শন মৃত”। তিনি মনে করেন দার্শনিকগণ “বিজ্ঞানের আধুনিক বিকাশের সাথে তাল মিলাতে পারেননি” এবং বিজ্ঞানীরা “আমাদের জ্ঞানের ক্ষুদা মেটাতে আবিষ্কারের আলোকবর্তিকা বহনকারী হয়ে ওঠেছেন”। তিনি বলেন দর্শন বিষয়ক সমস্যার সমাধান বিজ্ঞান দিয়ে দেওয়া সম্ভব, বিশেষ করে মহাবিশ্বের নতুন ও খুবই ভিন্ন রকমের চিত্র তুলে ধরতে নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বসমূহের ক্ষেত্রে এবং মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান” সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান প্রদান সম্ভব।

ধর্ম বিশ্বাস: নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তাঁর স্ত্রীসহ অনেকে তাঁকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করলেও হকিং নিজে মনে করেন তিনি “সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন” এবং তিনি বিশ্বাস করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।

Read More:বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

আরও পড়ুন:ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব—কীর্তিমান বাঙালি

 

Stephen Hawking Biography, Famous Quotes ও উক্তি সমূহ লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি ফলো ।

ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।

তথ্যসূত্র: Wikipedia

ছবিঃ ইন্টারনেট

 

Leave a Reply