দাঁতের হলদেটেভাব নিয়ে আর অস্বস্তিতে পড়তে হবে না। হলুদ দাঁত সাদা করতে এবার ঘরে রাখুন কলা।কোনো রকম মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট ছাড়াই ভেষজ উপায়ে মুক্তার মতো ঝলমলে সাদা দাঁত পেতে কলার জুড়ি মেলা ভার। চিকিৎসকরা বলছেন, কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ দাঁতের হলুদ ভাব দূর করে ফিরিয়ে দেবে দাঁতের জৌলুস। চিকিৎসকদের পরমার্শ অনুযায়ী, দিনে নিয়ম করে কলার টুকরো দাঁতে ঘষে, ১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে মুখ কুলকুচি করে নিন। আপনি নিজের চোখেই ফারাকটা দেখতে পাবেন।
এছাড়াও দাঁতের হলুদভাব দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন ঘরোয়া টোটকাও। বেকিং সোডার মতোই হলুদও ঝকঝকে দাঁতের চাবিকাঠি হতে পারে, যদি তা সঠিক পদ্ধতি মেনে ব্যবহার করা যায়। হলুদে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটরিয়াল ক্ষমতা। পরিমাণ মতো হলুদের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে ব্রাশ করলে দাঁতের হলুদভাব কাটবে, মতো বিশেষজ্ঞদের।
ঝকঝকে সাদা পরিষ্কার দাঁত যে কোনো মানুষের মুখশ্রী বদলে ফেলে। অন্যদিকে যতই সুন্দর মুখের আদল হোক না কেনো নোংরা অপরিষ্কার দাঁত মানুষের ব্যক্তিত্বেই একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্তমান সময়ে মানুষ নিজের প্রসাধন এবং রূপচর্চার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনা। তাই আর নিজেকে অবহেলা নয় দাঁতের রঙ স্বাভাবিকের থেকে সামাণ্যতম পরিবর্তন হলেই সেদিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাহলে আর অপরিচ্ছন্ন দাঁত বা মুখে গন্ধ এইরকম সমস্যায় অন্যের সামনে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করবেনা।
এই প্রবন্ধ থেকে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে দাঁত পরিষ্কার রাখার উপায় গুলি জেনে নেবো। তবে তার আগে জেনে নেওয়া দাঁতে হলুদ ছোপ পরার কারণ টা ঠিক কী!
দাঁতে হলুদ ছোপ পরার কারণ কী ?
দাঁতে হলদে ছাপ পরার জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করা যেতে পারে। কারণ গুলি হলো নিম্নরূপ –
- খাদ্য দ্রব্য – কিছু খাদ্য দ্রব্যে উচ্চ মাত্রায় ট্যানিক অ্যাসিড পাওয়া যায় যেমন রেড ওয়াইন। যার প্রভাবে দাঁতে হলদে ছাপ পরে। এছাড়াও কফি এবং সোডা জাতীয় পানীয় দাঁতে হলুদ ছাপ ফেলে বলে মনে করা হয়। এবং এই পাণীয় গুলির প্রভাবে দাঁতে দীর্ঘ সময় ব্যাপী হলুদ ছাপ রয়ে যায়।
- ধূমপান – দাঁতে হলদে ছোপ পরার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো ধূমপান। ধূমপানের প্রভাবে দাঁতে স্থায়ী একটা হলদে ছোপ পরে যায়।
- রোগের চিকিৎসা – বেশ কিছু এমন রোগ রয়েছে যেগুলির চিকিৎসার ফলে দাঁত হলুদ হয়ে যায়। যেমন কেমোথেরাপি ফলে, অ্যাস্থমা রোগের চিকিৎসার ফলে এমনকি উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার ফলেও দাঁত হলদে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়।
- মুখ গহ্বরে পরিচ্ছন্নতার অভাব – মুখ গহ্বর পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে গাফিলতিও দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়ার একটা প্রধাণ কারণ বলে মনে করা হয়। নিয়মিত ব্রাশ না করলে এবং কিছু খাওয়ার পর মুখ গহ্বর কুলকুচি করে পরিষ্কার না করার ফলেও অনেকসময় দাঁতে হলুদ ছোপ পরতে দেখা যায়।
- ফ্লোরাইড – অতিরিক্ত ফ্লোরাইড এক্সপোজার দাঁতে হলুদ ছোপ বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। শিধুদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ অত্যধিক হারে দেখা যায়।
ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে দাঁত সাদা রাখায় উপায়
যদি আপনার দাঁত হলুদ হয়ে যায়, তাহলে চিন্তা করবেন না। এখানে আমরা আপনাকে দাঁত পরিষ্কারের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার গুলি সম্পর্কে বিশদে জানাবো। যা সুন্দর দাঁত সাদা করার সহজ উপায়। এই ঘরোয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করলে শুধুমাত্র দাঁত সুন্দর নয় বরং আকর্ষণীয়ও হয়ে উঠবে।
১। আপেল সিডার ভিনিগার
উপকরণ
১ চামচ আপেল সিডার ভিনিগার
১ কাপ ভর্তি জল
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে উপরিক্তো উপকরণ গুলি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর প্রতিদিন সকালে ব্রাশ করার পূর্বে তরলের সাহায্যে ভালো করে মুখগহ্বর ধুয়ে নিতে হবে।
কত বার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন সকালে এই তরলের সাহায্যে ২ – ৩ বার মুখগহ্বর ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে।
উপকারীতা
আপেল সিডার ভিনিগার দাঁতের ওপর ব্লিচের কাজ করে। এতে উপস্থিত লঘু অ্যাসিড দাঁতে হলুদ ছোপ দূর করে তা ঝকঝকে করে তোলে। দাঁত সাদা রাখার ক্ষেত্রে তাই আপেল সিডার ভিনিগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২। বেকিং সোডা এবং পাতি লেবুর রস
উপকরণ
১ চামচ বেকিং সোডা
১ চামচ পাতিলেবুর রস
১ টা টুথব্রাশ
প্রস্তুত প্রণালী
- বেকিং সোডা , পাতিলেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- টুথব্রাশের সাহায্যে এই মিশ্রণ দাঁতে লাগিয়ে নিতে হবে।
- দাঁতের ওপর এই প্রলেপ লাগানোর পর ২ -৩ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। তারপর মুখের ভেতর ধুয়ে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রথম প্রথম সপ্তাহে ২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এরপর কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপকারীতা
বেকিং সোডা সোডিয়াম বাইকার্বনেট নামেও পরিচিত। এটা প্রায় প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘরে পাওয়া যায়। এটা ডেন্টাল ক্লিনিং প্রেসক্রিপশনেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা হালকা রুক্ষ এবং দাঁতে জমে যাওয়া হলুদ দাগ অপসারণ করতে সাহায্য করে।
৩। লবন এবং পাতিলেবু
উপকরণ
১ চামচ সাদা লবণ
২ চামচ পাতিলেবুর রস
প্রস্তুত প্রণালী
- লবণ এবং পাতিলেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এই মিশ্রণ টুথপেস্ট বা দাঁতের মাজনের মতন ব্যবহার করতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
সপ্তাহে ২ বার এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারীতা
লেবুর রস ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁত পালিশের মতন কাজ করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য যা দাঁত পরিষ্কার করে তুলতে সহায়তা করে এবং দাঁতের হলুদ ভাব অপসারণ করে। (9)
৪। কাঠ কয়লা
উপকরণ
কয়লা গুঁড়ো
টুথব্রাশ
প্রস্তুত প্রণালী
- টুথব্রাশ জলে ভিজিয়ে তাতে কয়লা গুঁড়ো লাগিয়ে নিতে হবে।
- ২ মিনিট সময় ধরে হালকা হাতে দাঁত ব্রাশ করে নিতে হবে।
- এরপর জল দিয়ে ভালো করে মুখ গহ্বর পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
সপ্তাহে ১ -২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপকারীতা
কাঠকয়লা ময়লা শোষন করে এবং দাঁত সাদা করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটা মুখগহ্বর স্থিত ব্যাক্টেরিয়ার অপসারণ করে রোগ জীবানু প্রতিরোধ করে।
৫। স্ট্রবেরী
উপকরণ
১ টা স্ট্রবেরী
১ চামচ বেকিং সোডা
প্রস্তুত প্রণালী
- স্ট্রবেরী থেঁতো করে তাতে বেকিং সোডা মিশিয়ে মিতে হবে।
- এরপর এই মিশ্রণ দাঁতে লাগানোর জন্য টুথব্রাশ বা নিজের আঙুলের সাহায্য নিতে হবে।
- দাঁতের ওপর মিশ্রণ লাগিয়ে নেওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য এটা রেখে দিতে হবে।
- শেষে জলের সাহায্যে মুখগহ্বর ধুয়ে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
সপ্তাহে ১ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপকারীতা
স্ট্রবেরীর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন সি দাঁতের দাগ হ্রাস করে। এছাড়াও এর নিয়মিত ব্যবহারের দাঁত উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখা যায়।
৬। নিম
উপকরণ
১ টা নিমের দাঁতন
প্রস্তুত প্রণালী
- ১ টা নিম দাঁতন গরম জলে ধুয়ে নিতে হবে।
- তারপর ঐ দাঁতনের সাহায্যে দাঁত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
নিম দাঁতনের সাহায্যে প্রতিদিন দাঁত পরিষ্কার করা যেতে পারে।
উপকারীতা
প্রাচীন কাল থেকেই দাঁত মাজার উপকরণ হিসেবে নিম দাঁতনের প্রচলন ছিলো। নিয়মিত এর সাহায্যে দাঁত মাজার ফলে দাঁত সুন্দর ঝকঝকে এবং ছোপ মুক্ত হয়ে উঠবে।
৭। হলুদ
উপকরণ
১ চামচ হলুদ গুঁড়ো
১টা টুথ ব্রাশ
প্রস্তুত প্রণালী
- জলে ভেজা টুথব্রাশে হলুদ গুঁড় লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
- দাঁত ব্রাশ করার পর মিশ্রণ দাঁতে লাগানো অবস্থায় ২ – ৩ মিনিট থাকতে হবে।
- এরপর রোজকার ব্যবহার্য্য দাঁতের মাজনের সাহায্যে দাঁত মেজে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
অল্প দিনের মধ্যেই এই অভ্যাসের সুফল দেখতে পাওয়া যাবে। তাই রোজ না হলেও কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে এইভাবে দাঁতের যত্ন করা যেতে পারে।
উপকারীতা
হলুদ গুঁড়োর হালকা রুক্ষতা দাঁত থেকে গভীর দাগ অপসারণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, হেপাটোপ্রোটেকটিভ, ইমিউনোস্টিমুল্যান্ট, এন্টিসেপটিক এবং এন্টিমুটাজেনিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হলুদ গুঁড়ো দাঁতের চিকিৎসায় খুবই উপকারী। এটি মুখ গহ্বর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করে এবং এন্টিপ্লিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায় যে সব শিশু নিম দাঁতন ব্যবহার করে তাদের দাঁত শক্তিশালী হয়। (13)
৮। প্যারোক্সাইড সহযোগে কুলকুচি
উপকরণ
১ কাপ হাইড্রোজেল প্যারোক্সাইড
১ কাপ অল্প গরম জল
প্রস্তুত প্রণালী
- জলের সাথে হাইড্রোজেন প্যারপক্সাইড ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এই মিশ্রণ ৩০ – ৪০ সেকেণ্ড মুখে রেখে দিতে হবে তারপর মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- এবার শুধু জল দিয়ে মুখ কুলকুচি করে নিতে হবে।স
কতবার ব্যবহার করা যায়
সপ্তাহে ২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে মাথায় রাখা দরকার এই মিশ্রণ দাঁতে লাগানোর পরবর্তীতে মুখ ধোয়ার সময় যেন কুলকুচি করা জল ফেলে দেওয়া হয় এবং কোনোভাবেই সেটা ব্যবহারকারী সেটা গিলে না ফেলে।
উপকারীতা
হাইড্রোজেন প্যারোক্সাইড দাঁত পরিষ্কারের জন্য একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্লিচিং এর বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। দাঁতের চিকিৎসকেরা এই উপকরণটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। (14)
৯। নারকেল তেল
উপকরণ
২ চামচ নারকেল তেল
প্রস্তুত প্রণালী
- আঙুলে নারকেল তেল লাগিয়ে আঙুলের তালুর সাহায্যে দাঁতের ওপর বুলিয়ে নিতে হবে। কিন্তু মাথায় রাখা দরকার নারকেল তেল যুক্ত মুখের লালা যেনো কোনোভাবেই ব্যবহারকারী গিলে না ফেলে।
- দাঁত মাজার পর কিছু সময় অপেক্ষা করে মুখ জলের সাহায্যে কুলকুচি করে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন সকালে নারকেল তেলের সাহায্যে দাঁত মাজা যেতে পারে।
উপকারীতা
নারকেল তেলস্থিত লরিক অ্যাসিড অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। এই কারণে, এটা মুখ গহ্বর সহ দাঁতে উৎপন্ন ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল করে। এছাড়া এটা আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস সতেজ রাখতে সাহায্য করে। (15)
১০। কমলালেবু তেল
উপকরণ
২ -৩ ফোঁটা কমলালেবু তেল
১ টা টুথপেস্ট বা দাঁতের মাজন
১ টা টুথব্রাশ
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে টুথব্রাশে অরেঞ্জ বা কমলালেবু তেল লাগিয়ে নিতে হবে।
- এরপর দাঁত মেজে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
একটানা ২ সপ্তাহ রোজ সকালে এইভাবে দাঁত মাজা যেতে পারে।
উপকারীতা
কমলালেবুর খোসা থেকে এই তেল প্রস্তুত করা হয়। এটা দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় সহজেই দাঁত সহ মুখ গহ্বরের মধ্যস্থ রোগ জীবানু প্রতিরোধ করে। (
১১। তিল তেল
উপকরণ
১ টেবিল চামচ তিল তেল
প্রস্তুত প্রণালী
- সকালে খালি পেটে ১৫ – ২০ মিনিট তিল তেল মুখের মধ্যে বুলিয়ে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখা দরকার ব্যবহারকারী যেন এটা গিলে না ফেলে।
- এরপর ঐ তেলের থুতু মুখ থেকে ফেলে তারপর জলের সাহায্যে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ইচ্ছে করলে কুলকুচি করার জলে ১ চিমটে লবন মিশিয়ে নিতে পারেন।
- সবশেষে ব্রাশ করে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
প্রতিদিন সকালে ১ বার এই তেলের সাহায্যে দাঁত মাজা যেতে পারে।
উপকারীতা
তিল তেল সেসামিন, সেসমোলিন এবং সেসমিনল যুক্ত হয় এবং এছাড়াও এটি ডিটক্সিফিকেশন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। এই সব বৈশিষ্ট্যের কারণে, তিল তেল শুধুমাত্র দাঁতের দাগ পরিষ্কার করে না বরং তাদের শক্তিশালীও করে তোলে।
১২। কমলালেবুর খোসা
উপকরণ
কমলালেবুর খোসা
প্রস্তুত প্রণালী
- কমলালেবুর খোসার সাহায্যে ১ – ২ মিনিট দাঁত ঘষতে হবে।
- এরপর প্রতিদিনের মতন টুথপেস্ট সহযোগে দাঁত মেজে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
১ দিন অন্তর এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপকারীতা
কমলালেবুর খোসাতে ব্রোমেলিন নামে একটি এনজাইম থাকে, যা দাঁত সাদা করে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবেও কাজ করে। (
১৩। সন্ধক লবণ
উপকরণ
অল্প একটু সন্ধক লবণ
২ চামচ জল
১ টা টুথব্রাশ
প্রস্তুত প্রণালী
- সন্ধক লবণ জলের সাথে মিশিয়ে একটা প্রলেপ তৈরী করে নিতে হবে।
- এই প্রলেপের সাহায্যে দাঁত মাজতে হবে।
- এরপর ঐ মিশ্রণ একটুও পরে থাকলে তাতে আরেকটু জল মিশিয়ে সেই দ্রবণের সাহায্যে মুখ গহ্বর কুলকুচি করে নিতে হবে।
- সন্ধক লবণ মিশ্রিত জলের সাহায্যে মুখের ভেতরের অংশ ধুয়ে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
সপ্তাহে ২ – ৩ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপকারীতা
সন্ধক লবণ দাঁতের হলুদ ছোপ দূর করে একইসাথে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ার কারণে মুখ গহ্বরস্থ রোগ জীবানু প্রতিরোধ করে।
১৪। পেয়ারা পাতা
উপকরণ
১ – ২ পেয়ারা পাতা
প্রস্তুত প্রণালী
- পেয়ারা পাতা বেটে একটা মিশ্রণ তৈরী করতে হবে
- এই মিশ্রণ হালকা হাতে দাঁতে বুলিয়ে নিতে হবে। এবং কিছু সময়ের জন্য ফেলে রাখতে হবে।
- এরপর কুলকুচি করে নিতে হবে এবং টুথপেস্টের সাহায্যে দাঁত মেজে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
বেশ কয়েকদিন নিয়মিত ভাবে এই মিশ্রণের ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারীতা
পেয়ারা পাতা দাঁত পরিষ্কারের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসারে ব্যবহার করা হয়। এটা মুখের সংক্রমণ, মাড়ির সমস্যা প্রতিকারের জন্যই মূলত ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড দাঁতের ওপর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে। (20)
১৫। তেলের সাহায্যে দাঁত মাজা
উপকরণ
একটু নারকেল তেল এবং সূর্যমুখী তেল
প্রস্তুত প্রণালী
- সকালে দাঁত মাজার পূর্বে কিছুটা সময় দাঁতে তেল মাখিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর জল দিয়ে মুখ কুলকুচি করে নিতে হবে।
- সব শেষে মাজনের সাহায্যে দাঁত মেজে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
সপ্তাহে ৩ – ৪ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপকারীতা
অয়েল সুইং থেরাপি একটি দাঁত পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া।ীই থেরাপির সাহায্যে মুখের মধ্যেকার রোগ নিরাময় হয়। (
১৬। কলার খোসা
উপকরণ
কলার খোসা
১ কাপ অল্প গরম জল
প্রস্তুত প্রণালী
- কলার খোসা ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
- কলার খোসার ভেতরের অংশ দ্বারা দাঁতের ওপর ভালো করে ঘসে নিতে হবে।
- এরপর অল্প গরম জলের সাহয্যে মুখ কুলকুচি করে নিতে হবে।
কতবার ব্যবহার করা যায়
নিয়মিত এইভাবে দাঁত পরিষ্কার করা যেতে পারে।
উপকারীতা
কলার খোসায় ম্যাঙ্গানীজ এবং পটাশিয়াম জাতীয় খনিজ পাওয়া যায়। যা দাঁত পরিষ্কার রাখাতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে।
দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য
দাঁতের সৌন্দর্য এবং শক্তি শুধুমাত্র দাঁত পরিষ্কারের উপর নির্ভর করে না এর জন্য উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করাও জরুরী। দাঁত পরিষ্কার রাখতে পারে এমন কতকগুলি খাদ্যের বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।
যেসব খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী
- ফাইবার সমৃদ্ধ ফল এবং শাক সবজি – আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (এডিএ) সূত্রে জানা যায় যে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দাঁত এবং চুইংগাম পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই খাদ্য লালা তৈরী করে, যা দাঁতে আক্রমণকারী অ্যাসিড এবং এনজাইমের প্রভাব কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- দুগ্ধজাত পণ্য – দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট সমৃদ্ধ হয়। এই খনিজ পদার্থ দাঁতকে নিরাপদে রাখতে সাহায্য করে এছাড়াও তারা দাঁতের প্রাকৃতিক এনামেল সংশোধন করতে সহায়তা করে।
- সবুজ এবং কালো চা – উভয় প্রকার চা পলিফেনল ধারণ করে, যা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া নাশ করে। এটা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি বা অ্যাসিড সৃষ্টিতে বাধা দেয়, যেগুলি মূলত দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
- ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ খাদ্য – ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ পানীয় জল বা ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ অন্য কোন খাদ্য দাঁতের বিকাশে সাহায্য করে।
যেসব খাদ্য বর্জন করা উচিৎ
আঠালো চকলেট এবং মিষ্টি – এইসব খাদ্য গুলি দাঁতের সঙ্গে আটকে থাকে এবং পরবর্তীতে সেগুলি থেকে দাঁত ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয়।
- স্টার্চি খাদ্য – নরম রুটি এবং পটেটো চিপস এগুলি সহজেই দাঁতের মধ্যে আটকে থাকে এবং পরে পচে গিয়ে দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করে।
- কার্বনেটেড পানীয় – এই ধরনের পানীয়তে উচ্চ পরিমাণ শর্করা রয়েছে। এগুলি পান করলে দাঁতের হলুদ ছোপ বৃদ্ধি পায় এবং দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে।
- মুখ গহ্বর শুষ্ক করা পদার্থ – অ্যালকোহল এবং অনেক ওষুধ যা গ্রহণের ফলে মুখ শুকিয়ে যায়, এবং দাঁতকে প্রভাবিত করে। এটি দাঁত দুর্বল করে এবং শীঘ্রই পড়তে শুরু করে।
দাঁত পরিষ্কার এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য কতকগুলি জরুরী পরামর্শ বা টিপস
- দাঁত পরিষ্কার রাখতে হলে প্রত্যহ অন্তত ২ বার দাঁত ব্রাশ করা দরকার।
- ফ্লোরাইডযুক্ত মাজন ব্যবহার করা দরকার। এতে দাঁতের এনামেল শক্ত হয় এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
- দাঁত পরিষ্কার রাখতে হলে নিয়মিত ফ্লাস করা দরকার।
- দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে বাজারজাত বোতলবন্দী নরম পানীয় অবিলম্বে বর্জন করা উচিৎ।
- মিষ্টিজাত খাদ্য কম গ্রহণ করা দরকার। শর্করা জাতীয় খাদ্য দাঁতে ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম দেয়।
- খেলার সময় চোট আঘাত থেকে দাঁত রক্ষা করার জন্য মাউথ গার্ড ব্যবহার করা দরকার।
- দাঁত নড়লে তা অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
- দাঁতের ব্যথা, যন্ত্রনার উপশমের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী।
হলুদ দাঁতের চিকিৎসা,Home Remedies for Teeth Whitening দাঁতের প্লাক দূর করার উপায়, হলুদ দাঁত সাদা করার ঘরোয়া উপায়, কালো দাঁত সাদা করার উপায়, দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায়, দাঁত সাদা করার ঔষধ, দাঁত সাদা করার খরচ, দাঁত সাদা করার প্রাকৃতিক উপায়,দাঁত সাদা করার ঔষধ, দাঁত ফাঁকা দূর করার ঘরোয়া উপায়, দাঁতের প্লাক দূর করার উপায়, দাঁত সাদা করার টুথপেস্ট, দাঁত ব্যাথা দূর করার উপায়, দাঁতের হলদে দূর করার উপায়, কালো দাঁত সাদা করার উপায়, দাঁত থেকে পানের দাগ তোলার উপায়.healthy teeth