আমরা সাধারণত অল্পতেই হতাশ হয়ে যাই। তরুণ প্রজন্ম যেন এই ‘হতাশা’ নামক ব্যাধির মূল শিকার। তবে সবাই এই হতাশার শিকার হয়ে চুপচাপ বসে থাকে না। কেউ কেউ অদম্য সাহস নিয়ে দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে চলে সব ধরণের বাধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে। একজনের জীবনে যত কালো অতীত কিংবা খুঁতই থাকুক না কেনো, বাধা ডিঙ্গিয়ে যারা চলতে থাকে তারা সফলতার দ্বারে পৌঁছুবেই।
আজকে আপনাদের এমন একজন মানুষের জীবনের গল্প শোনাবো, যিনি আমাদের মত স্বাভাবিক হাত-পা নিয়ে জন্মাননি। তিনি পৃথিবীতে এসেছেন হাত এবং পা ছাড়াই।
অনুপ্রেরণাদায়ী নিক ভুজিসিক এর জীবনী ও বিখ্যাত উক্তি ।
“If I fail, I try again, and again and again. If YOU fail, are you going to try again? The human spirit can handle much worse than we realize. It matters HOW you are going to FINISH. Are you going to finish strong?”- Nick Vujicic
মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব, সেটা এই কারণে যে, মানুষ প্রকৃতির কোনো বাধাকে সামনে রেখে নিজেকে ছোট করে নি । কিন্তু সকল মানুষ এই সহজ সত্যটি বুঝতে পারে না । তারা নিজেদের সীমাবদ্ধ ভেবে জীবনকে ছোট ও অর্থহীন করে রাখে । কিন্তু জীবনের প্রকৃত মহত্ব যারা বুঝেছেন , তাদের কাছে জীবন এক লড়াইয়ের নাম । আর তাদের ভেতরে রয়েছে অফুরন্ত শক্তি , যার দ্বারা তারা বিশ্বজয় করতে পেরেছেন । প্রকৃতি অনেককেই অনেক কিছু দিয়েছেন , কিন্তু অনেকেই তার সঠিক ব্যবহারই করতে জানেন না। আবার অনেক কিছু না পেয়েও অদম্য ইচ্ছাশক্তি , ধৈর্য , চেষ্টা আর জীবনের প্রতি ভালোবাসা দিয়েই তারা গড়ে তুলেছেন একের পর এক সাফল্যের রঙিন পৃথিবী । বন্ধুরা আজ এমনই একজন মানুষের কথা জানবো , যিনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছে এক উদ্যম , অনুপ্রেরেণা , সাহস , আর সাফল্যের পথপ্রদর্শক । তিনি হলেন — Nick Vujicic
‘টেট্রা এনিমেলিয়া সিনড্রোম’ এর ফলে মানুষ কোনো হাত–পা ছাড়াই জন্ম নেয়। WNT3 জিনের কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। ভ্রুণ অবস্থায় যখন মানুষের হাত, পা সৃষ্টি হতে থাকে তখন WNT3 জিনের কারণে হাত, পা সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে অন্যান্য বিভিন্ন অঙ্গও স্বাভাবিক গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে নিক ভুজিসিক এর ক্ষেত্রে শুধু হাত–পা সৃষ্টিই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অন্য সব কিছু রয়েছে স্বাভাবিক।
জন্মস্থান
১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে নিক জন্ম নেয়। নিক ভুজিসিক এর পুরো নাম নিকোলাস জেমস ভুজিসিক। বেরিস ভুজিসিক ও ডুসকা ভুজিসিক এর ঘরে যখন নিকের জন্ম হয়, সন্তানের এরূপ আকৃতি দেখে নিক এর মা তাকে কোলে নিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে অবশ্য স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তাকে ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা’ হিসেবে বিবেচনা করে মেনে নেন।
জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’
নিক জীবনকে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন। তবে শুরুতে এমন ছিল না। স্কুল জীবনে মাত্র ১০ বছর বয়সে নিক আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সে যাত্রায় বাঁচার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, “পালিয়ে যাওয়া নয়, ইতিবাচক দৃষ্টিতে জীবনকে দেখে লড়াই করতে হবে”। এর পরের গল্পটা একেবারেই ভিন্নরকম।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁর হাইস্কুলের এক দারোয়ান তাকে জনসম্মুখে বক্তৃতা দেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। ৫৩ বার প্রত্যাখিত হওয়ার পর, নিক যখন প্রথমবার মঞ্চে উঠলেন বক্তব্য দেয়ার জন্য তখন দর্শক সারি প্রায় পুরোটাই খালি হয়ে গিয়েছিলো।
নিক কিন্তু তাতেও হতাশ হননি। অভাবনীয়ভাবে খুব শিগগিরই তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। নিকের সম্পর্কে তাঁর বন্ধুরা বলেন, তিনি এমন একজন মানুষ যিনি আনন্দের জন্য রোমাঞ্চ অভিযান খুঁজে বেড়ান।
ধীরে ধীরে মানুষের কাছে তিনি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন যে, ঘণ্টায় এক হাজার আটশত লোককে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য ‘গিনেজ বুক’ এ তাঁর নাম উঠেছে। মাত্র দুইটি আঙ্গুল থাকা সত্ত্বেও তিনি এতটা দ্রুত টাইপ করতে পারেন যা অনেক স্বাভাবিক মানুষও পারে না। মিনিটে তিনি ৪৭টি শব্দ টাইপ করতে পারেন। তিনি নিজেই বলেছেন,
“আমি উঠে দাঁড়াবার জন্য শতবার চেষ্টা করবো, যদি শতবারই ব্যর্থ হই তবুও ব্যর্থতা মেনে নিয়ে সেটা ছেড়ে উঠবো না। আমি আবার চেষ্টা করবো এবং বলবো, এটাই শেষ নয়”।
শৈশব জীবন:–
জন্মের পরপরেই হাত -পা হীন পঙ্গু সন্তানটিকে দেখে তাঁর নিজের মা-ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এবং নার্সকে বলেছিলেন, এই অসম্পূর্ণ বাচ্চাটিকে যেন তার চোখের সামনে দেখে দূরে রাখা হয়। ছোট বেলায় অন্যান্য বাচ্চারা যেখানে হাসি খুশি মজা করে খেলে বেড়ায় সেখানে নিক তার শারীরিক অসম্পূর্ণতার জন্য চরম অবহেলা ও অবমাননার শিকার হন। বন্ধু, পরিবার-পরিজন সকলের কাছে অপমানিত হতে হতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে শেষপর্যন্ত মাত্র ১০ বছর বয়সে বাথরুমে বাথ ট্যাবে ডুবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন নিক। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস অন্য কিছুর জন্য অপেক্ষা করছিল। তাঁর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাঁর মনে হয়েছিল এই পৃথিবীতে বিনা উদ্দেশ্যে ও বিনা শক্তিতে বেঁচে থাকে অনেক কষ্টকর। পরে ক্রমশ তাঁর উদ্যম দেখে বাবা মাও তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁর ১৭ বছর বয়সে তাঁর মা একদিন শারীরিক ভাবে অক্ষম একজন মানুষের ব্যাপারে লেখা প্রেরণামূলক একটি আর্টিকেল তাঁকে এনে দেন। যিনি তার জীবনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করে জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে সফল হয়েছেন। আর সেসময় থেকেই চার্চের প্রেয়ার গ্রুপের সদস্যদের সামনে অনুপ্রেরণা মূলক গল্প বলা শুরু করেন তিনি। শারীরিক ভাবে অসম্পূর্ণ হয়েও কিভাবে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে জীবনকে সুন্দর ও সাফল্য মন্ডিত করা যায় এই বিষয়ে মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর আগ্রহ তৈরি হয় সেখান থেকেই।
Nick Vujicic – এর শিক্ষাজীবন:-
মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার লুগানের গ্রিফথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন নিক। সেখান থেকে অ্যাকাউন্টিং এবং ফাইনান্সিয়াল প্লানিংয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়স তিনি তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নানা বয়সী, নানা পেশার মানুষদের শোনাতে থাকেন কিভাবে মনের জোরে বিশ্বের সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিকে দূর করা যায় তার গল্প। কিভাবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে তার গল্প। মানুষ তাঁকে দেখে আশার আলো খুঁজে পেত, খুঁজে পেত জীবনের বৃহৎ মানে। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে লস এঞ্জেলসে চলে যান তিনি। সেখানেই প্রতিষ্ঠা করেন বিকলাঙ্গদের নিয়ে কাজ করে যাওয়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘Life Without Limbs’ এবং মোটিভেশনাল স্পিকিং কোম্পানি ‘Attitude Is Altitude’। যেখানে তাঁর মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে অস্ট্রিলিয়ার তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে আলোড়িত হয়।
কর্ম জীবন:
ছাত্রাবস্থা থেকেই Nick Vujicic অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখতে অভ্যস্ত হতে শুরু করেন । ক্রমে ক্রমে অনুপ্রেরণামূলুক বক্তব্য রাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁকে ছুটে যেতে হয়। মানুষের জীবনে বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের সমস্যাগুলি তাঁর বক্তব্যে খুব গুরুত্ব পেয়েছে। এভাবেই তিনি ষাট-সত্তরটি দেশে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষের সামনে তাঁর মূল্যবান কথাগুলি তুলে ধরেন ।
নিক জনসাধারণের কাছে নিজের কাজগুলো পৌঁছে দিতে টিভি শো এবং লেখার আশ্রয় গ্রহণ করেন । ২০০৫ সালে নিক তাঁর নিজের জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি “Life’s Greater Purpose” নামে একটি ডক্যুমেন্টারি চলচ্চিত্রের ভিডিও বাজারে ছাড়েন। তাঁর রচিত প্রথম বই “Life Without Limits: Inspiration for a Ridiculously Good Life” প্রকাশিত হয়। এছাড়াও যুব সমাজকে লক্ষ্য করে “No Arms, No Legs, No Worries!” নামের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তাঁর ‘লাইফ উইদাউট লিমিটস’, ‘ লাভ উইদাউট লিমিটস’, ‘স্ট্যান্ড স্ট্রং’, ‘লিমিটলেস’ এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস এর বেস্ট সেলার ‘আনস্টপ্যাবল’ নামক বইগুলো সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ত্রিশটি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন ।
“দ্যা বাটারফ্লাই সার্কাস” (The Butterfly Circus) নামের একটি চলচ্চিত্রে নিক ভুইয়টসিক নিজে অভিনয় করেছেন। যে চলচ্চিত্র ২০০৯ সালে “Doorpost Film Project’s” এ প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন।
পড়াশোনা
নিক জন্মের পর থেকেই ‘স্বাভাবিক’ স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর কোনো পূর্ণাঙ্গ হাত-পা না থাকলেও বাম কোমরে দুই আঙুল বিশিষ্ট অপরিণত একটি পা রয়েছে। এই পা দিয়েই তিনি ভারসাম্য রক্ষা করে চলাফেরা করেন।
আমরা সাধারণত যেখানে একবার স্নাতক সম্পন্ন করতেই হিমশিম খেয়ে যাই সেখানে নিক ভুজিসিক দুই আঙুল দিয়েই ২১ বছর বয়সে ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং ও অ্যাকাউন্টিং এর মত বিষয় নিয়ে দুইবার স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ‘গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে।
কর্মজীবন
নিক ভুজিসিক ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি পাঁচ উপমহাদেশের ষাটটি দেশে ঘুরে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য পৌঁছে দেন।
নিক নিজের কাজ টিভি শো এবং নিজের লেখার মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেন। ২০১০ সালে তাঁর রচিত প্রথম বই “Life Without Limits: Inspiration for a Ridiculously Good Life” প্রকাশিত হয়। এটি প্রায় ৩০ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার খেতাব অর্জন করেছে। এটি ছাড়াও এখন পর্যন্ত তিনি আরও পাঁচটি বই লিখেছেন। যেগুলোও প্রায় সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া, লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় নিক ‘Life Without Limbs’ নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি।
এছাড়া Attitude is Altitude নামে তাঁর আরও একটি সংগঠন রয়েছে। এ থেকে প্রণোদনামূলক বক্তৃতা এবং দুর্বলদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করার জন্য প্রচারণা চালান তিনি। এছাড়াও যুব সমাজকে লক্ষ্য করে “No Arms, No Legs, No Worries!” নামের একটি ডিভিডি প্রকাশ করেন।
পদক
“দ্যা বাটারফ্লাই সার্কাস” চলচ্চিত্রটিতে “উইল” চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করার জন্য ২০১০ সালে নিক ভুজিসিক “Method Fest Independent Film Festival” এ সেরা অভিনেতা পদক লাভ করেন। চলচ্চিত্রটি ২০০৯ সালে “Doorpost Film Project’s” এ প্রথম পুরস্কার অর্জন করে।
২০০৫ সালে যুব ‘অস্ট্রেলিয়ান অব দ্যা ইয়ার’ পুরস্কারের জন্য তিনি মনোনয়ন লাভ করেন।
জীবনসঙ্গী
এমন একজন মানুষের জীবনে স্বেচ্ছায় কোনো মেয়ের আসতে চাওয়া সত্যিই মনোমুগ্ধকর ব্যাপার।
২০১২ সালে নিক ভুজিসিক বিবাহ ইন্ধনে আবদ্ধ হন কানাই মিয়াহারার সাথে। তাদের এই বিয়ে ছিলো লাভ ম্যারেজ। মিয়াহারাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো আপনার সন্তান যদি নিক এর মত হয় তাহলে আপনি কী করবেন? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, “আমি তাকে আরেকজন নিক ভুজিসিক হিসেবে তৈরি করবো।”
বর্তমানে তাদের দুটি ছেলেও রয়েছে। ২০১৩ সালে তাদের প্রথম পুত্র কিয়োশি ও ২০১৫ সালে তাদের দ্বিতীয় পুত্র দিজান এর জন্ম হয়। স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিক বর্তমানে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া তে বসবাস করেন।
আরও পড়ুন : মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর বিখ্যাত উক্তি ও বাণীসমূহ
নিকের কাছ থেকে যে অনুপ্রেরণা পাই :-
নিকের জীবনই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে । নিজের হাত-পা হীন এরকম অবস্থার জন্য তিনি কখনোই ঈশ্বরকে দায়ী করেন না । তিনি বলেন – “God won’t allow anything to happen in your life if it’s not for your good”।
তিনি বিশ্বাস করেন , মানুষের জীবনে কখনোই বাধার কাছে নতি স্বীকার করা উচিত নয় । মানুষের জীবনে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় , ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে , তার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায় — এই শিক্ষা নিক মানুষকে দিয়ে চলেছেন আজও একইভাবে । তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবনকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে তৎপর হয়েছেন । শিশু থেকে বৃদ্ধ , নারী থেকে পুরুষ , ধনী থেকে দরিদ্র সকল শ্রেণির মানুষ আজ নিক এর মূল্যবান প্রেরণামূলক বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন । কারণ নিক এর বক্তব্য শুধু কেতাবি নয় । প্রত্যেকটি কথা তাঁর জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা । এবং তা প্রত্যক্ষ ভাবেই সত্য । তিনি তাই অতি সহজেই বলতে পারেন , “আমি বেঁচে থাকতে ভালোবাসি , তাই আমি সুখী। ” আধমরা , উদ্যেশ্যহীন , নিরাশ মানুষের কাছে নিক এক ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র । তাই আজ নিক খুব কঠিন রোগ Phocomelia ব্যাধিতে আক্রান্ত নিক বর্তমানে সুখী পরিবারের সদস্য । তিনি এখন দুই সন্তানের বাবা । নিজের জীবনে নিক আত্মহত্যার চেষ্টা করেও যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে , দৃঢ় সংকল্পের দ্বারা বিশ্বজয় করে দেখিয়েছেন — এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণার বিষয় আর কি হতে পারে ।
নিক ভুজিসিকের জীবন থেকে নেয়া ৬টি শিক্ষণীয় দিক:
১। ভয় হচ্ছে সবচেয়ে বড় অক্ষমতা
ভবিষ্যতের ভয়, অতীতের ভয়, ব্যর্থতার ভয়- এই ভয়গুলো আপনাকে প্রতিনিয়ত যে কোনো কাজে আটকে দিবে। নিক এই ভয়গুলো কাটিয়ে উঠেছেন। হাত-পা ছাড়া জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও, নিক ভুজিসিক সবসময় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় নির্ভীক ছিলেন।
তিনি লেখক, সিইও, স্পিকার ও পরিকল্পনাকারী। তিনি সব শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে পেরেছেন। কারণ, তিনি সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ‘ভয়’ কে জয় করতে পেরেছেন!
২। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখা
“If you believe in God, you will have the hope.”
নিক ভুজিসিকের মতে, আমাদের প্রত্যেককেই পৃথিবীতে পাঠানোর পেছনে উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই খারাপ সময়ে কোনোভাবেই আশা হারানো যাবে না।
৩। সাফল্য অর্জনের পথে কোনো রকম অব্যাহতিই গ্রহণযোগ্য নয়
নিকের কাছে তাঁর সব থেকে বড় অস্ত্র কোমরের নিচে থাকা দুই আঙুলবিশিষ্ট অপরিণত বাম পা টি। গুরুতর অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিদিন অবিশ্বাস্য কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। সাঁতার, মাছ ধরা, সার্ফিং, স্কাইডাইভিং, স্নোবোর্ডিং এবং এমনকি গল্ফও খেলতে পারেন। তিনি প্রায় ৫ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের একটি প্রতিষ্ঠানের একজন সফল উদ্যোক্তা।
৪। ‘সবকিছু’ ঘটার পেছনে একটি কারণ থাকে
নিক বলেন,
‘ঈশ্বর আমাকে যেভাবে জন্ম দিয়েছেন এবং আমার সঙ্গে যা যা হয়েছে, তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তুমি তোমার সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাও, ঈশ্বর তোমাকে ফেরাবেন না’।
৫। পরিবার সব সময় গুরুত্বপূর্ণ
নিককে তাঁর পরিবার একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে ধরে নিয়েছিল। তাকে স্বাভাবিক স্কুলে পাঠিয়েছিল এবং খারাপ সময় মোকাবেলা করার সাহস দিয়েছিল। বিয়ের পর ব্যবসায় একবার খুব খারাপভাবে লোকসান হবার পরও তাঁর স্ত্রী সব সময় তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করেছে যাতে নিক ভেঙ্গে না পড়ে।
৬। নিজেকে সব সময় ছাড়িয়ে যেতে হবে
যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে জীবন ছোট এবং নিরর্থক, নিক আপনাকে ভুল প্রমাণ করবে এবং আপনার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনাকে বাধা দিতে পারে এমন প্রতিটি অজুহাতকে বিশ্রাম দিতে হবে।
নিক প্রতিদিন নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং নিজের কাজ ও বক্তব্য দিয়ে বিশ্বের আরও কোটি কোটি লোককে অনুপ্রাণিত করার পথে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যান।
নিক ভুজিসিক এর বিখ্যাত উক্তি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:-
১. “তুমি ভালো না, এটা মিথ্যে কথা
তুমি কোনোকিছুর যোগ্য না এটা মিথ্যে কথা।”-Nick Vujicic
২. “আমি তোমাকে জোর গলায় এটা বিশ্বাস করতে বলতে পারি যে হয়তো তুমি এই মুহূর্তে রাস্তা খুঁজে পাচ্ছ না কিন্তু তার মানে এই নয় যে রাস্তা নেই।”
৩.”আমি কখনোই একজন রুক্ষ স্বভাবের মানুষ দেখিনি যিনি কৃতজ্ঞ, অথবা একজন কৃতজ্ঞ মানুষ দেখিনি যিনি স্বভাবে রুক্ষ।”-Nick Vujicic
৪.” ঈশ্বরের ভালোবাসা এতটাই সত্য যে তিনি তা প্রমাণ করার জন্য তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।”
৫. “অনেক যন্ত্রণাই দ্রুত কমে যেতে থাকে , যদি তুমি না থেমে যাও।”
৬.“আমি বেঁচে থাকতে ভালোবাসি , তাই আমি সুখী।”- নিক ভুজিসিক