Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
যেভাবে নিতে হবে ডা. দেবী শেঠীর সিরিয়াল

যেভাবে নিতে হবে ডা. দেবী শেঠীর সিরিয়াল

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন উপমহাদেশের আলোচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি। তখন থেকেই মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয় তার সম্পর্কে জানার। বাংলাদেশের শিক্ষিত স্বাস্থ্য সচেতন বেশিরভাগ মানুষই জানেন।

ডা. দেবী শেঠী বিশ্বের অন্যতম সেরা হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র ব্যাঙ্গালুরুর নারায়না ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের প্রতিষ্ঠাতা। এখানকার শতকরা ৮০ ভাগই বাংলাদেশি হার্টের রোগী। কিন্তু দেবী শেঠীর সঙ্গে দেখা করার সঠিক নিয়ম-কানুন না জেনে যাওয়ার কারণে দিনের পর দিন সময় ও টাকা নষ্ট করছেন। অনেকে বলছেন, আমরা সিরিয়াল নিয়ে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার দেখানো যাচ্ছে না। যদি জানতে চাই, কিভাবে নিলেন? তারা বলেন, ই-মেইল করেছি বা ‘অমুকের’ রেফারেন্সে এসেছি ইত্যাদি।

মনে রাখা দরকার, ডা. দেবী শেঠী সরাসরি কোন রোগী দেখেন না। নারায়না হাসপাতালের বেজমেন্টে তার সিরিয়াল নেওয়ার জন্য আলাদা কাউন্টার আছে। সকাল ৮টার মধ্যে গেলে কাউন্টারে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়, যা আন্তর্জাতিক বা নতুন রোগীর জন্য। ৫শ’ রুপি জমা দিয়ে ফাইল করতে হয়। ফাইলটি নিয়ে পাশে আরেকটি কাউন্টারে গেলে তারা ফাইলটি চেক করে কিছু টেস্ট করতে বলবে (যদি লাগে)। পরে একজন কার্ডিওলোজিস্টের কাছে রেফার করবে।

ওই কার্ডিওলোজিস্ট যদি মনে করেন ডা. দেবী শেঠীর কাছে পাঠানোর প্রয়োজন আছে, তবে তিনি রেফার করবেন। সাধারণ সমস্যা হলে সেখান থেকেই সাজেশন দিয়ে দেবেন। মূলত ডা. দেবী শেঠী জটিল ও শিশুদের হার্টের সমস্যা দেখে থাকেন। সব ঠিক থাকলেও তাকে পেতে ১-৭ দিন লাগতে পারে। অনেক সময় জটিল অপারেশনে তিনি বাইরের রোগী দেখেন না। সময় নিয়ে যেতে হবে, আপনার রোগী যতই জটিল অবস্থায় থাকুক না কেন। তার কয়েকজন সেক্রেটারির মধ্যে দীপক খুবই আন্তরিক। কিন্তু তিনি বাংলা জানেন না। মিসেস তানিয়া বাংলা জানেন। কিন্তু খুব একটা হেল্প করেন না। ডা. দেবী শেঠী অনেক সময় দেশের বাইরে থাকেন, সেক্ষেত্রে খবর নিয়ে যাওয়া ভালো।

সবচেয়ে ভালো হয় সরাসরি ডা. দেবী শেঠীকে হোয়াটস অ্যাপ করলে। তিনি নিজেই তার রিপ্লাই দেন। তার হোয়াটস অ্যাপ নম্বর হচ্ছে +৯১৯৯৮০১৯৯৮০১। এ নম্বরে শুধু টেক্সট পাঠাবেন। কোন কল করা যাবে না। এছাড়া ই-মেইল করতে পারেন devishetty@narayanahealth.org ঠিকানায়। তবে বাংলাদেশে মিলু (ঢাকা: ০১৯৪৩২২২২২২) ও মৃণাল (চট্টগ্রাম: ০১৭৩১৪০৯৩৫২) সাহায্য করতে পারবেন।

তবে কিছু পরীক্ষা বাংলাদেশের ভালো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করিয়ে নিলে সেখানে আর করতে হয় না। যেমন-

১. কমপ্লিট ব্লাড টেস্ট (সিবিসি)
২. কেএফটি র‌্যানডম
৩. ইসিজি
৪. লিপিড প্রোফাইল
৫. গ্লুকোজ টেস্ট বোথ ফাস্টিং অ্যান্ড আফটার ২ আওয়ারস
৬. এক্স-রে চেস্ট
৭. ইকো কালার ড্রপলার
৮. এনজিওগ্রাম (যদি লাগে)

এছাড়াও কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে বেশি ভালো হয়। যেমন-

১. রোগীকে যদি এনজিওগ্রাম, রিং বা অপারেশন করতে হয়। তাহলে অবশ্যই মেডিকেল ভিসা লাগবে। তা না হলে বিপদে পড়ে যাবেন।
২. পাসপোর্ট ও ভিসার বেশ কয়েকটি ফটোকপি সাথে রাখতে হবে। কারণ কথায় কথায় এগুলো দরকার হয়।
৩. অবশ্যই ইউএস ডলারে পেমেন্ট করতে হবে। তাই দেশ থেকে ডলার নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ ওখানে রেট ভালো না।
৪. এনজিওগ্রামে ৩শ’ ডলার, রিং বা অপারেশনে ৪শ’ ডলার জমা রাখে। পরে যা লাগবে, তা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেয়।
৫. টাকা জমা দিতে হলে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের ভেরিফিকেশন লাগে। তাই পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপির সাথে হোটেলের বিল কপি লাগবে।
৬. ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কে মিস রূপসী নামে একজন কলকাতার বাঙালি আছেন, তিনি গাইড করে থাকেন।
৭. নরমাল পরীক্ষার জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা ঠিক আছে।

যৌন দুর্বলতা কাটানোর ১১ উপায়

হার্ট সুস্থ রাখতে দেবী শেঠির ১৩ পরামর্শ

১. খাবারে আমিষের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তবে শর্করা এবং চর্বিজাত খাবার কম খেতে হবে।

২. একটানা বেশি সময় বসে থাকা যাবে না। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন আধা ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে।

৩. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৫. রক্তচাপ এবং সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৬. শাক জাতীয় নয়, এমন খাবার (যেমন মাছ) খাওয়া হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী

নয়।

৭. ত্রিশোর্ধ্ব সবার উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

৮. জীবনে সব কিছু নিখুঁত হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাই জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

৯. জগিং করার চেয়ে হাঁটা ভালো। জগিং করলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়।

১০. অনিয়মিত খাদ্যাভাস মানুষকে জাঙ্ক ফুডের দিকে ঠেলে দেয়। আর তখনই হজমের জন্য ব্যবহৃত এনজাইমগুলো দ্বিধায় পড়ে যায়। তাই নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, হাঁটাহাঁটি এবং আখরোট খেতে হবে।

১১. হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার ফল এবং সবজি। আর সবচেয়ে খারাপ তৈলাক্ত খাবার। যে কোনও তেলই খারাপ।

১২. নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুগার এবং কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। তাছাড়া রক্তচাপ পরিমাপও জরুরি।

১৩. হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে প্রথমে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর জিহ্বার নিচে একটি এ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখতে হবে। যদি পাওয়া যায় তবে এ্যাসপিরিনের পাশাপাশি একটি সরবিট্রেট ট্যাবলেটও রাখতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।

আসুন জেনে নেই কে এই দেবী শেঠি?

ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে শেঠির নারায়ণা হৃদয়ালয় হাসপাতালটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান হাসপাতাল। ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি পৃথিবীর ১০ জনের একজন।

দেবি শেঠি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ কনাডা জেলার কিন্নিগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে অষ্টম শেঠি মেডিকেলে পঞ্চম গ্রেডে পড়ার সময় তত্‍কালীন দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক সার্জন কর্তৃক বিশ্বের প্রথম হৃত্‍পিণ্ড প্রতিস্থাপনের কথা শুনে কার্ডিয়াক সার্জন হবার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৯১ সালে নয় দিন বয়সি শিশু রনি’র হৃত্‍পিণ্ড অপারেশন করেন যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশু হৃত্‍পিণ্ড অস্ত্রোপচার। তিনি কলকাতায় মাদার তেরেসার ব্যক্তিগত চিকিত্‍সক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর কিছুকাল পর তিনি ব্যাঙ্গালোরে চলে যান এবং মণিপাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫,০০০ এর বেশি কার্ডিয়াক সার্জারি করেছেন।

রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিত্‍সা সেবা দেবার সাথে সাথে তার অর্থনৈতিক অবস্থা অর্থাত্‍ ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চান এবং সে মতে পদক্ষেপ নেন।

জানা যায়, দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেয়া দেবী শেঠী ১৯৮২ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারী বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেন।

১৯৮৯ সালে লন্ডনের উচ্চাভিলাষী চাকরীর লোভ ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এখানে ডাঃ রায়ের সাথে তিনি কলকাতার গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম হৃদরোগ চিকিত্‍সা হাসপাতাল বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার। কিন্তু ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তিনগুন বেশী হওয়ায় এই একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না। এজন্য ডাঃ দেবী শেঠী ও ডাঃ রায় মিলে আরো তিনটি হৃদরোগ চিকিত্‍সা কেন্দ্র গড়ে তোলেন, বি এম বিড়লা হার্ট সেন্টার যাত্রা শুরুর অল্প দিনের মধ্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ হার্ট হাসপাতালের একটিতে পরিণত হয।

ডাঃ দেবী শেঠী নামক ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারী সম্পন্ন করেন।

১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ডাঃ দেবী শেঠি যে ৪০০০ শিশুর হার্ট সার্জারী সম্পন্ন করেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা এবং এদের সবাইকেই তিনি বিনা মূল্যে চিকিত্‍সা করেছেন।

ডাঃ দেবী শেঠি নিজের মা-বাবার বরাবরের অসুস্থতার কারনে একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ডায়বেটিক রোগী। ডায়াবেটিকস বাড়ার কারণে পিতাকে তিনি অনেকবার অজ্ঞান হয়ে পড়তে দেখেছেন। এই পরিবারের কাছে তখন ডাক্তারের চেহারাটাই ছিল যেন এক ঈশ্বরের মূর্তি। কারণ চরম মূহুর্তে ওই ডাক্তারই ডাঃ দেবী শেঠির মা-বাবার জীবন বাঁচাতেন।

একদিন ডাঃ দেবী শেঠী একদিন একটি শিশুর জটিল অপেন হার্ট সার্জারী করছেন। এমন সময় তাঁর বিশেষ সহকারী অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে বলেন- ‘স্যার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করে লাইনে আছেন এবং আপনার সাথে জরুরী একটা আলাপ আছে বলেছেন’। ডাঃ শেঠি দেখলেন এই শিশুটির অস্ত্রোপচার এ দেরী হলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা তাই তিনি নিজের সহকারীকে বললেন-‘পিএম-কে বলো আমি ওটিতে আছি এক ঘন্টা পর ফোন করার জন্য’। অবশ্যই এক ঘন্টা পর প্রধানমন্ত্রী ফের ফোন করেন।

বিশ্বের বৃহত্তম হৃদরোগ হাসপাতাল ‘নারায়না ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়িন্সেস’ ব্যাঙ্গালুরুতে বর্তমানে আছে ১০০০ শয্যা, ১০৭ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, ৫টি ক্যাথ ল্যাব, ১৫টি অপারেশন থিয়েটার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫জন ছোট -বড় রোগীর অপেন হার্ট সার্জারী হয়।

Leave a Reply