রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: খেরসনের পতন কেন গুরুত্বপূর্ণ? রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট কোনটি?

বুধবার থেকেই রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনের দক্ষিণের কৃষ্ণসাগরের কাছে বন্দর শহর খেরসন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলছিল।

আজ স্থানীয় প্রশাসন নিজেরাই নিশ্চিত করেছে যে প্রায় তিন লাখ জনসংখ্যার শহরটি তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। শহরের প্রশাসনিক সদর দপ্তর এখন রুশ সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে।

গত আট দিনের যুদ্ধে এই প্রথম ইউক্রেনের বড় কোনো শহর রুশ সৈন্যদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিল।

এরপর, অনেক সামরিক বিশ্লেষক বলছেন, নিপাহ নদী তীরবর্তী খেরসনের নিয়ন্ত্রণ রুশদের সামরিক কৌশলের দিক থেকে অনেক সুবিধা দেবে। কারণ এরপর সাগরপথে সৈন্য, অস্ত্র, সরঞ্জাম, রসদ নিয়ে এসে এই শহরকে ভিত্তি করে ইউক্রেনের ভেতরে ঢোকা সহজ হয়ে হবে রুশ সৈন্যদের জন্য।

গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের সামরিক বিশেষজ্ঞ ড. জ্যাক ওয়াটলিং বিবিসিকে বলেন, খেরসনের নিপাহ নদী ইউক্রেনকে কার্যত দুই ভাগ করেছে।

“এই নদীর তীরবর্তী শহরগুলো রুশরা একে একে দখল করতে শুরু করেছে। আর এর ফলে পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে মোতায়েন ইউক্রেনের সৈন্যদের কাছে পশ্চিম অঞ্চল থেকে রসদ সরবরাহে বাধা তৈরি করতে পারবে রুশরা।”

তিনি বলেন, এর পর রাশিয়া “পূর্বে মোতায়েন ইউক্রেনিয়ানদের রসদ এবং সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করে দিতে শুরু করবে।”

উপকূল থেকে ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা

রুশ সৈন্যরা এখন সবচেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করছে ইউক্রেনের দক্ষিণে।

ক্রাইমিয়া থেকে ঢোকা রুশ সেনা ইউনিটগুলো দক্ষিণের ছোট-বড় অনেকগুলো শহরে অবরোধ তৈরি করেছে। মস্কো মনে করছে, ইউক্রেনে সামরিক সাফল্য অর্জনে এই অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপকূলীয় এই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হলে ইউক্রেনের বাকি অংশেরও সাগরে এবং বন্দরে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।

তাছাড়া, রুশদের কাছে এই অঞ্চলটি চলে গেলে ক্রাইমিয়া এবং জাতিগত রুশ অধ্যুষিত ডনবাসের মধ্যে একটি সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে।

বাংলা যুক্ত বর্ণ 📎যারা বাংলা টাইপিং এ দুর্বল তাদের কাজে লাগতে পারে📎

খেরসন বাদে দক্ষিণে যে সব শহর রুশরা টার্গেট করছে :

  • মারিওপোল : প্রায় সাড়ে চার লাখ জনসংখ্যার এই বন্দর শহরটিতে গত দুদিন ধরে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করছে রুশরা। শহরের মেয়র বুধবার বলেন এত বেশি হামলা হচ্ছে যে আহত মানুষদের হাসপাতালে নেওয়ার উপায় নেই। রুশ সৈন্য এবং রুশ সমর্থিত ডনবাস মিলিশিয়ারা মারিওপোল ঘিরে ফেলেছে। শহরটি কার্যত অবরুদ্ধ। ইউক্রেনিয়ান সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে রুশ সৈন্যরা নগরবাসীদের শহর ছেড়ে যেতে
  • ওডেসা : ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় বন্দর এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর। ১০ লাখ মানুষের এই শহরটিরে দিকে পূর্ব দিক থেকে রুশেরা এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন খবরে জানা গেছে রুশ যুদ্ধজাহাজ ওডেসার দিকে এগুচ্ছে।

কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের জলসীমার ঠিক বাইরে অনেক রুশ যুদ্ধজাহাজ জড় হয়েছে। ওডেসার কাছে রুশ ছত্রী সেনা নেমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বুধবার একটি সামরিক স্থাপনায় রুশ যুদ্ধবিমানের হামলা হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।

লন্ডনের দি ইনডিপেডেন্ট খবর দিচ্ছে, ওডেসা বন্দরের কাছে সাগরে বৃহস্পতিবার এক বিস্ফোরণের পর এস্তোনিয়ার একটি মালবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। বলা হয়েছে কৃষ্ণসাগরে রুশ সামরিক তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে।

খেরসন, মারিওপোলের পর ওডেসাই যে রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট এ নিয়ে এখন আর কেউ সন্দেহ করছে না।

সেটা হলে, কৃষ্ণসাগর থেকে ইউক্রেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে যেটা অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে তাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে।

Leave a Reply