Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
রোজিনার জন্য কাঁদলেন, আমা’র জন্য তো কাঁদেননি : তসলিমা

রোজিনার জন্য কাঁদলেন, আমা’র জন্য তো কাঁদেননি : তসলিমা

কে বলেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে না? খুব জানে। এই যে রোজিনা নামের এক সাংবাদিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকেরা হে’নস্তা করল, এর প্রতিবাদ করতে তো ঝাঁপিয়ে পড়েছে শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী, যদু মধু রাম শ্যাম সকলে। লেখক আনিসুল হককে হাপুস নয়নে কাঁদতেও দেখা গেল। সহকর্মীর জন্য কেঁদেছেন। এক কাগজে রোজিনা ইস’লাম আর আনিসুল হক- দুজনই লেখেন কিনা।

আনিসুল হক আর আমিও কিন্তু একসময় এক কাগজে লিখতাম। সাপ্তাহিক পূর্বাভাসে। পত্রিকা অফিসে আমাদের দেখাও হতো, আড্ডাও হতো। আমা’র ওপর যখন অন্যায়ভাবে অ’ত্যাচার করল সরকার, আমাকে দেশ থেকে তাড়াল, ২৭ বছর আমাকে দেশে ফিরতে দিল না- তখন কী’ করেছিলেন তিনি? এমন অবিশ্বা’স্য ভ’য়াবহ অ’ত্যাচারের কথা জেনেও তিনি কিন্তু আমা’র জন্য চোখের জল ফেলেননি। হয়তো আমা’র সঙ্গে সেই হৃদ্যতা ছিল না, যে হৃদ্যতা রোজিনার সঙ্গে আছে।

Read More: “স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি এখন সার্বজনীন  ” দুলাল চন্দ্র চৌধুরী প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক

কিন্তু আমা’র নামটিও একবার কোথাও উচ্চারণ করেছেন বলে শুনিনি। শুষ্ক চোখেও তো কোনোদিন কোথাও দায়সারাভাবেও বলেননি যে, একজন লেখকের ওপর সরকার অন্যায় করছে। তাহলে আনিসুল হকের চোখের জলের পেছনে ব্যক্তিগত হৃদ্যতা আছে, মানবতা নেই। মানবতা থাকলে সব অ’ত্যাচারিতের জন্য কাঁদতেন, অথবা নিদেন পক্ষে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন।

শুধু আনিসুল হক কেন, বাংলাদেশের কোনো শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী তো প্রশ্ন করেন না, সরকার কেন আমাকে দেশে প্রবেশ করতে দেয় না। প্রতিবাদ যে তারা করতে জানেন না, অথবা করতে ভ’য় পান, এমন তো নয়। আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, ‘দেশ নষ্ট হয়ে গেছে, ওই দেশে গেলে অ’ত্যাচার করবে, না যাওয়াই ভালো’।

ঠিক এভাবে রোজিনাকে কিন্তু কেউ বলেননি, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নষ্ট হয়ে গেছে, ওখানে গেলে অ’ত্যাচার করবে, না যাওয়াই ভালো’। বরং তারা মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার, এবং অ’ত্যাচারিত না হওয়ার অধিকার দাবি করছেন। প্রতিবাদে কাজও হয়েছে, অন্যায় যারা করেছেন, তাদের বদলি করে দেওয়া হয়েছে।

মাঝে মাঝে আমা’র নিজের কাছেই অবিশ্বা’স্য লাগে দেশের একটি ভ’য়াবহ অন্যায় নিয়ে ২৭ বছর মানুষ কী’ করে চুপ করে আছে। অথচ ক্ষুদ্র কিছু অন্যায় নিয়ে চি’ৎকার করে বেশ গলা ফাটায়। আসলে সরকার আমাকে নির্ভাবনায় নি’র্যাতন করছে, কারণ জানে দেশের বুদ্ধিজীবীরা অন্য যেকোনো নি’র্যাতন নিয়ে মুখ খুললেও এই নি’র্যাতনটি নিয়ে মুখ খুলবে না। বেছে বেছে প্রতিবাদ যারা করে, তাদের ধিক্কার জানাই।

তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে

Leave a Reply