১৯৭৪ সালের ১ টাকা থাকলে যত টাকা পাবেন আপনি, জে’নে নি’ন বর্তমান সময়ের দাম

১৯৭৪ সালের ১ টাকা এখনকার কত টাকার সমান, জা’নেন- এক সময় দেশে জমিদারদের বিপুল প্রতাপ-প্রতিপত্তি ছিল। জমিদারের বাড়ির আশপাশ দিয়ে জুতো পায়ে হাঁটার সাধ্য ছিল না কারো। প্রখর রোদে কিংবা অঝোর ধা’রার বৃষ্টির মধ্যে জমিদারবাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া যেত না ছাতা মাথায় দিয়ে।

জমিদারের মুখের কথাই ছিল আ’ইন।কিন্তু সেকালের কোনো জমিদার জীবনে যে পরিমাণ পয়সা দেখেছেন, একালের দুঃখী ভিখারির ঝুলিতেও থাকে তার চেয়ে বেশি। সে আমলে কয়েক থা’না বা মহকুমা এলাকা ঘুরেও একজন কোটিপতির দেখা পাওয়া ক’ঠিন ছিল। এখন পাড়া-মহল্লায় কোটিপতির ছড়াছড়ি, তবুও যেন অনেকটাই নিঃস্ব তারা।

চাইলেই কোনো কিছু পাওয়ার ক্ষ’মতা নেই তাদের। সেকালের পয়সার স’ঙ্গে একালের টাকার বড় অ’ঙ্কের নোট গু’লোর ক্রয় ক্ষ’মতার ব্যবধানই এখনকার কোটিপতিদের স’ঙ্গে সেকালের পয়সা ওয়ালাদের দূ’রত্ব নক্ষ’ত্র সমান করে রেখেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ২০ টাকায় এক মণ চাল পাওয়া যেত, ১ পয়সায় মিলত চকোলেট। ১৯৭৪ সালে চালের দাম বেড়ে প্রতিমণ ৪০ টাকায় পৌঁছলে দেশজুড়ে হাহাকার শুরু হয়েছিল।

এর পরও ধনীর আদুরে দুলালেরা স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিন বাবদ বড়জো’র ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা করে পেত মা-বাবার কাছ থেকে।তা দিয়ে আইসক্রিম, চকোলেট, ঝালমুড়িসহ বেশ কয়েকটি আইটেম মিলত। গরিব শি’শুরা এক পয়সাও পেত না কোনো কোনো দিন।

জন্ম নিবন্ধন করার সঠিক নিয়ম, খরচ ও সময় | জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম

তখনকার মধ্যবিত্তরা পাঁচ পয়সা, ১০ পয়সা দিত বাচ্চাদের টিফিনের জন্য। এখনকার প্রজ’ন্ম এসব কথা রূপকথা ভেবে উড়িয়ে দেয়। কেননা এখনকার ভিক্ষুকরাও দুই টাকার কম নিতে গড়িমসি করে। প্রতি কিলোমিটারে অ’ন্তত দুবার যাত্রী ওঠানামা করায় এমন বাসগু’লোর গায়েও মোটা হরফে লেখা থাকে ‘সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা’।

আর দূ’রত্ব আধা কিলোমিটার হলেও ১০ টাকার নিচে ভাড়া কা’টার অভ্যাসই নেই কথিত সিটিং বাসগু’লোর হেল্পারদের।বাংলাদেশে টাকার মান নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে স’ম্প্রতি একটি প্র’তিবেদন তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। ১৯৭৪-১৯৭৫ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কতটা কমেছে তা জিডিপি ডিফ্লেটর ভিত্তিতে হিসাব করে অর্থবিভাগের তৈরি করা ওই প্র’তিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৭৪-১৯৭৫ অর্থবছরের এক টাকার ক্রয় ক্ষ’মতা ২০১৪ সালের ১২ টাকা ৪৫ পয়সার ক্রয় ক্ষ’মতার সমান।

অন্যভাবে বলা যায়, ২০১৪ সালের এক টাকার ক্রয়ক্ষ’মতা ১৯৭৪-৭৫ সালের ৮ পয়সার ক্রয়ক্ষ’মতার সমান।’ অর্থাৎ ১৯৭৪-৭৫ সালে এক টাকা দিয়ে যা কেনা যেত, এখন সেই পণ্যটিই কিনতে খরচ ক’রতে হবে ১২ টাকা ৪৫ পয়সা। অথবা এখন যে পণ্যটি এক টাকায় পাওয়া যায় ১৯৭৪-৭৫ সালে তা কিনতে লাগত ৮ পয়সা।অর্থ বিভাগের প্র’তিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বার্ষিক গড়ে ৭.৩ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

এতে সহজেই অনুমান করা যায়, সময় প্রবাহের স’ঙ্গে স’ঙ্গে সরকারি নোট ও কয়েনগু’লোর (এক পয়সা থেকে দুই টাকা পর্যন্ত) ক্রয়ক্ষ’মতা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঐতিহ্যের স্মা’রক সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত মুদ্রাগু’লো বাজার থেকে ক্রমেই বিলু’প্ত হয়ে যাব’ে।’

এই প্র’তিবেদনের সূত্র ধ’রেই গত জানুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, এক ও দুই টাকার নোট ও কয়েন থাকবে না। সর্বনিম্ন সরকারি মুদ্রা হবে পাঁচ টাকা। যদিও স’মালোচনার মুখে ওই অব’স্থান থেকে পরে সরে আসেন অর্থমন্ত্রী।

শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন আলমগীর

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ক’র্মর’ত রফিকুল ইসলাম বলেন, অর্থবিভাগের হিসাবে টাকার মানের যে ক্ষয়চিত্র উঠে এসেছে, বাস্তবে ক্ষয় হয়েছে আরো বেশি। নিজে’র অ’ভিজ্ঞতার কথা তুলে ধ’রে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে ঢাকার সোবহানবাগ থেকে গু’লিস্তানের বাসভাড়া ছিল ৫০ পয়সা।ওই সময় পাঁচ পয়সায় পাঁচটি হজ’মি কেনা যেত। পাঁচ পয়সায় মিলত একটি সাদামাটা আইসক্রিমও। গ্রামের বরফকলে তৈরি সর্বনিম্নমানের আইসক্রিমও এখন এক টাকার কমে জোটে না।

আর তখনকার হজ’মির চেয়ে এখনকার হজ’মির মান বেড়েছে, স’ঙ্গে দামও এক পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে এক টাকায়। ১৯৮৫ সালে ঢাকার সোবহানবাগ থেকে গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায় যেতে রফিকুল ইসলামের মোট খরচ ‘হতো ১২ টাকা। সোবহানবাগ থেকে ৫০ পয়সায় গু’লিস্তান যাওয়ার পর সেখান থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে যেতেন ঘোড়াশাল। পরে লঞ্চের দোতলায় সবচেয়ে বিলাসবহুল সিটে বসে দেড় টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছতেন কাপাসিয়া।

এখন সেই কাপাসিয়া পর্যন্ত যেতে তাঁর আর লঞ্চে উঠতে হয় না, কিন্তু ভাড়া গু’নতে হয় ১৭০ টাকার মতো।সেদিনের সেই ‘মূল্যবান’ পয়সার দাম দিন দিন কমে রূপকথার গল্পের যুগে ঠিকানা করে নিয়েছে। এক সময় যে পয়সার এত মূল্য ছিল, কালের পরিক্রমায় এখন তা দিয়ে কোনো পণ্য পাওয়া যায় না।

শুধু মোবাইলফোন কম্পানিগু’লোর কাছ থেকে কথা বলার জন্য কয়েক সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। হালে মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে ‘প্রতি সেকেন্ড ১ পয়সা’ জাতীয় সুযোগ দেওয়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে পয়সার মূল্য। তবে পয়সা বা এক টাকা-দুই টাকার ক্রয়ক্ষ’মতা কমা নিয়ে চিন্তিত নয় সরকার। বরং এসব ব্যাংক নোটের তুলনায় সরকারি মুদ্রার অংশীদারি কমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে প’ড়েছে অর্থ বিভাগ।

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, দুই টাকার কয়েন বা দুই টাকার নোট পর্যন্ত সরকারি মুদ্রা। পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন থেকে ১০০০ টাকার নোট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের। স্বাধীনতার পর মুদ্রাবাজারে মোট টাকার মধ্যে সরকারি মুদ্রার যে অংশ ছিল,

দিন দিন তা অনেক কমে গেছে। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বছরওয়ারি ও মাসওয়ারি দেশের অর্থের সরবরাহ, মোট সরবরাহ থাকা অর্থের মধ্যে সরকারি মুদ্রার হার, ১৯৭৪-৭৫ সালে দেশের বাজারে প্রচলিত অর্থের মোট পরিমাণ ছিল ৩১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ৩০৬ গু’ণ বেড়ে হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।

ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যু হওয়া পরিবারটির পরিচয় শনাক্ত

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ও কয়েন ৩৪০ গু’ণ বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। কিন্তু এ তুলনায় সরকারি নোট ও কয়েন বাড়েনি। ১৯৭৪-৭৫ সালে বাজারে প্রচলিত নোট ও কয়েনের মধ্যে সরকারি মুদ্রার মূল্যমান ছিল ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা ২৩ গু’ণের মতো বেড়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ৭৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। আর ১৯৭৪-৭৫ সালে জিডিপির তুলনায় সরকারি মুদ্রার হার ছিল দশমিক ২৭ শতাংশ, ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ বিবেচনায় ২.৬৯ ও বাজেটের অনুপাতে ছিল ৩.২১ শতাংশ। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর শেষে তা জিডিপির তুলনায় দশমিক ০৬, ব্যা’পক মুদ্রা সরবরাহ বিবেচনায় দশমিক ১১ এবং বাজেটের আ’কারের তুলনায় দশমিক ৩১ শতাংশে নেমেছে।

২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের মুদ্রাবাজারে প্রচলিত মুদ্রার মধ্যে সরকারি মুদ্রার অংশীদারির তথ্য তুলে ধ’রে অর্থ বিভাগ বলেছে, ‘২০১০ সাল পর্যন্ত (হালনাগাদ তথ্য নেই) বাজারে প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে সরকারি মুদ্রার অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় শুধু মিসর ও পাকিস্তানের কম ছিল। অন্যান্য দেশে এই অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি ভারতে এই হার ১.৩৬ শতাংশে অব’স্থান করছে। অথচ ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে এই অনুপাত ছিল দশমিক ৮৩ শতাংশ।’

এ অব’স্থায় মুদ্রাবাজারে সরকারি মুদ্রার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পাঁচ টাকার কয়েন বা নোটকে ব্যাংক নোটের পরিবর্তে সরকারি মুদ্রা হিসেবে ঘো’ষণা ক’রতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ। ওই বিভাগের ক’র্মকর্তাদের মতে, সরকারের ঐতিহ্যের স্মা’রক এসব মুদ্রাবাজার থেকে ত্রমেই বিলু’প্ত হয়ে যাব’ে। এই অবস্থা প্রতি’হত করার জন্য পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট বা কয়েন গু’লো সরকারের মালিকানায় প্রবর্তন করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

 

এটি হলে বর্তমানে মুদ্রাবাজারে মোট মুদ্রার মধ্যে সরকারি মুদ্রার অংশীদারি দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দেড় শতাংশ হবে। আর পাঁচ টাকা সরকারি মুদ্রা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ কমবে প্রায় ৭৯০ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে বাজারে প্রচলিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ টাকা মূল্যমানের নোট ও কয়েনগু’লো বা’তিল করবে না সরকার। বরং পুরনো এসব নোট ও কয়েন প্রতিস্থাপন করবে সরকার প্রবর্তিত নতুন নোট ও কয়েন। ফলে দেশে মোট অর্থের জোগান অ’পরিবর্তিত থাকবে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশ’ঙ্কাও থাকবে না।

Leave a Reply