Deprecated: Function WP_Dependencies->add_data() was called with an argument that is deprecated since version 6.9.0! IE conditional comments are ignored by all supported browsers. in /home/amadersa/public_html/wp-includes/functions.php on line 6131
মামলেট ও ওমলেট এর মধ্যে পার্থক্য

মামলেট ও ওমলেট এর মধ্যে পার্থক্য

বাঙালির প্রথম পছন্দ গরু মাংস-ইলিশ। তারপরে যদি ধরতেই হয়, তাহলে মুরগি। কিন্তু ডিম? তাকে কি বাঙালি কখনো ‘আমিষ’ বলে ভেবেছে? গত তিরিশ বছরের হিসেব বলে, বাঙালির আমিষ-চৈতন্যে ডিম কখনোই একটা ‘খাদ্য’ বলে পরিগণিত হয়নি। অথচ এই কালপর্বে ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার পর্যন্ত হাম্পটি ডাম্পটির মতো গড়াগড়ি খেয়েছে ডিম আর ডিম। অথচ বাঙালি তাকে সেভাবে মনে রাখেনি। মনে রাখেনি কেবল রাখতে চায়নি বলেই কি? নাকি এর পিছনে কোনো কালচারাল রহস্য রয়েছে?

কালচারালি ডিমকে বাঙালি জীবনে প্লেস করতে গেলে হ্যাপা অনেক। মেয়েরা ডিম কেলে কী হতে পারে, তা জানা নেই। তবে, অন্তঃসত্তা মেয়েদের ডিম খাওয়া বাঙালি বাড়িতে যে নিষিদ্ধ ছিল, তার সাক্ষী অনেকে আজও জীবিত আছেন। এই সব লিঙ্গ বৈষম্য পেরিয়ে যদি আবার ডিমের দিকে তাকানো যায়, তবে দেখা যাবে, বাঙালি হিন্দুর বাড়িতে হাঁসের ডিম তেমন কোনো নিষিদ্ধ বস্তু ছিল না, যতটা ছিল মুরগির ডিম। বাঙালি হিন্দু অন্তঃপুরে মুরগিকে ‘রামপাখি’ বলা এবং তার মাংস ও ডিম নিয়ে হ্যঙ্কিপ্যাঙ্কি ছিল এক নৈমিত্তিক ব্যপার।

কালচারালি ডিমকে বাঙালি জীবনে প্লেস করতে গেলে হ্যাপা অনেক। মেয়েরা ডিম কেলে কী হতে পারে, তা জানা নেই। তবে, অন্তঃসত্তা মেয়েদের ডিম খাওয়া বাঙালি বাড়িতে যে নিষিদ্ধ ছিল, তার সাক্ষী অনেকে আজও জীবিত আছেন। এই সব লিঙ্গ বৈষম্য পেরিয়ে যদি আবার ডিমের দিকে তাকানো যায়, তবে দেখা যাবে, বাঙালি হিন্দুর বাড়িতে হাঁসের ডিম তেমন কোনো নিষিদ্ধ বস্তু ছিল না, যতটা ছিল মুরগির ডিম। বাঙালি হিন্দু অন্তঃপুরে মুরগিকে ‘রামপাখি’ বলা এবং তার মাংস ও ডিম নিয়ে হ্যঙ্কিপ্যাঙ্কি ছিল এক নৈমিত্তিক ব্যপার।

 

 

পোলট্রির মুরগির ক্ষয়াটে স্বাদের ডিম সে সময়ে বাঙালির রান্নাঘরে ঢুকত না। দিশি মুরগির ডিম খেতেন বালিগঞ্জী ঘরানার কেতাদুরস্ত বাঙালি। উত্তর কলকাতায় মুরগি তখনও ব্রাত্য।

 

সেই দিন ১৯৭০ এর দশকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ততদিনে বাঙালির সঙ্গে ডিমের সংযুক্তি পাকা হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনের খাবারে ডিম না থাকলেও রাতে ডিমের ডালনা ছিল বাঙালি পরিবারের ইমার্জেন্সি মেনু। সেকালে অধিকাংশ বাঙালি পরিবারেই ফ্রিজ ছিল না। তাই হরতালের আভাস পেলেই বাঙালি ঘরে ডিম মজুত করত। পাঁউরুটিও সেই সঙ্গে। কিন্তু ডিম-পাঁউরুটির যুগলবন্দি তত দিনে বেদম পপুলার পাড়ার চায়ের দোকানের কল্যাণে। সেখানে অ্যালুমিনিয়ামের গেলাসে স্টিলের পাতলা চামচ দিয়ে ডিম ঘুঁটে ওমলেট বানানোর প্রস্তুতি শব্দ ছিল আড্ডার অ্যাড্রিন্যালিন ক্ষরণের অনুঘটক। বাঙালির সংগ্রামী সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই শব্দ।

মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ১২ বছর যাবত নিয়োগ বন্ধ কেন ? মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ রাসেল

ওমলেটকে বাঙালি তার নিজের কেতায় দেখেছে। আজকের ‘ব্রিস্তো’-জাত নরম স্পঞ্জিবব-মার্কা ওমলেট নয়। চায়ের দোকানের ওমলেট ছিল পাতলা, তার কিনারের রং হতো বাদামি। তার দেহে বিরাজ করতো লঙ্কা আর পেঁয়াজকুচির মোজেইক। বাঙালির আমদরবারে তার নাম সেই সময়ে ‘ওমলেট’ নয়। তাকে ডাকা হতো ‘মামলেট’ বলে। বহু বাঙালি পরিবারে যাকে ‘ডিমভাজা’ বলা হতো, সে আবার এই ওমলেট বা মামলেট সংস্কৃতির বাইরের একটা জিনিসডিমকে কি বাঙালি ক্যাজুয়ালিই নিয়েছে চিরকাল? অথচ বাঙালির সাধের মোগলাই পরোটায় ডিম তো অপরিহার্য! গত সাড়ে তিন দশকে বাঙালি তো কম এগরোল চিবোয়নি! রাতের পথচারী খিদে মিটিয়েছে রাস্তার পাশে স্টোভ নিয়ে বসে থাকা পাঁউরুটি-ডিমের কারবারির হোল নাইট শপের সামনে দাঁড়িয়ে। কালো কুচকুচে সসপ্যানে বুড়বুড়ি কাটা তেলের উপরে গোলা ডিমের ‘ছ্যাঁ-ক’ শব্দ আজও বাঙালির জীবনে অমলিন।

 

অবিশ্বাস্য চোখ ধাঁধানো ক্যাচ (ভিডি

 

 

 

ডিম সেখানে পরিত্রাতা, ডিম সেখানে মোজেস-যিশু। আবার দূরপাল্লার ট্রেনে সেদ্ধ ডিম সুতো দিয়ে দু’আধখানা করে তাতে হালকা বিটনুন ছড়িয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেয়েছে বাঙালি রেলবাজ। বাইরে জানলা দিয়ে সটকে গিয়েছে খুর্দা রোজ, মোগলসরাই, বেগুসরাই। সেখানেও কি ডিমের গুরুত্ব বোঝেনি বাঙালি?ও)

দাঁত থাকতে যেমন দাঁতের মর্ম টের পাওয়া কঠিন, তেমনই প্লাস্টিকের ডিমের ক্যাঁওতালের আগে বাঙালি ডিমের মহিমা বেঝেনি। আজ এক ঝটকায় বাঙালি জানে, ডিমে টান পড়লে কী হয়। কিন্তু এই যে বাঙালির হেঁসেল থেকে ক্রমশ উধাও হল ডিমভাজা, মামলেট, তার জায়গা নিয়ে নিল এগ স্ক্র্যাম্বল আর স্টাফড ওমলেট, সেই লস অফ সেলফ-এর কাহিনি কে সংরক্ষণ করবে। কোনও ডক্যুমন্টেশন রইল না। আগামী প্রজন্মকে বোঝানোই যাবে না, মামলেটের সঙ্গে ওমলেটের ফারাক ঠিক কতটা। সাধে কি বলে, বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাত!

 

Leave a Reply