Lojjabotir Upokarita || লজ্জাবতীর উপকারিতা লজ্জাবতী গাছের গুণাগুণ জেনে নিন

লজ্জাবতী গাছের গুণাগুণ: গাছ গাছারার অসীম শক্তি কমবেশি প্রায় সকলের জানা। আদিকাল থেকে শুরু করে আজও বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাকৃতিক গুনের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ফলে কঠিন রোগেও সেরে যায়। এর আগে পোষ্টে – সজনা গাছের উপকারী গুণাবলি জেনে নিন আলোচনা করা হয়েছিল আজ লজ্জাবতী গাছের গুণাগুণ কথা শেয়ার করা হল।

কারও কারও জামায় বা গেঞ্জিতে হলুদ দাগ লাগে, এক্ষেত্রে লজ্জাবতী গাছের ক্বাথ করে বগল ও শরীরটা মুছে ফেলতে হবে; এর দ্বারা ঐ দোষ ও দূর্গন্ধটা চলে যাবে।

লজ্জাবতী (Mimosa) হলো প্রায় ৪০০ প্রজাতির গুল্ম ও লতার একটি গণের নাম, যা লেগিউম জাতীয় ফ্যাবায়েসি পরিবারের Mimosoideae উপ-পরিবারের অন্তর্গত। এই গণটির নাম এসেছে গ্রিক ভাষার শব্দ μιμος (mimos) থেকে, যার অর্থ “নকল”, এবং মেয়েলি প্রত্যয়ে –osa, “অনুরূপ”, এর ‘সংবেদনশীল পাতাগুলি’র নির্দশে করে যা ‘সচেতনভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর ভান করে’ বলে মনে করা হয়।

প্রতীকী ছবি সংগ্রহীত : লজ্জাবতী ছবিঃ ইন্টারনেট
প্রতীকী ছবি সংগ্রহীত : লজ্জাবতী ছবিঃ ইন্টারনেট

এর দ্বি-পক্ষল পাতা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত প্রজাতি হলো Mimosa pudica। এর পাতা ছোঁয়া মাত্র বন্ধ হয়ে যায়। তাপের প্রভাবে, বা সন্ধ্যা বেলাতেও পাতা বন্ধ হয়ে যায়। মূলত সিসমোন্যাস্টিক চলন(Seismonastic Movement)-এর প্রভাবেই এর পাতা বন্ধ হয়ে যায়। থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। এর ফলগুলো চ্যাপ্টা, বাঁকা-লম্বাটে। এর আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে, তবে বর্তমানে বিশ্বের সব জায়গায় এটি ছড়িয়ে পরেছে।

লজ্জাবতী গাছের গুণাগুণ

অর্শ রোগের—অর্শ হলে লজ্জাবতীর মূলসহ গাছ ১০ গ্রাম নিয়ে তাতে ১ কাপ দুধ ও ৩ কাপ জল দিয়ে একসঙ্গে সেদ্ধ করুন। ১ কাপ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রত্যহ সকালে ও বিকালে খাবেন, অর্শে উপকার

দুষ্ট ক্ষত – মূল্য সমেত লজ্জাবতী গাছ তুলে এনে ৪ কাপ জলে | দিয়ে সেদ্ধ করুন। এককাপ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেটা আবার আঁচে বসিয়ে নাড়বেন, একটু ঘন হয়ে এলে সেই ঘন ক্কাথ ক্ষতের ওপর সারাদিন ৩-৪ বার লাগাবেন, পুঁজ কমে যাবে ও ঘা শুকিয়ে আসবে।

পুরাতন আমাশয়ে– লজ্জাবতীর পাতা ও ডাঁটা মিশিয়ে ১০-১২ গ্রাম নিয়ে তাকে ৪ কাপ জলে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ক্বাথটা ছেঁকে নিয়ে সকালে ও বিকালে সেটা ভাগ করে খান, উপকার পাবেন।

রক্তপিত্ত -রক্তপিত্ত যদি ভােগেন তাহলে লজ্জাবতীর পাতা ও উা মিলিয়ে ১০ গ্রাম নিয়ে ৪ কাপ জলে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেটা দু’ভাগ করে সকালে ও বিকালে খাবেন।

 কানে পুঁজ হলে প্রথমে লজ্জাবতীর ক্বাথ তৈরী করুন তারপর ক্কাথটা হেঁকে তার সঙ্গে খানিকটা সরষের তেল দিয়ে পাক করুন। তেল অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে সেটা কানে ফোটা-ফোটা দিন, পুঁজ সেরে যাবে।

নাড়ী সরে গেলে – অনেক সময় অনেক কারণে নারীর নাড়ী সরে যায়। এই লজ্জাবতীর মূল ১০ গ্রাম পরিমাণে নিয়ে ৪ কাপ জলে সেদ্ধ করে ১ কাপ অবশিষ্ট থাকতে অবস্থায় নামিয়ে ছেকে প্রত্যহ ঐ ক্বাথ দিয়ে ডুশ দিন।

দাঁতের মাড়ির ক্ষতে – লজ্জাবতীর পাতা ১২ গ্রাম পরিমাণে নিয়ে ৪ কাপ জলে সেদ্ধ করে এককাপ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই ক্কাথ মুখে নিয়ে ১০ মিনিট করে মুখে রেখে ফেলতে থাকুন। কয়েকদিনের মধ্যেই দাঁতের মাড়ির ক্ষত সেরে যাবে।

গ্রন্থিবাতে – উপরােক্ত নিয়মে ক্কাথ তৈরী করে হেঁকে নিয়ে সেই ক্কাথের সঙ্গে এককাপ দুধ ও ৭-৮ চামচ ঘি দিয়ে আবার পাক করুন। কাথটা শুকিয়ে গেলে এবং ঘি অবশিষ্ট থাকলে সেই ঘি খাবেন ও মালিশ করবেন। এতে গ্রন্থিবাত সেরে যাবে।

কানের দুর্গন্ধ ও দাগ –  এমন অনেক লােক আছেন যাদের গেঞ্জিতে দাগ ধরে, বগলে দুর্গন্ধ দেখা দেয় এই অবস্থায় ২০ গ্রাম লজ্জাবতী গাছ নিয়ে ৫ কাপ জলে সেদ্ধ করুন ও ২ কাপ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিন। এবার সেই কাথের দ্বারা শরীরটাকে মুছে ফেলুন।

বগলের দূর্গন্ধে: কারও কারও জামায় বা গেঞ্জিতে হলুদ দাগ লাগে, এক্ষেত্রে লজ্জাবতী গাছের ক্বাথ করে বগল ও শরীরটা মুছে ফেলতে হবে; এর দ্বারা ঐ দোষ ও দূর্গন্ধটা চলে যাবে।

 

মাইমোসা বা লজ্জাবতী লতা অনেকটা লতা জাতীয় উদ্ভিদ। আমাদের দেশে অম্লভাবাপন্ন মাটিতে এক জাতের কাঁটাযুক্ত লজ্জাবতী অহরহ লক্ষ করা যায়। এগুলো আকারে অনেটা ছোট। লজ্জাবতী অতি স্পর্শকাতর। কোনোভাবে নাড়া দিলে ছড়ানো পাতা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে অনেক সময় মশা বা ক্ষুদ্র আকৃতির পোকামাকড় পাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার চাপে মারা যায়। অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসলের মতো লজ্জাবতীর শিকড়ে ‘নডিউল’ গঠন হয়। ফলে মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ সরবরাহ করায় মাটির উর্বরতা বাড়ে। মাইমোসা বা লজ্জাবতীর লতাপাতা ও ফুলফল পুষ্টিতে অতিসমৃদ্ধ। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিনসহ সব ধরনের খাদ্য উপাদান। বিশেষ করে এটি ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও নিয়েসিনে ভরপুর। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় সালাদ, সবজি ও নানা প্রকার স্যুপ হিসেবে ‘মাইমোসা’ আহারের প্রচলন খুব জনপ্রিয়।

আফ্রিকার অনেক অধিবাসী চা ও কফির বিকল্প হিসেবে মাইমোসার লতা-পাতা, ফুল ও কচি ফলের নির্যাস পান করে থাকে। ইন্দোনেশিয়ায় ‘জায়েন্ট মাইমোসা (কাঁটাবিহীন)’ মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার প্রচলন আছে। ‘ওয়াটার মাইমোসা’র শিকড় ও কচি পাতা শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া ও অনুরূপ মাছের প্রিয় খাবার। অনেক দেশে মাইমোসার যথেষ্ট চাহিদা আছে। চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী আমাদের দেশের লজ্জাবতীর লতা-পাতা সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে জাপানে রপ্তানি করে থাকে।
ঔষধি গুণাগুণ : লজ্জাবতীর ঔষধি গুণাগুণ অত্যন্ত বেশি। নানা রোগের চিকিৎসায় হারবাল মেডিসিন তৈরিতে এর ব্যবহার যুগযুগ ধরে চলে আসছে। নাক, কান, দাঁত ও ক্ষুদ্রনালির ঘা সারাতে লজ্জাবতীর শিকড় লতা-পাতার ব্যবহার দেশে বিদেশে বহুল প্রচলিত। জন্ডিস, অ্যাজমা, টিউমার, হুপিংকফ, চর্মরোগ, ডায়াবেটিক্সসহ, হার্ট, লিভারের নানা রোগ সারাতে মাইমোসার ঔষধি গুণাগুণ খুব বেশি।

লজ্জাবতীর উৎপত্তি স্থান : অনেকে মনে করেন মেক্সিকো লজ্জাবতীর উৎপত্তি স্থান। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, আমেরিকার উত্তর-দক্ষিণ কোস্টাল বেল্টে আফ্রিকার অনেক দেশে ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর লজ্জাবতী দেখা যায়। ট্রপিক ও সাব-ট্রপিকের আওতাধীন সব দেশে লজ্জাবতী ভালো জন্মে। ভারতের রাজস্থানে বিভিন্ন বাগানে কভার ফসল হিসেবে ও গ্রিন ম্যানুয়ারিং ফসল হিসেবে চাষ প্রচলন আছে।

জাত : পৃথিবীতে অনেক রকম জাতের লজ্জাবতী দেখা যায়। তবে জায়ান্ট মাইমোসা (কাঁটাবিহীন লজ্জাবতী) ডাঙ্গায় এবং ওয়াটার মাইমোসা অগভীর পানিতে চাষের প্রচলন বেশি দেখা যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এ দুটি জাতের চাষাবাদে চাষিদের আগ্রহ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তবে আস্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে তা অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ক্ষতিকারক ঘাস হিসেবে চিহ্নিত।

বংশ বিস্তার : প্রধানত: দুইভাবে, বীজ থেকে অথবা পুষ্ট লতা কেটে তা রোপণের মাধ্যমে চাষাবাদ করা যায়। আগস্ট মাস হতে লতায় ফুল ধরা আরম্ভ করে এবং ক্রমান্বয়ে সেপ্টেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফল পাকা আরম্ভ করে। এ সময় পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজের জীবনী শক্তি খুব বেশি। সংরক্ষিত বীজে ৫০ বছর পর্যন্ত অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে। মাইমোসার বীজ খুব ছোট। প্রতি ১০০০টা বীজের ওজন প্রায় ৬ গ্রাম।

ওয়াটার মাইমোসা
এটি অগভীর পানিতে ভালো জন্মে। খাল-বিল, নালা-নর্দমা ও পুকুরে সহজেই ওয়াটার মাইমোসার চাষ করা যায়। পুকুর পাড়ের পানির উপরিভাগে ২ থেকে ৩ ফুট দূরত্বে চারা বা কাটিং লাগালে তা দ্রুত কলমির মতো ছড়িয়ে পড়ে। এ গাছের লতা সাধারণত ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত ছাড়াতে দেখা যায়। এছাড়াও লতার শাখা প্রশাখা দুইধারে বাড়তে থাকে। লতার প্রতি গিঁটে যে পাতা মঞ্জুরি বের হয় তার প্রতিটির উভয় পাশে জোড়ায় জোড়ায় ২০-৪০টা ক্ষুদ্র পাতা গজায় এবং পানির উপরিভাগে বৃদ্ধি পেয়ে ভেসে থাকে। লতার প্রতি গিঁট থেকে প্রচুর গুচ্ছমূল গজায়।

চাষ সম্প্রসারণ : যেসব এলাকায় বিশেষ করে উত্তর অঞ্চলের বরেন্দ্র এলাকার অগভীর পুকুরের পানি প্রখর রোদে গরম হয়ে যায়। এর প্রভাবে মাছ ও জলজ প্রাণীর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব পুকুর পাড়ে ওয়াটার মাইমোসা চাষের মাধ্যমে এ প্রতিকূলতা দূর করা যায়, পানিকে ঠা-া রাখা সহজ হয়। ওয়াটার মাইমোসার গুচ্ছ শিকড়ের ভেতর কৈ, তেলাপিয়া মাছে ডিম পাড়ে এবং তা ছোট মাছের আশ্রয় স্থান হিসেবে কাজে লাগে। মাগুর, শিং, কৈ, তেলাপিয়া জাতীয় পুকুরের সব মাছ মাইমোসার শিকড়, কচি লতা-পাতা ও ফুল খেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। উত্তরাঞ্চলের খরা প্রধান এলাকায় ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় এ জাতের মাইমোসা পুকুর ও নালায় চাষ করে এর সুফল আহরণ করা প্রয়োজন।

বীজ বপন/চারা রোপণ : চারা তৈরি করে নিয়ে অথবা লতার কাটিং এপ্রিল/মে মাসে লাগানোর উপযোগী। পুকুর পাড়ে পানির স্তরের ৮-১০ ইঞ্চি উপরে রসালো মাটিতে ২-৩ ফুট দূরুত্বে চারা/কাটিং রোপণ করতে হয়। লাগানোর অল্প সময়ের মধ্যে তা বাড়তে থাকে।

পরিচর্যা : ওয়াটার মাইমোসা এপ্রিল/মে মাসে হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দ্রুত বাড়ে। এ সময় চাহিদা মতো লতা-পাতা রেখে কিছু ছেঁটে দিয়ে মাছ ধরা ও মাছের অবাধ চলাচল সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে লতায় ফল ধরে এবং শীতে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুরাতন লতা কমিয়ে দিয়ে সেগুলো জ্বালানি বা জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পুকুরে অতিরিক্ত ছড়ানো ওয়াটার মাইমোসা, চাষকৃত মাছের অবাধ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, আলো বাতাস ও সরবরাহকৃত খাদ্য গ্রহণে মাছের জন্য যেন অন্তরায় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অত্যাবশ্যক। বাড়ন্ত মৌসুমে কলমির মতো ওয়াটার মাইমোসার কচি লতা-পাতা, ফুল-ফল সবজি হিসেবে আহারের প্রচলন করার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তাতে সাধারণ জনগণ এ পুষ্টিকর সবজি আহার সুবিধা পাবে এবং পুকুরে এ মাইমোসা অত্যাধিক ছড়ানো রোধ হবে।

জায়ান্ট মাইমোসা
দ্রুত বর্ধনশীল কাঁটাবিহীন এ জাতটি বাংলাদেশে সম্প্রসারণে উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। ভারতের রাজস্থানে ও কেরালায় খরাপ্রবণ এলাকায় বাগানের ভেতরে কভার ক্রপ হিসেবে জায়ান্ট মাইমোসার চাষ প্রচলন খুব বেশি। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তর বরিশাল ও খুলনার উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ করে বাগানে এ জাতের মাইমোসার চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া দরকার। এ দেশের উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকার ফল বাগানে জায়ান্ট মাইমোসা চাষ সম্প্রসারণ যথেষ্ট সুযোগ আছে। রাস্তা ও বাঁধের ধারে, রেল লাইনের পাশে, নদীর পাড়ে এবং বাগানে (আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল) জায়ান্ট মাইমোসা চাষের জন্য উপযোগী।

চারা-কাটিং রোপণ : চারা উৎপাদন ও কাটিং তৈরি পদ্ধতি ওয়াটার মাইমোসার অনুরূপ। মার্চ/এপ্রিল মাসে ২-৩ ফুট দূরত্বে চারা কাটিং রোপণ করতে হয়। গ্রীণ ম্যানুয়ারিং করার ক্ষেত্রে এক ফুট দূরত্বে অনেকটা ঘন করে চারা-কাটিং রোপণ করতে হয়। রোপণের পর হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত বহু বর্ষজীবী এ গাছ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়ে মাটিকে ঢেকে ফেলে।

চাষ সম্প্রসারণ ও ব্যবহার : বরেন্দ্র এলাকায় যেভাবে আম বাগান নতুনভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে সেগুলোর মাঝে এ জাতের মাইমোসা চাষ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ ব্যবস্থায় বাগানের আগাছা দমন, মাটির রস সংরক্ষণ ও জৈবসার সরবরাহ নিশ্চিত হবে। মাটির ক্ষয়রোধ ও তা ধরে রাখার জন্য বাঁধের ও উঁচু রাস্তার ধারে জায়ান্ট মাইমোসা সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ জাতের মাইমোসা মার্চ-এপ্রিল মাস হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত খুব বাড়ে, চারদিকে প্রচুর লতা-পাতা ছড়ায়। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফল পাকা আরম্ভ হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এজন্য এপ্রিল-মে মাসে লাগানো চারা জুন-জুলাই মাসে সবুজ সার তৈরি করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির সুযোগ হয়। শীতের শুরুতে গাছের গোড়া বরাবর কেটে তা জ্বালানি হিসেবে এবং ঝরে পড়া পাতাগুলো ফল গাছের গোড়ায় মালচিং হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

মহিষের খাদ্য হিসেবে জায়ান্ট মাইমোসার ব্যবহার মালায়শিয়ায় প্রচলিত আছে। তাই এ দেশেও তা মহিষের খাবার বা ফডার হিসেবে চাষের ব্যবস্থা নেয়া যায়। এছাড়াও অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার উপযোগিতা পরীক্ষান্তে অনুকূল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায় ও কিছু আফ্রিকান দেশে সবজি হিসেবে মাইমোসা ব্যবহার প্রচলন অত্যধিক। আমাদের দেশেও মাইমোসা শাকসবজি হিসেবে আহারের ব্যবস্থা জনপ্রিয় করার উদ্যেগ নেয়া যায়। তাতে দ্রুতবর্ধনশীল অতি পুষ্টিকর এ মাইমোসা বেশি আহার করে দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সস্তায় পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ সুযোগ পাবে।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, আগাছা দমন, ভূমিক্ষয় রোধ, ঔষধি ও সবজি হিসেবে ব্যবহার, সুফল আহরণের লক্ষ্যে, অতি সম্ভাবনাময়ী এ ফসলটির সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবারই প্রচেষ্টা নেয়া অত্যাবশ্যক।

 

এম. এনামুল হক*
* সাবেক মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা, গাছের উপকারিতা, লাল লজ্জাবতী গাছের ছবি, সাদা লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার, সাদা লজ্জাবতী গাছের ছবি, লজ্জাবতী গাছের বীজ, তেল সাদা লজ্জাবতী গাছ কোথায় পাওয়া যায়, বস গাছের উপকারিতা

Leave a Reply